‘সব প্রতিবেদন হুবহু’ প্রকাশ, ময়মনসিংহের ১১টি সংবাদপত্রের ডিক্লারেশন বাতিল
Published: 13th, October 2025 GMT
চলতি বছরের ৮ এপ্রিল দুটি পাতার সব প্রতিবেদন হুবহু প্রকাশ করার অভিযোগে ময়মনসিংহ থেকে প্রকাশিত ১১টি সংবাদপত্রের ঘোষণাপত্র (ডিক্লারেশন) বাতিল করেছে জেলা প্রশাসন। গত বৃহস্পতিবার ১১টি সংবাদপত্র বাতিলের আদেশ জারি করা হয়। তবে রবি ও সোমবার সংশ্লিষ্ট সংবাদপত্রের লোকজনের কাছে ডিক্লারেশন বাতিলের চিঠি পৌঁছানো হয় বলে প্রশাসন জানিয়েছে।
আরও পড়ুনকোন ক্ষমতাবলে ১৩টি পত্রিকাকে শোকজ করল ময়মনসিংহের জেলা প্রশাসন১৯ এপ্রিল ২০২৫জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, ডিক্লারেশন বাতিল হওয়া পত্রিকাগুলো হলো মো.
এ বিষয়ে ময়মনসিংহের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) উম্মে হাবীবা মীরা বলেন, ছাপাখানা ও প্রকাশনা (ঘোষণা ও নিবন্ধীকরণ) আইনের কিছু ধারা লঙ্ঘন করে পত্রিকাগুলো প্রকাশিত হচ্ছিল। আইনের লঙ্ঘন করায় তাদের ডিক্লারেশন বাতিল করা হয়েছে।
এর আগে চলতি বছরের ৮ এপ্রিল ময়মনসিংহ থেকে প্রকাশিত ১৩টি পত্রিকার দুটি পাতায় সব প্রতিবেদন হুবহু প্রকাশ করায় পত্রিকাগুলোর সম্পাদক ও প্রকাশকদের কারণ দর্শানোর নোটিশ (শোকজ) দিয়েছিল জেলা প্রশাসন। অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) উম্মে হাবীবা মীরা স্বাক্ষরিত নোটিশে পত্র পাওয়ার পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে শোকজের জবাব দিতে বলা হয়েছিল। শোকজ করা ১৩টি পত্রিকার মধ্যে মো. আফসর উদ্দিন সম্পাদিত দৈনিক সবুজ ও এম এ মতিন সম্পাদিত দৈনিক নিউ টাইমস ছাড়া বাকি ১১টি পত্রিকার ডিক্লারেশন বাতিল করা হলো।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, ডিক্লারেশনে উল্লেখ করা ছাপাখানার বাইরে অনুমোদনবিহীন ছাপাখানা থেকে ১১টি সংবাদপত্র প্রকাশিত হচ্ছিল। অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) উম্মে হাবীবা মীরা বলেন, ছাপাখানার স্থান পরিবর্তন করতে হলে অনুমতি নিতে হয়। এর মধ্যে দুটি সংবাদপত্র আগেই অনুমতি নিয়ে নেয়। বাকি ১১টির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের কার্যালয় থেকে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার ডিক্লারেশন বাতিলের চিঠি জারি হলেও সংবাদপত্রগুলোর সম্পাদক ও প্রকাশকদের ফোন করে চিঠি নিতে জানানো হয়। আজ সোমবার বিকেল চারটা পর্যন্ত ছয়টি সংবাদপত্র ডিক্লারেশন বাতিলের চিঠি নিয়ে গেছে।
দৈনিক আলোকিত ময়মনসিংহ ও দৈনিক দিগন্ত বাংলা সম্পাদক আ ন ম ফারুক মুঠোফোন জানিয়েছেন, ডিক্লারেশন বাতিলের চিঠি এখনো তাঁরা হাতে পাননি। চিঠি পাওয়ার পর পরবর্তী করণীয় ঠিক করবেন। তবে দৈনিক দেশের খবর পত্রিকার সম্পাদক এফ এম এ ছালাম বলেন, ‘আমাদের যদি রিভিউ করার সুযোগ থাকে, তাহলে রিভিউ করব। তা না হলে হাইকোর্টে যাব।’
ময়মনসিংহ অঞ্চলের সবচেয়ে পুরোনো সংবাদপত্র দৈনিক জাহান। হাবিবুর রহমান শেখের সম্পাদনায় ১৯৮০ সাল থেকে এটির প্রকাশ শুরু হয়। শুরু থেকেই সংবাদপত্রটির সঙ্গে জড়িত থাকা হাসিম উদ্দিন বর্তমানে নির্বাহী সম্পাদকের দায়িত্বে রয়েছেন।
ডিক্লারেশন বাতিলের বিষয়ে হাসিম উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘পত্রিকা যখন প্রকাশ শুরু হয় তখন এ অঞ্চলে কোনো সংবাদপত্র ছিল না। গত পাঁচ-ছয় মাস আগে আমাদের ছাপাখানায় মেশিন সমস্যা দেখা দেওয়ায় অন্য একটি ছাপাখানা থেকে পত্রিকা প্রকাশ করছিলাম। এ জন্য জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে আবেদনও জমা দেওয়া ছিল। আমাদের ছাপাখানার মেশিন বসানোর কাজ চলছে। এর মধ্যে আজ ডিক্লারেশন বাতিলের কথা শুনতে পেরেছি। এখন কী করবো বুঝতে পারছি না।’
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: স ব দপত র প রক শ ত উদ দ ন
এছাড়াও পড়ুন:
ভিক্টোরিয়ায় চিকিৎসা নিতে এসে মৃত্যু, স্বজনরা জানলো দুইদিন পর
শহরের নিতাইগঞ্জের নারায়ণগঞ্জ জেনারেল (ভিক্টোরিয়া) হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসেন এক পঞ্চাশোর্ধ্ব ব্যক্তি। প্রথমে সে জরুরী বিভাগে থাকা ডাক্তারকে দেখান। সেখান থেকে তাকে পাঠানো হয় ২১৫ নাম্বার ওয়ার্ডের কার্ডিওলজি ডাক্তারের কাছে।
কার্ডিওলজি ডাক্তার তাকে ইসিজি করতে বললে তিনি ইসিজি করে এসে ডাক্তারের সামনেই মাটিতে লুটিয়ে পড়েন এবং সেখানেই তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। গত ২৪ নভেম্বর (সোমবার) সকালে এ ঘটনাটি ঘটে।
মৃত্যু ব্যক্তিটির নাম আব্দুল জব্বার। তিনি ফতুল্লা থানাধীন পূর্ব সস্তাপুর এলাকায় অস্থায়ী বাসিন্দা। তার গ্রামের বাসা ময়মনসিংহ জেলায়। পেশায় তিনি ছিলেন মাছ বিক্রেতা।
এদিকে তার মৃত্যুবরণ হাসপাতালে এক প্রকার হৈচৈ পড়ে যায়। কারণ, তার সাথে কোন স্বজন ছিলো না। ফলে কার কাছে লাশটি বুুঝিয়ে দিবেন সেই লোক খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিলো না। ফলে শুরু হয় লাশটির স্বজনদের অনুসন্ধান। কিন্তু স্বজনদের সন্ধান না পেয়ে লাশটি রাখা হয় হিমঘরে।
গত দুইদিন ধরে সোস্যাল মিডিয়া থেকে শুরু করে বিভিন্নভাবে লাশটির স্বজনদের অনুসন্ধান করা হয়। কিন্তু কোনভাবেই স্বজনদের সন্ধান না পেয়ে লাশটি অজ্ঞাতভাবে লাফন করার জন্য জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত আবেদনের প্রস্তুতি নেয়া হয়।
বুধবার (২৬ নভেম্বর) সকাল ১১টার দিকে এ আবেদনটি নিয়ে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন হাসপাতালের অফিস সহায়ক সাউদ নূরে শফিউল কাদের। তিনি জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে সামনে যাওয়ার পর পরই তাকে হাসপাতাল থেকে কল করে বলা হয়, ‘লাশটির স্বজনদের সন্ধান পাওয়া গেছে। আপনি দ্রুত হাসপাতালে চলে আসুন।’
এদিকে জরুরী বিভাগের পাশে লাশকাটা ঘরের সামনে অশ্রুসিক্ত নয়নে দাঁড়িয়ে আছে মৃত আব্দুল জব্বারের ছেলে আমির হামজা। তিনি এখনও বিশ্বাস করতে পারছেন না যে, তারা পিতা মারা গেছে। একদম জলজ্যান্ত মানুষটি বাসা থেকে অনেকটাই সুস্থভাবেই বেড়িয়ে আসলেন, অথচ তিনি আজ মৃত। এসব ভেবেই তিনি অনেকটাই দুঃখে শোকে কাতর। এমন পরিস্থিতিতে তার বক্তব্য নেয়ার সুযোগ ছিলো না।
তবে এ বিষয়ে মৃত আব্দুল জব্বারের চাচাতো ভাই মো: মফিজুল ইসলাম বলেন, যথারীতি ২৪ নভেম্বর সকাল আনুমানিক ৯টার দিকে বাসা থেকে বের হয়ে আসেন আব্দুল জব্বার। তার পর থেকে তার আর কোন খোঁজ পাইনি। আমরা তাকে গত দুইদিন ধরে বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুজি করছি।
কিন্তু পাই নি। আজ সকালে আমাদের এলাকারই এক মহিলা বলে, ওনাকে নাকি এ হাসপাতালে দেখছে। তার কথা শুনে আমরা এ হাসপাতালে এসে তার খোঁজ নেওয়ার চেষ্টা করি। পরে জানতে পারি, এখানে চিকিৎসা নিতে এসে তিনি মারা গেছে।
তিনি আরও বলেন, এখন আমাদের লাশ বুঝিয়ে দেওয়া হচ্ছে। আমরা লাশ নিয়ে গ্রামের বাড়ী ময়মনসিংহে নিয়ে যাবো এবং ওখানে দাফন করবো।
এ ব্যাপারে হাসপাতালটির ওয়ার্ড মাষ্টার শাহাদাৎ হোসেন বলেন, তিনি প্রথমে জরুরী বিভাগে আসেন। সেখান থেকে তাকে ২১৫ নাম্বার ওয়ার্ডের কার্ডিওলজি স্যারের কাছে পাঠানো হয়। স্যার তাকে ইসিজি করতে বললে তিনি ইসিজি করিয়ে নিয়ে আসেন। কিন্তু হঠাৎ করেই স্যারের রুমে মাটিতে পড়ে যান এবং সেখানেই তার মৃত্যু হয়।
তিনি বলেন, আমরা তার স্বজনদের খোঁজ পেতে অনেক চেষ্টা করেছি। কিন্তু পাই নি। আজ তাই ডিসি স্যারের কাছে লিখিত আবেদন নিয়ে পাঠিয়েছিলা যে, এ লাশটি এখন কি করবো। তার নির্দেশনা আসলে আমরা তাকে অজ্ঞাত লাশ হিসেবে দাফন করতাম।
আল্লাহ্’র রহমতে এর আগেই তার স্বজনরা চলে আসছে। আমরা মৃত ব্যক্তির যাবতীয় তথ্য ও ছবির সাথে মিলিয়ে এবং যাচাই করে এ স্বজনদের হাতে লাশটি বুঝিয়ে দিচ্ছি।