হবিগঞ্জে পৌষ সংক্রান্তি উৎসব উদযাপন
Published: 14th, January 2025 GMT
হবিগঞ্জে তীব্র শীতের মাঝে পৌষ সংক্রান্তি উৎসব উদযাপন করা হয়েছে। জেলার পাহাড়, হাওর, গ্রাম ও শহরের বিভিন্ন বাসা-বাড়িতে এ আয়োজন করা হয়।
আজ মঙ্গলবার (১৪ জানুয়ারি) সকালে জেলার সাতছড়ি ত্রিপুরা পল্লীতে গিয়ে দেখা যায়, ঘরে ঘরে নারীরা হরেক রকম পিঠা তৈরি করেছেন। বিবাহিত নারীরা সংক্রান্তি উপলক্ষে পিত্রালয়ে ফিরে এসেছেন। প্রতিটি পরিবারের কিশোর-কিশোরীরা নানা অনুষ্ঠান আয়োজনে ব্যস্ত রয়েছে।
এ উপলক্ষে আজ হবিগঞ্জ সদর উপজেলার পইল গ্রামে মাছের মেলা বসেছে। প্রতি বছরই পৌষ সংক্রান্তি উপলক্ষে এ মেলার আয়োজন করা হয়। মেলায় মৎস্য শিকারিরা বড় বড় মাছ নিয়ে আসে। স্থানীয়রা ছাড়াও দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে সৌখিন মানুষেরা এখানে মাছ কিনতে আসেন। এছাড়াও জেলার আজমিরীগঞ্জ এবং বানিয়াচংসহ বিভিন্ন স্থানে পৌষ সংক্রান্তির মেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
আরো পড়ুন:
চলচ্চিত্র শিল্পকে সমৃদ্ধ করতে সর্বাত্মক সহযোগিতা করবে সরকার: নাহিদ
নতুন প্রত্যাশার নবযাত্রা বাংলাদেশের
হবিগঞ্জ শহরের বাসিন্দা প্রদীপ দাস সাগর জানান, পৌষ সংক্রান্তি উপলক্ষে তার পরিবারের সবার মাঝে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। বিশেষ করে নারীরা সোমবার (১৩ জানুয়ারি) সন্ধ্যা থেকে বিভিন্ন ধরনের পিঠা বানানোর কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। তাছাড়া বিভিন্ন স্থান থেকে পৌষ সংক্রান্তি উপলক্ষে আত্মীয়-স্বজন এসেছেন। তাদের আপ্যায়নের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
তিনি বলেন, পৌষ সংক্রান্তি উপলক্ষে ছেলে-যুবারা গ্রামে গ্রামে ‘ভেড়াঘর উৎসব’ উদযাপন করেছে। খড় ও বাঁশ দিয়ে বিশেষ ধরনের ঘর তৈরি করে এতে রাত্রিযাপন করেছে তারা। পুরো রাত এ ঘরে চলে খাওয়া-দাওয়া। পরদিন ভোরে শীতল জলে স্নান সেরে আগুন দিয়ে ঘরটি পুড়িয়ে ফেলেছে।
সাতছড়ি ত্রিপুরা পল্লীর হেডম্যান চিত্তরঞ্জন দেববর্মা বলেন, পৌষ সংক্রান্তি উদযাপন করা হয়েছে। উৎসবটিকে পৌষ সংক্রান্তি ছাড়াও মকর সংক্রান্তি, দধি সংক্রান্তি এবং বিশেষভাবে উত্তরায়ণ সংক্রান্তি নামেও অভিহিত করা হয়। এ দিন পরিবারের সবাই, বিশেষ করে শিশুরা নতুন জামা-কাপড় পরেছে।
ঢাকা/মামুন/বকুল
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
২০০ বছরের ঐতিহ্য নিয়ে ভোলার বৈষা দধি
ভোলার ভ্যাপসা গরম, দুপুর গড়াতে না গড়াতেই সদর রোডজুড়ে তীব্র যানজট নাগরিক জীবনকে ব্যস্ত করে ফেলে। গরমে হাঁসফাঁস করা মানুষ একটু স্বস্তি খোঁজে। আর সেই স্বস্তি এনে দিতে পারে ভোলার বিখ্যাত বৈষা দধি।
দুপুরের আগেই সব দোকানের হাঁড়ি ফাঁকা হয়ে যায়। মহিষের কাঁচা দুধে পাতানো এই দই ভোলার স্বাদ, ইতিহাস ও গর্বের এক অনন্য বহিঃপ্রকাশ।
ভোলার দোকানগুলোতে প্রতিদিন মণকে মণ বৈষা দধি তৈরি হয়। এই দইয়ের বিশেষত্ব হলো, মহিষের কাঁচা দুধ দিয়ে এটি পাতা হয়। বাজারে সচরাচর যে দই পাওয়া যায়, সেসব তৈরি হয় গরুর দুধ দিয়ে এবং দুধ জ্বালিয়ে গাঢ় করে। কিন্তু ভোলার বৈষা দধি হয় মহিষের কাঁচা দুধ দিয়ে।
জলবেষ্টিত দ্বীপ জেলা ভোলার এক অমূল্য সম্পদ মহিষ। পূর্বে মেঘনা, পশ্চিমে তেঁতুলিয়া, উত্তরে ইলিশা আর দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর—এই চার নদী ও সমুদ্রবেষ্টিত চরাঞ্চলে ঘুরে বেড়ায় হাজার হাজার মহিষ। সরকারি হিসাবে এই সংখ্যা দেড় লাখের কাছাকাছি, তবে স্থানীয় লোকজনের মতে তা দুই লাখ ছাড়িয়েছে। এই মহিষের দুধই বৈষা দধির প্রাণ।
প্রায় দুই শতাব্দী ধরে এ অঞ্চলের মানুষের দৈনন্দিন খাদ্য তালিকায় থাকে এই দই। এ ছাড়া অতিথি আপ্যায়নের অন্যতম প্রধান উপাদান এটি। উৎসব-পার্বণ, বিয়েশাদি কিংবা যেকোনো সামাজিক আয়োজনে বৈষা দধি ছাড়া যেন ভোলার কোনো উৎসব পরিপূর্ণতা পায় না।
মুহাম্মদ শওকাত হোসেনের ‘ভোলা জেলার ইতিহাস’ বই থেকে জানা যায়, দুই শ বছর আগে থেকে ভোলায় চর জাগতে শুরু করে। বসতি হয়, মহিষ পালন শুরু হয়। দুধ সংরক্ষণের উপায় ছিল না বলে স্থানীয় বাসিন্দারা দই বানাতেন। সেখান থেকেই বৈষা দধির যাত্রা শুরু, যা পরে ছড়িয়ে পড়ে পুরো অঞ্চলে।
ভোলার মানুষের খাদ্যসংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে এই দই। এটি ভাতের সঙ্গে খাওয়া হয়, চিড়া-মুড়ির সঙ্গে মিশিয়ে তৈরি হয় মুখরোচক খাবার, আবার গরমের দিনে দই, পানি ও চিনি মিশিয়ে তৈরি করা হয় ঘোল—যা শরীরকে শীতল রাখে। শীতকালে হাঁসের মাংসের সঙ্গে টক দই ও খেজুরের গুড়—ভোলার ভোজনরসিকদের কাছে এক অনন্য স্বাদ। পান্তাভাতের সঙ্গে দই ও খেজুরের গুড় এই অঞ্চলের জনপ্রিয় একটি খাবার।
বর্তমানে প্রতি কেজি বৈষা দই বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকায়। তবে ঈদে দাম বেড়ে যায়। ঈদের আগেই বিক্রেতারা দুধ জমাতে শুরু করেন এবং এ সময়ে প্রতিদিন ৮০০–৯০০ কেজি পর্যন্ত দই বিক্রি হয়।
ভোলার দোকানগুলোতে প্রতিদিন মণকে মণ বৈষা দধি তৈরি হয়