প্রেম-বিয়ে-পরকীয়ার মাধ্যমে তাদের ক্যারিয়ার হয়েছে: রুনা খান
Published: 6th, October 2025 GMT
অভিনয়ে যেমন দক্ষ, তেমনি খোলামেলা কথার জন্যও আলোচনায় থাকেন অভিনেত্রী রুনা খান। দীর্ঘ দুই দশকের ক্যারিয়ারে মডেলিং, নাটক ও ওয়েব প্ল্যাটফর্মে সমানভাবে সক্রিয় থেকেছেন। বয়সের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে যেমন অভিনয়ে পরিণত হয়েছেন, তেমনি ভক্তদেরও চমকে দেন নিজের উপস্থিতি আর সাহসী বক্তব্যের মাধ্যমে।
একটি গণমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে খোলামেলাভাবে নিজের অবস্থান তুলে ধরেছেন রুনা খান। এ অভিনেত্রী বলেন, “২০০৫ থেকে ২০২৫—এই বিশ বছরে যেসব কাজের প্রস্তাব পেয়েছি, তার মধ্যে যেগুলো ভালো লেগেছে, শুধু সেগুলোই করেছি। কারো সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পর্ক তৈরি করে কাজ নেওয়ার প্রয়োজন হয়নি কখনো। অথচ আমার অনেক সহকর্মীর ক্যারিয়ার গড়ে উঠেছে প্রেম-বিয়ে কিংবা পরকীয়ার মতো ব্যক্তিগত বিনিময়ের মাধ্যমে। যত দিন পরিচালকের সঙ্গে সম্পর্ক থাকে, তত দিন কাজ মেলে; সম্পর্ক শেষ হলে এক শটের কাজও মেলে না।”
আরো পড়ুন:
পোশাক নিয়ে ফের কুরুচিকর মন্তব্যের শিকার রুনা
‘আমি আমার মেয়েদের সঙ্গে আরো বেশি দিন বাঁচতে চাই’
এই ধরনের ব্যক্তিগত বিনিময়ের চর্চাই শিল্পী সমাজে ভণ্ডামির জন্ম দিয়েছে বলে মনে করেন রুনা খান। এ অভিনেত্রী বলেন, “পর্দায় শরীর ঢেকে লম্বা হাতার ব্লাউজ পরে অনেকে শালীনতার দাবি করেন। অথচ তাদের বাস্তব জীবন চূড়ান্ত অসততায় ভরা। তারা আজ ক্ষুব্ধ কারণ সারা যৌবন পরিচালকের প্রেমিকা হয়েও টেকসই ক্যারিয়ার গড়তে পারেননি। আর আমি কোনো প্রেম-পরকীয়া ছাড়াই কেবল কাজের যোগ্যতায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছি। তাই আমার পোশাক নিয়ে আজ সমালোচনা করা হচ্ছে।”
সম্প্রতি একটি ফটোশুটকে কেন্দ্র করে রুনা খান পোশাক বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন। সে প্রসঙ্গেও তিনি স্পষ্ট মত দেন, “পোশাকের আবার অশালীনতা কী? বোরকা যেমন পোশাক, সুইমস্যুটও তেমন। যার যা ভালো লাগে, সে তাই পরবে। অশালীন হয় কাজ, পোশাক নয়। আমাদের দেশের অনেক অভিনেত্রী ব্যক্তিগত জীবনে অশালীনতার চর্চা করেন, আর পর্দায় শালীন পোশাক পরে দর্শককে ধোঁকা দেন। আমি তো শাবানা আপা, মৌসুমী, শাবনূর, শাবনাজ—সবার ক্লিভেজ দেখেছি পর্দায়। তাহলে ২০-২৫ বছর বয়সে দেখানো যাবে, আর আমি ৪০-এ এসে দেখালে তা সমালোচনার কারণ হবে কেন?”
এদিকে, দীর্ঘ বিরতির পর বড় পর্দায় ফিরছেন রুনা খান। মুক্তির অপেক্ষায় রয়েছে তার অভিনীত চলচ্চিত্র ‘ঊনাদিত্য’। সম্প্রতি শেষ করেছেন স্বল্পদৈর্ঘ্য সিনেমা ‘নিদ্রাসুর’-এর শুটিংও। সামনে নির্মাতা জুলফিকার জাহেদীর নতুন সিনেমাতেও দেখা যাবে তাকে।
ঢাকা/রাহাত/শান্ত
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ট ভ ন টক চলচ চ ত র পর দ য়
এছাড়াও পড়ুন:
প্রথম বিশ্বকাপের নায়ক বার্নার্ড জুলিয়েন আর নেই
ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট আবার হারালো তার এক সোনালি সন্তানকে। ১৯৭৫ সালের প্রথম ওয়ানডে বিশ্বকাপজয়ী দলের অন্যতম নায়ক, ক্যারিবীয় ক্রিকেটের সেই স্টাইলিশ অলরাউন্ডার বার্নার্ড জুলিয়েন চলে গেলেন না ফেরার দেশে। ট্রিনিদাদের ভ্যালসাইনে ৭৫ বছর বয়সে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।
তার প্রস্থান যেন এক যুগের অবসান; সেই এক সময়ের, যখন ওয়েস্ট ইন্ডিজ শুধু ক্রিকেট খেলত না, ক্রিকেট অধিকার করত। আর সেই দাপুটে সূচনার গল্পে জুলিয়েন ছিলেন এক অবিচ্ছেদ্য নাম।
আরো পড়ুন:
ভোট দেননি তামিম
বিসিবি নির্বাচনের ভোট গ্রহণ শেষ
১৯৭৫, যে বছর ইতিহাস লিখেছিলেন জুলিয়েন:
বিশ্বকাপের প্রথম আসর, ১৯৭৫ সাল। কেউ জানত না এই নতুন ফরম্যাটের ক্রিকেট ভবিষ্যতে এমন ইতিহাস রচনা করবে। কিন্তু বার্নার্ড জুলিয়েন জানতেন, এটি তার নিজের পরিচয় তুলে ধরার মঞ্চ। বাঁহাতি এই সিমার বলকে নাচাতে পারতেন দু’দিকেই, হাতে ছিল দারুণ ব্যাটিং সেন্স আর ফিল্ডিংয়ে ছিলেন একদম চঞ্চল।
গ্রুপ পর্বে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে তার পরিসংখ্যান- ৪ উইকেট ২০ রানে। এরপর সেমিফাইনালে নিউ জিল্যান্ডকে ভস্ম করে শিকার করেন ৪ উইকেট ২৭ রানে। দুটি ম্যাচই ছিল ক্লাইভ লয়েডের দলের ফাইনালে ওঠার ভিত্তি।
আর লর্ডসে ফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে, জুলিয়েনের ব্যাট থেকে আসে মূল্যবান ২৬ রান, যা দলের চ্যালেঞ্জিং স্কোর গড়তে বড় ভূমিকা রাখে। সেদিনের জয় দিয়েই শুরু হয়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ সাম্রাজ্যের উত্থান। যে সাম্রাজ্যের প্রথম সৈনিকদের একজন ছিলেন বার্নার্ড জুলিয়েন।
ক্লাইভ লয়েডের আবেগঘন স্মৃতিচারণ:
সহযোদ্ধা ও অধিনায়ক ক্লাইভ লয়েড তাকে স্মরণ করলেন গভীর ভালোবাসায়, “ও সবসময় শতভাগ দিতো, দায়িত্ব থেকে কখনো পিছু হটেনি। ব্যাট হাতে বা বল হাতে আমি সবসময় তার ওপর নির্ভর করতে পারতাম। সে ছিল প্রকৃত অর্থেই এক সম্পূর্ণ ক্রিকেটার।”
লয়েড আরও বলেন, “ওর মধ্যে ছিল আনন্দ, ছিল বিনয়। লর্ডসে একবার টেস্ট জেতার পর ঘণ্টার পর ঘণ্টা দর্শকদের সঙ্গে দাঁড়িয়ে ছিলাম, অটোগ্রাফ দিয়েছিলাম। সেই আনন্দে সবার আগে ছিল জুলিয়েন। মানুষ তাকে ভালোবাসতো, সম্মান করতো, যেখানেই গেছি।”
ক্ষণজীবী কিন্তু উজ্জ্বল এক ক্যারিয়ার:
জুলিয়েনের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার ছিল মাত্র চার বছরের, ১৯৭৩ থেকে ১৯৭৭ পর্যন্ত। এই সময়ে তিনি খেলেছেন ২৪ টেস্ট ও ১২ ওয়ানডে। টেস্টে ৮৬৬ রান ও ৫০ উইকেট, ওয়ানডেতে ৮৬ রান ও ১৮ উইকেট; সংখ্যায় হয়তো বিশাল নয়, কিন্তু প্রভাব ছিল বিশুদ্ধ স্বর্ণের মতো।
তিনি ছিলেন সেই যুগের অংশ, যখন ক্যারিবিয়ান ক্রিকেটে ছন্দ, সাহস আর গর্ব এক হয়ে উঠেছিল। যে সময়ের ওয়েস্ট ইন্ডিজ ছিল বিশ্ব ক্রিকেটের অপ্রতিরোধ্য প্রতীক।
শ্রদ্ধা জানাল ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট বোর্ড:
ক্রিকেট ওয়েস্ট ইন্ডিজের সভাপতি কিশোর শ্যালো বলেন, “বার্নার্ড জুলিয়েনকে সম্মান জানাতে গিয়ে আমরা শুধু একজন ক্রিকেটার নয়, এক অধ্যায়ের প্রতিফলনকেও স্মরণ করছি। তার জীবন প্রমাণ করে, উদ্দেশ্যনিষ্ঠ জীবন কখনো শেষ হয় না।”
তিনি আরও যোগ করেন, “তার পরিবার, বন্ধুবান্ধব এবং প্রিয়জনদের প্রতি আমাদের গভীর সমবেদনা। জুলিয়েন আমাদের ক্রিকেট ইতিহাসের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে থাকবেন, যে উত্তরাধিকার কখনো ম্লান হবে না।”
এক উত্তরাধিকারের নাম- বার্নার্ড জুলিয়েন:
বার্নার্ড জুলিয়েনের গল্প কেবল একজন ক্রিকেটারের নয়, এটি এক জাতির জেগে ওঠার গল্প। তিনি খেলেছিলেন এমন এক সময়, যখন ক্যারিবিয়ান ক্রিকেট শিখছিল নিজের ছন্দে নাচতে। আর সেই সুরে তিনি ছিলেন প্রথম তালবাদক।
আজ তিনি নেই, কিন্তু তার বলের সুইং, ব্যাটের দৃঢ়তা, মাঠে ছুটে যাওয়া সেই প্রাণচঞ্চল হাসি; সবই রয়ে যাবে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেটের স্মৃতির পাতায়।
ঢাকা/আমিনুল