Prothomalo:
2025-11-22@07:23:54 GMT

হঠাৎ দেখা কস্তুরা পাখি 

Published: 7th, October 2025 GMT

বর্ষায় দার্জিলিংয়ের রূপ দেখতে ছয়জনের দল ২০১৬-এর জুলাইয়ে কলকাতা গিয়েছি। শিয়ালদহ থেকে সারা রাত ট্রেনে চেপে ভোরে শিলিগুড়ি নামলাম। ফুলেল শুভেচ্ছা জানিয়ে গাইড গাড়ি ছাড়লেন। পাহাড়ি আঁকাবাঁকা পথে এগিয়ে চলেছি। চারদিকের দৃশ্য অপরূপ! কোথাও কোথাও মেঘ যেন আমাদের ছুঁয়ে যাচ্ছে? ভালো ভিউ পেলেই গাড়ি থামাচ্ছি, ছবি তুলছি। নেপাল সীমান্ত ‘সীমানা’য় পৌঁছানোর পর হালকা বৃষ্টি শুরু হলো। গাড়ি থেকে নেমে বৃষ্টিতে খানিকটা ভিজলাম। বেশ লাগল। বেলা একটায় ‍বৃষ্টি মাথায় নিয়ে হোটেল মেঘমায় উঠলাম। দুপুরের খাবার সেরে ‘টিবেতান কালচারাল মিউজিয়াম’-এ গেলাম। সন্ধ্যায় শহরময় ঘুরে বেড়ালাম।

পরদিন কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখার জন্য ভোর পাঁচটায় টাইগার হিলে গেলাম। কিন্তু মেঘ ও ঘন কুয়াশার কারণে কাঞ্চনজঙ্ঘার দেখা মিলল না। ওখান থেকে দার্জিলিং হিমালয়ান রেলের বাতাসিয়া লুপে গেলাম। সেখানে পুরো এলাকা একবার মেঘে ঢাকে, তো পরক্ষণেই ফকফকা। ঘণ্টাখানেক ঘোরাঘুরি করে সাড়ে সাতটা নাগাদ ঘুম মনাস্টারিতে গেলাম। মাত্র আধা ঘণ্টায় মনাস্টারি ঘুরে প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য ঝরনা দেখতে রক গার্ডেনে গেলাম।

রক গার্ডেন এমনিতেই সুন্দর। কিন্তু বিশাল ঝরনা ও তার জলপ্রবাহ গার্ডেনের সৌন্দর্য আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। পাহাড়ে ওঠার জন্য ঝরনার চারদিকে চমৎকার রাস্তা। যদিও পাহাড়ি রাস্তা ও সিঁড়ি ভাঙতে কষ্ট হচ্ছিল, কিন্তু ঝরনা ও ফুলের বাগানের সৌন্দর্যে সে কষ্ট ভুলে গেলাম। তবে একটি জিনিসের অভাব বোধ করছিলাম। কিন্তু সিঁড়ি বেয়ে ওপরে ওঠার সময় হঠাৎই গাছের ডালে শিস দেওয়া কালচে-নীল দুর্লভ বিহঙ্গের উপস্থিতি সেই অভাবও পূরণ করল। পটাপট ওর কিছু ছবি তুললাম। ফিরতি পথে ঝরনার মাঝখানের বিশাল এক শিলার ওপর পাখিটিকে বসে থাকতে দেখলাম। এবার ওর চমৎকার ছবি পেলাম। দুপুরে একই প্রজাতির আরেকটি পাখি দেখলাম দার্জিলিং চিড়িয়াখানা চত্বরে।

দুই বছর পর আবারও পাখিটিকে দেখলাম ভুটানের জিগমে দরজি জাতীয় উদ্যানের একটি পাথুরে জলধারার পাশে। তবে দেশের মাটিতে দেখতে আরও তিন বছর অপেক্ষা করতে হলো। হবিগঞ্জের সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানের পুণ্যি পুকুরে স্নান করতে আসা পাখিটিকে দেখি ২০২১ সালের ১০ মার্চ বিকেলে।

এতক্ষণ কালচে-নীল দেহের শিস দেওয়া যে পাখিটির কথা বললাম, তা এ দেশের দুর্লভ পরিযায়ী পাখি কস্তুরা। অবশ্য এ দেশের বেশির ভাগ মানুষই ওকে চেনে নীল শিস দামা নামে। কস্তুরা পশ্চিমবঙ্গের নাম। এ ছাড়া অবশ্য পাহাড়ি কস্তুরা, কালজিত বা কলচুরা নামেও পরিচিত। পরিযায়ী হলেও একবার বান্দরবানের আলী কদমে এর একটি বাসা পাওয়া গিয়েছিল। সে কারণেই অনেকে ওকে আবাসিক মর্যাদা দিতে চান। ইংরেজি নাম ব্লু হুইসলিং থ্রাস। গোত্র Muscicapidae, বৈজ্ঞানিক নাম Myophonus caeruleus। বাংলাদেশ ছাড়া এশিয়ার বিভিন্ন দেশে দেখা যায়।

কস্তুরার দেহের গড় দৈর্ঘ্য ৩৩ সেন্টিমিটার। গড় ওজন ১৬৫ গ্রাম। পুরো দেহ উজ্জ্বল কালচে-নীল। কপাল, ডানার পাশ ও লেজ বেশি উজ্জ্বল। প্রাপ্তবয়স্ক পাখির দেহে উজ্জ্বল রুপালি-নীল তিলা থাকে, যা অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখিতে দেখা যায় না। চোখ কালচে বাদামি। চঞ্চু হলুদ। পা, পায়ের পাতা ও নখ কালো, কিন্তু পায়ের তলা হলদে-ধূসর। স্ত্রী-পুরুষের চেহারায় পার্থক্য নেই। অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখি ফ্যাকাশে বাদামি-নীল।

পশ্চিমবঙ্গের দার্জিলিংয়ের রক গার্ডেনে ঝরনার পাশে কস্তুরা.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স ন দর

এছাড়াও পড়ুন:

বার্বির জয়যাত্রা: নারীর অবমাননা নাকি ক্ষমতায়নের পক্ষে

গ্রেটা গারউইগ পরিচালিত ‘বার্বি’ আর ক্রিস্টোফার নোলানের ‘ওপেনহেইমার’ সিনেমা দুটি প্রায় একই সময়ে মুক্তি পায়। দেখা গেল, হাইপের দিক থেকে ‘বার্বি’ পেছনে ফেলে দিয়েছে ‘ওপেনহেইমার’কেও। অ্যাটম বোমার ‘জনক’ ওপেনহেইমারের বায়োফিকশন তলিয়ে গেল খেলনা পুতুলের কাছে! পারমাণবিক ধ্বংসলীলার চেয়েও মানবিক পুতুলের বেশি মনোযোগপ্রাপ্তি সম্ভবত পৃথিবীর জন্যও আনন্দের ব্যাপার! তবে ব্যাপারটা এত সরল নয় মোটেও।

১.

ছোট্ট মেয়ে বারবারা। পুতুল খেলতে পছন্দ করে খুব। আর কী সৌভাগ্য, তার মা–বাবাই কিনা খেলনা নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ম্যাটেলের অন্যতম সহ-উদ্যোক্তা। মা রুথ হ্যান্ডলার লক্ষ করলেন, বাচ্চা-পুতুলের চেয়ে পরিণত বয়সী কমিকস-কার্টুন তথা পুতুলের প্রতিচ্ছবিই মেয়ে যেন বেশি পছন্দ করছে। এমনকি বাচ্চা–পুতুলগুলোকেও সে প্রাপ্তবয়স্কদের মতো করে সাজায়, সেভাবেই তাদের চরিত্রায়িত করে।

রুথের মনে এল ভিন্ন ভাবনা। চাহিদা আছে অনুমান করে তিনি তাঁর স্বামী (ম্যাটেলের সহপ্রতিষ্ঠাতা) এলিয়টকে প্রাপ্তবয়স্ক পুতুল নির্মাণ ও বাজারজাতকরণের প্রস্তাব দেন। শুরুতে ম্যাটেলের ক্রিয়েটিভ টিম প্রস্তাবটিকে খুব একটা আমলে নেয়নি।

বছরখানেক পরেই, ১৯৫৬ সালে সপরিবার সুইজারল্যান্ড ভ্রমণের সময় রুথ হ্যান্ডলার ‘বিল্ড লিলি’ নামে একটি এডাল্ট জার্মান পুতুল দেখতে পান। মনে মনে যেমন ভেবেছিলেন, পুতুলটি যেন ঠিক তা–ই। তিনটি কিনে নিলেন। মেয়ে ও স্বামীকে দিলেন একটা করে, আরেকটি ম্যাটেলের ক্রিয়েটিভ টিমকে। এক বছর খাটুনির পর সেটিরই অনুসরণে ম্যাটেল বানিয়ে ফেলল বার্বি—পৃথিবীর প্রথম জনপ্রিয় প্রাপ্তবয়স্ক পুতুল। বার্বি নামটি নেওয়া হলো মেয়ে বারবারার নামানুসারে।

ট্রিবিউট টু স্পেস ওডিসি: বার্বি (২০২৩) সিনেমার প্রথম দৃশ্যে মার্গট রবি

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বার্বির জয়যাত্রা: নারীর অবমাননা নাকি ক্ষমতায়নের পক্ষে