বসতি দিবসে মুজিব শতবর্ষের লোগো সম্বলিত লিফলেট বিতরণ করেছে কেডিএ
Published: 6th, October 2025 GMT
বিশ্ব বসতি দিবসে মুজিব শতবর্ষ লোগো সম্বলিত লিফলেট বিতরণ করেছে খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (কেডিএ)।
দিবসটি উপলক্ষে সোমবার (৬ অক্টোবর) র্যালি, আলোচনা সভা, কুইজ প্রতিযোগিতাসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করে কেডিএ। খুলনার শিল্পকলা একাডেমিতে আলোচনা সভায় অতিথিসহ সব আমন্ত্রিতদের হাতে তুলে দেওয়া হয় মুজিবের লোগো সম্বলিত লিফলেট।
আরো পড়ুন:
শেখ মুজিবের মৃত্যুবার্ষিকীতে দোয়া মাহফিল, গ্রেপ্তার ৪
কিশোরগঞ্জে শেখ মুজিবের মৃত্যুবার্ষিকী পালন, ২ শিক্ষক জেলে
এদিকে কেডিএ এর এমন বিতর্কিত কাজে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন অনুষ্ঠানে আসা আমন্ত্রিতরা। প্রতিবাদ করেন সভাস্থলেই।
খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের দেওয়া মুজিব লোগো সম্বলিত লিফলেটে দেখা যায়, পরিকল্পনা শাখার নাম। এ ব্যাপারে কেডিএ এর পরিকল্পনা কর্মকর্তা তানভীর আহম্মেদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
তবে বিষয়টির সত্যতা স্বীকার করেছেন কেডিএ চেয়ারম্যানের দপ্তরের উপ-পরিচালক ইজাদুর রহমান।
তিনি বলেন, “কিছু লিফলেট গাড়িতে রাখা ছিল। যেগুলো ভুলক্রমে বিতরণ করা হয়েছে। নতুন লিফলেটের পরিবর্তে অফিস থেকে পুরাতন লিফলেট ভুল করে নেওয়া হয়েছে।”
এ ঘটনায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত অনেকেই চরম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের এমন কাজ গণঅভ্যুত্থানের চেতনাকে চরমভাবে অসম্মান করেছে, যা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া হবে না। গণহত্যাকারী শেখ হাসিনার বাবার প্রতি জাতির কোনো শ্রদ্ধা নেই। এতকিছুর পরও যারা তার উপর শ্রদ্ধা দেখাচ্ছেন, কেডিএ এর সেসব কর্মকর্তারা স্বৈরাচারের দোসর।
জুলাই যোদ্ধা সাজিদুল ইসলাম বাপ্পি বলেন, “ফ্যাসিস্ট হাসিনা বিদায় নিলেও প্রশাসনে এখনো তাদের দোসররা নেতৃত্ব দিচ্ছে। কেডিএ এর মুজিবের লোগো সম্বলিত লিফলেট বিতরণ কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তদন্ত করে এ কাজের সঠিক বিচার না হলে আমরা কঠোর আন্দোলন করতে বাধ্য হব।”
তিনি বলেন, “এর সঙ্গে জড়িত কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না। গণ-অভ্যুত্থানের এতগুলো মানুষের জীবনের বিনিময়ে যে স্বাধীনতা অর্জন করা হয়েছে। কেডিএ এর এ ধরনের কাজ সেই শহীদদের অপমানের সমান। এটা কোনো ছাত্র-জনতা মেনে নেবে না।”
এ বিষয়ে খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, “খুবই দুঃখজনক ঘটনা ঘটে গেলো। আমরা অনেক লিফলেট বিতরণ করেছি। এর সঙ্গে পুরোনো কিছু লিফলেট চলে গেছে। আমরা যখন এটা জানতে পেরেছি, তখনই এগুলোকে বাতিল করেছি। ভুলবশত এটি হয়েছে। এ বিষয়ে খুঁজে দেখে অবশ্যই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”
ঢাকা/নুরুজ্জামান/মেহেদী
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর শ খ ম জ ব র রহম ন ব তরণ কর ক ড এ এর
এছাড়াও পড়ুন:
এক বাড়িতে দুটি সচল কুয়া
পুরান ঢাকার ফরাশগঞ্জে মোহিনী মোহন দাস লেনের এক পুরোনো বাড়ি। স্মৃতিমাখা দরজা, উঠানে বর্ষীয়ান গাছ, দেয়ালে মোগল আমলের নকশা—সব মিলিয়ে অনেক ঐতিহ্যবাহী বাড়ির মতোই একটি। তবে এই বাড়ির বিশেষত্ব ভিন্ন জায়গায়—এখানে এখনো টিকে আছে দুটি সচল কুয়া। বারো পরিবারে ভাগ হয়ে যাওয়া বাড়িতে দুটো কুয়াই এখনো নিয়মিত ব্যবহার করেন সবাই।
১৭ সেপ্টেম্বর দুপুরে মোহিনী মোহন দাস লেনের এ বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল, মূল প্রবেশপথের ডান দিকে থাকা কুয়া থেকে পানি তুলে কাপড় ধুচ্ছেন এক বাসিন্দা। তিনি জানালেন, এখন পানি অনেকটা নেমেছে, তবে বর্ষায় পানি কুয়ার মুখ পর্যন্ত চলে আসে। এটি বাড়ির প্রথম কুয়া। কয়েক পরিবারের ঘর অতিক্রম করে বাড়ির পেছন দিকে গিয়ে মন্দিরের কাছে দ্বিতীয় কুয়াটি। সেখানে একটু গাছপালা আছে। কুয়াটি খানিকটা উঁচু দেখে বোঝা যায় পরে বাঁধানো হয়েছে। এর দেয়ালটাও চওড়া। পানিটা তুলনামূলক স্বচ্ছ, ওপরের গাছের প্রতিবিম্ব স্পষ্ট দেখা গেল কুয়ার পানিতে।
এই বাড়ির তৃতীয় তলায় থাকেন প্রয়াত আলোকচিত্রী বিজন সরকারের ছেলে জয়ব্রত সরকার। তিনি বলেন, ‘দুই দশক আগে এক লোক এসে পরিষ্কার করেছিলেন। হাড়জিরজিরে সেই ব্যক্তি একদমে কুয়ার তলা থেকে মাটি তুলে এনেছিলেন। এরপর আর পরিষ্কার করতে দেখিনি। তবে আমাদের নবতিপূর্ণা এক বাসিন্দা বলেছেন, জন্মের পর থেকেই কুয়াগুলোকে এমন অবস্থায় দেখছেন।’
ফলে ধারণা করা হয়, কুয়াগুলো অন্তত শতবর্ষী। সম্ভবত আরও পুরোনো।
ঢাকায় সচল কুয়া এখন বিরল। গেন্ডারিয়ার কালীচরণ সাহা লেনের ১০ নম্বর খাজাঞ্চি বাড়িতে এখনো তিনটি কুয়া আছে, তবে ব্যবহৃত হয় না বলে জানালেন এ বাড়ির বাসিন্দা দীপ্রদাস। নারিন্দা ও শাঁখারীবাজারের কিছু বাড়িতেও কুয়ার খোঁজ মেলে। তবে একই বাড়িতে দুটি সচল কুয়ার কথা আর শোনা যায়নি।
গত বছর ফরাশগঞ্জের বি কে দাস লেনের ‘বড়বাড়ি’ নামে পরিচিত ঐতিহাসিক বাড়িটিতে সচল কুয়া দেখেছিলাম। সম্প্রতি গিয়ে দেখা গেল, কুয়াটি ভরাট করে দেওয়া হয়েছে। এখানকার একজন নির্মাণশ্রমিক বললেন, এখন কলের পানিই যথেষ্ট। তাই বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তবু সেই হারিয়ে যাওয়া কুয়ার জায়গাটি খুঁজতে গিয়ে আবিষ্কার করলাম, সঙ্গে থাকা প্রাচীরের গায়ে ঐতিহ্যময় কারুকাজ এখনো রয়েছে। কুয়াটি ঢেকে গেছে বাতিল কাঠ আর এক টুকরো টিনে।
ঢাকার মানুষ একসময় বুড়িগঙ্গা ও শীতলক্ষ্যার পানির ওপর নির্ভর করত। তবে বাড়ি বাড়ি পানির একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস ছিল কুয়া। পানির স্তর নেমে যাওয়ায় এসব কুয়া পরিত্যক্ত হয়েছে আরও অনেক আগেই। তবু এই জোড়া কুয়ায় কেমন করে বারো মাস পানি থাকে! এসব নিয়ে জানতে চাইলে গবেষণা সংস্থা ইনস্টিটিউট অব ওয়াটার মডেলিংয়ের জ্যেষ্ঠ বিশেষজ্ঞ ইসমাত আরা পারভিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঢাকায় সচল কুয়া পাওয়া বিস্ময়কর। এখন ১০০–২০০ ফুট গভীর থেকে পানি ওঠে না। ২০০ ফুটের নিচে গিয়ে লোয়ার লেয়ার থেকে পানি তুলতে হয়। সাধারণত কুয়া ৩০ থেকে ৬০ ফুট গভীর হয়। নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ না হলে এগুলো ভরাট হয়ে যায়।’ তিনি মনে করেন, কুয়াগুলো শতবর্ষী হলে তা শুধু পানির উৎস নয়, ঐতিহাসিক নিদর্শনও বটে।
প্রাত্যহিক কাজে নিয়মিত ব্যবহার করা হয় কুয়াটির পানি