ঋণ থেকে গেল, ছেলেটা চিরতরে চলে গেল
Published: 7th, October 2025 GMT
২০২৩ সালে দালালের মাধ্যমে সাড়ে পাঁচ লাখ টাকা ঋণ করে জীবিকার সন্ধানে সৌদি আরবে যান মো. হাবিব খান (২১)। সৌদির মক্কায় একটি আবাসিক হোটেলে কিছুদিন কাজ করার পর আর কাজ পাননি। ছোটখাটো কাজ জুটলেও পারিশ্রমিক পেতেন না তেমন। ১২ দিন আগে হঠাৎ বুকে ব্যথা ওঠে তাঁর। এক সহকর্মী তাঁকে মক্কার একটি হাসপাতালে ভর্তি করেন। রোববার রাত ১১টায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় সেখানে মারা যান তিনি। স্বজনেরা এখন তাঁর মরদেহের অপেক্ষায়।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
ডাকসু নির্বাচনের পর যেসব প্রশ্ন তোলা জরুরি ছিল
ডাকসু নির্বাচনের পর এক মাস পার হলো। এখনো প্রশ্ন উঠছে, এই নির্বাচন আদৌ সুষ্ঠু হয়েছে কি না। প্রশ্ন উঠছে ব্যালট পেপার নিয়ে—কোথায় ছাপানো হয়েছে, কতগুলো ছাপানো হয়েছে এবং এই প্রক্রিয়ায় যথেষ্ট সুরক্ষা ছিল কি না।
এর আগে অভিযোগ উঠেছিল প্রশাসনের পক্ষপাতিত্বের। প্রার্থীদের পরস্পরের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল নির্বাচনী আচরণবিধি না মানার। সবচেয়ে গুরুতর প্রশ্ন উঠেছিল নির্বাচনের দিন—নির্দিষ্ট প্যানেলের পক্ষে ভোট দেওয়া ব্যালট পেপার সরবরাহের ও ভোট গণনার ত্রুটির।
এগুলো অবশ্যই প্রশ্ন তোলার মতো বিষয়। এগুলোর জবাব বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এবং নির্বাচনের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা দিয়েছেন। কিন্তু প্রশ্ন উঠতে পারত, জাতীয় রাজনীতির এই সন্ধিক্ষণে তোড়জোড় করে ডাকসু নির্বাচনের প্রয়োজন কী ছিল।
বছরের পর বছর তো ছাত্র সংসদ নির্বাচন না করেই বিশ্ববিদ্যালয় চলছে, বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রসংগঠনগুলোর রাজনীতিও চলছে। এই মুহূর্তে ডাকসু নির্বাচন আয়োজনের ব্যাপারে কে বা কারা এত উৎসাহী হলো। দেখা গেছে, সেই উৎসাহে অধিকাংশ ছাত্রসংগঠনেরই সায় ছিল। এমনকি বেশির ভাগ সংগঠন দ্রুত নির্বাচনের জন্য এক বছর ধরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে চাপ দিয়ে যাচ্ছিল।
আরও পড়ুনশিবিরের উত্থানের রাজনীতি, বাস্তবতা ও নানা সমীকরণ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫নির্বাচনের পর প্রশ্ন তোলা জরুরি ছিল, ডাকসুতে ছাত্রশিবিরের এই বিপুল জয়ের কারণ কী। দীর্ঘ সময় ধরে গোপনে রাজনীতি করে যাওয়া একটি সংগঠন কীভাবে এত শক্তি অর্জন করল। নির্বাচনের আগে তাদের প্রকাশ্যে আসার কারণ এবং কয়েক মাস ধরে ক্যাম্পাসে তাদের সেবামূলক কাজের উদ্দেশ্য এখন বোঝা যাচ্ছে।
ছাত্রশিবির কতটুকু জনপ্রিয় হয়ে উঠল এটি যেমন প্রশ্ন, তেমনি অন্য সংগঠনগুলোর প্রতি সাধারণ শিক্ষার্থীদের আস্থা কমছে কি না, এটিও প্রশ্ন। এসব প্রশ্নের জবাব থেকে ছাত্রসংগঠনগুলোকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে ছাত্ররাজনীতির প্রচলিত ধরনে তারা বদল আনবে কি না।
কথা বলা দরকার ছিল, আগামী ছাত্র সংসদ নির্বাচনকে আরও গ্রহণযোগ্য করার জন্য কী করা যেতে পারে তা নিয়ে। এবার যেমন নির্বাচনের আগে পুরো বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় নতুন করে ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা বসিয়ে সুরক্ষিত করা হয়েছিল। ভোটকেন্দ্রগুলোতেও বিপুলসংখ্যক ক্যামেরা ছিল। তা ছাড়া ভোট গণনার কক্ষেও ক্যামেরা বসিয়ে বাইরে থেকে সরাসরি দেখানোর ব্যবস্থা করা হয়। এরপরও ভোটার উপস্থিতি ও ভোট দেওয়ার হার নিশ্চিত হওয়ার জন্য বিভিন্ন পক্ষ ও প্রার্থী উপস্থিতিপত্র ও সিসিটিভি ফুটেজ দাবি করেন।
ডাকসু নির্বাচনের ব্যালট পেপার নিয়েও গণমাধ্যমে কয়েক দিন ধরে তোলপাড় হয়েছে। কোথায় ছাপানো হলো, কোন প্রতিষ্ঠান ছাপাল—এগুলো প্রশ্ন হতে পারে; কিন্তু এর চেয়ে গুরুতর প্রশ্ন, এসব ব্যালট তৃতীয় কোনো ব্যক্তি বা পক্ষের হাতে গেল কি না।নির্বাচনের দিন প্রার্থীদের এজেন্ট যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করলে এত দিন পর এসব প্রশ্ন উঠত না। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কিংবা নির্বাচনের কাজে যুক্ত ব্যক্তিরা কোনো পক্ষকে জিতিয়ে বা হারিয়ে দেওয়ার জন্য কাজ করেননি। যদি করতে চাইতেনও, সেটি সম্ভব ছিল না। নির্বাচন–সংশ্লিষ্ট কাজের প্রতিটি ধাপে যেসব শিক্ষক ও কর্মকর্তা কাজ করেছেন, তাঁদের একটি বড় অংশ কোনো না কোনো পক্ষের রাজনীতি করেন। অতএব অনিয়ম করে সবার চোখ ফাঁকি দেওয়া সম্ভব ছিল না।
ডাকসু নির্বাচনের ব্যালট পেপার নিয়েও গণমাধ্যমে কয়েক দিন ধরে তোলপাড় হয়েছে। কোথায় ছাপানো হলো, কোন প্রতিষ্ঠান ছাপাল—এগুলো প্রশ্ন হতে পারে; কিন্তু এর চেয়ে গুরুতর প্রশ্ন, এসব ব্যালট তৃতীয় কোনো ব্যক্তি বা পক্ষের হাতে গেল কি না।
আরও পড়ুনডাকসু নির্বাচন, ফলাফল ও তরুণ মনের চাওয়া১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫এবার কেবল ছাপানোর মধ্য দিয়েই ব্যালট পেপারের কাজ শেষ হয়ে যায়নি। ব্যালট ছাপানো ও কাটার পরে মেশিনে পাঠযোগ্য করার জন্য কোড বসানো হয়েছে। তারপর সেগুলো নির্বাচন কমিশন নির্দিষ্ট সংখ্যায় বুঝে নিয়েছে। প্রতিটি ব্যালটে রিটার্নিং কর্মকর্তাদের স্বাক্ষর বসিয়ে নির্দিষ্ট সংখ্যায় প্যাকেট করা হয়েছে। নির্বাচনের দিন এসব প্যাকেট ডাকসুর ১০ জন রিটার্নিং কর্মকর্তা নিজেদের হাতে নিজ নিজ কেন্দ্রে নিয়ে গেছেন।
অতীতের ডাকসু নির্বাচনগুলোর মতো এবারও নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা ছিল। এই পরিপ্রেক্ষিতে প্রশ্ন তোলা উচিত, একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ নির্বাচনের জন্য এত উদ্বেগ তৈরি হবে কেন।
যে নির্বাচনটি হওয়া দরকার ছিল উৎসবমুখর, সেটি আয়োজনের জন্য এত সংস্থা, প্রতিষ্ঠান ও মানুষকে উৎকণ্ঠিত সময় পার করতে হবে কেন। কিসের জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর এত প্রস্তুতি, সেনাবাহিনী ডাকা হবে কি না, এ রকম প্রশ্ন। প্রয়োজনের চেয়ে অনেক বেশি অর্থ ও সময়ের অপচয় কার জন্য, কিসের জন্য। প্রশ্ন তোলা যায়, ডাকসুর একেকজন ছাত্রনেতা কী ক্যারিশমায় জাতীয় রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠেন!
আরও পড়ুনডাকসু-জাকসুতে শিবির জিতেছে, বাকিরা কি জিততে চেয়েছে১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫প্রশ্ন উঠতে পারে, ডাকসু কোনো দলীয় নির্বাচন না হলেও ছাত্রসংগঠনগুলো কেন প্যানেল পরিচয়ে নির্বাচন করে, প্রচারণা চালায়। উত্তর খুঁজতে হবে, ছাত্রসংগঠন বা ছাত্রনেতাদের পরস্পরের প্রতি সহনশীলতা কীভাবে বাড়ানো যায়। এই সহনশীলতা অবশ্যই দরকার। কারণ, তা না হলে বহুমত ও পথের জয়ী প্রার্থীদের নিয়ে ছাত্র সংসদ কার্যকর করা সম্ভব নয়। সবার এবং সব পক্ষের সম্মিলিত উদ্যোগেই বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা ও শিক্ষাসহায়ক পরিবেশের উন্নতি হতে পারে।
ডাকসু নির্বাচনে কারা ভোটার হবেন এবং কারা প্রার্থী হতে পারবেন—এই প্রশ্নেরও মীমাংসা দরকার। এবার বয়সের সীমা তুলে দেওয়া হয়েছে; এতে কোনো ক্ষতি হয়নি। নিয়মিত ছাত্রদের নির্বাচনে ভোটার ও প্রার্থী হওয়ার নতুন বিধিতে কোনো সমস্যা নেই। তবে এমফিল বা পিএইচডি, এ ধরনের উচ্চতর ডিগ্রিতে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের জন্য ভোটার বা প্রার্থী হওয়ার সুযোগ রাখা হবে কি না, সেটি নিয়ে ভাবা দরকার। এই সুযোগ থাকলে পাস করে যাওয়া শিক্ষার্থীও উচ্চতর ডিগ্রিতে ভর্তি হয়ে যেকোনো সময়ে নির্বাচন করতে চাইবেন।
সবশেষে আরেকটি প্রশ্ন, ছাত্র সংসদ নির্বাচন আদৌ নিয়মিত হবে কি না। এটি করা গেলে নির্বাচনবিষয়ক বিদ্যমান উৎকণ্ঠা ও চাপ কমে যাওয়ার কথা। ডাকসুকে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ক্যালেন্ডারে নিয়ে আসার ব্যাপারে সব ছাত্রসংগঠনই একমত হয়েছে। এখন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এ ব্যাপারে কী করে, সেটি দেখার বিষয়।
● তারিক মনজুর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক