‘৮০ শতাংশ নারী শ্রমিক নেমে এসেছে ৫০ শতাংশে’
Published: 18th, January 2025 GMT
সেন্টার ফর কমিউনিকেশন অ্যাকশন বাংলাদেশ-সিক্যাব-এর নির্বাহী পরিচালক সৈয়দ জেইন আল-মাহমুদ বলেছেন, “বিভিন্ন সংস্থার জরিপে দেখা গেছে, নব্বইয়ের দশকে যেখানে ৮০শতাংশ পোশাক শ্রমিক নারী ছিলেন, এখন তা ৫০-৬০ শতাংশে নেমে এসেছে। বাংলাদেশে তৈরি পোশাক শিল্পের মতো অন্য কোনো খাতে এত বিপুল সংখ্যক নারীদের কাজের সুযোগ নেই। পুরুষেরা চাকরি হারালে বিকল্প কাজ পায়, কিন্তু নারীদের জন্য সেই সুযোগ সীমিত। পোশাক খাতে নারী শ্রমিক কমে গেলে অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। এটা উদ্বেগজনক।”
শনিবার (১৮ জানুয়ারি) সকালে গাজীপুরের টেকনগপাড়ায় সাগর সৈকত কনভেনশন সেন্টারে সেন্টার ফর কমিউনিকেশন অ্যাকশন বাংলাদেশ (সি-ক্যাব) আয়োজিত এক কর্মশালায় পোশাকশিল্পে নারীর ক্ষমতায়নে গণমাধ্যমের ইতিবাচক ভূমিকা এবং কীভাবে গার্মেন্টস শিল্পের নারী শ্রমিকদের জীবন-ঘনিষ্ঠ কাহিনী গণমাধ্যমে উঠে আসতে পারে, সেই বিষয়ে আলোচনা করা হয়।
এইচ অ্যান্ড এম ফাউন্ডেশনের অর্থায়নে সি-ক্যাব ও ১৪টি সহযোগী সংস্থা ‘অপরাজিতা’ প্রকল্পের মাধ্যমে নারী গার্মেন্টস কর্মীদের ক্ষমতায়নে কাজ করছে। কর্মশালায় জানানো হয়, আইএলও-২০১৯ এবং বিবিএস ২০১২ এর সার্ভে অব মেনুফ্যাকচারিং ইন্ড্রাস্ট্রিজ’র প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী নব্বইয়ের দশকে যেখানে ৮০% পোশাক শ্রমিক নারী ছিলেন, এখন তা ৫০-৬০ শতাংশে নেমে এসেছে।
সি-ক্যাবের নির্বাহী পরিচালক সৈয়দ জেইন আল-মাহমুদ বলেন, “বাংলাদেশে তৈরি পোশাক শিল্পের মতো অন্য কোনো খাতে এত বিপুল সংখ্যক নারীদের কাজের সুযোগ নেই। পুরুষেরা চাকরি হারালে বিকল্প কাজ পায় কিন্তু নারীদের জন্য সেই সুযোগ সীমিত। তাই পোশাক খাতে নারী শ্রমিক কমে গেলে সামাজিক সমস্যা ও অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।”
বক্তারা জানান, প্রতিবেদন তৈরির সময় নারীদের শুধুমাত্র ভুক্তভোগী হিসেবে না দেখে, তাদের সফলতার গল্পগুলো তুলে ধরতে হবে। কর্মশালায় দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমের সাংবাদিকরা অংশ নেন এবং পোশাকখাতে নিয়োজিত নারীদের জীবনমান উন্নয়নের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করেন।
সি-ক্যাবের সিনিয়র প্রোগ্রাম অফিসার ফারজিয়া আহমেদ ও হাসান জেমস ‘অপরাজিতা’ প্রকল্পের কার্যক্রম এবং নারী কর্মীদের ওপর পরিচালিত গবেষণার তথ্য তুলে ধরেন। কর্মশালার শেষে সি-ক্যাব নারী পোশাককর্মীদের নিয়ে গভীর বিশ্লেষণী প্রতিবেদন তৈরির জন্য ১০জন সাংবাদিককে ফেলোশিপ প্রদানের ঘোষণা দেয়। সি-ক্যাব বিভিন্ন সামাজিক সমস্যার সমাধানে গবেষণা ও যোগাযোগের মাধ্যমে সচেতনতা বাড়াতে কাজ করে যাচ্ছে।
কর্মশালায় সাংবাদিকরা মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন। পরে এ সংক্রান্ত রিপোর্টিংয়ের জন্য তাদেও কাছ থেকে পয়েন্ট সংগ্রহ করেন আয়োজক কর্তৃপক্ষ।
সি-ক্যাব ২০১৮ সাল থেকে নারী শ্রমিকসহ বিভিন্ন বিষয়ে গবেষণা ও বিশ্লেষণ ধর্মী কাজ করে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির কমিউনিকেশন অফিসার আখিউজ্জামান মেনন।
ঢাকা/রেজাউল/এস
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
‘আমরার এইতা দিবস-টিবস দিয়া কী অইব’
ঘড়ির কাঁটায় তখন দুপুর ২টা ২০ মিনিট। মাথার ওপর প্রখর রোদের উত্তাপ। প্রচণ্ড গরমে ত্রাহি অবস্থায় একটু বিশ্রাম নিতে গাছের ছায়ার খোঁজে ক্লান্ত পথিক। এমন সময় ঘর্মাক্ত শরীরে একটি ভবন নির্মাণের কাজ করতে দেখা গেল কয়েকজন শ্রমিককে। তাদের একজন তোঁতা মিয়া, অপরজন হাবিবুল।
হাবিবুল পাথর ভরেই যাচ্ছেন, তোঁতা মিয়া সেগুলো মাথায় করে একের পর এক টুড়ি ছাদ ঢালাইয়ের জন্য পৌঁছে দিচ্ছেন নির্দিষ্ট স্থানে। সেখানেও বালু-পাথরের মিশ্রণ করছেন আরও কয়েকজন। তাদের কর্মযজ্ঞের এক ফাঁকে কথা হয় তোঁতা মিয়ার সঙ্গে।
আলাপকালে তোঁতা মিয়া বলেন, ‘সারাদিন কাম (কাজ) কইরা ৫০০ ট্যাহা (টাকা) হাজিরা পাই। এইডি দিয়া কোনোমতে বউ-পুলাপান নিয়া দিন পার করতাছি। মে দিবস-টিবস কী কইতারতাম না। আমরার মতো গরিব মানুষ কাম না করলে পেডে ভাত জুটতো না এইডাই কইতারবাম।’
গতকাল বুধবার ঈশ্বরগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণকাজ করার সময় এসব কথা বলেন তোঁতা মিয়া (৪৫)। তাঁর বাড়ি ময়মনসিংহ সদর উপজেলার আকুয়া এলাকায়। এ সময় কথা হয় আরেক নির্মাণ শ্রমিক একাদুল মিয়ার সঙ্গে। একাদুলও জানেন না মে দিবস কী। তিনি বলেন, ‘এই কাম কইরা খাইয়া-না খাইয়া বউ-পুলাপান লইয়া কোনোরহমে দিন পার করতাছি। বর্তমান বাজারো জিনিসপাতির দাম বাড়লেও আমরার মজুরি বাড়ে না। পাঁচ বছর আগেও যা পাইতাম, অহনও তাই পাই।’ তিনি বলেন, ‘কয়েক ট্যাহা সঞ্চয় করবাম এই বাও (উপায়) নাই। অসুখ অইয়া চার দিন ঘরে পইড়া থাকলে না খাইয়া থাহন লাগব। আমরার এইতা দিবস-টিবস দিয়া কী অইব?’
আজ বৃহস্পতিবার মহান মে দিবস। শ্রমজীবী মানুষের অধিকার আদায়ের এই দিনটি সারাবিশ্বের শ্রমিক শ্রেণির কাছে গুরুত্বপূর্ণ। বহির্বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও দিবসটি পালিত হয় নানা আয়োজনে। কিন্তু যাদের অধিকার আদায়ের জন্য এ দিনটি পালন করা হয়– তারাই জানেন না দিবসটি সম্পর্কে। তাদের আরেকজন দিনমজুর রাজন মিয়া। রাজন জানান, এসব দিবসে তাদের মতো গরিব মানুষের কোনো লাভ-লোকসান নেই।