লস অ্যাঞ্জেলেসের বাতাসে পোড়া গন্ধ, হাহাকার
Published: 16th, January 2025 GMT
নিজেদের ইতিহাসের ‘সবচেয়ে’ ভয়াবহ অগ্নিদুর্যোগে ওলটপালট হয়ে গেছে যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর লস অ্যাঞ্জেলেস। গত সপ্তাহ থেকে যেন শহরটির সহ্যশক্তির পরীক্ষা নিচ্ছে ভয়াবহ দাবানল। প্রচণ্ড শরতের খরা ও ২০১১ সালের পর সবচেয়ে শক্তিশালী সান্তা আনা বাতাস শুকনো পাহাড়গুলোকে পরিণত করেছে জ্বলন্ত অগ্নিকুণ্ডে। এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে চলা এ দাবানলে এখন পর্যন্ত প্রাণ হারিয়েছেন ২৫ জন। পুড়েছে ৪০ হাজার একরজুড়ে ছড়িয়ে থাকা ১২ হাজারের বেশি বাড়ি। সব হারিয়ে গৃহহীন হয়েছেন অন্তত ৭৪ হাজার মানুষ।
দীর্ঘদিন ধরে ধনী ও বিখ্যাতদের আবাসস্থল লস অ্যাঞ্জেলেস সিটির পশ্চিমের প্যাসিফিক প্যালিসেডস এবং মালিবুতে ভয়াবহ ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে দাবানল। তবে শহরটির তুলনামূলক সাশ্রয়ী এলাকা আলতাডেনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আরও বেশি। শহরের এই অংশে দাবানল এতই দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছিল যে বাসিন্দাদের সরিয়ে নেওয়ার যথেষ্ট সুযোগ পাননি দমকলকর্মীরা। সক্রিয় দাবানলের মাঝে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে ঘুরে বেড়াচ্ছিল হাজার হাজার মানুষ।
সব পুড়িয়ে দাবানল সরে যাওয়ার পর অনেকেই এখন আসছেন নিজ বাড়ির খোঁজে। তবে সেখানে শুধু পোড়া কয়লার ধ্বংসাবশেষ ছাড়া কিছুই মিলছে না অধিকাংশেরই। অনেকেই আবার পোড়া কাঠ, কংক্রিটের ভিড়ে খুঁজে ফিরছেন প্রিয় স্মৃতিচিহ্ন। তবে নিরাশ হয়ে খালি হাতেই ফিরতে হয়েছে তাদের। দাবানলের কবলে পড়া শহরটির ভগ্নাবশেষে এখন শুধুই কান্না আর হাহাকার।
এদিকে ক্যালিফোর্নিয়াজুড়ে বইতে থাকা শুষ্ক বাতাসের গতিবেগ ধীরে ধীরে কমছে। বাতাস কমতে থাকায় দাবানল নিয়ন্ত্রণে তৎপরতা বাড়িয়েছেন দমকলকর্মীরা। তবে আবার বাতাস বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কার কথা জানিয়েছে দেশটির আবহাওয়া বিভাগ।
পরবর্তী সপ্তাহের শুরুর দিকে সান্তা আনা বাতাসের এমন বৃদ্ধির আশঙ্কায় দাবানলও বাড়তে পারে বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা সিএনএন।
এদিকে দাবানল বাড়ার আশঙ্কায় আরও প্রায় এক লাখ মানুষকে প্রয়োজনে তাদের এলাকা খালি করে দেওয়ার সতর্কতা দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে রয়টার্স।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
ইসরায়েলের হাইফা কেন গুরুত্বপূর্ণ, কেন ইরানের নিশানায় শহরটি
ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চলীয় শহর হাইফা। শহরটি নিশানা করে গতকাল শনিবার ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ার খবর ওয়াশিংটন পোস্টসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে এসেছে। খবরে হাইফায় বিস্ফোরণের শব্দ শুনতে পাওয়ার তথ্যও জানানো হয়।
খবরে আরও বলা হয়, হাইফার উত্তরের কিছু শহরেও গতকাল ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হেনেছে বলে মনে করা হচ্ছে।
ইসরায়েল-ইরানের মধ্যে পাল্টাপাল্টি হামলা চলছে। বদলা হিসেবে হাইফাসহ ইসরায়েল বিভিন্ন এলাকায় ক্ষেপণাস্ত্র-ড্রোন হামলা চালানোর কথা জানিয়েছে ইরান।
হাইফায় ইরানের হামলা নিয়ে নানা ধরনের তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে দাবি করা হয়, গতকাল ১০০টির বেশি ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েলের দিকে ছোড়া হয়, যার লক্ষ্য ছিল হাইফা ও তেল আবিব।
চ্যানেল ১২, টাইমস অব ইসরায়েলসহ ইসরায়েলি গণমাধ্যমে হাইফায় বিস্ফোরণ, বড় ধরনের অগ্নিকাণ্ডের খবর দিয়ে বলা হয়েছে, এগুলো ক্ষেপণাস্ত্র হামলার প্রভাব।
অন্যদিকে বিবিসি প্রথমে বলেছিল, হাইফায় ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হেনেছে। সেখানে পাঁচজন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। পরে আবার বিবিসি বলে, হাইফায় ইরানের ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাত হানার খবরটি ঠিক নয়।
হাইফা ইসরায়েলের তৃতীয় বৃহত্তম শহর। কিন্তু ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চলের উপকূলীয় এ শহরটি কেন গুরুত্বপূর্ণ, কেনইবা ইরানের লক্ষ্যবস্তু হাইফা?
ওয়াশিংটন পোস্ট জানিয়েছে, হাইফায় ইসরায়েলের একটি গুরুত্বপূর্ণ নৌঘাঁটি আছে। এ ছাড়া এখানে বেশ কিছু তেল শোধনাগার ও বহু রাসায়নিক কারখানা আছে।
নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসরায়েলের সবচেয়ে বড় তেল শোধনাগার হাইফা এলাকায় অবস্থিত।
হাইফা শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে একটি বন্দর হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে বলে বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। এতে বলা হয়, হাইফা ইসরায়েলের প্রধান গভীর সমুদ্রবন্দর। ইসরায়েলের সামুদ্রিক বাণিজ্যের একটি বড় অংশ এখান থেকে পরিচালিত হয়। ইসরায়েলের মোট পণ্য পরিবহনের প্রায় অর্ধেকই এই বন্দর দিয়ে পরিবাহিত হয়।
বাণিজ্যিক কার্যক্রম নির্বিঘ্ন রাখতে হাইফায় আয়রন ডোম স্থাপনসহ নানা প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থা ইসরায়েল গ্রহণ করে রেখেছে বলে জানায় রয়টার্স।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের প্রতিবেদনে বলা হয়, হাইফায় অবস্থিত নৌঘাঁটি, তেল শোধনাগার ও রাসায়নিক কারখানাগুলো তেল আবিবের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত।
হাইফায় ইরানি হামলা প্রত্যাশিত ছিল বলে উল্লেখ করেছে আল–জাজিরা। কারণ হিসেবে বলা হয়, এই শহরে গুরুত্বপূর্ণ গ্যাস অবকাঠামো রয়েছে।
আল-জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশেষ করে হাইফায় ইরানের হামলা এই ইঙ্গিত দেয় যে তেহরান তার অঙ্গীকার অনুযায়ী পাল্টা জবাব দিচ্ছে। কারণ, তেহরান বলেছিল, ইসরায়েল যদি ইরানের বেসামরিক অবকাঠামো বা জ্বালানি স্থাপনায় হামলা চালায়, তাহলে তারাও ঠিক একই রকম জবাব দেবে।