সর্বনিম্ন তাপমাত্রা কুড়িগ্রামে ঠান্ডায় বিপর্যস্ত জনপদ
Published: 12th, January 2025 GMT
উত্তরের হিমেল হাওয়া ও কনকনে শীতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে উত্তরের জেলা কুড়িগ্রাম। তীব্র ঠান্ডায় কষ্টে রয়েছেন নিম্ন আয়ের মানুষ। বিশেষ করে জেলার নদীতীরবর্তী চরাঞ্চলের মানুষ বেশি বিপদে পড়েছেন। এসব অঞ্চলের শিশু ও বয়স্করা আক্রান্ত হচ্ছেন শীতজনিত রোগে। এরই মধ্যে গতকাল রোববার দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে এ জেলায়।
রোববার বেলা ১১টার পর সূর্যের দেখা মিললেও দুপুর ২টার পর ঘন কুয়াশায় ঢাকা পড়ে। এর সঙ্গে হিমেল বাতাসে শীত অনুভূত হচ্ছে বেশি। কুড়িগ্রাম কৃষি আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুবল চন্দ্র সরকার জানান, রোববার সকাল ৯টায় জেলায় ১০ দশমিক শূন্য ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়, যা দেশের সর্বনিম্ন।
আগামী দুই-এক দিনেরর মধ্যে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে জানিয়ে এ কর্মকর্তা বলেন, পরে ফের নিম্নগামী হতে পারে তাপমাত্রা।
রাজারহাটের কৃষি শ্রমিক হযরত আলী বলেন, ‘সকালে মাঠত কাম করতে অসুবিধা হয়। চাইরপাশে কুয়াশার জন্য কিছুই দেখা যায় না।’ সদরের যাত্রাপুরের চর ইয়ুথনেট এলাকার বাসিন্দা মো.
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, দিনের সূর্যের তাপ না থাকা ও মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত বৃষ্টির মতো করে কুয়াশা পড়ায় সমগ্র জেলায় ঠান্ডা অনুভূত হচ্ছে। সকালে হেডলাইট জ্বালিয়ে যানবাহন চলাচল করতে দেখা গেছে। লোকজন দিনের বেলায়ও খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন।
পোড়ারচরের বাসিন্দা তাহের আলী বলেন, ছোট নাতি দু’দিন ধরে অসুস্থ। হাসপাতালে নিতে চাইলেও এই ঠান্ডায় সকালে নৌকা ছাড়ে না। নাগেশ্বরী পৌরসভার বাসিন্দা অর্পণা সরকারের ভাষ্য, সকাল থেকে ঠান্ডা বাতাস। সূর্যের তেমন তাপ নেই। ফলে ঘরে ময়লা পোশাক জমলেও ধুতে পারছেন না।
শীতজনিত রোগে রোববার বেলা ১১টা পর্যন্ত ডায়রিয়া বিভাগে ৬৮ জন ভর্তি হয়েছে বলে জানান কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের নার্সিং সুপারভাইজার জুলেখা খাতুন। তিনি বলেন, শিশু বিভাগে ৮১ ও বহির্বিভাগে ২১০ জন চিকিৎসা নিয়েছেন। এর মধ্যে অধিকাংশই শিশু ও বয়স্ক রোগী।
তীব্র শীত নিবারণের জন্য জেলায় সরকারিভাবে যে কম্বল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। তবে কম্বলের চেয়ে গরম কাপড় বেশি প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তারা বলছেন, চাদর, মাফলার, জ্যাকেটের মতো গরম কাপড় নিম্ন আয়ের মানুষকে দেওয়া হলে তারা বেশি উপকৃত হবেন।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আব্দুল হাই সরকার বলেন, ৯ উপজেলায় এ পর্যন্ত ১২ হাজার কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। ৪৯ লাখ টাকার নতুন কম্বল কিনে বিতরণ করা হচ্ছে। মজুত থাকা ৫ হাজার কম্বল বিতরণের কাজ চলমান রয়েছে।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
এই সরকারও আমলাতন্ত্রের চাপে!
চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থান নতুন যে জন-আকাঙ্ক্ষা তৈরি করেছে, সেখানে নিশ্চিত করেই জনপ্রশাসন সংস্কারের প্রশ্নটি নাগরিকদের কেন্দ্রীয় একটি চাহিদা। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার যেভাবে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের মতোই পদ ছাড়া পদোন্নতি দিচ্ছে, তাতে উদ্বিগ্ন না হওয়ার কোনো কারণ নেই। কেননা, আগের সরকার কর্তৃত্ববাদী ও স্বৈরাচারী হয়ে উঠেছিল যে কয়টা স্তম্ভের ওপর দাঁড়িয়ে, তার অন্যতম আমলাতন্ত্র।
জনপ্রশাসনকে রাজনীতিকরণের বৃত্ত ভেঙে জনবান্ধব করার একটা বড় সুযোগ এনে দিয়েছিল অভ্যুত্থান। কিন্তু শুরু থেকেই অন্তর্বর্তী সরকার আমলাতন্ত্রের ওপর অতিনির্ভরশীল হয়ে ওঠায় সেই সুযোগ অনেকটাই হাতছাড়া হয়েছে। সরকারি কর্মকর্তাদের বিরোধিতার কারণে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের বড় কোনো সুপারিশ বাস্তবায়ন করতে পারেনি সরকার। অন্যদিকে বেতন বাড়াতে গঠন করা হয়েছে বেতন কমিশন। কিছু মুখকে সরিয়ে দেওয়া ছাড়া জনপ্রশাসনে সেই পুরোনো চর্চা অব্যাহত রয়েছে। বিশেষ করে পদ ছাড়া পদায়নের ক্ষেত্রে জনপ্রশাসনে যেভাবে আগের সরকারের চর্চার ধারাবাহিকতা বজায় রাখা হয়েছে, সেটা যারপরনাই দুঃখজনক।
প্রথম আলোর খবর জানাচ্ছে, উপসচিব স্তরে যেখানে আগে থেকেই পদের চেয়ে ৬০০ কর্মকর্তা বেশি রয়েছেন, সেখানে আগস্ট মাসে নতুন করে ২৬৮ জনকে এই পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। অতিরিক্ত সচিব পদেও পদোন্নতির আলোচনা শুরু হয়েছে। রাজনৈতিক সরকারের আমলে জনপ্রশাসনে হরেদরে পদোন্নতি দেওয়ার অনেক নজির আছে। এর কারণ একটাই, আমলাতন্ত্রকে তুষ্ট রাখা। অন্তর্বর্তী সরকার এই চর্চায় ছেদ ঘটাতে পারবে, সেটাই সবাই প্রত্যাশা করেছিল।
পরিহাসের বিষয় হচ্ছে, জনপ্রশাসনে পদ ছাড়া পদোন্নতি দেওয়ার পর বেশির ভাগ কর্মকর্তাকে আগের জায়গাতেই রেখে দেওয়া হয়। এর মানে হচ্ছে তাঁরা আগের দায়িত্বই পালন করেন, কিন্তু মাঝখান থেকে বেতন-ভাতা বাড়ে। উপসচিব পর্যায়ের কর্মকর্তারা তিন বছর চাকরি পাওয়ার পর বিনা সুদে গাড়ি কেনার জন্য ঋণসুবিধা পান। অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে অবসরে যাওয়া সরকারি কর্মকর্তাদের যেভাবে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে, তার দৃষ্টান্তও খুব বেশি নেই। অবসরে যাওয়া প্রশাসন ক্যাডারের ‘বঞ্চিত’ ৭৬৪ জন কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে ও অন্য ক্যাডারের ‘বঞ্চিত’ ৭৮ জন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে ভূতাপেক্ষ পদোন্নতির সুপারিশ করা হয়েছে।
জনপ্রশাসনের মেধাবী ও যোগ্য কর্মকর্তারা পদোন্নতি পেয়ে পরের ধাপে যাবেন, সেটা স্বাভাবিক বিষয়। কিন্তু পদ না থাকার পরও কেন পদায়ন করা হবে? এ ক্ষেত্রে সরকারকে পর্যালোচনা করে দেখা প্রয়োজন, জনপ্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে পদ বাড়ানো যায় কি না। আবার যেখানে এমনিতেই পদের বিপরীতে নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সংখ্যা বেশি, সেখানে অবসরে যাওয়া কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেওয়া কতটা যৌক্তিক?
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ও জনপ্রশাসনবিশেষজ্ঞ সালাউদ্দিন এম আমিনুজ্জামান বলেছেন, জনপ্রশাসনে পদ ছাড়া পদোন্নতি দেওয়া যায় না। তবে বিশেষ ক্ষেত্রে মেধাবীদের পদোন্নতি দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। এরপরও কেন এমন পদোন্নতি—সেই ব্যাখ্যায় তিনি বলেছেন, সরকার সম্ভবত আমলাতন্ত্রের চাপে রয়েছে। এই ধারণা শুধু তাঁর একার নয়, নাগরিক পরিসরের
বিস্তৃত একটি ধারণাও। অন্তর্বর্তী সরকারকে অবশ্যই এর পরিষ্কার ব্যাখ্যা হাজির করা উচিত।
মাথাভারী আমলাতন্ত্র সরকারি সেবা নাগরিকের কাছে ঠিকভাবে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে বড় একটা বাধা। অন্যদিকে সরকারকে এখানে বিশাল ব্যয়ের বোঝা বহন করতে হয়। ফলে মাঠ প্রশাসন থেকে শুরু করে সিনিয়র সচিব পর্যন্ত একটি সামঞ্জস্যপূর্ণ ও গতিশীল জনপ্রশাসনই সবাই প্রত্যাশা করে। জনপ্রশাসনের সব স্তরে পদোন্নতি রাজনৈতিক বিবেচনায় নয়, মেধার ভিত্তিতেই হতে হবে।