Prothomalo:
2025-10-07@08:04:39 GMT

হঠাৎ দেখা কস্তুরা পাখি 

Published: 7th, October 2025 GMT

বর্ষায় দার্জিলিংয়ের রূপ দেখতে ছয়জনের দল ২০১৬-এর জুলাইয়ে কলকাতা গিয়েছি। শিয়ালদহ থেকে সারা রাত ট্রেনে চেপে ভোরে শিলিগুড়ি নামলাম। ফুলেল শুভেচ্ছা জানিয়ে গাইড গাড়ি ছাড়লেন। পাহাড়ি আঁকাবাঁকা পথে এগিয়ে চলেছি। চারদিকের দৃশ্য অপরূপ! কোথাও কোথাও মেঘ যেন আমাদের ছুঁয়ে যাচ্ছে? ভালো ভিউ পেলেই গাড়ি থামাচ্ছি, ছবি তুলছি। নেপাল সীমান্ত ‘সীমানা’য় পৌঁছানোর পর হালকা বৃষ্টি শুরু হলো। গাড়ি থেকে নেমে বৃষ্টিতে খানিকটা ভিজলাম। বেশ লাগল। বেলা একটায় ‍বৃষ্টি মাথায় নিয়ে হোটেল মেঘমায় উঠলাম। দুপুরের খাবার সেরে ‘টিবেতান কালচারাল মিউজিয়াম’-এ গেলাম। সন্ধ্যায় শহরময় ঘুরে বেড়ালাম।

পরদিন কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখার জন্য ভোর পাঁচটায় টাইগার হিলে গেলাম। কিন্তু মেঘ ও ঘন কুয়াশার কারণে কাঞ্চনজঙ্ঘার দেখা মিলল না। ওখান থেকে দার্জিলিং হিমালয়ান রেলের বাতাসিয়া লুপে গেলাম। সেখানে পুরো এলাকা একবার মেঘে ঢাকে, তো পরক্ষণেই ফকফকা। ঘণ্টাখানেক ঘোরাঘুরি করে সাড়ে সাতটা নাগাদ ঘুম মনাস্টারিতে গেলাম। মাত্র আধা ঘণ্টায় মনাস্টারি ঘুরে প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য ঝরনা দেখতে রক গার্ডেনে গেলাম।

রক গার্ডেন এমনিতেই সুন্দর। কিন্তু বিশাল ঝরনা ও তার জলপ্রবাহ গার্ডেনের সৌন্দর্য আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। পাহাড়ে ওঠার জন্য ঝরনার চারদিকে চমৎকার রাস্তা। যদিও পাহাড়ি রাস্তা ও সিঁড়ি ভাঙতে কষ্ট হচ্ছিল, কিন্তু ঝরনা ও ফুলের বাগানের সৌন্দর্যে সে কষ্ট ভুলে গেলাম। তবে একটি জিনিসের অভাব বোধ করছিলাম। কিন্তু সিঁড়ি বেয়ে ওপরে ওঠার সময় হঠাৎই গাছের ডালে শিস দেওয়া কালচে-নীল দুর্লভ বিহঙ্গের উপস্থিতি সেই অভাবও পূরণ করল। পটাপট ওর কিছু ছবি তুললাম। ফিরতি পথে ঝরনার মাঝখানের বিশাল এক শিলার ওপর পাখিটিকে বসে থাকতে দেখলাম। এবার ওর চমৎকার ছবি পেলাম। দুপুরে একই প্রজাতির আরেকটি পাখি দেখলাম দার্জিলিং চিড়িয়াখানা চত্বরে।

দুই বছর পর আবারও পাখিটিকে দেখলাম ভুটানের জিগমে দরজি জাতীয় উদ্যানের একটি পাথুরে জলধারার পাশে। তবে দেশের মাটিতে দেখতে আরও তিন বছর অপেক্ষা করতে হলো। হবিগঞ্জের সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানের পুণ্যি পুকুরে স্নান করতে আসা পাখিটিকে দেখি ২০২১ সালের ১০ মার্চ বিকেলে।

এতক্ষণ কালচে-নীল দেহের শিস দেওয়া যে পাখিটির কথা বললাম, তা এ দেশের দুর্লভ পরিযায়ী পাখি কস্তুরা। অবশ্য এ দেশের বেশির ভাগ মানুষই ওকে চেনে নীল শিস দামা নামে। কস্তুরা পশ্চিমবঙ্গের নাম। এ ছাড়া অবশ্য পাহাড়ি কস্তুরা, কালজিত বা কলচুরা নামেও পরিচিত। পরিযায়ী হলেও একবার বান্দরবানের আলী কদমে এর একটি বাসা পাওয়া গিয়েছিল। সে কারণেই অনেকে ওকে আবাসিক মর্যাদা দিতে চান। ইংরেজি নাম ব্লু হুইসলিং থ্রাস। গোত্র Muscicapidae, বৈজ্ঞানিক নাম Myophonus caeruleus। বাংলাদেশ ছাড়া এশিয়ার বিভিন্ন দেশে দেখা যায়।

কস্তুরার দেহের গড় দৈর্ঘ্য ৩৩ সেন্টিমিটার। গড় ওজন ১৬৫ গ্রাম। পুরো দেহ উজ্জ্বল কালচে-নীল। কপাল, ডানার পাশ ও লেজ বেশি উজ্জ্বল। প্রাপ্তবয়স্ক পাখির দেহে উজ্জ্বল রুপালি-নীল তিলা থাকে, যা অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখিতে দেখা যায় না। চোখ কালচে বাদামি। চঞ্চু হলুদ। পা, পায়ের পাতা ও নখ কালো, কিন্তু পায়ের তলা হলদে-ধূসর। স্ত্রী-পুরুষের চেহারায় পার্থক্য নেই। অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখি ফ্যাকাশে বাদামি-নীল।

পশ্চিমবঙ্গের দার্জিলিংয়ের রক গার্ডেনে ঝরনার পাশে কস্তুরা.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স ন দর

এছাড়াও পড়ুন:

ট্রাম্প–ব্লেয়ারের গাজা পরিকল্পনা কেন বেআইনি

দুই দশকের বেশি সময় আগে, ২০০৩ সালে ইরাক যুদ্ধের আগে, আমিসহ যুক্তরাজ্যে অবস্থানরত একদল আন্তর্জাতিক আইনবিদ তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ারকে একটি চিঠি লিখেছিলাম। সেখানে ব্যাখ্যা করেছিলাম যে যুদ্ধটি আন্তর্জাতিক আইন অনুসারে বৈধ হবে না।

গাজার ওপর একটি আন্তর্জাতিক ট্রাস্টি শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা নিয়ে আবারও আরেকটি বৈশ্বিক অভিযানের জন্য বেআইনি বিষয়ে সতর্কবার্তা প্রয়োজন। এতে একই ব্যক্তিকে আবারও দেখা যাচ্ছে; এবার প্রস্তাবিত পরিকল্পনার সম্ভাব্য নেতা হিসেবে—যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পাশে।

গাজার ওপর এই ট্রাস্টি শাসনব্যবস্থা প্রতিস্থাপন করবে ইসরায়েলের অর্ধশতাব্দীর বেশি সময়ের দখলদারত্বকে, যা তার আচরণে আন্তর্জাতিক আইনের মৌলিক নিয়মের গুরুতর লঙ্ঘন করেছে। এর মধ্যে রয়েছে বর্ণবাদী বৈষম্য, নির্যাতন, যুদ্ধাপরাধ আইনের গুরুতর লঙ্ঘন, মানবতাবিরোধী অপরাধ ও গণহত্যা।

আন্তর্জাতিক আইনের এই নিয়মগুলোর কেন্দ্রে রয়েছে ‘ট্রাস্টি–শিপ’। ‘ট্রাস্টি’ কর্তৃক আধিপত্য হবে নিঃস্বার্থভাবে, এর ‘বেনিফিশিয়ারি’ হবে গাজার ফিলিস্তিনি জনগণ। এখানে নির্যাতন নয়, সুরক্ষা থাকতে হবে।

গাজার ওপর ট্রাস্টি শাসনব্যবস্থার সঙ্গে ব্লেয়ারের সম্পৃক্ততা সেই পশ্চিমা মানবতাবাদী ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতা, যারা উপনিবেশবাদকে মানবিক করার চেষ্টা করেছিল, সেখানে দায়বদ্ধতার এক কর্তব্য জুড়ে দিয়ে।

‘মানুষের ওপর ট্রাস্টি–শিপ’ ধারণাটি প্রথম গ্রহণ করেছিলেন ইউরোপীয়রা; ১৯০০ শতাব্দীর শেষদিকে বার্লিন সম্মেলনে আফ্রিকার ওপর ঔপনিবেশিক শাসনের জন্য; প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর লিগ অব নেশনস দ্বারা ম্যান্ডেটকৃত ভূখণ্ডগুলোর জন্য এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জাতিসংঘের মাধ্যমে ট্রাস্ট টেরিটরি ও অন্যান্য অ-উপনিবেশ ভূখণ্ডের জন্য।

ঐতিহাসিক রায়ে আদালত একমত হয়েছিলেন। এটি আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার সম্পর্কে একটি সিদ্ধান্ত ছিল। অতএব, এটি সমানভাবে প্রযোজ্য হবে যেকোনো ধরনের বিদেশি প্রশাসনের ক্ষেত্রে, তা যতই তা মানবিক ও সময়সীমাবদ্ধ হোক না কেন। একটি নির্যাতনমূলক ট্রাস্টিকে প্রতিস্থাপন করে আরেকটি ট্রাস্টি আনা আত্মনিয়ন্ত্রণ নয়, তাই এটি অবৈধ।

ট্রাস্টি–শিপ ধারণা ধরে নেয় যে পৃথিবী বিভক্ত ‘শিশুসদৃশ’ জনগণ এবং ‘প্রাপ্তবয়স্কদের’ মধ্যে। শিশুসদৃশ জনগণ নিজেদের যত্ন নিতে অক্ষম; এখন এই ধারণা প্রয়োগ করা হচ্ছে গাজার ফিলিস্তিনি জনগণের ওপর। এ ক্ষেত্রে গাজার জনগণ হলো ‘শিশুসদৃশ আর ট্রাম্প–ব্লেয়াররা হলেন প্রাপ্তবয়স্ক; যাঁরা শুধু নিজেদের জনগণকেই নয়, অন্যদেরও শাসন করতে সক্ষম।’

শিশু–প্রাপ্তবয়স্ক সম্পর্কই দায়বদ্ধতার যৌক্তিকতা হলো—প্রাপ্তবয়স্ক দায়িত্বে থাকবে, কিন্তু তাঁকে অবশ্যই ‘অভিভাবকত্বে থাকা’ শিশুর স্বার্থে কাজ করতে হবে। প্রাপ্তবয়স্কের দায়িত্ব হলো শিশুকে ‘বড় করা’, যাতে সে শেষ পর্যন্ত প্রাপ্তবয়স্ক হয়ে ওঠে। এই শিক্ষাদানের উদ্দেশ্য ‘উন্নয়ন’ নিশ্চিত করা।

ফলে গাজার ওপর ট্রাস্টি শাসনব্যবস্থা হবে সাময়িক। কারণ, এটি একটি পরিবর্তনকালীন ব্যবস্থা: প্রাপ্তবয়স্করা স্থানীয়ভাবে স্বশাসনের ক্ষমতা গড়ে তুলবে; শিশুরা পরিণত হয়ে প্রাপ্তবয়স্ক হবে এবং তখন ট্রাস্টি–শিপের প্রয়োজন শেষ হবে।

ট্রাস্টি–শিপের এই মডেলের কেন্দ্রে রয়েছে বর্ণবাদ। ঔপনিবেশিক যুগে একটি বর্ণবাদী বৈশ্বিক ‘সভ্যতার মানদণ্ড’—যা ইউরোপীয়দের প্রাধান্যে গঠিত—নির্ধারণ করত কারা প্রাপ্তবয়স্ক আর কারা শিশু (কে নিজেদের প্রাপ্তবয়স্ক মনে করেছিল, অনুমান করা কঠিন নয়)। ট্রাস্টি–শিপ ছিল আত্মস্বার্থপর ভাঁওতাবাজি, খারাপ উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত, যা ঔপনিবেশিক শাসনকে যুক্তিসংগত করার অজুহাত হিসেবে কাজ করত এবং যেটাকে ‘সভ্য করার মিশন’ হিসেবে প্রচার করা হতো।

কিন্তু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর উপনিবেশমুক্তি আন্দোলনের ফলাফল ছিল আন্তর্জাতিক আইনে আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারের স্বীকৃতি। এটি ছিল ট্রাস্টি–শিপের প্রত্যাখ্যান। পৃথিবীতে আর শিশুসদৃশ ও প্রাপ্তবয়স্ক জনগণ নেই: জনগণের মধ্যে এই বর্ণবাদী বিভাজন আনুষ্ঠানিকভাবে বাতিল হলো। সব জনগণ সমান, সবাই স্বাধীনতার যোগ্য, সবাই ‘প্রাপ্তবয়স্ক’। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ বলেছিল: রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক বা শিক্ষাগত অপ্রস্তুতি কখনো স্বাধীনতা বিলম্বিত করার অজুহাত হতে পারে না।

এরপরও ট্রাস্টি–শিপ চালু ছিল; মূলত আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর মাধ্যমে, যেমন বসনিয়া ও পূর্ব তিমুরে। বৈশ্বিক মানবাধিকার নিয়মগুলোকে একটি আপাতদৃষ্টিতে অ-বর্ণবাদী ‘সভ্যতার মানদণ্ড’ হিসেবে ব্যবহার করা হলো, যা নির্ধারণ করতে পারে কোথায় ট্রাস্টি–শিপ প্রয়োজন। আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোকে নিঃস্বার্থভাবে কাজ করতে সক্ষম হিসেবে দেখা হতো। তাই রাষ্ট্রগুলো নয়, সংস্থাগুলো ট্রাস্টি–শিপের কর্তব্য সৎভাবে পালন করতে পারে—এমনটা মেনে নেওয়া হয়েছে।

এই ব্যবস্থা আমাকে আতঙ্কিত করে। গত বছর আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের পরামর্শমূলক মতামত মামলায় আমি আরব লিগের পক্ষে যুক্তি দিয়েছিলাম; আমার একাডেমিক গবেষণার ভিত্তিতে আমি বলেছিলাম যে ফিলিস্তিনি জনগণ শর্তহীনভাবে ইসরায়েলি দখল থেকে মুক্ত হওয়ার আইনি অধিকার রাখে।

ঐতিহাসিক রায়ে আদালত একমত হয়েছিলেন। এটি আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার সম্পর্কে একটি সিদ্ধান্ত ছিল। অতএব, এটি সমানভাবে প্রযোজ্য হবে যেকোনো ধরনের বিদেশি প্রশাসনের ক্ষেত্রে, তা যতই তা মানবিক ও সময়সীমাবদ্ধ হোক না কেন। একটি নির্যাতনমূলক ট্রাস্টিকে প্রতিস্থাপন করে আরেকটি ট্রাস্টি আনা আত্মনিয়ন্ত্রণ নয়, তাই এটি অবৈধ।

রালফ ওয়াইল্ড ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের আন্তর্জাতিক আইনের অধ্যাপক

মিডলইস্ট আই থেকে নেওয়া

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ট্রাম্প–ব্লেয়ারের গাজা পরিকল্পনা কেন বেআইনি