নিজেদের ইতিহাসের ‘সবচেয়ে’ ভয়াবহ অগ্নিদুর্যোগে ওলটপালট হয়ে গেছে যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর লস অ্যাঞ্জেলেস। গত সপ্তাহ থেকে যেন শহরটির সহ্যশক্তির পরীক্ষা নিচ্ছে ভয়াবহ দাবানল। প্রচণ্ড শরতের খরা ও ২০১১ সালের পর সবচেয়ে শক্তিশালী সান্তা আনা বাতাস শুকনো পাহাড়গুলোকে পরিণত করেছে জ্বলন্ত অগ্নিকুণ্ডে। এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে চলা এ দাবানলে এখন পর্যন্ত প্রাণ হারিয়েছেন ২৫ জন। পুড়েছে ৪০ হাজার একরজুড়ে ছড়িয়ে থাকা ১২ হাজারের বেশি বাড়ি। সব হারিয়ে গৃহহীন হয়েছেন অন্তত ৭৪ হাজার মানুষ।

দীর্ঘদিন ধরে ধনী ও বিখ্যাতদের আবাসস্থল লস অ্যাঞ্জেলেস সিটির পশ্চিমের প্যাসিফিক প্যালিসেডস এবং মালিবুতে ভয়াবহ ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে দাবানল। তবে শহরটির তুলনামূলক সাশ্রয়ী এলাকা আলতাডেনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আরও বেশি। শহরের এই অংশে দাবানল এতই দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছিল যে বাসিন্দাদের সরিয়ে নেওয়ার যথেষ্ট সুযোগ পাননি দমকলকর্মীরা। সক্রিয় দাবানলের মাঝে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে ঘুরে বেড়াচ্ছিল হাজার হাজার মানুষ।

সব পুড়িয়ে দাবানল সরে যাওয়ার পর অনেকেই এখন আসছেন নিজ বাড়ির খোঁজে। তবে সেখানে শুধু পোড়া কয়লার ধ্বংসাবশেষ ছাড়া কিছুই মিলছে না অধিকাংশেরই। অনেকেই আবার পোড়া কাঠ, কংক্রিটের ভিড়ে খুঁজে ফিরছেন প্রিয় স্মৃতিচিহ্ন। তবে নিরাশ হয়ে খালি হাতেই ফিরতে হয়েছে তাদের। দাবানলের কবলে পড়া শহরটির ভগ্নাবশেষে এখন শুধুই কান্না আর হাহাকার।

এদিকে ক্যালিফোর্নিয়াজুড়ে বইতে থাকা শুষ্ক বাতাসের গতিবেগ ধীরে ধীরে কমছে। বাতাস কমতে থাকায় দাবানল নিয়ন্ত্রণে তৎপরতা বাড়িয়েছেন দমকলকর্মীরা। তবে আবার বাতাস বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কার কথা জানিয়েছে দেশটির আবহাওয়া বিভাগ। 

পরবর্তী সপ্তাহের শুরুর দিকে সান্তা আনা বাতাসের এমন বৃদ্ধির আশঙ্কায় দাবানলও বাড়তে পারে বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা সিএনএন। 

এদিকে দাবানল বাড়ার আশঙ্কায় আরও প্রায় এক লাখ মানুষকে প্রয়োজনে তাদের এলাকা খালি করে দেওয়ার সতর্কতা দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে রয়টার্স।

.

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

সুদানে ‘গণহত্যা’ হয়েছে

সুদানের এল-ফাশের শহর ও এর আশপাশের বিভিন্ন স্থানে গণহত্যা চলছে। কৃত্রিম ভূ–উপগ্রহের ছবি বিশ্লেষণ করে ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা এমন দাবি করেছেন। জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী সেখানকার পরিস্থিতিকে ‘ভয়াবহ’ বলে উল্লেখ করেছেন।

২০২৩ সালের এপ্রিল থেকে সুদানের সেনাবাহিনীর সঙ্গে দেশটির আধা সামরিক বাহিনী র‍্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সসের (আরএসএফ) লড়াই চলছে। গত রোববার তারা এল-ফাশের দখল করে। এর মাধ্যমে প্রায় দেড় বছরের দীর্ঘ অবরোধের পর পশ্চিম দারফুর অঞ্চলে সেনাবাহিনীর সর্বশেষ শক্ত ঘাঁটিটিও ছিনিয়ে নেয় তারা।

শহরটি পতনের পর থেকে সেখানে বিচারবহির্ভূত হত্যা, যৌন সহিংসতা, ত্রাণকর্মীদের ওপর হামলা, লুটপাট এবং অপহরণের খবর পাওয়া যাচ্ছে। সেখানকার যোগাযোগব্যবস্থা প্রায় সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন।

এল-ফাশের থেকে পালিয়ে পার্শ্ববর্তী তাওইলা শহরে জীবিত বেঁচে ফেরা কয়েকজন ব্যক্তির সঙ্গে এএফপির সাংবাদিক কথা বলেছেন। সেখানে গণহত্যা হয়েছে জানিয়ে তাঁরা বলেন, শহরটিতে মা-বাবার সামনেই শিশুদের গুলি করা হয়েছে। প্রাণ বাঁচাতে পালানোর সময় সাধারণ মানুষকে মারধর করে তাঁদের মূল্যবান সামগ্রী লুট করা হয়েছে।

পাঁচ সন্তানের মা হায়াত শহর থেকে পালিয়ে আসা ব্যক্তিদের একজন। তিনি বলেন, ‘আমাদের সঙ্গে থাকা তরুণদের আসার পথেই আধা সামরিক বাহিনী থামিয়ে দেয়। আমরা জানি না, তাদের কী হয়েছে।’

ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের হিউম্যানিটারিয়ান রিসার্চ ল্যাব বলেছে, গত শুক্রবার পাওয়া কৃত্রিম উপগ্রহের ছবিতে ‘বড় ধরনের কোনো জমায়েত চোখে পড়েনি।’ এ কারণে মনে করা হচ্ছে, সেখানকার জনগণের বড় একটি অংশ হয় ‘মারা গেছে, বন্দী হয়েছে কিংবা লুকিয়ে আছে।’ সেখানে গণহত্যা অব্যাহত থাকার বিভিন্ন ইঙ্গিত স্পষ্টভাবে দেখা গেছে।

জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, আল-ফাশের থেকে এখন পর্যন্ত ৬৫ হাজারের বেশি মানুষ পালিয়েছে। এখনো কয়েক হাজার মানুষ শহরটিতে আটকা পড়েছে। আরএসএফের সর্বশেষ হামলার আগে সেখানে প্রায় আড়াই লাখ মানুষ বসবাস করত।

শনিবার বাহরাইনে এক সম্মেলনে জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইয়োহান ভাডেফুল বলেন, সুদান একটি ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছে। সেখানে বিশ্বের সবচেয়ে বড় মানবিক সংকট দেখা দিয়েছে। আরএসএফ নাগরিকদের সুরক্ষার অঙ্গীকার করেছিল। কিন্তু তাদের এই কর্মকাণ্ডের জন্য জবাবদিহির মুখোমুখি হতে হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সুদানে ‘গণহত্যা’ হয়েছে
  • সুদানের রাস্তায় শত শত মরদেহ, পালিয়েছে ৬০ হাজার বাসিন্দা