টানা ছয় দিন ধরে ভয়াবহ দাবানলে পুড়ছে যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেস শহরের বিস্তীর্ণ এলাকা। দাবানলে প্রাণহানির সংখ্যা স্থানীয় সময় গতকাল রোববার ২৪–এ পৌঁছেছে। এখনো দাবানল কমার আশার আলো দেখা যাচ্ছে না; বরং বিপজ্জনক ঝোড়ো বাতাসের গতি বাড়ার সতর্কতা জারি করেছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। দাবানল আরও ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।

দাবানলে যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিতীয় বৃহত্তম এই শহরের বড় অংশ কার্যত ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছে। হাজারো মানুষ ঘরবাড়ি হারিয়েছেন। গত মঙ্গলবার লস অ্যাঞ্জেলেসে দাবানল শুরু হয়।

প্যালিসেইডস দাবানলের বিস্তার ঠেকাতে অগ্নিনির্বাপণের ব্যাপক উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এই দাবানল ব্রেন্টউড এবং অত্যন্ত ঘনবসতিপূর্ণ সান ফার্নান্দো উপত্যকার দিকে ছড়িয়ে পড়ছে।

তবে আগামী কয়েক দিনে পরিস্থিতি নাটকীয়ভাবে খারাপের দিকে মোড় নিতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। আগামীকাল মঙ্গলবার দিনের শুরুতে বাতাসের গতি ঘণ্টায় ১১০ কিলোমিটারের বেশি উঠতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে জাতীয় আবহাওয়া পরিষেবা। এটা হলে পিডিএস বা ‘সুনির্দিষ্ট বিপজ্জনক পরিস্থিতি’ ঘোষণা করা হতে পারে, বলেছেন আবহাওয়া পরিষেবা অফিসের আবহাওয়াবিদ রোজ স্কোয়েনফিল্ড।

অগ্নিনির্বাপণকর্মীরা সতর্ক করে বলছেন, বাতাসের এমন ঝোড়ো গতি দাবানলের শিখা আরও বাড়িয়ে দিতে পারে। এর কারণে নতুন নতুন এলাকায় দাবানল ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।

লস অ্যাঞ্জেলেস কাউন্টি অগ্নিনির্বাপণ বিভাগের প্রধান অ্যান্টনি মারোনি বলেন, তাঁর বিভাগ আগুন নেভানোর কাজে পানি পরিবহনের জন্য কয়েক ডজন নতুন ট্রাক আর অগ্নিনির্বাপণকর্মী পেয়েছে। নতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রস্তুত রয়েছে।

মৃত মানুষের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে লস অ্যাঞ্জেলেস কাউন্টির শেরিফ রবার্ট লুনা আশঙ্কা করছেন। তিনি জানান, মৃতদেহের সন্ধানে তল্লাশি কার্যক্রম চলছে। এ কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কুকুর।

দাবানলের কারণে সংকটময় এ পরিস্থিতিতেও চলছে লুটপাট। কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে একজন অগ্নিনির্বাপণকর্মীদের পোশাক পরে লুটপাটে অংশ নিয়েছিলেন।

নিরাপত্তা জোরদারের স্বার্থে দাবানলে পরিত্যক্ত এলাকাগুলোয় রাতের বেলার কারফিউর মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। সেই সঙ্গে ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েনের অনুরোধ করা হয়েছে।

স্থানীয় আলটাডেনা এলাকার বাসিন্দা ববি সালমান (৪২)। দাবানলে পরিত্যক্ত ওই এলাকায় প্রবেশে বাধা পান তিনি। বলেন, ‘আমার পরিবার, স্ত্রী–সন্তান–মাকে রক্ষা করার জন্য আমাকে সেখানে থাকতে হবে। আমি তাঁদের দেখতে যেতে পারছি না।’

আরও পড়ুনলস অ্যাঞ্জেলেসে দাবানলের বিপজ্জনক ধোঁয়া থেকে বাঁচতে ঘরে থাকার পরামর্শ২০ ঘণ্টা আগেট্রাম্পের অভিযোগ, ইউক্রেনের প্রস্তাব

দাবানল প্রতিরোধে ক্যালিফোর্নিয়ার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা অযোগ্যতার প্রমাণ দিয়েছেন—এ অভিযোগ নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের।

ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে দেওয়া পোস্টে ট্রাম্প লিখেছেন, ‘আমাদের দেশের ইতিহাসে এটা সবচেয়ে বড় বিপর্যয়গুলোর একটি। তারা আগুন নেভাতে পারছে না। তাদের কী সমস্যা?’

আরও পড়ুনযুক্তরাষ্ট্রে পশ্চিমে দাবানল, দক্ষিণে তুষার১১ জানুয়ারি ২০২৫আরও পড়ুনলস অ্যাঞ্জেলেসে দাবানল: বাড়ছে বাতাস, নতুন শঙ্কা৮ ঘণ্টা আগে

যদিও দাবানল ছড়িয়ে পড়ার শুরুর দিন থেকেই অগ্নিনির্বাপণকর্মীরা ২৪ ঘণ্টা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। গতকাল মেক্সিকো থেকে আরও কর্মী এ কাজে যুক্ত হয়েছেন। এর ফলে অগ্নিনির্বাপণের বীরত্বপূর্ণ কার্যক্রম আরও জেরাদার হয়েছে।

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি গতকাল ক্যালিফোর্নিয়ায় ১৫০ জন অগ্নিনির্বাপণকর্মী পাঠানোর প্রস্তাব দিয়েছেন। যুদ্ধরত দেশটির প্রেসিডেন্ট বলেন, সেখানকার পরিস্থিতি এখন খুবই জটিল। আমেরিকানদের জীবন বাঁচাতে ইউক্রেনের মানুষ সহায়তা করতে পারে।

আরও পড়ুনলস অ্যাঞ্জেলেসে দিক পরিবর্তন করেছে দাবানল, নতুন হুমকি১১ জানুয়ারি ২০২৫আরও পড়ুনমনে হলো এক টন ইট এসে পড়েছে, বললেন লস অ্যাঞ্জেলেসের দাবানলে বাবাকে হারানো মেয়ে১১ জানুয়ারি ২০২৫.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

বাবা পটুয়া কামরুল হাসান স্মরণে মেয়ে শুমোনা হাসানের গান

ভালোবাসা, স্মৃতি ও উত্তরাধিকারকে কেন্দ্র করে এক আবেগঘন পরিবেশে পটুয়া কামরুল হাসানের কন্যা শুমোনা হাসান তার বাবাকে উৎসর্গ করে একটি হৃদয়স্পর্শী গান প্রকাশ করেছেন।

বাবা দিবস উপলক্ষে আজ দ্য ডেইলি স্টার সেন্টারে একটি অনুষ্ঠানে ‘কত দূর বাবা তোমার বাড়ি’ শিরোনামে গানটি প্রকাশ করা হয়।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন শুমোনার পরিবার, ঘনিষ্ঠজন, এবং সম্মানিত গণমাধ্যমকর্মীরা।

গানটি শুমোনার নিজস্ব রচনা, সুর এবং কণ্ঠে পরিবেশিত। এতে ফুটে উঠেছে একজন কন্যার তার বাবার সঙ্গে কাটানো মুহূর্তগুলো, তাদের ভালবাসা, সংগ্রাম এবং অনন্য সম্পর্কের গল্প। গানের প্রতিটি কথা ও সুর যেন এক আবেগের যাত্রাপথ।

অনুষ্ঠানে শুমোনা বলেন, ‘এই মুহূর্তটি আমার এবং আমার পরিবারের জন্য এক বিজয়ী এবং আবেগময় সময়। বাবার আত্মা সবসময় আমাকে পথ দেখিয়েছে। এই গানটি তার প্রতি আমার ভালোবাসা ও কৃতজ্ঞতার ছোট্ট বহিঃপ্রকাশ।’

শুমোনা জানান, ভবিষ্যতেও তিনি এই ধারা অব্যাহত রেখে তাঁর বাবার স্মৃতিকে সম্মান জানাতে চান সৃজনশীল কাজের মাধ্যমে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ