মৌলভীবাজারে জুড়ী উপজেলায় বনের জমিতে লুটপাটের প্রকল্প বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক হচ্ছে না। এ প্রকল্প বাতিলের সিদ্ধান্তে রক্ষা পেয়েছে লাঠিটিলা সংরক্ষিত বনাঞ্চলের জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশ-প্রতিবেশ। একই সঙ্গে কয়েকশ পরিবারের বাস্তুভিটা হারানোর শঙ্কাও দূর হয়েছে। 
জানা যায়, ১৯২০ সালে তৎকালীন সরকার লাঠিটিলাকে পাথারিয়া হিল রেঞ্জের আওতায় নিয়ে সংরক্ষিত বনাঞ্চল হিসেবে ঘোষণা করে। গত আওয়ামী লীগ সরকার জুড়ী উপজেলার সীমান্তঘেঁষা লাঠিটিলা সংরক্ষিত বনাঞ্চলের ৫ হাজার ৬৩১ একর ভূমি অধিগ্রহণ করে বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করে। বনাঞ্চলের জায়গায় সাফারি পার্ক স্থাপনের কারিগর ছিলেন তৎকালীন সরকারের বন, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী শাহাব উদ্দিন। তিনি ২০২২ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি ওই বনে সাফারি পার্ক নির্মাণের ঘোষণা দেন। ২০২৩ সালের ৯ নভেম্বর একনেকে প্রকল্পটি অনুমোদন হয়। প্রথম পর্যায়ে প্রকল্প ব্যয় হিসেবে ৩৬৪ কোটি ১১ লাখ টাকা বরাদ্দও হয়। 

২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে ওই প্রকল্পের কাজ শুরুর নির্দেশ দেওয়া হয়। প্রকল্পের বরাদ্দও বেড়ে যায় ৮৭০ কোটি ৯০ লাখ টাকায়। আওয়ামী লীগ সরকারের এ সিদ্ধান্তে লাঠিটিলা বনাঞ্চল এলাকায় বসবাস করা ৪ শতাধিক পরিবারের মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। প্রকল্পের কারণে হুমকির মুখে পড়ে অর্ধশতাধিক বছরের পুরোনো সেগুন বাগান, আগর বাগানসহ বনাঞ্চলের জীববৈচিত্র্য। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার লাঠিটিলা সংরক্ষিত বনের জমির মধ্যে বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক স্থাপন বাতিলের উদ্যোগ নেয়। গত ২৩ ডিসেম্বর বন, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় প্রকল্পটি বাতিলের সিদ্ধান্তের কথা জানায়। এতে সংরক্ষিত বনাঞ্চল এলাকার মানুষের মাঝে স্বস্তি ফিরে এসেছে। 
স্থানীয় ইউপি সদস্য বাবুল মিয়া জানান, লাঠিটিলা বন ইন্দো-মিয়ানমার জীববৈচিত্র্যের হটস্পটের অংশ। এটি বন্য হাতি চলাচলের একমাত্র করিডোর হিসেবে দেশে বেশ পরিচিত। বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয় লাঠিটিলায় সাফারি পার্ক প্রকল্প বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়ায় বনাঞ্চল রক্ষা পাওয়ার পাশাপাশি এলাকার জীববৈচিত্র্য ও মানুষের বসতভিটা রক্ষা পাবে। 
বনাঞ্চলে সাফারি পার্ক নির্মাণ প্রকল্প বাতিলের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) জাতীয় পরিষদ সদস্য আ.

স.ম সালেহ সুহেল বলেন, লাঠিটিলা একটি প্রাকৃতিকভাবে গড়ে ওঠা সমৃদ্ধ বনাঞ্চল। এখানে হাতি থেকে শুরু করে বিভিন্ন বন্যপ্রাণীর অভয়াশ্রম রয়েছে। একই সঙ্গে এ বনে নানা প্রজাতির বৃক্ষরাজির সমাহার রয়েছে। বন হবে বন্যপ্রাণীর অভয়াশ্রম। কেউ যেন ভবিষ্যতে তুঘলকি সিদ্ধান্তে এ ধরনের প্রাকৃতিক বন ধ্বংস করতে না পারে সে ব্যাপারে পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। 

বড়লেখা-জুড়ীর বাসিন্দা মৌলভীবাজার জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য নাসির উদ্দিন আহমদ মিঠু বলেন, বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কের নামে সংরক্ষিত বন ধ্বংস করে লুটপাটের প্রকল্প হাতে নিয়েছিলেন বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের সাবেক মন্ত্রী। এতে বাস্তুভিটা হারানোর শঙ্কা থেকে রেহাই পেয়েছেন হাজার হাজার মানুষ। বনখেকোদের কবল থেকে রক্ষা পেয়েছে বনাঞ্চল। তিনি আরও জানান, এ প্রকল্প বাস্তবায়নের সুযোগ পেলে সাবেক পরিবেশমন্ত্রী, তাঁর ছেলে ও ভাগনে আরও কয়েকশ কোটি টাকা লুটপাট করার সুযোগ পেত। 
বন বিভাগের জুড়ী রেঞ্জ কর্মকর্তা নাজমুল হুসাইন সমকালকে বলেন, লাঠিটিলা সংরক্ষিত বনাঞ্চলে সাফারি পার্ক স্থাপনের প্রকল্পটি চূড়ান্তভাবে বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। 

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

দেশবাসী দ্রুত নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্রে উত্তরণ চায়: আমীর খসরু

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, দেশের মানুষ ২০ বছর ধরে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেনি এবং নতুন প্রজন্মও ভোট দিতে পারেনি। তাই, তারা দ্রুততম সময়ের মধ্যে নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্রে উত্তরণ চায়। 

সোমবার (১৬ জুন) দুপুরে লন্ডন থেকে দেশে ফিরে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তিনি।

আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, বিএনপি গণতান্ত্রিক পথেই এগিয়ে যাবে। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য দীর্ঘদিনের আন্দোলন-সংগ্রামে জনগণের যে ত্যাগ, সে পথেই দেশ অগ্রসর হবে।

প্রধান উপদেষ্টার মতো বিএনপিও রোজার আগে বিচার ও সংস্কারের অগ্রগতি চায় কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে দলটির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, সংস্কারের বিষয়টি ঐকমত্যের ওপর নির্ভরশীল। এ বিষয়ে ড. ইউনূস, তারেক রহমান এবং বিএনপির সকল নেতৃবৃন্দ আগেই বলেছেন।

তিনি মনে করেন, ঐকমত্য হতে এক থেকে দেড় মাসের বেশি সময় লাগার কথা নয়।

বিচার প্রক্রিয়া প্রসঙ্গে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, এটি চলমান প্রক্রিয়া এবং বিচার বিভাগের ওপর নির্ভর করে। বিচার বিভাগ বিচার করবে এবং বিচারের আওতায় আনারও বিষয় আছে। যারা বিচারের আওতায় আসবে, তার জন্য আরো প্রায় ছয় মাস সময় আছে। আর যারা এর মধ্যে আসবে না, তাদের জন্য তো আগামী সরকার আছে।

সরকারের কি এখন নির্বাচনমুখী কর্মকাণ্ডের দিকে এগিয়ে যাওয়া দরকার আছে, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নির্বাচন ছাড়া গণতান্ত্রিক, রাজনৈতিক এবং জনগণের সাংবিধানিক অধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার আর কোনো পথ নেই। এ বিষয়ে সবাই ঐকমত্য পোষণ করছেন।

জামায়াতে ইসলামী ও এনসিপির অভিযোগ, একটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সরকার বিশেষ সম্পর্ক করছে, বিএনপি বিষয়টি কীভাবে দেখছে? এ প্রশ্নের জবাবে আমীর খসরু বলেন, “আমি একটা জিনিস মনে করি, আমরা যদি গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি, তাহলে এখানে সবার মতামত নেওয়ার সুযোগ আছে। সুতরাং, সবাই তাদের মতামত দিতে পারে। আমার মনে হয়, এটাই আমাদের গণতন্ত্রের বড় পাওয়া, সবাই নিজেদের মতামত দেবে। এর মধ্যে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে।”

বিএনপি এত দিন ডিসেম্বরে নির্বাচনের কথা বললেও এখন কেন ফেব্রুয়ারিতে গেল? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নির্বাচনের জন্য ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত অনেক সময়। এবং এত সময়ও লাগার কোনো কারণ নেই। বিএনপি আগে ডিসেম্বরের মধ্যেই এসব সমস্যার সমাধান করে নির্বাচনের কথা বলেছে। সুতরাং, ফেব্রুয়ারি আরো দীর্ঘ সময়। তবে, যদি ফেব্রুয়ারির মধ্যে নির্বাচন হয়, তাতেও কোনো সমস্যা নেই।

আমীর খসরু বলেন, “আমি আগেও বলেছি, যত বেশি ঐকমত্যের মাধ্যমে আমরা নিজেদের মধ্যে সিদ্ধান্ত নিতে পারব, সেটা জাতির জন্য তত ভালো। আমরা যে ঐকমত্যের মধ্যে এসেছি, এটাই হচ্ছে সবচেয়ে বড় বিষয়।”

তিনি আরো বলেন, “ঐকমত্য থাকার ফলেই আমরা স্বৈরাচারকে বিদায় করতে পেরেছি। সুতরাং, আমরা চেষ্টা করব, যেখানেই সম্ভব ঐকমত্যের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেব।”

তারেক রহমানের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার ওয়ান-টু-ওয়ান বৈঠকে নির্বাচনে নিরপেক্ষতার বিষয়ে কোনো আলোচনা বা বার্তা আছে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, যখনই নির্বাচন শুরু হবে, তখনই সরকার নিরপেক্ষতার বিষয়টি নিশ্চিত করবে। কেয়ারটেকার গভর্নমেন্টের ধারণা হলো— একটি নিরপেক্ষ সরকার। সুতরাং, নির্বাচনে সেই নিরপেক্ষতা সরকার নিশ্চিত করবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।

বৈঠকে সংস্কারের বিষয়ে কোনো সুনির্দিষ্ট আলোচনা হয়েছে কি না, জানতে চাইলে আমীর খসরু বলেন, ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও তারেক রহমান বলেছেন, এখানে যতটুকু ঐকমত্য হবে, সংস্কারও ততটুকুই হবে। বাকি অংশটা নির্বাচনের মাধ্যমে জাতির কাছে নিয়ে যেতে হবে।

তিনি বলেন, সংস্কার তো চলমান প্রক্রিয়া। এটি এখানেই শেষ হয়ে যাচ্ছে না, নির্বাচনের পরেও এটি চলমান থাকবে।

ঢাকা/রায়হান/রফিক 

সম্পর্কিত নিবন্ধ