কোনো কোনো বিচারক মনোযোগ দিয়ে প্রতিযোগীর পরিবেশনা দেখেননি। কেউ প্রতিযোগীর সঙ্গে রূঢ় আচরণ করেছেন। কখনো ৩০ সেকেন্ডের কম সময় পরিবেশনার সুযোগ পেয়েছে প্রতিযোগী। আবার প্রতিযোগীর উচ্চারণ বা সাজ নিয়ে কটু মন্তব্য করেছেন কোনো বিচারক। এতে প্রতিযোগীরা মানসিকভাবে আঘাত পেয়েছে। এমনকি বাছাইকক্ষ থেকে চোখের পানি ফেলে বের হয়েছে কয়েকজন প্রতিযোগী।

বাংলাদেশ টেলিভিশনের (বিটিভি) ‘নতুন কুঁড়ি’ প্রতিযোগিতার বিভাগীয় পর্যায়ের বাছাইপর্বের কোথাও কোথাও বিচারকেরা এমন আচরণ করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

প্রতিযোগীদের অভিভাবকদের দিক থেকে এসব অভিযোগ উঠে আসে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে, ‘নতুন কুঁড়ি বিটিভি’ নামের পেজে।

তবে বিচারকেরা বলছেন, প্রস্তুতি না নিয়ে আসা প্রতিযোগীদের অভিভাবকদের অভিযোগই বেশি। বরং কখনো কখনো অভিভাবকদের আচরণেই বিচারকেরা বিব্রত হয়েছেন।

বিটিভির শিশু-কিশোরদের প্রতিভা অন্বেষণ প্রতিযোগিতা ‘নতুন কুঁড়ি’। শুরু থেকেই ব্যাপক সাড়া ফেলে এই আয়োজন। এই অনুষ্ঠানের মঞ্চ থেকে উঠে আসেন অসংখ্য গুণী শিল্পী। তবে ২০০৬ সালে হঠাৎ করে বন্ধ হয়ে যায় এই অনুষ্ঠান। প্রায় দুই দশক পর বিটিভিতে আবার শুরু হয়েছে নতুন কুঁড়ি।

প্রতিযোগিতার বিভাগীয় পর্যায়ের বাছাইপর্ব শুরু হয় ৪ অক্টোবর। শেষ হয় ১১ অক্টোবর। আঞ্চলিক পর্যায়ে ‘ইয়েস কার্ড’ পাওয়া প্রতিযোগীরা আট বিভাগের বিভাগীয় পর্যায়ের বাছাইপর্বে অংশ নেয়।

বিটিভির ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তালিকা অনুযায়ী, বিভাগীয় পর্যায়ের প্রতিযোগীসংখ্যা ছিল ৬ হাজার ৩১৯ জন। বয়সভিত্তিক দুটি শাখায় প্রতিযোগীরা অংশ নেয়। ‘ক’ (৬-১১ বছর), ‘খ’ (১১-১৫ বছর)।

প্রতিযোগিতায় আবৃত্তি, নৃত্য, সংগীত, গল্পবলা, অভিনয়, কৌতুকের মতো বিষয় আছে। নিয়ম হলো, প্রত্যেক প্রতিযোগী সর্বোচ্চ তিনটি বিষয়ে অংশ নিতে পারবে।
ঢাকা, বরিশাল, সিলেট ও রাজশাহী বিভাগের অন্তত ৪০ জন অভিভাবক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিচারকদের আচরণ নিয়ে অভিযোগ তুলেছেন। তাঁদের মধ্যে অন্তত সাতজনের সঙ্গে কথা বলেছে প্রথম আলো।

বরিশালের মাধবপাশা চন্দ্রদ্বীপ হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজের ইংরেজি বিভাগের প্রভাষক ফারজানা নীপু প্রথম আলোকে বলেন, বিচারকদের একজন তাঁর সন্তানের পরিবেশনার কিছুই না শুনে নম্বর দিয়েছেন। পরিবেশনার সময় বিচারক মুঠোফোনে ব্যস্ত ছিলেন।
এই অভিভাবকের অভিযোগ, তাঁর সন্তান কার কাছ থেকে গল্প বলা শিখেছে, সেই গুরুকেই আগে শিখে আসতে হবে—এমন মন্তব্য করেন বিচারক। এ কথা শুনে সন্তান মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে যায়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নওগাঁর একজন অভিভাবক প্রথম আলোকে বলেন, বিচারকদের একজন আমার সন্তানকে তুচ্ছ করে কথা বলেছেন। বাচ্চা কাঁদতে কাঁদতে বের হয়েছে। ক শাখার শিশুকে ‘তুমি তো কিছুই পার না’ এভাবে বলতে পারেন না বিচারক।’

ঢাকা বিভাগের বাছাইপর্বে অংশ নিতে নরসিংদী থেকে আসা এক প্রতিযোগীর অভিভাবক প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর সন্তান নজরুল গীতিসহ গানের দুটি শাখায় অংশ নেয়। বাছাইপর্বে বিচারকেরা যেভাবে ‘কিছুই হচ্ছে না’ বলে মন্তব্য করেন, তা হতাশাজনক। এসব মন্তব্য বাচ্চাদের মনে প্রভাব ফেলে। অথচ তাঁরা খুব খুশি হয়েছিলেন, নতুন কুঁড়ি চালুর কথা শুনে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মরিয়া আজাদ মৌমি নামের একজন অভিযোগ করেন, রাজশাহীতে প্রচুর অনিয়ম হয়েছে। কোনো বিষয়ে বিচারকদের ৫ মিনিট শোনার ধৈর্য দেখেননি। তবে মধ্যাহ্নবিরতিতে তিন ঘণ্টা সময়ও কাটিয়েছেন তাঁরা।

অ্যানজেল ঝরনা নামের এক অভিভাবক বিচারকদের ‘কঠোর’ আচরণের অভিযোগ তুলে নতুন কুঁড়ি বয়কটের ঘোষণা দেন ফেসবুকে।

রংপুর বিভাগে ক শ্রেণির এক প্রতিযোগীর মা আয়েশা আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর সন্তানের সঙ্গে বিচারকেরা বাজে আচরণ করেন। এ জন্য শিশুটি কবিতা আবৃত্তির পর কাঁদতে কাঁদতে ফিরেছে। তাই তিনি এবারের নতুন কুঁড়ি বর্জনের কথা লিখেছেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।

বিচারকদের আচরণে সন্তানের ‘আপসেট’ হওয়া দেখে তৎক্ষণাৎ নিজেরা ভেঙে পড়েছিলেন বলে উল্লেখ করেন বরিশাল ও সিলেট বিভাগের দুই প্রতিযোগীর অভিভাবকেরা। তবে তাঁরা বলেন, বিচারকদের পরামর্শকে তাঁরা সন্তানের জন্য গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছেন।

ঢাকা বিভাগের এক প্রতিযোগীর অভিভাবক ফেসবুকে অভিযোগ করেন, তাঁর সন্তান নৃত্য বিভাগে বাছাইয়ে অংশ নেয়। অডিশন চলাকালে তাঁর সন্তানের পরচুলা নিয়ে এক বিচারক কটু মন্তব্য করেন। ১২ বছরের শিশুকে প্রেম করে কি না—এমন প্রশ্ন করেন বিচারক।

অনলাইনে আক্রমণের মুখে এই অভিভাবক পরে তাঁর পোস্টটি সরিয়ে নেন। তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি নতুন কুঁড়ি নিয়ে কোনো কথা বলতে আর রাজি হননি।

ময়মনসিংহ বিভাগে সংগীতের তিনটি শাখার বিচারক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন সাংবাদিক শারমিন রিনভী। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা এমন দু-একটি অভিযোগের কথা শুনেছি। এটা একদমই অন্যায্য, যদি ঘটে থাকে। তবে এর ভিন্ন চিত্রও আছে। রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী ব্যক্তির বাচ্চার অডিশনের পর আবার সবার সামনে গাইয়ে প্রমাণ করতে হয়েছে, তাঁর সন্তান উত্তীর্ণ হওয়ার মতো না। বিচারকদের মধ্যে কোনো একজন কম নম্বর দিলে সেটা নিয়েও বিচারকদের জবাবদিহি করার ঘটনা ঘটেছে।’

শারমিন রিনভী আরও বলেন, প্রতিযোগিতায় ৭ বছরের শিশুর কণ্ঠে ‘দুঃখ আমার বাসর রাতের কলঙ্ক’ এমন জটিল সুরের গান শুনতে হয়েছে। সব মা মনে করেন, তাঁর সন্তান সবচেয়ে ভালো পারফরমার। কিন্তু বাস্তবে ব্যাপারটা তেমন নয়, এটি বুঝতে হবে।

নৃত্যশিল্পী মুনমুন আহমেদ নৃত্য বিভাগে বিচারক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন বিভাগীয় পর্যায়ে। বিচারকদের আচরণ নিয়ে অভিভাবকদের অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিচারকের এত রূঢ় হওয়ার সুযোগ নেই, যাতে বাচ্চারা মনে কষ্ট পায়। প্রতিযোগিতার কক্ষে আরও দুজন বিচারক, ক্যামেরাম্যান উপস্থিত থাকেন। যে বাচ্চারা প্রস্তুতি নিয়ে আসে, তাদের অভিভাবকদের কাছ থেকে অভিযোগ আসে না। বরং নাচ না শিখে আসা প্রতিযোগীদের অভিভাবক মনে করেন, তাঁর সন্তান সহজে উত্তীর্ণ হয়ে যাবে। তখন মার্কস না পেলেই বিচারকদের নিয়ে অভিযোগ শুরু হয়।’

অভিনয়শিল্পী রুমানা রশীদ ঈশিতা গত শতকের আশির দশকে নতুন কুঁড়িতে অংশ নিয়েছিলেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, দুবার এই প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছিলেন। প্রথমবার কিছুই পাননি। তখন বিচারকেরা যে সিদ্ধান্ত দিতেন, অভিভাবকেরা তা গ্রহণ করতেন। বাসায় এসে আরও অনুশীলন করাতেন। এখনকার শিশুরা অনুশীলনের জন্য পর্যাপ্ত সময় পায় কি না, তা তাঁর জানা নেই। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে শিশুদের শাসন করার ধরনেরও পরিবর্তন এসেছে। তাই তাঁদের সময়ের বিচারকদের আচরণ দিয়ে এখন কথা বলাটা ঠিক হবে না।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব ভ গ য় পর য য় র র ব ছ ইপর ব প রথম আল ক ন ব চ রক র সন ত ন ব চ রক র সন ত ন র র একজন কর ছ ন নত ন ক

এছাড়াও পড়ুন:

বগুড়ায় বিষাক্ত মদপানে অসুস্থ পাঁচজনেরই মৃত্যু

বগুড়ার শাজাহানপুরে বিষাক্ত মদপানে অসুস্থ ব্যক্তিদের মধ্যে আরও একজন মারা গেছেন। গতকাল সোমবার সকালে বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়। এই নিয়ে মদপানের ঘটনায় অসুস্থ পাঁচজনের মধ্যে সবাই মারা গেলেন।

নতুন করে মারা যাওয়া ব্যক্তির নাম রঞ্জু মিয়া (৩০) । তিনি পেশায় আনসারের সদস্য ছিলেন। ২ অক্টোবর রাতে মদ পানে অসুস্থ হওয়ার পর তিনি শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আইসিইউতে চিকিৎসাধীন ছিলেন।

এ বিষয়ে শাজাহানপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম বলেন, শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রঞ্জু মিয়া মারা গেছেন। এ নিয়ে ওই মদপানের ঘটনায় মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল পাঁচজনে।

থানা–পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ২ অক্টোবর রাতে শাজাহানপুর উপজেলার বেজোড়া মধ্যপাড়ার মিজানুর রহমান, নাছিদুল, আবদুল্লাহেল কাফি, রঞ্জু মিয়া ও আবদুল মানিক একসঙ্গে মদ পান করে অসুস্থ হয়ে পড়েন। ওই রাতেই তাঁদের বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। ৭ অক্টোবর সন্ধ্যায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান মিজানুর রহমান ওরফে লিটন (৫৫)।

আরও পড়ুনবগুড়ায় বিষাক্ত মদ্যপানে আরও তিনজনের মৃত্যু১০ অক্টোবর ২০২৫

গত বৃহস্পতিবার রাত থেকে শুক্রবার বিকেল সাড়ে চারটা পর্যন্ত শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আরও তিনজন মারা যান। এর মধ্যে বৃহস্পতিবার রাতে নাছিদুল ইসলাম (২৭), শুক্রবার দুপুর ১২টার দিকে আবদুল মানিক (৩০) ও বিকেল সাড়ে চারটার দিকে আব্দুল্লাহেল কাফি (৩০) মারা যান। নাছিদুলের বাড়ি উপজেলার খোট্টাপাড়া ইউনিয়নের সোনারপাড়া গ্রামে। আবদুল মানিক ও কাফির বাড়ি একই ইউনিয়নের পূর্বপাড়ায়।

আরও পড়ুনবগুড়ায় বিষাক্ত মদ্যপানে অসুস্থ একজনের মৃত্যু, চারজন চিকিৎসাধীন০৮ অক্টোবর ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • গাজা শান্তি সম্মেলনে মেলেনির সৌন্দর্যের প্রশংসায় পঞ্চমুখ ট্রাম্প
  • ভাত দেওয়ার মুরোদ না থাকা গোঁসাইয়ের কিল কেন শিক্ষকের পিঠে
  • হাদিসের ভিত্তি, চর্চা ও স্তর
  • বগুড়ায় মদপানে আরো একজনের মৃত্যু, নিহত বেড়ে ৫
  • তামান্নাকে নিয়ে আন্নু কাপুরের ‘অশ্লীল’ মন্তব্য
  • সায়েন্স ল্যাব মোড়ে ব্লকেড কর্মসূচি ঢাকা কলেজের ছাত্রদের
  • নেতানিয়াহুকে ক্ষমা করে দিতে ট্রাম্পের আহ্বান
  • বগুড়ায় বিষাক্ত মদপানে অসুস্থ পাঁচজনেরই মৃত্যু
  • প্রতি চারজনের মধ্যে তিনজন নারী স্বামীর সহিংসতার শিকার: জরিপ