আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (পিআর) পদ্ধতিতে নির্বাচনের সমালোচনা করে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান রিপন বলেছেন, ‘পিআর সিস্টেম সবচেয়ে বেশি পছন্দ করে ইসরায়েল। যারা গাজায় মুসলমান শিশু ও মানুষ হত্যা করেছে, সেই খুনি নেতানিয়াহুর সবচেয়ে প্রিয় বিষয় এই পিআর সিস্টেম। ইহুদিদের ওই পিআর সিস্টেমটা আমাদের ভালো লাগবে কেন? ওই উগ্রবাদী সাম্প্রদায়িক শক্তির নির্বাচন পদ্ধতি বাংলাদেশের মানুষ কোনো সময়ই মেনে নেবে না।’

আজ সোমবার বিকেলে খুলনার পাইকগাছা পৌরসভা মাঠে উপজেলা ও পৌর যুবদল আয়োজিত যুব সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন রিপন।

জামায়াতে ইসলামীকে ইঙ্গিত করে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘একটি দল এখন শুধু পিআর পিআর করছে, কিন্তু তারা এই পদ্ধতি কী তা বোঝেই না, পিআর হলে প্রার্থী দেওয়ার সুযোগ থাকে না—দলকেই ভোট দিতে হয়, প্রার্থীকে নয়। ভোটের অনুপাতে দল সংসদে প্রতিনিধি পাঠায়, জনগণের সঙ্গে এমপিদের কোনো সরাসরি সম্পর্ক থাকে না। ফলে জনগণ তাদের নির্বাচিত প্রতিনিধির কাছে গিয়ে দুঃখ–দুর্দশার কথা বলতে পারে না। পিআর একধরনের হাওয়াই সিস্টেম। অথচ যারা পিআর চায়, তারাই আবার প্রতিটি আসনে প্রার্থী ঘোষণা করে পোস্টার লাগাচ্ছে। আসলে তারা পিআর নয়, ঝামেলা চায়।’

আওয়ামী লীগের অনেক নেতা এখন অন্য দলের ছায়ায় আশ্রয় নিতে চাইছে উল্লেখ করে আসাদুজ্জামান রিপন বলেন, তাদের আশ্রয় দেওয়া যাবে না। সুযোগ পেলে বিষধর সাপের মতো তারাই প্রথমে আঘাত করবে। বিএনপি জনগণের শক্তিতে, দুর্বৃত্তদের ছাড়াই বিপুল ভোটে বিজয়ী হবে।

নির্বাচনে আওয়ামী লীগ না থাকলেও নির্বাচনের অগ্রহণযোগ্যতা নিয়ে কোনো প্রশ্ন উঠবে না বলে মনে করেন রিপন। ১৯৭৩ সালের নির্বাচনের উদাহরণ টেনে রিপন বলেন, তখন মুসলিম লীগকে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল, কারণ তারা স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছিল। তবু নির্বাচন গ্রহণযোগ্য ছিল। একইভাবে যদি আওয়ামী লীগকে এখন নিষিদ্ধ করা হয়, তাহলেও নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে। কারণ, জনগণই গণতন্ত্রের আসল উৎস।

বিগত আওয়ামী লীগ সরকারকে দিয়ে ভারত অনেক লাভবান হয়েছে উল্লেখ করে রিপন বলেন, ‘শেখ হাসিনা বলতেন, “ভারতকে এত কিছু দিয়েছি তারা সারা জীবন মনে রাখবে”। জনগণকে না দিয়ে অন্য দেশকে দিয়ে ক্ষমতায় থাকা যায় না—তার প্রমাণ শেখ হাসিনার পতন। আওয়ামী লীগের ক্ষমতার উৎস জনগণ নয়, ছিল ভারত। তাদের নেতারা নিজের মুখেই বলতেন, “আমরা আছি তো দিল্লি আছে, দিল্লি আছে তো আমরা আছি”। কিন্তু আমরা বলি, জনগণ আছে, তাই আমরা আছি। কারণ আমরা জনগণের পক্ষের শক্তি।’

পাইকগাছা উপজেলা যুবদলের সভাপতি তহিদুজ্জামানের সভাপতিত্বে সমাবেশে প্রধান বক্তা ছিলেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির তথ্যবিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল। বিশেষ অতিথি ছিলেন খুলনা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান ও সদস্যসচিব শেখ আবু হোসেন (বাবু)।

সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন খুলনা জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মোমরেজুল ইসলাম, জেলা যুবদলের আহ্বায়ক ইবাদুল হক রুবায়েদ, সদস্যসচিব নাদিমুজ্জামান, পাইকগাছা উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবদুল মজিদ ও পৌর বিএনপির সভাপতি আসলাম পারভেজ প্রমুখ।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প আর স স ট ম ব এনপ র আওয় ম

এছাড়াও পড়ুন:

পিআর আন্দোলনের লক্ষ্য নির্বাচন বিলম্বিত করা: মির্জা ফখরুল

সংস্কার ক‌মিশন নয়, বরং দু’-একটি রাজ‌নৈ‌তিক দল পিআর পদ্ধ‌তির কথা ব‌লে আন্দোলন ক‌রে নির্বাচন বিল‌ম্বিত করার চেষ্টা কর‌ছে ব‌লে অভিযোগ ক‌রে‌ছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

ডেমোক্রেটিক লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইফুদ্দিন মনির দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে রবিবার (১২ অক্টোবর) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের উদ্যোগে আয়োজিত আলোচনা সভায় এ অভিযোগ করেন তি‌নি।

পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনের দাবির সমালোচনা করে মির্জা ফখরুল ব‌লেন, সংস্কার কমিশন পিআর পদ্ধতি বিষয়টি আনেনি। তবে, দু’-একটি রাজনৈতিক দল সেই পদ্ধতির কথা বলছে এবং সেটার জন্য তারা আন্দোলন করছে। আন্দোলনের লক্ষ্য একটাই—নির্বাচন বিলম্বিত করা। জনগণের ক্ষমতা জনগণের হাতে ফিরিয়ে দেওয়ার যে প্রক্রিয়া, সেই প্রক্রিয়াকে বিলম্বিত করা।

তি‌নি ব‌লেন, পিআর পদ্ধতি এই দেশের মানুষ গ্রহণ করবে না। আমাদের দলের পক্ষ থেকে তো আমরা স্পষ্ট বলেছি। জনগণই এই পদ্ধতি গ্রহণ করবে না। চাপিয়ে দেওয়া কোনো কিছু মানুষ গ্রহণ করবে না।

পিআর পদ্ধতি সম্প‌র্কে বিএন‌পির মহাসচিব ব‌লেন, দেশে হঠাৎ একটা নতুন বিষয় এসেছ, যা সম্পর্কে কারো কোনো ধারণাই নেই; সেটা হলো, পিআর পদ্ধতি। এই পদ্ধতি সম্পর্কে এই হাউজের (আলোচনা সভার) মধ্যে কয়জন আছেন, বলেন তো যে, পিআর পদ্ধতি বোঝেন, আছেন নাকি? 

উপস্থিত বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দলের (জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের) শীর্ষ নেতারা জবাব দেন, না, না, বুঝি না।

মির্জা ফখরুল বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের কমিটমেন্ট— আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে জাতীয় নির্বাচন। আমরা সেটাই দেখতে চাই। জনগণ নির্বাচন দেখতে চায় এবং সেই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ফিরে যেতে চায়। গণতন্ত্রের মধ্যে দিয়েই জনগণের আশা পূরণ করতে চায়।

সংস্কারের মধ্যেই বিএনপির জন্ম হয়েছে, জানিয়ে দলটির মহাসচিব বলেন, আমরা সব সময় সংস্কারের পক্ষে ছিলাম, যদিও আমাদের বিরুদ্ধে প্রচুর প্রচারণা চালানো হচ্ছে যে, আমরা নাকি সংস্কারের বিরুদ্ধে। আমরা বলে দিতে চাই, একদলীয় শাসন ব্যবস্থা থেকে বহুদলীয় শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করেছে বিএনপি। মিডিয়ার স্বাধীনতা এটাও সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের সময়ের। বিএনপির জন্মই সংস্কারের মধ্য দিয়ে। জিয়াউর রহমান যেমন অল্প সময়ের মধ্যে বাংলাদেশকে জাগিয়ে তুলেছিলেন, তেমনই কর্মযজ্ঞে হাতে নিয়ে ঝাপিয়ে পড়ার প্রস্তুতি শুরু করেছেন তারেক রহমান।

“নির্বাচনে সেই দলকেই জনগণ বেছে নেবে, যে দল পরীক্ষিত, অতীতে যারা পরীক্ষা দিয়েছে অর্থাৎ সরকারের ছিল, কাজ করেছে। যে দল মানুষকে আশার আলো দেখিয়েছে, যে দল অন্ধকার থেকে আলোতে টেনে নিয়ে এসেছে অর্থাৎ মানুষ বিএনপিকে ভোট দেবে,” ব‌লেন তি‌নি।

মির্জা ফখরুল বলেন, কিছু মানুষ চেষ্টা করে আমাদের একাত্তরে সালের ইতিহাসকে ভুলিয়ে দিতে। বিষয়টি সব সময় মাথায় রাখতে হবে, একাত্তরে যুদ্ধ হয়েছিল বলেই স্বাধীন হয়েছিলাম, নতুন চিন্তা করতে পারছি। স্বাধীন হয়েছিলাম বলেই কিন্তু বাংলাদেশে মানুষের অবস্থার পরিবর্তন করার সংগ্রাম করতে পারছি।

বিএনপির এই শীর্ষ নেতা বলেন, বাংলাদেশকে সত্যিকার অর্থেই একটি গণতান্ত্রিক ও সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। সেটি মাথায় রেখে আমরা যেন সামনের দিকে এগিয়ে যাই। অনেক ষড়যন্ত্র আছে, চক্রান্ত আছে। ষড়যন্ত্র-চক্রান্তকে পরাজিত করার শক্তি এ দেশের মানুষের আছে।

ঢাকা/নঈমুদ্দীন/রফিক

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • পিআর পদ্ধতি ব্যক্তির প্রতিনিধি পছন্দের স্বাধীনতা খর্ব করে: ফখরুল 
  • পিআর বুঝি না—এই কথা দায়িত্বশীলের হতে পারে না: মিয়া গোলাম পরওয়ার
  • আমাদের রাজনীতি হলো জনগণের জন্য : সাখাওয়াত 
  • আগামী নির্বাচনে জনগণ আরেকবার রায় দেবে, বাংলাদেশ অসাম্প্রদায়িক: মির্জা ফখরুল
  • পর্দায় আড়াল করা নীতি থেকে সরে আসুন
  • সেনাবাহিনীর পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছে জামায়াত
  • পিআর আন্দোলনের লক্ষ্য নির্বাচন বিলম্বিত করা: মির্জা ফখরুল
  • জনতা চায় নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন, এটিই আমাদের লক্ষ্য: মির্জা ফখরুল
  • জুলাই সনদ বাস্তবায়ন হলে স্বৈরাচারী কাঠামোর বিলোপ হবে: বদিউল আলম