মাওলানা আবুল কালাম আজাদ। তাঁর প্রকৃত নাম আবুল কালাম গুলাম মুহিউদ্দিন। তবে মাওলানা আজাদ নামেই তিনি বেশি পরিচিত। স্বাধীন ভারতের প্রথম শিক্ষামন্ত্রী তিনি। আমৃত্যু ছিলেন এই দায়িত্বে। মাওলানা আজাদের হাতেই ভিত গড়ে উঠেছে ভারতের আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থার।

মাওলানা আজাদের জন্ম সৌদি আরবের পবিত্র মক্কা নগরীতে, ১৮৮৮ সালের ১১ নভেম্বর। জওহরলাল নেহরুর মন্ত্রিসভায় ১৯৪৭ থেকে ১৯৫৮ সাল পর্যন্ত আমৃত্যু শিক্ষামন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন এই বিপ্লবী ও স্বাধীনতাসংগ্রামী। তাঁর প্রতি সম্মান জানিয়ে ১১ নভেম্বর ভারতে শিক্ষা দিবস হিসেবে পালন করা হয়।

কে এই মাওলানা আজাদ

মাওলানা আজাদের পূর্বপূরুষেরা ভারতে এসেছিলেন সম্রাট বাবরের যুগে, আফগানিস্তানের হেরাত থেকে। আজাদ ছিলেন মুসলিম পণ্ডিত বা মাওলানা বংশের উত্তরসূরি। তাঁর মা ছিলেন একজন আরব। বাবা মাওলানা খায়েরুদ্দিন ছিলেন আফগান বংশোদ্ভূত একজন বাঙালি মুসলিম। সিপাহি বিদ্রোহের সময় খায়েরুদ্দিন ভারত ছেড়ে মক্কায় চলে যান এবং সেখানেই স্থায়ী হন। এরপর ১৮৯০ সালে তিনি সপরিবার কলকাতায় ফিরে আসেন।

রক্ষণশীল পরিবারের সদস্য হিসেবে মাওলানা আজাদকে ঐতিহ্যবাহী ইসলামি শিক্ষা গ্রহণ করতে হয়েছিল। প্রথমে বাবার কাছে এবং পরে নিজ নিজ ক্ষেত্রে খ্যাতিমান শিক্ষকদের মাধ্যমে তিনি বাড়িতেই শিক্ষা লাভ করেন। প্রথমে তিনি আরবি ও ফারসি শেখেন। এরপর দর্শন, জ্যামিতি, গণিত ও বীজগণিত শিক্ষা নেন। তিনি নিজ উদ্যোগে ইংরেজি, বৈশ্বিক ইতিহাস এবং রাজনীতি নিয়ে পড়াশোনা করেন।

ধর্মীয় পণ্ডিত নন, হলেন স্বাধীনতাসংগ্রামী

মাওলানা আজাদকে একজন ধর্মীয় পণ্ডিত হওয়ার জন্য গড়ে তোলা হয়েছিল। তিনি পবিত্র কোরআনের ব্যাখ্যামূলক অনেক লেখা লিখেছেন। তিনি একজন দক্ষ বিতার্কিক ছিলেন। মাওলানা আজাদ বহু ভাষায় দক্ষতা অর্জন করেন। এর মধ্যে রয়েছে আরবি, ফার্সি, হিন্দি, উর্দু ও বাংলা। মাওলানা আজাদ একাধারে পণ্ডিত, লেখক ও বাগ্মী ছিলেন।

জামালউদ্দিন আফগানির ‘প্যান-ইসলামিক’ চেতনা আর স্যার সৈয়দ আহমেদ খানের চিন্তাভাবনার প্রতি আগ্রহ ছিল মাওলানা আজাদের। ‘প্যান-ইসলামিক’ চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে তিনি আফগানিস্তান, ইরাক, মিসর, সিরিয়া ও তুরস্ক সফর করেন। এসব দেশের বিপ্লবী ও সমসাময়িক রাজনীতিকদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এসব যোগাযোগ এবং অভিজ্ঞতা তাঁকে একজন জাতীয়তাবাদী বিপ্লবীতে রূপান্তরিত করেছিল। তরুণ বয়সেই কলকাতা থেকে আল–হিলাল নামের একটি উর্দু পত্রিকা প্রকাশ করেন মাওলানা আজাদ। ব্রিটিশ সরকার পত্রিকাটি নিষিদ্ধ করে দেয়।

মাওলানা আজাদের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য অবদানগুলোর অন্যতম হলো ১৯৫৩ সালে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন প্রতিষ্ঠা। সারা দেশে উচ্চশিক্ষার তদারকি ও প্রসারের লক্ষ্য নিয়ে এটি গঠিত হয়। এ ছাড়া ১৯৫১ সালে আইআইটি খড়গপুর, দিল্লির সেন্ট্রাল ইনস্টিটিউট অব এডুকেশনসহ (বর্তমানে দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা বিভাগ) বেশ কয়েকটি বিখ্যাত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। তিনি বেঙ্গালুরুতে অবস্থিত ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স এবং দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রযুক্তি অনুষদের উন্নয়নের ওপরও জোর দিয়েছিলেন।

ভারতের স্বাধীনতাসংগ্রামে মাওলানা আজাদের ভূমিকা ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শুরুতে তিনি খেলাফত আন্দোলনে যোগ দেন। খেলাফত আন্দোলনে তাঁর সংক্ষিপ্ত কিন্তু উল্লেখযোগ্য অংশগ্রহণ ছিল। এ সময় তিনি অল-ইন্ডিয়া খেলাফত কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। মহাত্মা গান্ধীর দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে তিনি ‘ডান্ডি মার্চ’ এবং ‘ভারত ছাড়ো আন্দোলনে’ সক্রিয়ভাবে অংশ নেন।

অসাম্প্রদায়িক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক চিন্তাভাবনায় প্রভাবিত হয়ে কংগ্রেসে যোগ দেন মাওলানা আজাদ। দুইবার কংগ্রেসের সভাপতিও হন। তিনি প্রথমবার ১৯২৩ সালে আর দ্বিতীয়বার ১৯৪০ সালে কংগ্রেসের সভাপতি হন। স্বাধীনতাসংগ্রামের সময় মাওলানা আজাদ ছিলেন কংগ্রেসের কনিষ্ঠতম এবং দীর্ঘতম সময় ধরে দায়িত্ব পালন করা সভাপতি।

ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন মাওলানা আজাদ। এ জন্য ১৯২০ থেকে ১৯৪৫ সালের মধ্যে তাঁকে কয়েকবার কারাবরণ করতে হয়েছিল। মাওলানা আজাদ ব্রিটিশদের সঙ্গে ভারতের স্বাধীনতার আলোচনায় যুক্ত ছিলেন। তিনি দৃঢ়ভাবে দেশভাগের বিরোধিতা করেছিলেন।

শিক্ষায় বিজ্ঞানমুখী চিন্তা

স্বাধীন ভারতের প্রথম শিক্ষামন্ত্রী হিসেবে মাওলানা আজাদের সময়কাল দেশটির শিক্ষাক্ষেত্রে এক তাৎপর্যপূর্ণ অধ্যায় রচনা করেছে। শিক্ষার গণতন্ত্রায়ণ এবং মানসম্মত শিক্ষার সুযোগ সম্প্রসারণের লক্ষ্যে তিনি অসংখ্য উদ্যোগের নেতৃত্ব দেন।

মাওলানা আজাদের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য অবদানগুলোর অন্যতম হলো ১৯৫৩ সালে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন প্রতিষ্ঠা। সারা দেশে উচ্চশিক্ষার তদারকি ও প্রসারের লক্ষ্য নিয়ে এটি গঠিত হয়। এ ছাড়া ১৯৫১ সালে আইআইটি খড়গপুর, দিল্লির সেন্ট্রাল ইনস্টিটিউট অব এডুকেশনসহ (বর্তমানে দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা বিভাগ) বেশ কয়েকটি বিখ্যাত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তিনি বেঙ্গালুরুতে অবস্থিত ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স এবং দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রযুক্তি অনুষদের উন্নয়নের ওপরও জোর দিয়েছিলেন।

মাওলানা আবুল কালাম আজাদ.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স ব ধ নত স গ র ম ন কর ন মন ত র আজ দ র প রথম আফগ ন

এছাড়াও পড়ুন:

‘কালো হেলমেট পরা দুজন বাইকে এসে ককটেল ফাটিয়ে চলে যায়’

প্রবর্তনার সামনে আজ সোমবার সকালে যখন ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে, তখন প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ ছিল। রাজধানীর মোহাম্মদপুরে খাদ্যপণ্যের প্রতিষ্ঠানে ককটেল বিস্ফোরণ হয় সকাল সাতটার একটু আগে। এর মূল ফটকের সামনে একটু দূরে দাঁড়িয়ে ছিলেন একজন নিরাপত্তারক্ষী। রাস্তায় লোকজনও ছিল কিছু। সেই সময় ইকবাল রোডের দিক থেকে আসা মোটরসাইকেলে দুই ব্যক্তি ককটেল ফাটিয়ে চলে যান। যদিও তার আগে এই দুই ব্যক্তি কয়েক মিনিট দাঁড়িয়ে ছিলেন।

সিসিটিভির ফুটেজ দেখে, বিস্ফোরণের আগে–পরের পরিস্থিতি তুলে ধরেন প্রবর্তনার ফাইন্যান্স ম্যানেজার মো. তানভীর আহমেদ। আজ বেলা দেড়টার দিকে তিনি জানান, এ ঘটনার পরপরই পুলিশ আসে। তারা তদন্ত করছে। এরপর প্রবর্তনার পক্ষ থেকে মামলা করা হবে।

‘প্রবর্তনা’ মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার এবং কবি ও চিন্তক ফরহাদ মজহারের খাদ্যপণ্যের প্রতিষ্ঠান।

মো. তানভীর আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘সিসিটিভির ফুটেজে যা দেখেছি, সকাল সাতটার একটু আগে দুজন প্রবর্তনার মূল ফটকের পাশে এসে দাঁড়ায়। তারপর দুজন দুই পাশে তাকাতে থাকে। এ সময় প্রবর্তনার একজন নিরাপত্তারক্ষী ফটকের উল্টো দিকে ছিলেন। দেখা যায়, এ সময় দুই যুবক কোনো কিছু না করে বাইক নিয়ে চলে যায়। খানিকক্ষণ পরে ইকবাল রোডের দিক থেকে তারা বাইক চালিয়ে আসতে থাকে। প্রবর্তনার ফটকের কাছাকাছি এসে ককটেল বা এ রকম কোনো বস্তু ফেলে। সেখানে ধোঁয়া ওঠে এবং প্রচণ্ড শব্দ হয়।’

মো. তানভীর আহমেদ বলেন, বিস্ফোরণের এ সময় রাস্তায় লোকজন চলাচল করছিল। এতে যে কেউ আঘাত পেতে পারত। কিন্তু কিছু হয়নি।

প্রবর্তনার সামনের অংশ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সন্তকবি রবিদাসের ‘বেগমপুরা’ শহর
  • দুরারোগ্য রোগে আক্রান্তদের হজের অনুমতি দেবে না সৌদি সরকার: ধর্ম মন্ত্রণালয়
  • চীনের তিয়ানগং স্টেশনে যাবেন পাকিস্তানি মহাকাশচারী
  • উখিয়ায় মার্কেটে আগুন, দগ্ধ একজনের মৃত্যু
  • দিনাজপুরে ভুল অস্ত্রোপচারে দুই যুবকের মৃত্যুর অভিযোগ
  • বৈষম্য দূর হবে বাস্তব উদ্ভাবনে
  • প্রাথমিক শিক্ষকদের টানা আন্দোলনে বার্ষিক পরীক্ষার ওপর প্রভাব পড়ার শঙ্কা
  • গুলিতে নিহত মামুন কোর্টে গিয়েছিলেন হাজিরা দিতে
  • ‘কালো হেলমেট পরা দুজন বাইকে এসে ককটেল ফাটিয়ে চলে যায়’