সাড়ে ৫ কোটি লিটার ভোজ্যতেল কিনছে সরকার
Published: 15th, January 2025 GMT
পৃথক তিনটি স্থানীয় দরপত্রের মাধ্যমে ৫ কোটি ৫০ লাখ লিটার ভোজ্যতেল কিনছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। আসন্ন পবিত্র রোজায় ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে ভর্তুকি দামে বিক্রির জন্য এসব তেল কেনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে সূত্র জানিয়েছে। এতে মোট ব্যয় হবে ৯২৫ কোটি ৪৩ লাখ টাকা।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন সংস্থা টিসিবির ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে বার্ষিক ক্রয় পরিকল্পনায় ২৮ কোটি লিটার ভোজ্যতেল কেনার লক্ষ্যমাত্রা আছে। এসব তেলের মধ্যে সোনারগাঁও সিডস ক্রাশিং মিলস লিমিটেড সরবরাহ করবে ২ কোটি ২০ লাখ লিটার সয়াবিন তেল। প্রতি লিটারের দাম পড়বে ১৭১ টাকা ৯৫ পয়সা। সুপার অয়েল রিফাইনারি লিমিটেড ১ কোটি ১০ লাখ লিটার সয়াবিন তেল সরবরাহ করবে। প্রতি লিটারের দাম পড়বে ১৭১ টাকা ৫০ পয়সা। শবনম ভেজিটেবল অয়েল লিমিটেড সরবরাহ করবে ২ কোটি ২০ লাখ লিটার পাম ওলিন।
মোট চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে সমগ্র বাংলাদেশে (সিটি কর্পোরেশন ও পৌরসভাসহ) ফ্যামিলি কার্ডধারী প্রায় ১ কোটি নিম্নআয়ের পরিবারের মাঝে প্রতি মাসে ভর্তুকি মূল্যে বিক্রির লক্ষ্যে স্থানীয়ভাবে তিনটি দরপ্রস্তাবের মাধ্যমে ৫ কোটি ২০ লাখ লিটার ভোজ্যতেল কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে টিসিবি। পাবলিক প্রকিউরমেন্ট বিধিমালা, ২০০৮ এর বিধি-১৬ (৫ক) অনুযায়ী প্রতি লিটার সয়াবিন তেলের দাপ্তরিক প্রাক্কলিত মূল্য ১৭২ টাকা ৫৬ পয়সা।
দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির সভা ২০২৪ সালের ১৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হয়। মূল্যায়ন কমিটি প্রাপ্ত একটি দরপত্র, তুলনামূলক বিবরণী এবং সংযুক্ত দাখিলকৃত কাগজ পর্যালোচনা করে। পর্যালোচনা শেষে দেখা যায়, দরদাতা প্রতিষ্ঠান সোনারগাঁও সিডস ক্রাশিং মিলস লিমিটেডে দরপত্রে প্রতি লিটার তেল সব খরচসহ ১৭১ টাকা ৯৫ পয়সা দরে ২ কোটি ২০ লাখ লিটার সয়াবিন তেল সরবরাহ করার প্রস্তাব দিয়েছে। এতে মোট ব্যয় হবে ৩৭৮ কোটি ২৯ লাখ টাকা।
অপর এক প্রস্তাবে টিসিবির ফ্যামিলি কার্ডধারী প্রায় ১ কোটি নিম্নআয়ের পরিবারের মাঝে প্রতি মাসে ভর্তুকি মূল্যে বিক্রির লক্ষ্যে টিসিবি কর্তৃক স্থানীয়ভাবে ২ কোটি ২০ লাখ লিটার পরিশোধিত পাম ওলিন কেনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে দরপত্র আহ্বান করা হলে দুটি প্রতিষ্ঠান এতে অংশ নেয়। দরপ্রস্তাবের সার্বিক বিষয় পর্যালোচনা করে দরপত্র উন্মুক্তকরণ কমিটি সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠান শবনম ভেজিটেবল অয়েল লিমিটেডের কাছ থেকে ২ কোটি ২০ লিটার পাম ওলিন কেনার সুপারিশ করে। প্রতি লিটারের দাম ১৬২ টাকা হিসেবে ২ কোটি ২০ লিটার পাম ওলিন কিনতে ব্যয় হবে ৩৫৮ কোটি ৪৯ লাখ টাকা।
স্থানীয়ভাবে উন্মুক্ত দরপত্র (জাতীয়) পদ্ধতিতে আরো ১ কোটি ১০ লাখ লিটার সয়াবিন তেল কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। ক্রয় প্রস্তাবটি বাস্তবায়নের জন্য দরপত্র আহ্বান করা হলে মাত্র একটি দরপত্র জমা পড়ে। দরপত্র মূল্যায়ন কমিটি দরপত্রের দলিলাদি পর্যালোচনা করে সেটি রেসপন্সিভ হিসেবে বিবেচনা করে এবং দরদাতা সুপার অয়েল রিফাইনারি লিমিটেডের নাম সুপারিশ করে। দরপ্রস্তাবে দরদাতা প্রতিষ্ঠান প্রতি লিটার সয়াবিন তেলের দাম ১৬২ টাকা ৯৫ পয়সা উল্লেখ করে। সে হিসেবে ১ কোটি ১০ লাখ লিটার সয়বিন তেল কিনতে ব্যয় হবে ৩৫৮ কোটি ৫৯ লাখ টাকা।
এ সংক্রান্ত পৃথক তিনটি ক্রয় প্রস্তাবে অনুমোদনের জন্য সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদের পরবর্তী সভায় উপস্থাপন করা হবে বলে সূত্র জানিয়েছে।
ঢাকা/হাসনাত/রফিক
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
জ্বালানি খাতে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা প্রয়োজন
দফায় দফায় দাম বাড়িয়েও চাহিদামতো গ্যাস সরবরাহ করতে না পারায় যখন শিল্প উৎপাদন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে, তখন গ্যাসকূপ খননে অগ্রগতি কম হওয়ার বিষয়টা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। গত কয়েক বছরে, বিশেষ করে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর থেকে দেশের অর্থনৈতিক সংকট এবং বিনিয়োগের গতি থমকে যাওয়ার পেছনে নিশ্চিতভাবেই জ্বালানিসংকটের বড় ভূমিকা আছে।
দেশীয় উৎস থেকে গ্যাস অনুসন্ধান ও উৎপাদন না বাড়িয়ে বিগত সরকার উচ্চ মূল্যের এলএনজি আমদানির যে নীতি নিয়েছিল, তারই প্রতিফল এটা। অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে সেই ধারা থেকে বেরিয়ে আসার চিন্তা থাকলেও বাস্তব প্রচেষ্টা ও উদ্যোগে ঘাটতি দেখা যাচ্ছে। ফলে গ্যাস–সংকটের বৃত্ত থেকে আমরা এখনো বেরিয়ে আসতে পারিনি।
প্রথম আলোর খবর জানাচ্ছে, বিদ্যুৎ, শিল্প, ব্যবসা ও বাসাবাড়ির জ্বালানিতে বর্তমানে দেশে দৈনিক গ্যাসের চাহিদা প্রায় ৩৮০ কোটি ঘনফুট। বর্তমানে গ্যাস সরবরাহ করা যাচ্ছে ২৭০-২৮০ কোটি ঘনফুট। এর মধ্যে দেশে উৎপাদিত হচ্ছে ১৭৭ কোটি ঘনফুট। এলএনজি আমদানি করা হচ্ছে ১১০ কোটি ঘনফুটের মতো। সব মিলিয়ে দৈনিক গ্যাসের ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়াচ্ছে ১০০ থেকে ১১০ কোটি ঘনফুট।
দেশের অর্থনীতির প্রাণ ফেরাতে এবং শিল্প ও বিনিয়োগের স্থবিরতা কাটাতে হলে গ্যাসের সরবরাহ বাড়ানোর বিকল্প নেই। ২০১৭ সালে দেশীয় উৎস থেকে সর্বোচ্চ ২৭০ কোটি ঘনফুট গ্যাস উৎপাদিত হয়েছিল। এর পর থেকে এলএনজি আমদানির ওপর নির্ভরতা শুরু হয়। বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ সংকট, বিশ্ববাজারে এলএনজির দামের অনিশ্চয়তা ও অবকাঠামোগত সক্ষমতার ঘাটতিতে চাহিদামতো এলএনজি আমদানি সম্ভব হচ্ছে না।
এ বাস্তবতায় জ্বালানিবিশেষজ্ঞরা মনে করেন, দেশীয় উৎস থেকে গ্যাসের উৎপাদন বাড়ানোটাই সবচেয়ে ভালো সমাধান হতে পারে। স্থল ও সমুদ্রে নতুন গ্যাসক্ষেত্র অনুসন্ধান এবং পুরোনো গ্যাসক্ষেত্রগুলোতে নতুন কূপ খনন সমানতালে করা প্রয়োজন। সংকটে পড়ে বিগত সরকার ২০২২ সালে চার বছরে ৫০টি কূপ উন্নয়ন, সংস্কার ও অনুসন্ধানের কাজ হাতে নিলেও সেটি ধীরগতিতে এগোয়।
অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি আইন বাতিল করা হয়। দরপত্র ডেকে চুক্তি করায় সময় বেশি লেগেছে, কিন্তু খরচ কমেছে। এ বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে কূপ খননের কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও মাত্র ২০টি কূপ খননের কাজ শেষ হয়েছে। ফলে দৈনিক যেখানে ৬২ কোটি ঘনফুট গ্যাস নতুন উত্তোলন হওয়ার কথা ছিল, সেখানে ২১ কোটি ঘনফুট গ্যাস উৎপাদিত হচ্ছে। এ ছাড়া অন্তর্বর্তী সরকার নতুন করে ১০০টি কূপ খনন প্রকল্পও হাতে নিয়েছে।
গ্যাস উৎপাদন বাড়াতে কূপ খননের প্রকল্প নেওয়া হলেও দেশে রিগ বা খননযন্ত্রের ঘাটতি রয়েছে। বাপেক্স, বিজিএফসিএলসহ গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলনের সঙ্গে যুক্ত দেশীয় কোম্পানিগুলোর সক্ষমতা বাড়ানোর কথা বহুদিন ধরে বলা হলেও বিগত কোনো সরকারই তাতে কর্ণপাত করেনি। এ ক্ষেত্রে নীতিনির্ধারণী জায়গায় দুর্বলতা রয়েছে বলে আমরা মনে করি। এ ছাড়া দ্বীপজেলা ভোলায় প্রায় ১ হাজার ৪৩২ কোটি ঘনফুট গ্যাসের সম্ভাব্য মজুত থাকলেও সক্ষমতা অনুসারে গ্যাস উৎপাদন করা হচ্ছে না। সেখানকার উৎপাদিত গ্যাস বাইরে আনার জন্য এখনো পাইপলাইন স্থাপন করা হয়নি, আবার সেখানেও শিল্পায়নের সুযোগ সৃষ্টি করা হয়নি। সমুদ্রে গ্যাস অনুসন্ধান প্রক্রিয়াও থমকে আছে।
জ্বালানি নীতিতে অবশ্যই জাতীয় সক্ষমতা ও দেশীয় উৎস থেকে জ্বালানি সরবরাহের বিষয়টিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। সমস্যায় পড়লে তাৎক্ষণিক সমাধানের যে টোটকা, সেখান থেকে জ্বালানি খাতকে বের করে আনতে হবে, দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা করতে হবে। স্থল ও সমুদ্রে গ্যাস অনুসন্ধান, কূপ খনন, উন্নয়ন ও সরবরাহের অবকাঠামো তৈরিতে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে।