স্বাধীনতা, সাম্য, সম্প্রীতির ডাক নিয়ে শুরু হচ্ছে জাতীয় কবিতা উৎসব
Published: 11th, January 2025 GMT
‘স্বাধীনতা সাম্য সম্প্রীতির জন্য কবিতা’ স্লোগান নিয়ে ভাষা আন্দোলনের স্মৃতিবাহী মাস ফেব্রুয়ারির প্রথম দিন থেকে শুরু হচ্ছে দুই দিনের জাতীয় কবিতা উৎসব। জাতীয় কবিতা পরিষদ এবারের উৎসবের মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠাকালীন মৌলিক অঙ্গীকার রক্ষা ও ফ্যাসিবাদবিরোধী গণ-অভ্যুত্থানের দায়বদ্ধতা নিয়ে দেশ-জনতার কল্যাণের ভূমিকা রাখবে বলে জানান হয়েছে।
শনিবার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবে জাতীয় কবিতা পরিষদ আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে জানান হয়, এবারের উৎসবে ফ্যাসিবাদ ও সাম্প্রদায়িকতার পক্ষে এবং দল-পরিবার-ব্যক্তিবন্দনা করে কোনো কবিতা পড়া যাবে না।
সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে পরিষদের আহ্বায়ক মোহন রায়হান বলেন, উৎসবের অংশ নিতে কবিদের কোনো নিবন্ধন ফি লাগবে না। নিবন্ধিত কবিদের নাতিদীর্ঘ দুটি কবিতা আগাম জমা দিতে হবে। এর মধ্য থেকে একটি কবিতা পাঠ করতে পারবেন। কবিতায় কোনো পতিত স্বৈরশাসকদের বন্দনা, দলীয় বা ধর্মীয় উসকানি, স্বাধীনতা ও জুলাই গণ-অভ্যুত্থানবিরোধী কোনো বক্তব্য উপস্থাপন করা যাবে না। পঠিত কবিতাগুলো নিয়ে পরে নির্বাচিত কবিতা সংকলন প্রকাশিত হবে।
কবি মোহন রায়হান বলেন, ১৯৮৭ সালে স্বৈরশাসক এইচ এম এরশাদ তাঁর অপশাসন ধামাচাপা দেওয়ার কৌশল হিসেবে ফেব্রুয়ারির ১ ও ২ তারিখে শীতাতপনিয়ন্ত্রিত মিলনায়তনে ‘এশীয় কবিতা উৎসব’–এর আয়োজন করে। এর প্রতিবাদে সেই সময়ের তরুণ প্রতিবাদী গণতন্ত্রকামী কবিরা দেশের প্রায় সব কবিকে ঐক্যবদ্ধ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম জাতীয় কবিতা উৎসবের আয়োজন করে। সারা দেশের হাজার হাজার কবি ও গণতন্ত্রকামী জনতার সমাগম ঘটে। স্বৈরশাসকের আয়োজিত এশীয় কবিতা উৎসব নিষ্প্রভ হয়ে যায়। এর পর থেকে নিয়মিতভাবে জাতীয় কবিতা পরিষদ আয়োজিত জাতীয় কবিতা উৎসব অনুষ্ঠিত হতে থাকে। পরিষদ এরশাদ জান্তার পতনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর সেই সব দলদাস কবি জনরোষ থেকে বাঁচার জন্য গা–ঢাকা দিয়েছেন। জাতীয় কবিতা পরিষদকে তার সংগ্রামী চেতনায় ফিরিয়ে আনার জন্য নতুন কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটির পক্ষ থেকে এবার উৎসব করা হচ্ছে। উৎসবে জন্য কবি মোহন রায়হানকে আহ্বায়ক, কবি রেজাউদ্দিন স্টালিন ও কবি শাহীন রেজাকে যুগ্ম আহ্বায়ক করে কমিটি গঠন করা হয়েছে। টিএসসির দোতলায় উৎসব দপ্তর খোলা হয়েছে। এখানে প্রতি শনি থেকে বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টা থেকে রাত ৮টা এবং শুক্রবার বেলা ৩টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত কবিরা নাম নিবন্ধন করতে পারবেন। এ ছাড়া অনলাইনেও নিবন্ধন করা যাবে।
জাতীয় কবিতা উৎসব ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় পাঠাগার চত্বরে ১ ও ২ ফেব্রুয়ারি প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত চলবে। এতে কবিদের কবিতা পাঠ ছাড়াও থাকবে আবৃত্তি, কবিতা নিয়ে আলোচনা, কবিতার গান ও নৃত্য পরিবেশনা।
আয়োজকেরা জানান, বরাবরের মতো এবারেও বিদেশি কবিদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। চীন, ভারত, পাকিস্তান ও নেপালের কবিদের অংশ নেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে, তবে কারা আসবেন তা চূড়ান্ত হয়নি।
সংবাদ সম্মেলনে স্বাগত বক্তব্য দেন পরিষদের সদস্যসচিব কবি রজাউদ্দিন স্টালিন। কবি সলিমুল্লাহ খান কবিদের জন্য একটি সংগঠন গড়ে তোলার পরামর্শ দেন। সংক্ষিপ্ত মন্তব্য করেন ছড়াকার আবু সালেহ, কবি মতিন বৈরাগী, গীতিকবি শহীদুল্লাহ ফরায়জী, কবি নুরুল ইসলাম মনি ও শাহীন রেজা।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
এবারও কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে নেই বাংলাদেশ
দ্বিতীয় বছরের মত কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে বাংলাদেশের কোনো সিনেমাা বা তথ্যচিত্র দেখানো হচ্ছে না। সম্প্রতি কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব কমিটির তরফে সংবাদ সম্মেলন করে বিষয়টি জানানো হয়ছে। পরবর্তীতে কমিটির তরফে তাদের নির্দিষ্ট ওয়েবসাইটে যে ছবি তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে তাতে কোন ক্যাটাগরিতেই বাংলাদেশি সিনেমার নাম উল্লেখ নেই।
মূলত ভিসা জটিলতা এবং রাজনৈতিক কারণেই এই চলচ্চিত্র উৎসবে বাংলাদেশের উপস্থিতি থাকছে না।
বিষয়টি নিয়ে গত বছরই উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের চেয়ারপার্সন পরিচালক গৌতম ঘোষ। সেসময় তাকে বলতে শোনা গিয়েছিল, “এবারের পরিস্থিতি ভিন্ন। সেদেশে ভিসা সমস্যা রয়েছে। আর বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফিরে আসতে অনেকটা সময় লাগবে। স্বাভাবিকভাবেই এই অবস্থায় চলচ্চিত্র উৎসবের তালিকায় বাংলাদেশের কোনো ছবি নেই। আমরা আশা করব চলচ্চিত্র উৎসবের পরবর্তী এডিশনের (৩১ তম) আগে প্রতিবেশী দেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যাবে।”
কিন্তু এক বছরের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও অবস্থার যে কোনো পরিবর্তন হয়নি তা চলচ্চিত্র উৎসবে বাংলাদেশের অনুপস্থিতির ঘটনাটাই পরিষ্কার।
যদিও কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের জুরি কমিটির এক সদস্য বলেছেন, “আন্তর্জাতিক বিভাগে বাংলাদেশ থেকে শুধুমাত্র একটি ছবি জমা দেওয়া হয়েছিল। তানভীর চৌধুরীর ‘কাফ্ফারাহ’। কিন্তু দুঃখের বিষয় এটি আমাদের কাঙ্ক্ষিত মানদণ্ড পূরণ করতে পারেনি। ফলে চলচ্চিত্র উৎসবে এই ছবিটি জায়গা পায়নি।”
চলতি বছরের ৬ নভেম্বর থেকে শুরু হতে চলেছে ৩১ তম কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব। এক সপ্তাহব্যাপী এই উৎসব চলবে আগামী ১৩ নভেম্বর পর্যন্ত। এই উৎসবে ৩৯ টি দেশের ২১৫ টি ছবি দেখানো হবে। ভারত ছাড়াও অংশগ্রহণকারী দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, জার্মানি, পোল্যান্ড, বেলজিয়াম, ইতালি, ব্রাজিল, মরক্কো, অস্ট্রিয়া, তুরস্ক, বলিভিয়া, গুয়েতেমালা, শ্রীলংকা, চীন, জাপান, ইরান, সিঙ্গাপুর, তাইওয়ান, ফিলিস্তিন, ইরাক, সৌদি আরব, মিশর, সুদান, লেবানন।
সুচরিতা/শাহেদ