‘অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে প্রাতিষ্ঠানিক ও প্রশাসনিক সেক্টর বেশি মনোযোগ পেলেও অর্থনৈতিক সংস্কারে কোনো মনোযোগ নেই। এ সরকারের কোনো অর্থনৈতিক মেন্যুফেস্ট নেই। অনেকেই বলছেন, অর্থনীতির ক্ষেত্রে এই সরকার আগের সরকারের মতোই কাজ করছে। আশঙ্কা করছি, জ্বালানি নিয়ে সামনের গরমে কি হবে তা নিয়ে শঙ্কায় আছি। সামনের বাজেটের কাঠামোর ব্যয় নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। আমনের সংগ্রহ অভিযানে দুর্নীতি রয়ে গেছে। ফলে খাদ্য নিরাপত্তা এখনও হুমকিতে রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সংস্কার কাজের প্রশংসা করলেও চলমান পদক্ষেপ নিয়ে নানা প্রশ্ন রয়েছে। সামাজিক সুরক্ষা নিয়ে অস্থিরতা চলছে।’

রাজধানীর আগারগাঁও শনিবার সকালে বিআইসিসিতে শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি ২০২৪-এর সিম্পোজিয়াম, অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা, সংস্কার ও জাতীয় বাজেট নিয়ে এক আলোচনায় এসব কথা বলেছেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো ও শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির প্রধান ড.

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, ‘দেশের প্রবৃদ্ধির হার কমে যাচ্ছে। এটা যে পরিবর্তন হবে তার কোনো সম্ভাবনা নেই। ইতোমধ্যেই আমরা মধ্যমেয়াদি ফাঁদে আটকা পড়েছি। প্রত্যক্ষ কর না বাড়িয়ে অবিবেচকভাবে ভ্যাট বাড়ানো হয়েছে।’ 

প্রাতিষ্ঠানিক ও প্রশাসনিক খাতে পদক্ষেপ নিলেও অর্থনৈতিক সংস্কারে সরকারের মনোযোগ নেই বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘শ্বেতপত্র নিয়ে অনেকে ভুল বুঝে তির্যক মন্তব্য ও ভুল ব্যাখ্যা করেছেন। সরকারের ভেতর অনেকে শ্বেতপত্রের সুপারিশ ও পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে অনিশ্চিত বক্তব্য দিয়েছেন, যা আমাদের ব্যথিত করেছে। আমরা চাই সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন হোক।’ 

ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, বিনিয়োগ বাড়ানোর ক্ষেত্রে সরকার যথাযথ মনোযোগ দিচ্ছে না। সরকারের এই মূহুর্তে বিচ্ছিন্ন পদক্ষেপের বাইরে তেমন কোনো অর্থনৈতিক মেনিফেস্টো নাই। সংশোধিত বাজেট না দেওয়ায় এটা অপ্রাসঙ্গিক হয়ে যাচ্ছে। দারিদ্র্য বিমোচন, সংস্কার নিশ্চিত করতে না পারলে সাধারণের পাশাপাশি সংস্কারে জড়িত মানুষরাও ধৈর্যহারা হয়ে পড়ব।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: পদক ষ প ন সরক র র

এছাড়াও পড়ুন:

কর অব্যাহতির রাস্তা সামনে কঠিন হবে

কর অব্যাহতির বিষয়ে নীতি প্রণয়ন করা হবে জানিয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান বলেছেন, ব্যবসায়ীরা শুধু করছাড় চাচ্ছেন। তবে সামনে কর অব্যাহতির রাস্তা কঠিন হয়ে যাবে। গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর পল্টনে ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের (ইআরএফ) অডিটোরিয়ামে ‘সামষ্টিক অর্থনীতির দৃষ্টিভঙ্গি এবং রাজস্ব ব্যবস্থা’ শীর্ষক সেমিনারে এমন মন্তব্য করেন তিনি। সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ড. মাসরুর রিয়াজ।
এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, অর্থ উপদেষ্টা নির্দেশনা দিয়েছেন কর অব্যাহতি বিষয়ে নীতি তৈরি করতে। সেই নীতি আইনে প্রতিফলিত হবে। এ ক্ষেত্রে এনবিআরের প্রস্তাব হলো, সরকার কিংবা এনবিআর কোনো কর অব্যাহতি দিতে পারবে না। এ ক্ষমতা যাবে সংসদের হাতে। এর মানে হলো— কারও সঙ্গে একটু ভালো সম্পর্ক হলে অথবা বোঝাতে সক্ষম হলে কর অব্যাহতি পেয়ে যাবে– এমনটা থাকছে না। কর অব্যাহতির রাস্তা সামনের দিনে কঠিন হয়ে যাবে। এই ধরনের নীতি প্রণয়নের দিকে যাচ্ছে সরকার। 
তিনি বলেন, দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান বাড়াতে এতদিন ব্যাপক কর অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে এর দরকারও ছিল। এখন নতুন করে ভাবতে হবে। রাজস্ব আয়ের চেয়ে ব্যয় অনেক বেশি। দেশের চাহিদা মেটানোর মতো রাজস্ব আয় হচ্ছে না। রাজস্ব কম কেন– সেই প্রশ্নও তুলছে জনগণ। এসব জায়গায় আরেকটু সচেতন হলে আগামী বাজেটের আকার কিছুটা ছোট হতে পারে। 
এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, রাজস্ব আয়ের মধ্যে পরোক্ষ করের পরিমাণ অনেক বেশি, যা সভ্য দেশের লক্ষণ নয়। প্রত্যক্ষ কর আদায় বাড়াতে হবে। যে পরিমাণ কর আদায় করার কথা ছিল, তা হচ্ছে না। করযোগ্য সবার থেকে কর আদায় করতে না পারার কারণে করজাল সংকুচিত। কর আদায় বাড়ানোর বিষয়ে নতুন করে ভাবা হচ্ছে। 
এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, একদিকে আয় বাড়ানো, অন্যদিকে নীতি-সহায়তা দেওয়ার মধ্যে ভারসাম্য আনা বড় চ্যালেঞ্জ। সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো সুশাসনের ঘাটতি। যার যে কাজ করা দরকার, তিনি তা করছেন না। ফলে পদে পদে ভোগান্তি হচ্ছে। সে জন্য আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা জরুরি। এ বিষয়ে কাজ চলছে। 
তিনি বলেন, অর্থনীতির খারাপ সময়েও রাজস্ব আদায় আগের চেয়ে বাড়ছে। এপ্রিলে প্রবৃদ্ধি আরও ভালো হবে। যারা কর দিচ্ছেন না, তাদের নোটিশ করা হচ্ছে। আগামী বছর থেকে কোম্পানির কর রিটার্ন অনলাইনে দাখিলের নিয়ম করা হবে। 
মাসরুর রিয়াজ বলেন, রমজানের আগে নিত্যপণ্যে করছাড়, পর্যাপ্ত আমদানি এবং সরবরাহ পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় খাদ্য মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমেছে। গত জুলাইয়ের আগ পর্যন্ত টাকা ছাপিয়ে যেভাবে ব্যাংকে তারল্য সহায়তা দেওয়া হয়েছে, এখন তা কমে আসছে। টাকা পাচার কমেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের ডলার বিক্রি কমেছে। এর ফলে রিজার্ভ ইতিবাচক। তিনি বলেন, যারা ১৫ থেকে ২০ বছর ধরে কর অব্যাহতি পেয়ে আসছেন, তাদের বিষয়ে এনবিআরকে নতুন করে ভাবা দরকার। 
সেমিনারে আরও বক্তব্য দেন ফরেন ইনভেস্টরস চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির নির্বাহী পরিচালক নুরুল কবীর। ইআরএফ প্রেসিডেন্ট দৌলত আক্তার মালা সভাপতিত্ব করেন। সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম সঞ্চালনা করেন। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • যে পন্থীই হোন না কেন, একাত্তর আমার ইতিহাসের অংশ: ফরহাদ মজহার
  • বিভিন্ন সম্প্রদায়ের হারিয়ে যাওয়া ভাষা সংরক্ষণের তাগিদ পার্বত্য উপদেষ্টার
  • কর অব্যাহতির রাস্তা সামনে কঠিন হবে
  • দেশের সব পলিটেকনিকে ইনস্টিটিউটে শাটডাউন কর্মসূচি
  • নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করল কারিগরি শিক্ষার্থীরা
  • চট্টগ্রামে হকারদের পুনর্বাসন ও ট্রেড লাইসেন্সের দাবি
  • ‘সড়ক নিরাপত্তা আইন প্রণয়ন ছাড়া সড়ক সংস্কার সম্ভব নয়’