প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়মে যত নারী মা হন, তাঁদের মধ্যে প্রতি ২৫০ জনের মধ্যে একজনের যমজ সন্তান হয়। অর্থাৎ দুটি সন্তান গর্ভে আসে। একই সঙ্গে তিন সন্তান গর্ভে আসার ঘটনা ঘটে আরও কম, প্রতি ১০ হাজার জনে একজন।

একই সঙ্গে চার সন্তান জন্মের ঘটনা বিরল। প্রতি সাত লাখ মায়ের মধ্যে একজনের ক্ষেত্রে এমনটা হয়। একবারে এর বেশি সন্তান জন্মের হার আরও কম। তবে একটির বেশি সন্তান গর্ভে থাকলেই তা মা ও সন্তানদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে দাঁড়ায়।

কেন হয়

স্বাভাবিক নিয়মে একজন নারীর মাসিক চক্রে একটিমাত্র ডিম্বাণুই পূর্ণতা পায়। এই ডিম্বাণু একটি শুক্রাণুর সঙ্গে মিলিত হওয়ার ফলে একটি ভ্রুণ সৃষ্টি হয়। এটিই স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। ব্যতিক্রম হতে পারে দুইভাবে।

১.

একাধিক ডিম্বাণু পূর্ণতা পেলে সে ক্ষেত্রে সেগুলো একাধিক শুক্রাণুর সঙ্গে মিলিত হয়ে একাধিক ভ্রুণ সৃষ্টি হতে পারে। প্রকৃতির নিয়মেই অল্প কিছু নারীর গর্ভে এভাবে একাধিক সন্তান আসে। আবার বন্ধ্যত্বের চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধের প্রভাবেও একাধিক ডিম্বাণু পূর্ণতা পেতে পারে এবং ঘটতে পারে এমন ঘটনা।

২. একটি ডিম্বাণুর সঙ্গে একটি শুক্রাণু মিলিত হয়ে যে ভ্রুণ তৈরি হয়েছে, প্রাকৃতিকভাবেই তা বিভাজিত হয়ে দুটি ভ্রুণ তৈরি হতে পারে। তখন যমজ সন্তান হয়। এ ক্ষেত্রে সন্তানদের চেহারা ও অন্যান্য বৈশিষ্ট্য থাকে একই রকম।

আরও পড়ুনপ্রসব–পরবর্তী মানসিক সমস্যার কারণ, ঝুঁকি ও করণীয়০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫গর্ভের সন্তানদের ঝুঁকি

একাধিক সন্তান গর্ভে এলে গর্ভপাতের ঝুঁকি অনেক বেশি থাকে।

গর্ভকাল পূর্ণ হওয়ার আগেই প্রসববেদনা শুরু হয়ে যেতে পারে, পানি ভাঙতে পারে।

প্রসবের সময় আগে মাথা না বেরিয়ে শরীরের অন্য অংশ, এমনকি নাড়িও বেরিয়ে আসতে পারে। সে ক্ষেত্রে স্বাভাবিক প্রসব হয় না।

অপরিণত অবস্থায় জন্মানো শিশুর ওজনও থাকে কম, শ্বাসপ্রশ্বাসও ব্যাহত হতে পারে।

দীর্ঘদিন নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে রাখতে হতে পারে এই শিশুদের, হতে পারে মৃত্যুও।

জন্মগত ত্রুটির ঝুঁকিও থাকে এসব শিশুর।

গর্ভে থাকার সময়েও মারা যেতে পারে এই শিশুরা।

গর্ভফুলজনিত জটিলতা দেখা দিতে পারে।

আরও পড়ুন‘ব্রেন ডেড’ নারী যেভাবে যমজ সন্তানের জন্ম দিয়েছিলেন০৫ জানুয়ারি ২০২৩মায়ের জটিলতা

একাধিক সন্তান গর্ভে থাকলে বমি বমি ভাব, বমি, দুর্বলতা, রক্তস্বল্পতা, ওজন বৃদ্ধি—সবই হয় অতিরিক্ত মাত্রায়।

তাই স্বাভাবিক চলাফেরা, এমনকি ঘুমেরও ব্যাঘাত ঘটতে পারে।

হতে পারে শ্বাসকষ্ট।

রক্তচাপজনিত মারাত্মক জটিলতার ঝুঁকি বাড়ে।

ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ে।

প্রসবের পর অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের ঝুঁকি বেশি থাকে এই মায়েদের।

একাধিক সন্তান গর্ভে এলে করণীয়

একাধিক সন্তান গর্ভে আসা মানেই উচ্চ ঝুঁকি। তাই এমনটা হলে হবু মায়ের চাই বাড়তি যত্ন। অবশ্যই বিশেষজ্ঞের তত্ত্বাবধানে রাখতে হবে মাকে। পরিবারের সদস্যদের বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে তাঁর প্রতি। পর্যাপ্ত পুষ্টি, পানি, বিশ্রাম ও হালকা ব্যায়াম—রোজকার জীবনে এসব বিষয় নিশ্চিত করতে হবে। মায়ের মনেরও যত্ন নিতে হবে। প্রসবের পরিকল্পনা করা উচিত এমন হাসপাতালে, যেখানে প্রয়োজন হলে নবজাতকদেরকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে রাখার সুযোগ আছে।

আরও পড়ুনযে ভাষায় কথা বলেন কেবল ‍দুই যমজ ভাই০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প রসব

এছাড়াও পড়ুন:

একটি ভোট দিতে ১৪ সেকেন্ড সময় পাবেন ভোটার

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু), হল সংসদ ও সিনেটে ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচন উপলক্ষে প্রার্থী ও পোলিং এজেন্টদের নির্বাচনসংক্রান্ত প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। আজ রোববার বেলা ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজী নজরুল ইসলাম মিলনায়তনে এ প্রশিক্ষণের আয়োজন করে নির্বাচন কমিশন। এ সময় ভোট প্রদানের প্রক্রিয়া, ফলাফল তৈরির প্রক্রিয়া, নির্বাচনী আচরণবিধি, নিরাপত্তাসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করা হয়।

৪৩ ভোট দিতে সময় ১০ মিনিট

একজন ভোটারকে রাকসু নির্বাচনে মোট ২৩টি পদে, হল সংসদ নির্বাচনে ১৫টি পদে ও সিনেট ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচনে ৫টি পদে মিলিয়ে মোট ৪৩টি ভোট দিতে হবে। এসব ভোট দিতে ভোটার সময় পাবেন ১০ মিনিট। ফলে গড়ে প্রায় ১৪ সেকেন্ডে একটি করে ভোট দিতে হবে শিক্ষার্থীকে। সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত লাইনে দাঁড়ানো ভোটাররা ভোট দিতে পারবেন।

যেভাবে ভোট দেবেন ভোটাররা
সভায় নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক মোস্তফা কামাল আকন্দ জানান, একজন প্রার্থীর ভোট দেওয়ার জন্য কেন্দ্রে প্রবেশ করে পোলিং অফিসারের কাছে তালিকায় স্বাক্ষর করে ভিন্ন রঙের ছয়টি ব্যালট পেপার সংগ্রহ করতে হবে। পরে গোপন বুথে গিয়ে তা পূরণ করতে হবে।

প্রথম ব্যালট পেপারে থাকবে সহসভাপতি (ভিপি), সাধারণ সম্পাদক (জিএস) ও সহসাধারণ সম্পাদক (এজিএস) প্রার্থীর তালিকা; দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ ব্যালটে থাকবে বিভিন্ন সম্পাদকীয় পদের প্রার্থীদের নাম; পঞ্চম ব্যালটে থাকবে সিনেটে ছাত্র প্রতিনিধি ও সবশেষে ষষ্ঠ ব্যালটে থাকবে হল সংসদ নির্বাচনের প্রার্থীদের তালিকা। ভিন্ন রঙের ব্যালট গোপন বুথে পূরণ শেষে ভোটারদের ভিন্ন ভিন্ন রঙের স্বচ্ছ ব্যালট বাক্সে রাখতে হবে।

ভোট প্রদান করতে ভোটকেন্দ্রে ভোটাররা কাগজে প্রার্থীর নাম লিখে নিয়ে যেতে পারবেন। প্রার্থীরাও তাঁদের প্যানেলের তালিকা ভোটারদের দিতে পারবেন।
এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক মোস্তফা কামাল আকন্দ বলেন, ‘আমরা ডাকসু ও জাকসুতে ভোটারদের প্যানেলের তালিকা দেওয়ার বিষয়ে অনেক অভিযোগ দেখেছি। এ বিষয়ে আমরা নির্বাচন কমিশনে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে সব প্রার্থী ও প্যানেল তাঁদের প্যানেলের তালিকা ভোটারদের দিতে পারবেন। কারণ আমরা দেখেছি, একজন ভোটারের পক্ষে একসঙ্গে ৪৩ প্রার্থীর নাম মনে রাখা সম্ভব নয়। ভোটার যেন কোনো ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার না করেন, এ জন্যই আমরা কাগজ নিয়ে প্রবেশের সুযোগ রাখছি।’

তিন ধাপে তৈরি হবে চূড়ান্ত ফলাফল

নির্বাচন কমিশনার জানান, একাডেমিক ভবনসহ বিভিন্ন ভোটকেন্দ্রে ভোট গ্রহণ শেষে সব কেন্দ্রের ব্যালট পেপার নিয়ে আসা হবে কাজী নজরুল ইসলাম মিলনায়তনে। ভিন্ন ভিন্ন বাক্সের ব্যালট বের করে ১০০টি করে আলাদা আলাদা বান্ডেল করা হবে। প্রতিটি বান্ডেল ওএমআর মেশিনে দিয়ে গণনা করা হবে। এ ছাড়া বিশেষজ্ঞ প্যানেল আধুনিক এ ফলাফল পর্যবেক্ষণ করবেন। সর্বমোট তিনটি ধাপে চূড়ান্ত ফলাফল তৈরি হবে। এভাবে একটি হলের ফলাফল তৈরি হলে অন্য হলেরটা শুরু হবে। সব ফলাফলের কাজ সম্পন্ন হতে ১২ থেকে ১৫ ঘণ্টা সময় লাগতে পারে।

ভোটকেন্দ্রে থাকবে সিসিটিভি

নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, ৯ শতাধিক বুথে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। প্রতিটি কেন্দ্র থাকবে সম্পূর্ণ সিসিটিভির আওতাভুক্ত। ভোট গ্রহণ শেষে কাজী নজরুল ইসলাম মিলনায়তনে ভোট গণনা করা হবে। এখানে সাংবাদিকেরা তাঁদের সম্প্রচার কাজ করতে পারবেন। এ ছাড়া ভোটগণনার সব প্রক্রিয়া মিলনায়তনের সামনে বড় স্ক্রিনে দেখানো হবে।

নিরাপত্তায় কেন্দ্রের ৪০০ গজ দূরে চৌহদ্দি

ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা রক্ষার্থে কেন্দ্রের ৪০০ গজ দূরে একটি চৌহদ্দি (চারদিকের সীমানা) নির্ধারণ করা হবে। এর ভেতরে কোনো প্রার্থী প্রচার চালাতে পারবেন না। এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক মোস্তফা কামাল আকন্দ বলেন, শৃঙ্খলা রক্ষার্থে যে চৌহদ্দি দেওয়া হবে, এর ভেতরে ঢুকে কোনো প্রার্থী প্রচারণা চালাতে পারবেন না। এ ছাড়া প্রার্থীরা ভোটারদের যে প্রার্থী তালিকা দেবেন, সেটা নির্বাচনী প্রচারণা শেষ হওয়ার পর না দিতে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। নির্বাচনে নিরাপত্তা দিতে পুলিশ মোতায়ন করা হবে এবং প্রয়োজনে অন্যান্য বাহিনীর সাহায্য নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন এই নির্বাচন কমিশনার।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ্ হাসান নকীব বলেন, ‘আমরা খুবই আশাবাদী এবং নির্বাচনী পরিবেশও অত্যন্ত সুন্দর। ভালো লাগছে এটা দেখে যে প্রতিদ্বন্দ্বিতার পাশাপাশি শিক্ষার্থীরা বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রেখেই প্রচারণা চালাচ্ছে। টুকটাক যে দুই-একটা ব্যত্যয় ঘটছে না, তা নয়; তবে বড় কোনো ঘটনা এখনো ঘটেনি। সিন্ডিকেট থেকে যে নির্বাচন কমিশন করে দেওয়া হয়েছে, সেটা অত্যন্ত শক্তিশালী, তারা এখন পর্যন্ত ধৈর্য রেখে কাজ করছে।’

এ সময় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন সহ-উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ মাঈন উদ্দীন, অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন খান, রাকসুর প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক এফ নজরুল ইসলাম, কোষাধ্যাক্ষ অধ্যাপক সেতাউর রহমান। সভায় নির্বাচন পরিচালনায় নিয়োজিত রিটার্নিং কর্মকর্তা, পোলিং অফিসার, পোলিং এজেন্ট ও প্রার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • অধ্যাদেশের দাবিতে বিক্ষোভ, ঢাকা কলেজে শিক্ষককে হেনস্তা, কাল শিক্ষা ক্যাডারের কর্মবিরতি
  • প্রস্রাবে ফেনা হওয়া কি খারাপ লক্ষণ
  • কিশোরগঞ্জে দুই পক্ষের সংঘর্ষে একজনের মৃত্যু, আহত ৩০
  • কিশোরগঞ্জে গরু চুরিকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে তরুণ নিহত, আহত ৩০
  • গাজায় হামাসের সঙ্গে গোত্রের সংঘর্ষ, নিহত অন্তত ২৭
  • ক্ষুদ্রঋণ: পরিসংখ্যানের চেয়ে মানুষের গল্পটা শক্তিশালী
  • চাকসু: ভোট গণনা ২ ধাপে, প্রতি কেন্দ্রে থাকবেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্
  • একটি ভোট দিতে ১৪ সেকেন্ড সময় পাবেন ভোটার
  • মনামী ‘লক্ষ্মী’ না কি ‘দুষ্টু’ মেয়ে?