রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পোড়া কোরআন শরিফ উদ্ধারের ঘটনায় সংবাদ সম্মেলন, তদন্ত কমিটি
Published: 12th, January 2025 GMT
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক চারটি হলে পবিত্র কোরআনের পোড়া কপি পাওয়ার ঘটনায় ৯ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আজ রোববার দুপুরে ক্যাম্পাসে সিনেট ভবনে সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য জানায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এ সময় জানানো হয়, ঘটনাটা পূর্বপরিকল্পিতভাবে ঘটনা হয়েছে, যা অত্যন্ত ন্যক্কারজনক। এ ঘটনায় দোষীদের খুব দ্রুত খুঁজে বের করা হবে।
এর আগে আজ সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের সৈয়দ আমীর আলী হলের মাঝে মুক্তমঞ্চে, শহীদ হবিবুর রহমান ও শহীদ জিয়াউর রহমান হলের মসজিদের তাকে ও মতিহার হলের ছাদে পোড়া কোরআন শরিফ পাওয়া যায়। এ ছাড়া জিয়াউর রহমান হলে ভারতের ক্ষমতাসীন বিজেপির দলীয় প্রতীক (পদ্ম) আঁকা দেখা যায়। খবর পেয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা ওই সব জায়গা পরিদর্শন করেন।
সংবাদ সম্মেলনে উপাচার্য সালেহ্ হাসান (নকীব) বলেন, এ ঘটনায় তিন আবাসিক হলের প্রাধ্যক্ষ নিজ নিজ জায়গা থেকে থানায় অভিযোগ দেবেন। ইতিমধ্যে এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি অতি দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেবে। ৯ সদস্যবিশিষ্ট কমিটির প্রধান করা হয়েছে সহ–উপাচার্য (একাডেমিক) মোহা.
উপাচার্য আরও বলেন, ‘একই গোষ্ঠী সম্ভবত একই সময়ে রাতের আঁধারে এ ঘটনা ঘটিয়েছে। তাদের উদ্দেশ্য খুব স্পষ্ট, তারা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গৌরবময় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির যে ইতিহাস আছে, সেই জায়গা থেকে আমাদের ধর্মপ্রাণ মুসলিমদের আবেগ–অনুভূতিতে আঘাত হেনে সেই সম্প্রীতির জায়গাটা বিনষ্ট করার চেষ্টা করছে।’
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে উপাচার্য সালেহ্ হাসান বলেন, ‘ঘটনাটা পূর্বপরিকল্পিত মনে হচ্ছে। চারটি হলে এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে। ঘটনার প্যাটার্নও একই রকম। একইভাবে পবিত্র কোরআন শরিফে আগুন দেওয়া হয়েছে। এটা অত্যন্ত নিচু প্রকৃতির ন্যক্কারজনক কাজ।’
শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে উপাচার্য বলেন, ‘আমার ছাত্রছাত্রীদের ধন্যবাদ দিতে চাই, তারা এ ধরনের একটি স্পর্শকাতর বিষয়কে সামনে রেখে অত্যন্ত ধৈর্য, সহশীলতা ও শুভবুদ্ধির পরিচয় দিয়েছে। এই ধরনের ঘটনা ঘটার পরেই শিক্ষার্থীদের মধ্যে যে সম্প্রীতি এবং যে সম্পর্ক, আমরা সেটাকে অটুট দেখতে পাচ্ছি। কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এখনো ঘটেনি। যারা এ ধরনের ঘটনা ঘটিয়েছে, তারা অত্যন্ত নিকৃষ্ট শ্রেণির মানুষ। তাদের একটি মাত্র উদ্দেশ্য, আমাদের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়কে সম্প্রীতির জায়গাটা নষ্ট করা এবং একটা উসকানি ও হানাহানি তৈরি করা। এটাকে আমরা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছি। ইতিমধ্যে পুলিশ প্রশাসন এবং গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে কথা বলেছি। বিশ্ববিদ্যালয়ে একটা জরুরি সভা করা হয়েছে। সেখানে একটি তদন্ত কমিটি হয়েছে। যারা দোষী, তাদের খুব দ্রুত বের করা হবে।’
উপাচার্য আরও বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩৫ হাজারের মতো পরিবারের সদস্য। বেশির ভাগই ছাত্রছাত্রী। তাঁদের মধ্যে যে সম্পর্ক, এটাকে যেন কারও উসকানি এবং খুব খারাপ ধরনের মানুষের ফাঁদে পা দিয়ে নষ্ট না করা হয়। আমরা এ ব্যাপারে বদ্ধপরিকর যে আমাদের ছেলেমেয়েরা শান্তিতে থাকবেন। তাদের ভেতরে ভালো সম্পর্ক থাকবে। কোনো নোংরা কাজে, যে ফাঁদ পাতা হয়েছে, সেখানে পা দেবে না।’
সংবাদ সম্মেলনে সহ–উপাচার্য (একাডেমিক) ফরিদ উদ্দিন খান, সহ–উপাচার্য (প্রশাসন) মোহাম্মদ মাঈন উদ্দীন, জনসংযোগ দপ্তরের প্রশাসক আখতার হোসেন মজুমদার প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
কুষ্টিয়ায় বিএনপির মনোনয়নবঞ্চিত নেতার অনুসারীদের সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ
কুষ্টিয়া-৩ (সদর) আসনে বিএনপির স্থানীয় সরকারবিষয়ক সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য সোহরাব উদ্দিন দলীয় মনোনয়ন না পাওয়ায় রাস্তায় টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেছেন তাঁর অনুসারী নেতা-কর্মীরা। আজ সোমবার রাত ৯টার দিকে শহরের মজমপুর রেলগেটে কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে এ বিক্ষোভ করেন তাঁরা।
সেখানে বিক্ষোভকারীরা সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভের পাশাপাশি প্রতিবাদ মিছিলও করেন। এ ছাড়া সদর উপজেলার মধুপুর-লক্ষীপুর এলাকাতেও সোহরাব উদ্দিনের সমর্থকেরা সড়কে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেছেন।
বিক্ষোভকারী নেতা-কর্মীদের দাবি, সোহরাব উদ্দিন কুষ্টিয়া-৩ আসনের তিনবারের সংসদ সদস্য। তিনি দীর্ঘদিন জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। এর বদলে এখানে অন্য কাউকে প্রার্থী হিসেবে মেনে নেওয়া হবে না। তাই অবিলম্বে এ সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে সোহরাব উদ্দিনকে পুনরায় মনোনয়ন দেওয়ার দাবি জানান তাঁরা।
এর আগে সোমবার বিকেলে রাজধানীর গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। কুষ্টিয়া-৩ (সদর) আসনে দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন জেলা বিএনপির সদস্যসচিব জাকির হোসেন সরকার।
এ বিষয়ে মনোনয়নবঞ্চিত সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যক্ষ সোহরাব উদ্দিন বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, ‘শুনেছি আমার সমর্থকেরা বিক্ষোভ করছেন। আমি শহরের বাইরে আছি।’ এর বেশি কথা বলেননি তিনি।
জানতে চাইলে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী জাকির হোসেন সরকার বলেন, কেন্দ্র থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, যিনি মনোনয়ন পাবেন, তাঁর পক্ষে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে। তবে এ নির্দেশনা যদি কেউ না মানেন, তাহলে কেন্দ্র ব্যবস্থা নেবে।
কুষ্টিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোশারফ হাসেন বলেন, ‘আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থতি নিয়ন্ত্রণ করেছি।’
কুষ্টিয়ার অন্য তিনটি সংসদীয় আসনে বিএনপির প্রার্থীরা হলেন কুষ্টিয়া-১ (দৌলতপুর) আসনে সাবেক সংসদ সদস্য ও উপজেলা বিএনপির সভাপতি রেজা আহম্মেদ বাচ্চু মোল্লা, কুষ্টিয়া-২ (মিরপুর-ভোড়ামারা) আসনে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী রাগীব রউফ চৌধুরী, কুষ্টিয়া-৪ (খোকসা-কুমারখালী) আসনে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও সাবেক সংসদ সদস্য সৈয়দ মেহেদী আহমেদ রুমি।