Samakal:
2025-06-15@21:59:46 GMT

পূর্বাচলে ভূমি জরিপ ও কিছু অকথা

Published: 18th, January 2025 GMT

পূর্বাচলে ভূমি জরিপ ও কিছু অকথা

গত ৩০ নভেম্বর পূর্বাচল উপশহরে ভূমি জরিপ শুরু হয়েছে। কেতাবি কথায়, জরিপের মাধ্যমে প্রকৃত মালিককে প্রকৃত জমির রেকর্ড বুঝিয়ে দেওয়া হয়। জমির নকশার সর্বশেষ পরির্বতন জরিপের মাধ্যমে নতুন মৌজা ম্যাপ তৈরি হয়। ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তর জমির মালিককে জমির হাল নকশা বুঝিয়ে দিয়ে দুশ্চিন্তামুক্ত করে। এসব কেতাবি কথার বাইরে অকথা হচ্ছে, জমির মালিককে বিশেষ করে অনিবাসী মালিককে নানান ঝামেলা পোহাতে হয়।

পূর্বাচল উদীয়মান উপশহর। সিকি শতাব্দীর আগে থেকে এই উপশহর গড়ে তোলার প্রস্তুতি নেওয়া হয়। ঢাকা জেলার খিলক্ষেত, নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জ ও গাজীপুর জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার মোট ১৭টি মৌজাজুড়ে এই উপশহর প্রকল্প বাস্তবায়নে ৬২২৭.

৩৬ একর জমি রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) অধিগ্রহণ করে। পরে ভূমির উপরিকাঠামোর ব্যাপক পরিবর্তন ও উন্নয়নের মাধ্যমে আগের নকশা আমূল বদলে সুবিন্যস্ত প্লট আকারে বিভাজন ও প্রতিটি সেক্টরের নতুন ম্যাপ অনুসারে বরাদ্দ দেয়।  

প্রস্তাবিত উপশহরটি ৩০টি সেক্টরে বিভক্ত। আবাসিক, বাণিজ্যিক, প্রশাসনিক, প্রাতিষ্ঠানিকসহ বিবিধ ধরন ও আকারের মোট প্লটের সংখ্যা ২৯,৭৭৬টি। এখনও সব প্লট বরাদ্দপ্রাপ্তদের কাছে হস্তান্তর হয়নি। সামান্য সংখ্যক প্লট এখনও বরাদ্দ হয়নি; সংরক্ষিত আছে। 

আমার এক বন্ধুর প্লট আছে পূর্বাচলে। ভূমি রাজস্ব দিতে যেতে হবে। বন্ধুকে সঙ্গ দিতে রূপগঞ্জ ইউনিয়ন ভূমি অফিসে আমিও গেলাম। ভূমি রাজস্ব দেওয়ার বিধান যদিও অনলাইনে, বন্ধুর অনলাইন নিবন্ধন না থাকায় ইউনিয়ন ভূমি অফিসে যাওয়াই ছিল ন্যায়ত। 

যাওয়ার পর শোনা গেল, যেহেতু জরিপ চলছে তাই এখন রাজস্ব নেওয়া বন্ধ। ভূমি রাজস্বের সঙ্গে জরিপের কোনো সম্পর্ক থাকার কথা নয়; রাজস্ব নেওয়ার যিনি মালিক তিনিই যদি না নেন, তবে আর জোর খাটে কী করে! ইউনিয়ন ভূমি অফিস থেকে অগ্রসর হলাম পূর্বাচলের ইউসুফ উচ্চ বিদ্যালয়ের পাশে জরিপ অফিসের সন্ধানে। জরিপ অফিসে গিয়ে দেখা গেল বন্ধুর সেক্টরের অনেক ক’টি রাস্তার নম্বর উল্লেখ করে জরিপের বিজ্ঞপ্তি টাঙানো থাকলেও তাঁর প্লটের রাস্তার নামগন্ধ নেই। কর্তব্যরত সহকারী সেটেলমেন্ট অফিসার বললেন ফেব্রুয়ারির ২০ তারিখের পরে খবর নিতে। পরামর্শ দিলেন, রাজউক থেকে দখল বুঝে পাওয়া প্লট মালিকদের নিজ নিজ দখলনামা নিয়ে জরিপ অফিসে হাজির হয়ে নিজের প্লটের মালিকানা দাবি করতে হবে। যদি কোনো মালিক দাবিনামা দাখিল না করেন, তবে প্লটটি রাজউকের নামে রেকর্ড হয়ে যাবে।

সমস্যাটা এখানেই। প্রায় ২৬ হাজার আবাসিক প্লটের অর্ধেকের বেশির দখল বুঝিয়ে দেওয়া হয়ে থাকলেও সে সংখ্যা কমপক্ষে ১৩ হাজার। এত সংখ্যক মানুষকে জমির কাগজপত্র নিয়ে দৌড়াতে হবে জরিপ অফিসে! অনেকে হয়তো দেশেও নেই। ২৫ বছর আগে যারা জমির জন্য আবেদন করেছিলেন, তাদের অনেকে বৃদ্ধ। অনেকেই জীবিত নেই; সন্তানরা ছোট বা বিদেশে। সে সবই বিবেচনার অযোগ্য– সবাইকে হাজির হতে হবে জরিপের জন্য সরেজমিন!

মোট ১৭টি মৌজা নিয়ে পূর্বাচল উপশহরের কোনো কোনো প্লট পড়েছে একাধিক মৌজায়। কিন্তু জরিপ দল নির্দিষ্ট মৌজার বাইরে যাবে না। ফলে কাউকে কাউকে একাধিক মৌজার জরিপের সময় হাজির হতে হবে। কোনো কোনো প্লট শুধু একাধিক মৌজায় নয়; পড়েছে দুই উপজেলায়, মানে দুই জেলায়। ৩, ৫, ৭.৫ বা ১০ কাঠা প্লটের এক অংশ গাজীপুর তো অপর অংশ নারায়ণগঞ্জ জেলায় কিংবা ঢাকা জেলায় পড়তে পারে। এই প্লটগুলোয় যাদের বাড়ি হবে, তারা কোন জেলার বাসিন্দা হবেন? ভবিষ্যতে পরিচয় সংকটে পড়তে পারেন।
জরিপের বিরোধিতা করছি না। তবে জরিপটি শতাব্দীপ্রাচীন প্রক্রিয়ার বদলে যুগোপযোগী হতে পারে। ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তরের কাছে রাজউক এক আবেদন করতে পারে– প্রকল্পের আওতাভুক্ত ১৭টি মৌজা বিলুপ্ত করে পূর্বাচল নামে স্বতন্ত্র মৌজা হোক। এ মৌজার ৩০টি সেক্টরের জন্য পৃথক ৩০টি শিট তৈরি হবে। বেশিও হতে পারে। ঢাকা শহরের জরিপের মতো ১২০ ইঞ্চি=১ মাইল হিসেবে মৌজা ম্যাপ হবে। 

পূর্বাচল মৌজা একটি নতুন ও পৃথক প্রশাসনিক ইউনিট হওয়ার প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে ঢাকা, গাজীপুর বা নারায়ণগঞ্জ জেলার অংশ হতে পারে। পূর্বাচল উপশহর সম্ভবত চারটি থানায় বিভক্ত হবে। এই বিভক্তিকরণও ভূমি জরিপের সময় হলে ভবিষ্যতে অনেক সমস্যার সমাধান সহজ হবে। আমার অভিমত, পূর্বাচল মৌজা ঢাকা জেলার অন্তর্ভুক্ত হোক। 
জমির মালিকের নামে নতুন রেকর্ড করার জন্য জরিপ অধিদপ্তর ও রাজউক একসঙ্গে কাজ করতে পারে। প্রত্যেক বরাদ্দপ্রাপকের তথ্য রাজউকের কাছে আছে। রাজউক যথেষ্ট পরিশ্রম করে প্লট ম্যাপ করেছে। সেই ম্যাপ ও তথ্য জরিপ অধিদপ্তরের কাছে দিলে জরিপ অধিদপ্তর স্বল্প আয়েশে রেকর্ড প্রণয়ন করতে পারবে।

এখানেই রয়েছে অন্য সংকট। রাজউক এবং ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তরের মধ্যে রয়েছে পারস্পরিক আস্থাহীনতা। দুই প্রতিষ্ঠানের পারস্পরিক আস্থাহীনতার কারণে রাষ্ট্রের মালিক জনসাধারণ ভোগান্তি পোহাতে পারে না। বর্তমান সরকার সহজেই অনেক বৈপ্লবিক কাজ করতে সক্ষম, যা স্বাভাবিক সময়ে সম্ভব নয়। ভূমি মন্ত্রণালয়, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় একযোগে কাজ করে পূর্বাচলে রাজউকের ম্যাপ অনুযায়ী জরিপ ম্যাপ করতে পারে। পারে রাজউকের তথ্য অনুযায়ী রেকর্ড সম্পন্ন করতে। নতুন প্রশাসনিক এলাকা গঠন করতে এবং সেই এলাকাকে ঢাকা জেলায় অন্তর্ভুক্ত করতে। 

কাজটি করার জন্য ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তর আয়োজিত জরিপের সময়ই সম্পূর্ণ আদর্শ সময়। অর্থাৎ এখনই সময়।

আ ক ম সাইফুল ইসলাম চৌধুরী: সাবেক 
অতিরিক্ত সচিব

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: র জউক র র জন য ন করত

এছাড়াও পড়ুন:

আড়াইহাজারে শীর্ষ মাদক কারবারি সন্ত্রাসী সোহেল সহযোগীসহ গ্রেপ্তার

আড়াইহাজার উপজেলার শীর্ষ মাদক কারবারি ও সন্ত্রাসী সোহেল মেম্বার ওরফে ফেন্সি সোহেল ও তার সহযোগী ফজলুল হক ওরফে ফজুকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব-১১। 

শুক্রবার (১৩ জুন) ভোরে কুমিল্লা জেলার দাউদকান্দি থানার দাউদকান্দি ব্রিজের টোল-প্লাজা এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃত সোহেল মেম্বার ওরফে ফেন্সি সোহেল (৩৮) আড়াইহাজারের বালিয়াপাড়া এলাকার মোঃ মকবুল হোসেনের পুত্র। অপরদিকে ফজলুল হক ওরফে ফজু (৩০) একই এলাকার আউয়ালের পুত্র।  

গ্রেপ্তারকৃত আসামীদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা সূকৌশলে দীর্ঘদিন যাবৎ মাদক ক্রয়-বিক্রয়সহ সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে জড়িত ছিল মর্মে স্বীকার করে। গ্রেপ্তারকৃত আসামী সোহেল মেম্বার ফেন্সি সোহেল এর বিরুদ্ধে নারয়ণগঞ্জ জেলার বিভিন্ন থানায় সন্ত্রাসী ও মাদক, অপহরণ, চুরি, হত্যা চেষ্টাসহ ১৪-১৫টি মামলা রয়েছে।

এছাড়া গ্রেপ্তারকৃত আসামি ফজলুল হক ফজু এর বিরুদ্ধে নারায়ণগঞ্জ জেলার বিভিন্ন থানায় সন্ত্রাসী, অপহরণ, ছিনতাইসহ ৪-৫টি মামলা রয়েছে। গ্রেপ্তারকৃত আসামিদ্বয়কে পরবর্তী আইনানুগ কার্যক্রমের জন্য নারায়ণগঞ্জ জেলার আড়াইহাজার থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।

শুক্রবার বিকেলে র‌্যাব-১১ এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, প্রাথমিক অনুসন্ধানে জানা যায়, নারায়ণগঞ্জ জেলার আড়াইহাজার থানার ব্রাহ্মন্দী ইউনিয়নের ৩ নং ওয়ার্ডের বালিয়াপাড়ার মকবুল হোসেনের ছেলে সোহেল মেম্বার ফেন্সি সোহেল বিগত ইউপি নির্বাচনে ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে ইউপি সদস্য নির্বাচিত হয়। নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে সে আরও বেপোরোয়া হয়ে উঠে। 

পরবর্তীতে সে অবৈধ মাদক সেবন ও ক্রয়-বিক্রয়ের সাথে জড়িয়ে পরে। পরবর্তিতে এক সময় সে এলাকায় শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিতি পায়। তখন থেকে সবাই ফেন্সি সোহেল হিসাবে ডাকে। দীর্ঘদিন ধরে মাদক বিক্রির সঙ্গে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড করে আসছে। তার পুরো পরিবার মাদকের সঙ্গে জড়িত। প্রকাশ্যে অস্ত্র নিয়ে মহড়া দেওয়ার অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

ফজলুল হক ফজু এই শীর্ষ সন্ত্রাসী-মাদক ব্যবসায়ী সোহেল মেম্বার ফেন্সি সোহেল এর একান্ত সহযোগী। তাদের ভয়ে এলাকাবাসী ভীত-সন্ত্রস্ত। যারাই তাদের এই সন্ত্রাসী কার্যক্রম ও মাদক ব্যবসার বিরোধিতা করে তাদেরকেই সোহেল ও তার সহযোগীরা নির্মমভাবে নির্যাতন করে।
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বিএনপি কি জামায়াতকে চাপে রাখার কৌশলে
  • সোনারগাঁ উপজেলা জাতীয়তাবাদী ওলামা দলের কমিটি গঠন
  • ৮নং ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক দলের উদ্যোগে জিয়াউর রহমানের শাহাদাৎ বার্ষিকী পালন
  • বগুড়ায় আসামির ছুরিকাঘাতে ২ পুলিশ আহত
  • আড়াইহাজারে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের কমিটি গঠন
  • মুক্তিপণ না পেয়ে দক্ষিণ আফ্রিকায় বাংলাদেশিকে হত্যা
  • ইসলামী আন্দোলনের বাবুরাইল ইউনিট কমিটি গঠন
  • পরিবার নিয়ে চীন ভ্রমণে নারায়ণগঞ্জ ক্লাবের সদস্যরা
  • নারায়ণগঞ্জে ফ্যাসিবাদদের পুনর্বাসনের চেষ্টা চালানো হচ্ছে : আবদুল্লাহ
  • আড়াইহাজারে শীর্ষ মাদক কারবারি সন্ত্রাসী সোহেল সহযোগীসহ গ্রেপ্তার