টাঙ্গাইল জেলাকে ময়মনসিংহ বিভাগে অন্তর্ভুক্তির ‘গুজবে’, মহাসড়ক অবরোধ
Published: 13th, October 2025 GMT
টাঙ্গাইল জেলাকে ময়মনসিংহ বিভাগে অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এমন খবর ছড়িয়ে পড়ার পর ক্ষুব্ধ হয়ে উঠছেন ওই জেলার মানুষেরা। প্রতিবাদে যমুনা সেতুর পূর্ব প্রান্তে সোমবার বিক্ষোভ হয়। প্রায় আধা ঘণ্টা ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক অবরোধ করে রাখেন বিক্ষোভকারীরা। জেলা প্রশাসন সূত্র জানিয়েছে, এ বিষয়ে তারা কোনো তথ্য পায়নি। বিষয়টি গুজব।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, গত শনিবার রাত থেকে সমাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের একটি প্রতিবেদনের অনুলিপি ছড়িয়ে পড়ে। প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের বরাবর দেওয়া ওই প্রতিবেদনে কারও কোনো স্বাক্ষর নেই। সেখানে ঢাকা, মানিকগঞ্জ, গাজীপুর, নরসিংদী, নারায়ণগঞ্জ ও মুন্সিগঞ্জ জেলা নিয়ে ঢাকা বিভাগ গঠনের প্রস্তাব করা হয়েছে বলে দেখানো হয়। টাঙ্গাইল জেলা ময়মনসিংহ বিভাগে অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
স্বাক্ষরবিহীন প্রতিবেদনটি বিভিন্ন গ্রুপে ছড়িয়ে পড়ে। এতে অনেকে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানাতে শুরু করেন। টাঙ্গাইল শহর ও প্রতিটি উপজেলায় সাধারণ মানুষের মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়ে টাঙ্গাইল জেলাকে ময়মনসিংহ বিভাগে অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে।
জেলাটির বাসিন্দা কবি অনার্য অধীর তাঁর ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, টাঙ্গাইল জেলার ৪২ লাখ মানুষের মধ্যে একজন মানুষও ময়মনসিংহ বিভাগে অন্তর্ভুক্ত চায় না। মানুষের অনুভূতিতে আঘাত করার এ সিদ্ধান্ত কার স্বার্থে? আয়ারল্যান্ডপ্রবাসী টাঙ্গাইলের সন্তান সংগীতশিল্পী ফরিদ আহমেদ ফেসবুকে লেখেন, ‘বেশি বুঝলে, টাঙ্গাইল বিভাগ চাই। ময়মনসিংহ হবে টাঙ্গাইল বিভাগের জেলা।’
টাঙ্গাইল ঢাকা বিভাগে আছে থাকবে, অন্য কিছু করতে চাইলে কোনো দিন টাঙ্গাইলবাসী মানবে না বলে ফেসবুকে লিখেছেন সংবাদিক আশরাফ সরকার। শফিকুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি লেখেন, ‘টাঙ্গাইল নিয়ে টানাটানির ফল ভালো হবে না।’
কার্যক্রম নিষিদ্ধঘোষিত আওয়ামী লীগ এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের আত্মগোপনে থাকা নেতা–কর্মীরাও এ বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সরব। তাঁরা টাঙ্গাইল জেলাকে ঢাকা বিভাগে রাখার দাবি জানিয়েছেন। আত্মগোপনে থাকা টাঙ্গাইল-৭ (মির্জাপুর) আসনের আওয়ামী লীগদলীয় সাবেক সংসদ সদস্য খান আহমেদ শুভ সোমবার তাঁর ফেসবুক পাতায় লিখেছেন, ‘টাঙ্গাইল জেলাকে ময়মনসিংহ বিভাগের সঙ্গে সংযুক্ত করার ঘৃণিত প্রস্তাব বাতিল করুন! না হলে টাঙ্গাইলের সর্বস্তরের জনগণ দ্রুত সময়ের মধ্যে দ্রুততম সময়ের মধ্যে রাজপথে নামতে বাধ্য হবে।’
গতকাল রোববার জেলা আইনশৃঙ্খলা উন্নয়ন কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই কমিটির সদস্য বিভিন্ন রাজনৈতিক, পেশাজীবী, ব্যবসায়িক সংগঠনের নেতারা। তাঁরা টাঙ্গাইল জেলাকে ঢাকা বিভাগে রাখার দাবি জানিয়ে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে স্মারকলিপি দেন।
এদিকে টাঙ্গাইল জেলাকে ঢাকা বিভাগেই রাখার দাবিতে সোমবার যমুনা সেতুর পূর্ব প্রান্তে গোলচত্বরে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। ছাত্র–জনতার ব্যানারে আয়োজিত বিক্ষোভকারীরা প্রায় আধা ঘণ্টা ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক অবরোধ করে রাখেন। পরে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে অবরোধ তুলে নেন।
ছাত্র ফেডারেশন টাঙ্গাইল জেলা শাখার সভাপতি ফাতেমা রহমান বীথি বলেন, টাঙ্গাইল জেলা ময়মনসিংহ বিভাগে অন্তর্ভুক্তি নিয়ে জনগণের মধ্যে বিভ্রান্তি ছড়িয়ে পড়ছে। কিন্তু জেলা প্রশাসক আনুষ্ঠানিকভাবে এ বিষয়ে কোনো বিবৃতি দিচ্ছে না। এমন পরিস্থিতিতে প্রশাসন যদি নীরব থাকে, তাহলে জনগণ কোন উৎস থেকে সত্যটা জানবে?
টাঙ্গাইলের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) সঞ্জয় কুমার মহন্ত সোমবার দুপুরে প্রথম আলোকে জানান, টাঙ্গাইল জেলা ঢাকা বিভাগ থেকে অন্য বিভাগে অন্তর্ভুক্তির কোনো তথ্য তাঁরা পাননি। এটা গুজব।
টাঙ্গাইল জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ ইকবাল বলেন, টাঙ্গাইল জেলা ঢাকা বিভাগেই আছে থাকবে। ফেসবুকে টাঙ্গাইল জেলা ময়মনসিংহ বিভাগের সঙ্গে সংযুক্তির যে তথ্যটি ছড়িয়ে পড়েছে, তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। সরকারিভাবে এ ধরনের কোনো সিদ্ধান্ত বা প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়নি।
প্রসঙ্গত, ২০১৪ সালে ময়মনসিংহ বিভাগ ঘোষণার সময় টাঙ্গাইল জেলাকে সেখানে অন্তর্ভুক্ত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। এর প্রতিবাদে জেলার সর্বত্র আন্দোলন গড়ে তোলা হয়। পরে সরকার সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে।
টাঙ্গাইল নাগরিক অধিকার সুরক্ষা কমিটির সাধারণ সম্পাদক নূর মোহাম্মদ ওরফে রাজ্য বলেন, ‘টাঙ্গাইল জেলা ময়মনসিংহ বিভাগে অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে বলে যে খবর ছড়িয়েছে, সেটা সঠিক নয় বলে জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। যদি এ ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হয়, আমরা গণ–আন্দোলন গড়ে তুলব।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প রস ত ব ত কর র ফ সব ক স মব র অবর ধ
এছাড়াও পড়ুন:
অনেক বছর পর একটি রিয়েল ইলেকশন হবে: প্রেস সচিব
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, ‘বাংলাদেশে অনেক বছর পর একটি রিয়েল ইলেকশন হবে। আগে তো আমরা দেখেছি সব ফেক ইলেকশন, হাসিনার আমলের ১৬ বছর পুরোটা আমরা ফেক ইলেকশন দেখেছি। আমরা সেই জায়গা থেকে সরে এসে কীভাবে সুন্দর নির্বাচন হয়, তা দেখাব। আমরা মনে করি, এবার বাংলাদেশের অন্যতম একটি সুন্দর নির্বাচন হবে।’
আজ শুক্রবার সন্ধ্যায় ময়মনসিংহ প্রেসক্লাবে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় এ কথা বলেন প্রেস সচিব শফিকুল আলম। নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে প্রায়ই সভা হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, প্রধান উপদেষ্টার অফিস, নির্বাচনে কমিশন কী কী প্রস্তুতি নিচ্ছে, তা জানাচ্ছে। নির্বাচনের আমেজ সব জায়গায় দেখছি। মানুষের মধ্যেও নির্বাচনের হাওয়া বইতে শুরু করেছে। রাজনৈতিক দলগুলো যখন আগামী দুই–তিন সপ্তাহের মধ্যে নিজেদের প্রার্থীদের নাম ঘোষণা শুরু করবে, তখন পরিস্থিতি অন্য রকম হয়ে যাবে।’
ঐকমত্য কমিশনে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সৌহাদ্যপূর্ণ পরিবেশে দীর্ঘ আলোচনা হয়েছে উল্লেখ করে শফিকুল আলম বলেন, ‘আপনারা জানেন, ১৫ অক্টোবর জুলাই সনদ সই হবে। এরপর দেশের সমস্ত দল নির্বাচনের জন্য ভালোভাবে প্রস্তুতি নেবে। ইতিমধ্যে দুয়েকটি দল তাদের সম্ভাব্য প্রার্থী ঘোষণা করে দিয়েছে। বাংলাদেশের সুস্থ ধারার রাজনীতি এর মাধ্যমে নবযাত্রা শুরু করবে। বাংলাদেশে আগের মতো হানাহানির রাজনীতি আর থাকবে না। রাজনৈতিক দলগুলো দখন জুলাই সনদে সই করবে, তখন বোঝা যাবে, তারা অনেক বিষয়েই ঐকমত্যে এসেছে। রাজনৈতিক দলগুলো পিআর ইস্যুটা ঠিক করবে, এর ডিসিশন কী হবে।’
প্রেস সচিব বলেন, ‘আমাদের অন্তর্বর্তী সরকারে যাঁরা আছেন, তাঁরা খুবই ডেডিকেটেড। গত ১৪ মাসে তাঁরা খুব ডেডিকেটেড ওয়েতে দেশকে সার্ভ করেছেন। তাঁরা খুবই দেশপ্রেমী এবং তাঁরা নিজেদের সর্ব্বোচ্চটা দিয়েছেন।’
ইসরায়েলের কারাগার থেকে আলোকচিত্রী শহিদুল আলমের মুক্ত হওয়া প্রসঙ্গে শফিকুল আলম বলেন, শহিদুল আলমের মুক্তি ও ইসরায়েল থেকে তাঁর প্রত্যাবর্তনে সহায়তার জন্য তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
মতবিনিময় সভায় ময়মনসিংহ প্রেসক্লাবের সহসভাপতি নওয়াব আলী, সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম, সাংবাদিক ইউনিয়ন ময়মনসিংহের সভাপতি এম আইয়ুব আলীসহ প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকেরা উপস্থিত ছিলেন।