টাঙ্গাইল জেলাকে ময়মনসিংহ বিভাগে অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এমন খবর ছড়িয়ে পড়ার পর ক্ষুব্ধ হয়ে উঠছেন ওই জেলার মানুষেরা। প্রতিবাদে যমুনা সেতুর পূর্ব প্রান্তে সোমবার বিক্ষোভ হয়। প্রায় আধা ঘণ্টা ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক অবরোধ করে রাখেন বিক্ষোভকারীরা। জেলা প্রশাসন সূত্র জানিয়েছে, এ বিষয়ে তারা কোনো তথ্য পায়নি। বিষয়টি গুজব।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, গত শনিবার রাত থেকে সমাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের একটি প্রতিবেদনের অনুলিপি ছড়িয়ে পড়ে। প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের বরাবর দেওয়া ওই প্রতিবেদনে কারও কোনো স্বাক্ষর নেই। সেখানে ঢাকা, মানিকগঞ্জ, গাজীপুর, নরসিংদী, নারায়ণগঞ্জ ও মুন্সিগঞ্জ জেলা নিয়ে ঢাকা বিভাগ গঠনের প্রস্তাব করা হয়েছে বলে দেখানো হয়। টাঙ্গাইল জেলা ময়মনসিংহ বিভাগে অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব করা হয়েছে।

স্বাক্ষরবিহীন প্রতিবেদনটি বিভিন্ন গ্রুপে ছড়িয়ে পড়ে। এতে অনেকে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানাতে শুরু করেন। টাঙ্গাইল শহর ও প্রতিটি উপজেলায় সাধারণ মানুষের মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়ে টাঙ্গাইল জেলাকে ময়মনসিংহ বিভাগে অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে।
জেলাটির বাসিন্দা কবি অনার্য অধীর তাঁর ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, টাঙ্গাইল জেলার ৪২ লাখ মানুষের মধ্যে একজন মানুষও ময়মনসিংহ বিভাগে অন্তর্ভুক্ত চায় না। মানুষের অনুভূতিতে আঘাত করার এ সিদ্ধান্ত কার স্বার্থে? আয়ারল্যান্ডপ্রবাসী টাঙ্গাইলের সন্তান সংগীতশিল্পী ফরিদ আহমেদ ফেসবুকে লেখেন, ‘বেশি বুঝলে, টাঙ্গাইল বিভাগ চাই। ময়মনসিংহ হবে টাঙ্গাইল বিভাগের জেলা।’

টাঙ্গাইল ঢাকা বিভাগে আছে থাকবে, অন্য কিছু করতে চাইলে কোনো দিন টাঙ্গাইলবাসী মানবে না বলে ফেসবুকে লিখেছেন সংবাদিক আশরাফ সরকার। শফিকুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি লেখেন, ‘টাঙ্গাইল নিয়ে টানাটানির ফল ভালো হবে না।’

কার্যক্রম নিষিদ্ধঘোষিত আওয়ামী লীগ এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের আত্মগোপনে থাকা নেতা–কর্মীরাও এ বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সরব। তাঁরা টাঙ্গাইল জেলাকে ঢাকা বিভাগে রাখার দাবি জানিয়েছেন। আত্মগোপনে থাকা টাঙ্গাইল-৭ (মির্জাপুর) আসনের আওয়ামী লীগদলীয় সাবেক সংসদ সদস্য খান আহমেদ শুভ সোমবার তাঁর ফেসবুক পাতায় লিখেছেন, ‘টাঙ্গাইল জেলাকে ময়মনসিংহ বিভাগের সঙ্গে সংযুক্ত করার ঘৃণিত প্রস্তাব বাতিল করুন! না হলে টাঙ্গাইলের সর্বস্তরের জনগণ দ্রুত সময়ের মধ্যে দ্রুততম সময়ের মধ্যে রাজপথে নামতে বাধ্য হবে।’

গতকাল রোববার জেলা আইনশৃঙ্খলা উন্নয়ন কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই কমিটির সদস্য বিভিন্ন রাজনৈতিক, পেশাজীবী, ব্যবসায়িক সংগঠনের নেতারা। তাঁরা টাঙ্গাইল জেলাকে ঢাকা বিভাগে রাখার দাবি জানিয়ে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে স্মারকলিপি দেন।

এদিকে টাঙ্গাইল জেলাকে ঢাকা বিভাগেই রাখার দাবিতে সোমবার যমুনা সেতুর পূর্ব প্রান্তে গোলচত্বরে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। ছাত্র–জনতার ব্যানারে আয়োজিত বিক্ষোভকারীরা প্রায় আধা ঘণ্টা ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক অবরোধ করে রাখেন। পরে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে অবরোধ তুলে নেন।

ছাত্র ফেডারেশন টাঙ্গাইল জেলা শাখার সভাপতি ফাতেমা রহমান বীথি বলেন, টাঙ্গাইল জেলা ময়মনসিংহ বিভাগে অন্তর্ভুক্তি নিয়ে জনগণের মধ্যে বিভ্রান্তি ছড়িয়ে পড়ছে। কিন্তু জেলা প্রশাসক আনুষ্ঠানিকভাবে এ বিষয়ে কোনো বিবৃতি দিচ্ছে না। এমন পরিস্থিতিতে প্রশাসন যদি নীরব থাকে, তাহলে জনগণ কোন উৎস থেকে সত্যটা জানবে?

টাঙ্গাইলের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) সঞ্জয় কুমার মহন্ত সোমবার দুপুরে প্রথম আলোকে জানান, টাঙ্গাইল জেলা ঢাকা বিভাগ থেকে অন্য বিভাগে অন্তর্ভুক্তির কোনো তথ্য তাঁরা পাননি। এটা গুজব।

টাঙ্গাইল জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ ইকবাল বলেন, টাঙ্গাইল জেলা ঢাকা বিভাগেই আছে থাকবে। ফেসবুকে টাঙ্গাইল জেলা ময়মনসিংহ বিভাগের সঙ্গে সংযুক্তির যে তথ্যটি ছড়িয়ে পড়েছে, তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। সরকারিভাবে এ ধরনের কোনো সিদ্ধান্ত বা প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়নি।

প্রসঙ্গত, ২০১৪ সালে ময়মনসিংহ বিভাগ ঘোষণার সময় টাঙ্গাইল জেলাকে সেখানে অন্তর্ভুক্ত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। এর প্রতিবাদে জেলার সর্বত্র আন্দোলন গড়ে তোলা হয়। পরে সরকার সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে।

টাঙ্গাইল নাগরিক অধিকার সুরক্ষা কমিটির সাধারণ সম্পাদক নূর মোহাম্মদ ওরফে রাজ্য বলেন, ‘টাঙ্গাইল জেলা ময়মনসিংহ বিভাগে অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে বলে যে খবর ছড়িয়েছে, সেটা সঠিক নয় বলে জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। যদি এ ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হয়, আমরা গণ–আন্দোলন গড়ে তুলব।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প রস ত ব ত কর র ফ সব ক স মব র অবর ধ

এছাড়াও পড়ুন:

জামায়াতের আমিরের দৃষ্টিতে ফ্যাসিবাদীদের ৫ লক্ষণ, সব লক্ষণ এখনো বিদ্যমান

জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ফ্যাসিবাদের চূড়ান্ত বিদায় হয়নি বলে মনে করেন জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান। তিনি বলেন, মানুষ ধারণা করেছিল, গণ–অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ফ্যাসিবাদের চূড়ান্ত বিদায় হবে। কিন্তু ফ্যাসিবাদের একটি অংশ বিদায় নিলেও ফ্যাসিবাদ বাংলাদেশে রয়ে গেছে।

জামায়াতের আমিরের মতে, ফ্যাসিবাদীদের কিছু লক্ষণ আছে। ১ নম্বর লক্ষণ হচ্ছে দুর্নীতি। ২ নম্বর লক্ষণ হচ্ছে চাঁদাবাজি। ৩ নম্বর লক্ষণ হচ্ছে দখলদারি। চতুর্থ লক্ষণ হচ্ছে মা–বোনদের ইজ্জত নিয়ে টানাটানি। পঞ্চম লক্ষণ হচ্ছে দেশকে গায়ের জোরে অস্থির করা। তাঁর দাবি, সব লক্ষণই এখনো বিদ্যমান।

আজ শুক্রবার সকালে রাজধানীর ভাষানটেক এলাকায় ঢাকা–১৭ আসনের আওতাভুক্ত জামায়াতের বিভিন্ন কমিটি আয়োজিত এক যুব–ছাত্র ও নাগরিক গণসমাবেশে শফিকুর রহমান এ কথাগুলো বলেন।

সম্প্রতি অনুষ্ঠিত চার বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ নির্বাচনে ইসলামী ছাত্রশিবির বিপুল বিজয় পায়। ছাত্রশিবির জামায়াতের ছাত্রসংগঠন হিসেবে পরিচিত। ছাত্র সংসদ নির্বাচনের প্রভাব জাতীয় নির্বাচনে পড়বে না বলে মনে করে বিএনপি। তবে জামায়াতের মতে, নির্বাচনে এর প্রভাব পড়বে।

এ প্রসঙ্গ টেনে জামায়াতের আমির শফিকুর রহমান বলেন, ‘ছাত্র সংসদ নির্বাচনের ইতিবাচক প্রভাব জনগণের হৃদয়ে পড়েছে। এই রাস্তায় অনেকে সফল হতে পারবে না বা জনগণের ম্যান্ডেট পাবে না, এমন চিন্তা করে এখন কোনো কোনো জায়গায় পুরাতন সন্ত্রাসীরা নতুন রূপে আত্মপ্রকাশ করতে যাচ্ছে। কোথাও জামায়াতের প্রচার মিছিলে গুলি চালানো হচ্ছে। কোথাও মা–বোনদের ওপর হামলা করা হচ্ছে। কোথাও জামায়াতের প্রচার উপকরণ সরিয়ে ফেলা হচ্ছে, ছিঁড়ে ফেলা হচ্ছে।’

দেশের মানুষ পুরোনো বস্তাপচা রাজনীতি আর দেখতে চায় না উল্লেখ করে শফিকুর রহমান বলেন, নতুন বাংলাদেশ আর পুরোনো ফর্মুলায় চলবে না। নতুন বাংলাদেশ চলবে নতুন ফর্মুলায়। সেই ফর্মুলা হলো, দেশের জনগণ আর কোনো দলের পক্ষপাতদুষ্ট সরকার দেখতে চায় না। জনগণ চায়, সরকারের প্রত্যেক নিয়োজিত ব্যক্তি নিজের জন্য চিন্তা করার আগে জনস্বার্থ নিয়ে ভাববেন। যে সরকার জনগণের ভাগ্যের পরিবর্তনের কথা বলে জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করে নিজের ভাগ্যের পরিবর্তন করবে না, দুর্নীতিতে জড়াবে না, সরকারের মদদপুষ্ট হয়ে কেউ চাঁদাবাজি করার দুঃসাহস দেখাবে না।

জামায়াতে ইসলামী ক্ষমতায় যেতে না পারলেও পাঁচ বছরের জন্য ক্ষমতার ছোট অংশীদার ছিল উল্লেখ করে দলের আমির বলেন, ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত যাঁরা ক্ষমতায় ছিলেন, তাঁরা দেশকে সুশাসন দিতে ব্যর্থ হয়েছেন। সে সময় দেশ চারবার দুর্নীতিতে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল।

শফিকুর রহমান বলেন, ওই সময় জামায়াতের আমির ও সেক্রেটারি জেনারেল মন্ত্রী ছিলেন। কিন্তু তাঁদের দুর্নীতির একটি শর্ষেদানাও কেউ আবিষ্কার করতে পারেনি। তাঁদের এই সাফল্য দেখে দুর্নীতিবাজেরা শঙ্কিত হয়ে পড়েছিল। যেকোনো মূল্যে জামায়াতকে বাংলাদেশের রাজনীতিতে অস্তিত্বহীন করার চেষ্টা করা হয়েছিল।

জামায়াতের আমির আরও বলেন, ধর্মীয় কোনো বিশ্বাস ধারণ করা প্রত্যেক নাগরিকের নিজস্ব ব্যাপার। এখানে কোনো জোরজবরদস্তি চলবে না। আগামী নির্বাচনে জামায়াতের হয়েও ভিন্ন ধর্মাবলম্বী কেউ কেউ সংসদ সদস্য পদে লড়াই করবেন বলেও জানান তিনি।

জামায়াতে ইসলামীর ঢাকা মহানগর উত্তরের আমির মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিনের সভাপতিত্বে সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন ঢাকা–১৭ আসনে জামায়াত মনোনীত প্রার্থী এস এম খালিদুজ্জামান। তিনি বলেন, আগামী দিনে গুম, খুন ও বৈষম্যমুক্ত রাষ্ট্র গঠন করতে চাইলে দাঁড়িপাল্লার বিকল্প নেই। চব্বিশের গণ–অভ্যুত্থানে শহীদেরা দেশ গঠনের যে সুযোগ করে দিয়েছে, সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে এগিয়ে যেতে হবে।

সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি জাহিদুল ইসলাম। মূল সমাবেশস্থলের কিছুটা দূরে ছিল নারীদের বসার জায়গা। সেখানে জামায়াত আমিরসহ কেন্দ্রীয় নেতাদের বক্তব্য বড় পর্দায় দেখানো হয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • জামায়াতের আমিরের দৃষ্টিতে ফ্যাসিবাদীদের ৫ লক্ষণ, সব লক্ষণ এখনো বিদ্যমান
  • বিনা মূল্যে ৪৮ জেলায় ফ্রিল্যান্সিং প্রশিক্ষণ, আবেদন এইচএসসিতে
  • ময়মনসিংহে বন্ধুকে কুপিয়ে হত্যার পর তরুণ কুড়াল হাতে থানায়
  • দেশে সক্রিয় আরেকটি ফাটলরেখার সন্ধান
  • বগুড়ায় স্ত্রী-সন্তান নিহ‌তের ঘটনায় সেনা সদস্য গ্রেপ্তার
  • রংপুর নগর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের গেজেট প্রকাশ
  • ময়মনসিংহে পুলিশ বক্সের সামনে যুবদলকর্মীকে হত্যা
  • ভিক্টোরিয়ায় চিকিৎসা নিতে এসে মৃত্যু, স্বজনরা জানলো দুইদিন পর
  • হতাশায় ডুবে থাকলে সম্ভাবনা দেখা যায় না
  • সম–অধিকারের ভিত্তিতে রাজনৈতিক সমঝোতা করতে চাইলে স্বাগত জানাই: মামুনুল হক