প্রকল্পের ফাইল উপদেষ্টা কেন বাসায় নিয়ে যান?
Published: 6th, October 2025 GMT
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের কোনো প্রকল্পের ফাইল মন্ত্রণালয়ে গেলে তা অনুমোদন করা হয় না বলে অভিযোগ করেছেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন। এমনকি মন্ত্রণালয় থেকে ফাইল ‘গায়েব’ হয়ে যায় উল্লেখ করে মেয়র কোনো রাখঢাক না রেখেই বলেছেন, প্রকল্পের ফাইল স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা বাসায় নিয়ে যান।
মেয়রের অভিযোগ কতটা সত্য আমরা জানি না, কিন্তু জনসমক্ষে তাঁর এ মন্তব্য নিঃসন্দেহে ‘দুঃসাহসী’। কারণ, তাঁর এক পূর্বসূরির পরিণতি নিশ্চয় তিনি বিস্মৃত হননি।
২০১৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে চট্টগ্রামের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন, যিনি তখন সরকারি দলের চট্টগ্রাম নগরের সাধারণ সম্পাদকও। তিনি সরাসরি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে প্রকল্প অনুমোদনের জন্য ঘুষ চাওয়ার অভিযোগ করেছিলেন। এ অভিযোগ নিয়ে তখন সরকারি মহলে তোলপাড় হয়েছিল। মন্ত্রণালয়ের তৎকালীন সচিব মেয়র নাছিরের এ অভিযোগকে ‘গুরুতর’ বলে এর ব্যাখ্যা দাবি করেছিলেন।
এরপর পাল্টাপাল্টি চিঠি চালাচালি হয়েছে। কিন্তু ঘটনার সত্যাসত্য বিষয়ে কিছু জানার সৌভাগ্য আমাদের হয়নি। তবে মেয়রের এ অভিযোগ যে সরকারের উচ্চ মহল ভালোভাবে নেয়নি, তার প্রমাণ পরে বিভিন্নভাবে পাওয়া গেছে। ঢাকা সিটি করপোরেশনের দুই অংশের মেয়রকে পূর্ণমন্ত্রীর তো বটেই, নারায়ণগঞ্জ, রাজশাহী ও খুলনার মেয়রকে প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদা দেওয়া হলেও চট্টগ্রামের মেয়রকে সে রকম কোনো পদমর্যাদা দেওয়া হয়নি। এমনকি পরবর্তী মেয়াদে নাছিরকে যে মেয়র পদে দলীয় মনোনয়নও দেওয়া হয়নি, তা-ও সেই ‘ঔদ্ধত্যেরই’ শাস্তি বলে মনে করেন অনেকে।
প্রশ্ন হচ্ছে উপদেষ্টা মহোদয় ফাইল কেন বাসায় নিয়ে যান? বিশেষভাবে মনোযোগ দেবেন বলে, নাকি তিনি চান এটা লোকচক্ষুর অন্তরালে চলে যাক?এসব উদাহরণ হাতের কাছে থাকার পরও বর্তমান মেয়র স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের গড়িমসি এবং উপদেষ্টার অনীহার প্রতি সরাসরি আঙুল তুললেন কেন? ঝুঁকির ব্যাপারটি মাথায় থাকার পরও অকপটে প্রসঙ্গটি উত্থাপন করার পেছনে নিশ্চয়ই ক্ষোভ-বেদনা জড়িয়ে আছে।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনকে মূলত উন্নয়নকাজ পরিচালনা করতে হয় বিভিন্ন প্রকল্প থেকে পাওয়া অর্থ দিয়ে। হোল্ডিং ট্যাক্সের আয় থেকে সামান্য অংশই আসে। এখন সেই প্রকল্পগুলোর ফাইল যদি ওপরে গিয়ে আটকে থাকে, তাহলে যে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড স্থবির হয়ে যাবে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই।
আরও পড়ুনস্থানীয় সরকার সংস্কার: কমিশনের সুপারিশ কেন দ্রুত বাস্তবায়ন করা প্রয়োজন১৮ জুলাই ২০২৫মেয়র যে অনুষ্ঠানে এসব অভিযোগ তুলেছেন, একই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব। তিনি সিটি করপোরেশনকে আয় বাড়াতে পরামর্শ দিয়েছেন। হোল্ডিং ট্যাক্স, ব্যবসা বাড়ানোসহ নানাভাবে আয় বাড়ানো যায় উল্লেখ করে তিনি বলেন, সিটি করপোরেশন যত বেশি সরকারের ওপর নির্ভরশীল হবে, তত সিটি গভর্নমেন্টের ধারণাও পিছিয়ে যাবে।
সিটি গভর্নমেন্ট বা নগর সরকারের কথা যখন উঠলই, তখন মেয়র মহিউদ্দিন চৌধুরীর কথা মনে পড়া স্বাভাবিক। মহিউদ্দিন বারবার নগর সরকার প্রতিষ্ঠার দাবি তুলেছিলেন। তিনি বলতেন, ‘আমরা অনুদান চাই না, অনুমোদন চাই।’ কিন্তু সরকার তাঁর দাবি উপেক্ষা করেছে। বিএনপি ও আওয়ামী লীগ—দুই সরকারের আমলেই মহিউদ্দিন চৌধুরী মেয়র ছিলেন। বিএনপি তো দাবি মানেইনি, নিজের দল আওয়ামী লীগ সরকারের কাছেও প্রত্যাখ্যাত হয়েছিল তাঁর প্রস্তাব।
সিটি করপোরেশনের আয়বর্ধনের জন্য যেসব প্রকল্প হাতে নিয়েছিলেন মহিউদ্দিন চৌধুরী, তা নিয়েও আছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। তিনি একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। সেটা শিক্ষানুরাগীদের কাছে প্রশংসিত হয়েছিল। এটি আয়বর্ধক প্রকল্প হিসেবেও সাফল্য পেয়েছিল। কিন্তু এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষের জন্য নগরের প্রবর্তক এলাকায় একটি বড় নালার ওপর বহুতল ভবন বানিয়ে তিনি পরিবেশবিদদের সমালোচনার পাত্র হয়েছিলেন। কারণ, ওই ভবন একটি বড় এলাকাজুড়ে জলাবদ্ধতার অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল।
এ ছাড়া আয়বর্ধক প্রকল্প হিসেবে নগরের বিভিন্ন এলাকায় খালি জায়গার ওপর বিপণিকেন্দ্র নির্মাণ করে সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন। যত্রতত্র বিজ্ঞাপনের বিলবোর্ড স্থাপনের অনুমতি দিয়েও নগরবাসীর বিরূপভাজন হতে হয়েছিল তাঁকে। পরবর্তীকালে মেয়র নাছির উদ্দীন সেসব বিলবোর্ড অপসারণ করে প্রশংসিত হয়েছিলেন। সেই নাছির উদ্দীনই আবার ষোলশহর বিপ্লব উদ্যানসহ নগরের বিভিন্ন স্থানে দোকানপাট তৈরির অনুমতি দিয়েছিলেন করপোরেশনের আয় বৃদ্ধির নামে। কিন্তু নগরের সৌন্দর্যহানি, শ্বাস নেওয়ার মুক্ত জায়গাগুলো কেড়ে নেওয়ার জন্য সমালোচিত হয়েছিলেন তিনিও।
অর্থাৎ প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী যে আয়বর্ধক প্রকল্প গ্রহণের জন্য পরামর্শ দিচ্ছেন, অতীতে তা কোনো ভালো ফল বয়ে আনেনি। এমনকি এ ধরনের উদ্যোগে সবচেয়ে সৃজনশীলতার পরিচয় দিয়ে মহিউদ্দিন চৌধুরীর মতো জনপ্রিয় মেয়র আদায় করতে পারেননি নগর সরকার প্রতিষ্ঠার দাবিও। তাই শাহাদাত হোসেনকে সেই পরামর্শ দেওয়া সুফলদায়ক মনে হয় না।
মনে রাখতে হবে, সিটি করপোরেশন একটি সেবামূলক সংস্থা। নাগরিকদের কাছ থেকে হোল্ডিং ট্যাক্স আদায়ের ব্যাপারে আরও কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া যায়। এই খাতকে দুর্নীতিমুক্ত করাও দরকার। কিন্তু করের বোঝা বাড়ানোর চেষ্টা যে সহজসাধ্য নয়, তা আমরা আগের দুই মেয়রের আমলে দেখেছি। তখন এর বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন নাগরিকেরা।
চট্টগ্রামের মেয়র আক্ষেপ করে বলেছেন, ‘আমাদের তিনটি প্রজেক্ট এলজিআরডি মিনিস্ট্রিতে আছে। অ্যাডভাইজার সাহেব যখন দেখেন যে এটা একটা প্রজেক্ট, তখন উনি ফাইলটা আর মিনিস্ট্রিতে রাখেন না। উনি সেটা ঘরে নিয়ে যান। দিস ইজ দ্য প্যাথেটিক সিনারিও দ্যাট উই ফেসিং নাও আ ডেইজ।’
প্রশ্ন হচ্ছে, উপদেষ্টা মহোদয় ফাইল কেন বাসায় নিয়ে যান? বিশেষভাবে মনোযোগ দেবেন বলে, নাকি তিনি চান এটা লোকচক্ষুর অন্তরালে চলে যাক?
বিশ্বজিৎ চৌধুরী প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক, কবি ও সাহিত্যিক
[email protected]
মতামত লেখকের নিজস্ব
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: স থ ন য় সরক র ত হয় ছ ল সরক র র প রকল প উপদ ষ ট মন ত র র জন য নগর র
এছাড়াও পড়ুন:
প্রকল্পের ফাইল উপদেষ্টা কেন বাসায় নিয়ে যান?
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের কোনো প্রকল্পের ফাইল মন্ত্রণালয়ে গেলে তা অনুমোদন করা হয় না বলে অভিযোগ করেছেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন। এমনকি মন্ত্রণালয় থেকে ফাইল ‘গায়েব’ হয়ে যায় উল্লেখ করে মেয়র কোনো রাখঢাক না রেখেই বলেছেন, প্রকল্পের ফাইল স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা বাসায় নিয়ে যান।
মেয়রের অভিযোগ কতটা সত্য আমরা জানি না, কিন্তু জনসমক্ষে তাঁর এ মন্তব্য নিঃসন্দেহে ‘দুঃসাহসী’। কারণ, তাঁর এক পূর্বসূরির পরিণতি নিশ্চয় তিনি বিস্মৃত হননি।
২০১৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে চট্টগ্রামের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন, যিনি তখন সরকারি দলের চট্টগ্রাম নগরের সাধারণ সম্পাদকও। তিনি সরাসরি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে প্রকল্প অনুমোদনের জন্য ঘুষ চাওয়ার অভিযোগ করেছিলেন। এ অভিযোগ নিয়ে তখন সরকারি মহলে তোলপাড় হয়েছিল। মন্ত্রণালয়ের তৎকালীন সচিব মেয়র নাছিরের এ অভিযোগকে ‘গুরুতর’ বলে এর ব্যাখ্যা দাবি করেছিলেন।
এরপর পাল্টাপাল্টি চিঠি চালাচালি হয়েছে। কিন্তু ঘটনার সত্যাসত্য বিষয়ে কিছু জানার সৌভাগ্য আমাদের হয়নি। তবে মেয়রের এ অভিযোগ যে সরকারের উচ্চ মহল ভালোভাবে নেয়নি, তার প্রমাণ পরে বিভিন্নভাবে পাওয়া গেছে। ঢাকা সিটি করপোরেশনের দুই অংশের মেয়রকে পূর্ণমন্ত্রীর তো বটেই, নারায়ণগঞ্জ, রাজশাহী ও খুলনার মেয়রকে প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদা দেওয়া হলেও চট্টগ্রামের মেয়রকে সে রকম কোনো পদমর্যাদা দেওয়া হয়নি। এমনকি পরবর্তী মেয়াদে নাছিরকে যে মেয়র পদে দলীয় মনোনয়নও দেওয়া হয়নি, তা-ও সেই ‘ঔদ্ধত্যেরই’ শাস্তি বলে মনে করেন অনেকে।
প্রশ্ন হচ্ছে উপদেষ্টা মহোদয় ফাইল কেন বাসায় নিয়ে যান? বিশেষভাবে মনোযোগ দেবেন বলে, নাকি তিনি চান এটা লোকচক্ষুর অন্তরালে চলে যাক?এসব উদাহরণ হাতের কাছে থাকার পরও বর্তমান মেয়র স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের গড়িমসি এবং উপদেষ্টার অনীহার প্রতি সরাসরি আঙুল তুললেন কেন? ঝুঁকির ব্যাপারটি মাথায় থাকার পরও অকপটে প্রসঙ্গটি উত্থাপন করার পেছনে নিশ্চয়ই ক্ষোভ-বেদনা জড়িয়ে আছে।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনকে মূলত উন্নয়নকাজ পরিচালনা করতে হয় বিভিন্ন প্রকল্প থেকে পাওয়া অর্থ দিয়ে। হোল্ডিং ট্যাক্সের আয় থেকে সামান্য অংশই আসে। এখন সেই প্রকল্পগুলোর ফাইল যদি ওপরে গিয়ে আটকে থাকে, তাহলে যে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড স্থবির হয়ে যাবে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই।
আরও পড়ুনস্থানীয় সরকার সংস্কার: কমিশনের সুপারিশ কেন দ্রুত বাস্তবায়ন করা প্রয়োজন১৮ জুলাই ২০২৫মেয়র যে অনুষ্ঠানে এসব অভিযোগ তুলেছেন, একই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব। তিনি সিটি করপোরেশনকে আয় বাড়াতে পরামর্শ দিয়েছেন। হোল্ডিং ট্যাক্স, ব্যবসা বাড়ানোসহ নানাভাবে আয় বাড়ানো যায় উল্লেখ করে তিনি বলেন, সিটি করপোরেশন যত বেশি সরকারের ওপর নির্ভরশীল হবে, তত সিটি গভর্নমেন্টের ধারণাও পিছিয়ে যাবে।
সিটি গভর্নমেন্ট বা নগর সরকারের কথা যখন উঠলই, তখন মেয়র মহিউদ্দিন চৌধুরীর কথা মনে পড়া স্বাভাবিক। মহিউদ্দিন বারবার নগর সরকার প্রতিষ্ঠার দাবি তুলেছিলেন। তিনি বলতেন, ‘আমরা অনুদান চাই না, অনুমোদন চাই।’ কিন্তু সরকার তাঁর দাবি উপেক্ষা করেছে। বিএনপি ও আওয়ামী লীগ—দুই সরকারের আমলেই মহিউদ্দিন চৌধুরী মেয়র ছিলেন। বিএনপি তো দাবি মানেইনি, নিজের দল আওয়ামী লীগ সরকারের কাছেও প্রত্যাখ্যাত হয়েছিল তাঁর প্রস্তাব।
সিটি করপোরেশনের আয়বর্ধনের জন্য যেসব প্রকল্প হাতে নিয়েছিলেন মহিউদ্দিন চৌধুরী, তা নিয়েও আছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। তিনি একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। সেটা শিক্ষানুরাগীদের কাছে প্রশংসিত হয়েছিল। এটি আয়বর্ধক প্রকল্প হিসেবেও সাফল্য পেয়েছিল। কিন্তু এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষের জন্য নগরের প্রবর্তক এলাকায় একটি বড় নালার ওপর বহুতল ভবন বানিয়ে তিনি পরিবেশবিদদের সমালোচনার পাত্র হয়েছিলেন। কারণ, ওই ভবন একটি বড় এলাকাজুড়ে জলাবদ্ধতার অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল।
এ ছাড়া আয়বর্ধক প্রকল্প হিসেবে নগরের বিভিন্ন এলাকায় খালি জায়গার ওপর বিপণিকেন্দ্র নির্মাণ করে সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন। যত্রতত্র বিজ্ঞাপনের বিলবোর্ড স্থাপনের অনুমতি দিয়েও নগরবাসীর বিরূপভাজন হতে হয়েছিল তাঁকে। পরবর্তীকালে মেয়র নাছির উদ্দীন সেসব বিলবোর্ড অপসারণ করে প্রশংসিত হয়েছিলেন। সেই নাছির উদ্দীনই আবার ষোলশহর বিপ্লব উদ্যানসহ নগরের বিভিন্ন স্থানে দোকানপাট তৈরির অনুমতি দিয়েছিলেন করপোরেশনের আয় বৃদ্ধির নামে। কিন্তু নগরের সৌন্দর্যহানি, শ্বাস নেওয়ার মুক্ত জায়গাগুলো কেড়ে নেওয়ার জন্য সমালোচিত হয়েছিলেন তিনিও।
অর্থাৎ প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী যে আয়বর্ধক প্রকল্প গ্রহণের জন্য পরামর্শ দিচ্ছেন, অতীতে তা কোনো ভালো ফল বয়ে আনেনি। এমনকি এ ধরনের উদ্যোগে সবচেয়ে সৃজনশীলতার পরিচয় দিয়ে মহিউদ্দিন চৌধুরীর মতো জনপ্রিয় মেয়র আদায় করতে পারেননি নগর সরকার প্রতিষ্ঠার দাবিও। তাই শাহাদাত হোসেনকে সেই পরামর্শ দেওয়া সুফলদায়ক মনে হয় না।
মনে রাখতে হবে, সিটি করপোরেশন একটি সেবামূলক সংস্থা। নাগরিকদের কাছ থেকে হোল্ডিং ট্যাক্স আদায়ের ব্যাপারে আরও কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া যায়। এই খাতকে দুর্নীতিমুক্ত করাও দরকার। কিন্তু করের বোঝা বাড়ানোর চেষ্টা যে সহজসাধ্য নয়, তা আমরা আগের দুই মেয়রের আমলে দেখেছি। তখন এর বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন নাগরিকেরা।
চট্টগ্রামের মেয়র আক্ষেপ করে বলেছেন, ‘আমাদের তিনটি প্রজেক্ট এলজিআরডি মিনিস্ট্রিতে আছে। অ্যাডভাইজার সাহেব যখন দেখেন যে এটা একটা প্রজেক্ট, তখন উনি ফাইলটা আর মিনিস্ট্রিতে রাখেন না। উনি সেটা ঘরে নিয়ে যান। দিস ইজ দ্য প্যাথেটিক সিনারিও দ্যাট উই ফেসিং নাও আ ডেইজ।’
প্রশ্ন হচ্ছে, উপদেষ্টা মহোদয় ফাইল কেন বাসায় নিয়ে যান? বিশেষভাবে মনোযোগ দেবেন বলে, নাকি তিনি চান এটা লোকচক্ষুর অন্তরালে চলে যাক?
বিশ্বজিৎ চৌধুরী প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক, কবি ও সাহিত্যিক
[email protected]
মতামত লেখকের নিজস্ব