গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলায় কিশোর গ্যাংয়ের দৌরাত্ম্য বেড়েছে। উপজেলায় কিশোর অপরাধীদের কর্মকাণ্ডে ভয়ের পরিবেশ তৈরি হয়েছে। 

স্থানীয়দের তথ্যের ভিত্তিতে জানা গেছে, উপজেলায় গত ১৫ দিনে বেশ কিছু কিশোর অপরাধ সংঘটিত হয়েছে। কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা মাদক সেবন করে রাস্তায় উল্লাস করা, নারীদের উত্ত্যক্ত করা, ওষুধ ব্যবসায়ীকে পিটিয়ে হত্যা করা, পোশাক শ্রমিককে ডেকে নিয়ে নির্যাতন, মুক্তিপণ আদায়ের জন্য নারীকে ডেকে নিয়ে দলবদ্ধ ধর্ষণ, চিকিৎসককে তুলে নিয়ে নির্যাতনের পর মুক্তিপণ আদায়ের ঘটনা ঘটেছে। এ সব ঘটনায় স্থানীয়দের মধ্যে ভয়ের পরিবেশ তৈরি হয়েছে।

শ্রীপুরে কিশোর গ্যাংয়ের অপরাধপ্রবণ এলাকাগুলোর মধ্যে রয়েছে, পৌর শহরের মসজিদ মোড়, ফখরুদ্দিন মোড়, মাওনা চৌরাস্তা উড়াল সেতুর নিচে, শ্রীপুর রেঞ্জ অফিসসংলগ্ন, ওদ্দা দিঘি, তেলিহাটি ইউনিয়নের সফিক মোড়, বরমী ইউনিয়নের বরামা ব্রিজ, পাইটালবাড়ী, কাওরাইদ ইউনিয়নের নান্দিয়া সাঙ্গুন, গলদাপাড়া গ্রামসহ বেশ কিছু পয়েন্ট।

আরো পড়ুন:

টেকনাফে অপহরণের ৪৮ ঘণ্টা পর উদ্ধার ১৮ বনকর্মী

হাসিনা-জয়ের বিরুদ্ধে ৩০০ মিলিয়ন ডলার পাচারের অভিযোগ, অনুসন্ধা‌নে দুদক

স্থানীয়রা জানান, শ্রীপুরে মাদকের ভয়াবহতার কারণে কিশোরদের অপরাধের দৌরাত্ম্য বেড়েছে। পাশাপাশি স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তারা। ভুক্তভোগীরা জানান, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা কম থাকায় শ্রীপুরে দিনের পর দিন কিশোরদের দৌরাত্ম্য বেড়ে চলেছে।

শ্রীপুর পৌরসভার মসজিদ মোড়ে মা মনি নামে ফার্মেসি পরিচালনা করেন হাসিবুল ইসলাম বাদশা। মাঝে-মধ্যে রুবেল নামে স্থানীয় এক কিশোর গ্যাং নেতা বাদশার কাছে পোলাপানের খরচের কথা বলে টাকা দাবি করতেন। কয়েক দফা টাকাও নিয়েছেন। এ বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ও স্থানীয়দের জানিয়ে প্রতিকার পাননি বাদশা। সর্বশেষ চলতি ৩ জানুয়ারি কিশোর গ্যাং নেতা রুবেলের নেতৃত্বে দরজা ভেঙে ঘরে ঢুকে ইট দিয়ে আঘাত করে বাদশাকে হত্যা করে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা।

এ কিশোর গ্যাং নেতা রুবেল ২০২২ সালের ১৮ মার্চ একই এলাকায় সিহাব নামে এক ছাত্রলীগ নেতাকে গুলি করে। ভাগ্যক্রমে সিহাব বেঁচে যান। এছাড়া প্রায় প্রতিরাতে মোটরসাইকেল মহড়া দিয়ে এলাকায় আতঙ্ক সৃষ্টি করে মাদক কারবার চালিয়ে যাচ্ছে এই রুবেল ও তার গ্যাংয়ের সদস্যরা। ফার্মেসি ব্যবসায়ীকে হত্যার পরও কয়েক দফা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে লাইভে এসে হুমকি-ধমকি দিয়ে যাচ্ছে। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা বলছেন, তাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।

গত ৮ জানুয়ারি পোশাক কারখানার এক শ্রমিককে মুক্তিপণের জন্য দুই দিন আটকে রেখে নির্যাতন করা হয়। এ সময় মুক্তিপণ আদায়ের জন্য ওই পোশাক শ্রমিকের দুরসম্পর্কের বোনকে কৌশলে ডেকে নিয়ে দলবদ্ধ ধর্ষণ করা হয়। ভুক্তভোগী দুজন জানান, কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা দফায় দফায় মাদক সেবন করে তাদের উপর ওপর পাশবিক নির্যাতন চালিয়েছে।

অনুসন্ধান করে জানা গেছে, কিশোরদের দ্বারা সংঘটিত খুন, ধর্ষণ, অপহরণসহ এসব অপরাধের নেতৃত্বে রয়েছেন শ্রীপুর পৌর এলাকার ফখরুদ্দিন মোড়ের সাগর। তিনি স্থানীয়ভাবে ‘সাগর বাহিনী’ নামে কিশোর গ্যাং গ্রুপ গড়ে তুলেছেন। এ গ্রুপের টার্গেট পোশাক শ্রমিক। পোশাক কারখানায় শ্রমিকেরা বেতন পেলে এ বাহিনীর সদস্যদের উৎপাত বেড়ে যায়। পুলিশ বলছে, সাগর একাধিক মামলার আসামি। বেশ কিছু দিন জেলে থাকলেও কয়েক দিন আগে ছাড়া পেয়েছে সাগর। 

গত ১১ জানুয়ারি মাওনা চৌরাস্তা এলাকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসা দিচ্ছিলেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক মো.

আমিনুর রহমান। চিকিৎসা দিয়ে ঢাকায় ফেরার সময় মহাসড়কের পাশে দাঁড়িয়ে গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছিলেন তিনি। এ সময় তাকে অপহরণ করা হয়। হাতুড়ি দিয়ে আঘাত করে শোনানো হয় তার স্ত্রী ও স্বজনদের। পরিবারের কাছে চাওয়া হয় মুক্তিপণ। পরে ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা মুক্তিপণ দেওয়ার পর আমিনুরকে রাজেন্দ্রপুর জঙ্গলে ফেলে যাওয়া হয়।

চিকিৎসকের চাচাত ভাই সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন মিল্টন বলেন, ‘‘অপহরণের পরপরই আমরা স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের কাছে উদ্ধারে সহযোগিতা চেয়েছি। সব তথ্য আমরা তাদের সরবরাহ করেছি। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এত সব আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করেও ভাইকে উদ্ধার করতে পারেনি।’’

শ্রীপুর নাগরিক ফোরামের সাধারণ সম্পাদক খোরশেদ আলম জানান, মাদকে আসক্ত হয়ে দিন দিন কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা এ ধরনের অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। মাদকাসক্ত একজন কিশোর কিংবা যুবক অপরাধ করতে দ্বিধাবোধ করে না। অপহরণ, নারীদের উত্ত্যক্ত; এমনকি খুন করতেও তারা দ্বিধাবোধ করে না।
 
তিনি আরো বলেন, পুলিশ যদি তাদের দায়িত্বটা সঠিকভাবে পালন করে, তাহলে এ ধরনের অপরাধ নির্মূল সম্ভব। একটি অপরাধ, অপহরণ, ধর্ষণ অথবা খুন সংঘটিত হলে একজন ভুক্তভোগী প্রথমে পুলিশকে জানায়। তারা ঘটনাস্থলে আসার আগেই যোগাযোগ করে অপরাধীর সঙ্গে। এ জন্য পুলিশের ভূমিকা অনেক ক্ষেত্রে প্রশ্নবিদ্ধ।
 
শ্রীপুর ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জয়নাল আবেদীন মণ্ডল বলেন, পুলিশ কিশোর গ্যাং নির্মূলে কাজ করে যাচ্ছে। এছাড়া মাদকের বিরুদ্ধেও পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। গত কয়েক দিনে চাঞ্চল্যকর কয়েকটি ঘটনার পরপরই বেশ কয়েকজন কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠানো হয়েছে। পুলিশের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ, এর সঠিক তথ্য-প্রমাণ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান পুলিশের ওই কর্মকর্তা। 

শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সজীব আহমেদ বলেন, গত কয়েক দিনে বেশ কয়েকজনকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে দণ্ড দেওয়া হয়েছে। কিশোর গ্যাং নির্মূল ও মাদক নিয়ন্ত্রণে যৌথ অভিযান পরিচালনা করা হবে। তবে এটাই যথেষ্ট নয়। এগুলো নির্মূলে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি সামাজিকভাবে সচেতনতা তৈরি করা দরকার।
 

ঢাকা/বকুল 

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর অপর ধ ব হ ন র সদস য র অপর ধ র জন য উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

‎পূজাকে  ঘিরে আইনশৃঙ্খলায় বাহিনী তৎপর : ডিসি

‎নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা বলেন, আইনসৃঙ্খলা স্বাভাবিক রয়েছে, বিশেষ করে হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজাকে ঘিরে সকল ধর্মমত, সকল  সম্প্রদায় তারা একত্রিত হয়েছে।

সকলেই সার্বিক সহয়তা করছে যাতে করে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের পূজা উৎসব সুন্দর ভাবে পজলন করতে পারে। পূজাকে ঘিরে  একটি গোষ্ঠি চাইবে পূজা উৎসব নষ্ট করে দেয়ার জন্য। 

সে জন্য আমাদের তৎপরতা রয়েছে। আমাদের  গোয়েন্দা সংস্থা কাজ করছে। তার পাশাপাশি র‍্যাব, বিজিবি,  সেনাবাহিনী ও বাংলাদেশ পুলিশবাহিহনী সবাই কাজ করছে যাতে করে সুন্দর ভাবে পূজা উৎসব শেষ করতে পারি।

‎‎মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর)  শীতলক্ষ্যা নদীর তীরে ৫নং ঘাটে দূর্গা পূজার প্রতিমা বিসর্জনের স্থান পরিদর্শনকালে তিনি এ নির্দেশনা দেন।

‎দূর্গা পূজা বিজয়া দশমী শেষে প্রতিমা বিসর্জনের সময় যেকোনো অপ্রীতিকর দূর্ঘটনা এড়াতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। সুন্দর ভাবে প্রতিমা বিসর্জনের স্থান নিরাপদ রাখতে সকলের সহযোগিতা কামনা করেন জেলা প্রশাসক।

‎‎জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা বলেন, নারায়ণগঞ্জের ২২৩টি পূজা মণ্ডপে সুষ্ঠুভাবে পূজা উদযাপনে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। শান্তি ও সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে এবং সম্প্রীতি বজায় রেখে বর্তমানে পূজা উদযাপনের প্রস্তুতি চলছে।

‎‎এসময় তিনি প্রতিটি মণ্ডপে সুষ্ঠুভাবে ও নির্বিঘ্নে পূজা অনুষ্ঠান সম্পন্ন করতে প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সংশ্লিষ্ট সবাইকে যথাযথ সহযোগিতার নির্দেশনা দেন।

‎‎তিনি বলেন, সকলে মিলে সব উৎসব উদযাপন করাই বাংলার ঐতিহ্য ও গৌরব।

‎‎এসময় জেলা প্রশাসন, সেনাবাহিনী, পুলিশ, বিআইডব্লিউটিএ, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • পটিয়ায় ব্যবসায়ীকে অপহরণ, দুই ঘণ্টা পর উদ্ধার
  • ‎পূজাকে  ঘিরে আইনশৃঙ্খলায় বাহিনী তৎপর : ডিসি
  • নুরুল হকের ওপর হামলার ঘটনায় জি এম কাদেরের বিরুদ্ধে মামলার আবেদন
  • ১৭ কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ, নিরাপত্তায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দুই হাজার সদস্য
  • ফরিদপুরে অবরোধ শনিবার পর্যন্ত স্থগিত
  • আসন্ন নির্বাচনে নিরপেক্ষতা বজায় রাখার নির্দেশ ডিএমপি কমিশনারের