যান্ত্রিকতার এ দুনিয়ায় যেখানে ১০ মিনিট না হেঁটে অনেকেই যানবাহন ব্যবহার করেন; সেখানে ৩০০ কিলোমিটার পায়ে হাঁটা মামুলি কোন বিষয় নয়। হ্যাঁ, প্রবল ইচ্ছা আর মনোবলে এ কাজটি করেছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) শিক্ষার্থী শরিফুল ইসলাম শুভ।

এ যাত্রায় নিজ ক্যাম্পাস থেকে পায়ে হেঁটে ৩০০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে রবিবার (১৯ জানুয়ারি) গাজীপুরে পোঁছান তিনি।

শরিফুল ইসলামের বাড়ি গাজীপুর সদরের ভাওয়াল মির্জাপুর ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের পশ্চিম ডগরী গ্রামে। তিনি চবির ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী। পরীক্ষা শেষে অবসর সময়ে কি করা যায়, সেই ভাবনা থেকে এ সিদ্ধান্ত নেন তিনি। 

হাইকিংয়ের প্রতি তীব্র ইচ্ছা থেকে এ ভ্রমণ করলেও তরুণ প্রজন্মসহ সবাইকে নানা বার্তা দিতে চেয়েছেন শুভ। বর্তমান তরুণ প্রজন্ম খেলার মাঠ ছেড়ে বদ্ধ ঘরে যান্ত্রিকময় জীবন পার করছেন। এতে তারা বাস্তবতা উপলব্ধি করতে পারছে না। তাদের ডিভাইসের অতিরিক্ত আসক্তি থেকে বের হয়ে বাস্তব দুনিয়া উপলব্ধি করা ও শারীরিক সক্ষমতা অটুট রাখার বার্তা দেন তিনি।

তিনি গত ৯ জানুয়ারি সকাল ৮টায় চবির জিরো পয়েন্ট থেকে ৩০০ কিলোমিটার দূরে গাজীপুর অভিমুখে পায়ে হেঁটে রওনা দেন। অবশেষে টানা ১০ দিন পায়ে হেঁটে আজ রবিবার (১৯ জানুয়ারি) গাজীপুরে পৌঁছান তিনি। এ যাত্রায় তার বিভিন্ন বন্ধুবান্ধব ও পরিচিতজনদের বাসায় রাত্রিযাপন করেছেন বলে জানান তিনি।

দীর্ঘ পথ হেঁটে যাওয়ার পথে সাক্ষী হয়েছেন বিচিত্র অভিজ্ঞতার। ধারণ করেছেন বিভিন্ন জনপদের ভাষা ও সংস্কৃতিকে। ছোট্ট একটি দেশে এত বৈচিত্র্যের সমাহার দেখে অভিভূত শুভ। এভাবে ঘুরে ঘুরে সোনার বাংলাকে আরো ধারণ করতে চান তিনি।

শরিফুল ইসলাম শুভ বলেন, “প্রথমে ৩০০ কি.

মি. পায়ে হেঁটে বাসায় যাব এ রকম কোন পরিকল্পনা ছিল না। তবে পরিবেশ বা শারীরিক সক্ষমতার সঙ্গে যুক্ত কোন স্লোগানকে সামনে নিয়ে টেকনাফ থেকে তেতুলিয়া পায়ে হেঁটে যাওয়ার স্বপ্ন দেখতাম। কিন্তু এত বড় একটা ইভেন্টে সফল হব কিনা এ নিয়ে একটু চিন্তিত ছিলাম। হঠাৎ একদিন মাথায় এলো, চবি থেকে গাজীপুর আমাদের বাড়ি পর্যন্ত ৩০০ কি.মি.। এ রকম ইভেন্ট (হাইকিং) চবি থেকে গাজীপুর এখন পর্যন্ত কেউ করেনি। তখনই সিদ্ধান্ত নিলাম এ ইভেন্ট আমি করব।”

তিনি বলেন, “গত বৃহস্পতিবার (৯ জানুয়ারি) বিশ্ববিদ্যালয়ের জিরো পয়েন্ট থেকে হাঁটা শুরু করি। সামনে পরিকল্পনা রয়েছে টেকনাফ থেকে তেতুলিয়া। আসলে এভাবে কখনো হেঁটে এত পথ পাড়ি দেওয়া হয়নি। তবে বাংলাদেশে একেক অঞ্চলের একেক সংস্কৃতি, ভাষা, আচার-ব্যবহার খুবই উপভোগ করেছি। বুঝতে পেরেছি, অপার বৈচিত্র্যের কারণেই আমার দেশটি এত সুন্দর।”

শুভ বলেন, “শুধু ইচ্ছার জায়গা থেকে এ জার্নিটা করলেও তরুণ প্রজন্মকে একটি ম্যাসেজ দিতে চেয়েছি। ডিভাইসের অতিরিক্ত আসক্তি ছেড়ে তারা খোলামেলা পরিবেশে আসুক। এতে তাদের মন ও শারীরিক ফিটনেস ঠিক থাকবে। এ যাত্রায় আমি অগণিত মানুষের কাছ থেকে অকৃত্রিম ভালোবাসা ও সহযোগিতা পেয়েছি। সবার প্রতি আমি কৃতজ্ঞ।”

এদিকে তার সাহসী এ কাজের প্রশংসা করে চবির ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আইয়ুবুর রহমান তৌফিক বলেন, “শুভ আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের ছোটভাই। পরিবেশ প্রকৃতি মানুষ ও আমাদের গ্রামীণ সংস্কৃতির প্রতি টান আছে তার। পথ প্রান্তর ঘুরে কাছ থেকে মানুষ ও তাদের জীবন যাপন সে উপভোগ করে। তার ৩০০ কিলোমিটার পায়ে হেঁটে গাজীপুর যাত্রা বড় মানসিক ও শারীরিক সাহসের পরিচয়। এভাবে পায়ে হেঁটে যাত্রার মাধ্যমে মানুষের ধৈর্য, সাহস, সংযম বৃদ্ধি পায়। পাশাপাশি শারীরিক সুস্থতা ও বিচিত্র অভিজ্ঞতার সুযোগ আছে। তার এ সাহসী সিদ্ধান্ত আমাদেরও উদ্বুদ্ধ করছে।”

তার সাহসী এ কাজের প্রশংসা করে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খান বলেন, “সংবাদটি অত্যন্ত আনন্দের। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থী এতো দূর পায়ে হেঁটে পথ পাড়ি দিয়েছে, তার জন্য আমরা গর্ববোধ করছি। শুভ যে কাজটি করেছে সেটি অবাক করার মতো। আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে তাকে অভিনন্দন জানাতে চাই।”

ঢাকা/মিজান/মেহেদী

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ৩০০ ক ল ম ট র ইসল ম

এছাড়াও পড়ুন:

বেড়েছে মাছ, মুরগি ও ডিমের দাম

উৎপাদন ও বাজারে সরবরাহ কম থাকায় বেড়েছে ডিমের দাম। বিক্রেতারা বলছেন, উৎপাদন কম হওয়ায় খামারিরা মুরগি বিক্রি করে দিচ্ছেন এবং টানা বৃষ্টিপাতের জন্য সরবরাহ ব্যাহত হচ্ছে।

শুক্রবার (১ আগস্ট) রাজধানীর নিউ মার্কেট, রায়েরবাজারসহ গুরুত্বপূর্ণ বাজারগুলো ঘুরে ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত সপ্তাহে ফার্মের মুরগির ডিম বিক্রি হয়েছে প্রতি ডজন ১২০ টাকায়, এ সপ্তাহে তা বিক্রি হচ্ছে ১৩০ থেকে ১৩৫ টাকায়। সেই হিসেবে ডিমের দাম বেড়েছে ১০ থেকে ১৫ টাকা।

সবজির দাম স্বাভাবিক
এ সপ্তাহে বাজারে টমেটো ছাড়া অন্যান্য সবজির দাম স্বাভাবিক আছে। গত সপ্তাহে টমেটো বিক্রি হয়েছিল ১২০ থেকে ১৩০ টাকায়, এ সপ্তাহে বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকায়। কাঁচামরিচ ২০০ টাকা, শশা ৭০ টাকা, বেগুন ৭০ থেকে ৮০ টাকা, করলা ৭০ টাকা, গাজর (দেশি) ১২০ থেকে ১৩০ টাকা, চিচিঙ্গা ৪০ টাকা, বরবটি ৭০ থেকে ৮০ টাকা, ঢেঁড়স ৪০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৩০ টাকা, পটল ৫০ টাকা, কাকরোল ৬০ টাকা, কচুরমুখী ৬০ টাকা, প্রতিটি পিস জালি কুমড়া ৫০ টাকা এবং লাউ ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

মুদিবাজারে চালসহ অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম স্থিতিশীল আছে। তবে, পেঁয়াজের দাম সামান্য বেড়েছে। এ সপ্তাহে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা কেজি দরে। গত সপ্তাহে ৫৫ টাকায় কেজিতে বিক্রি হয়েছে। প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ২৫ থেকে ৩০ টাকায়। রসুন ১৮০ থেকে ২০০ টাকা এবং দেশি আদা ১৭০ থেকে ১৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

বেড়েছে মাছ ও মুরগির দাম
বিক্রেতারা বলছেন, নদীতে পানি বৃদ্ধির জন্য জেলেদের জালে মাছ কম ধরা পড়ছে এবং উজানের পানিতে খামারিদের পুকুর ও ঘের তলিয়ে যাওয়ায় মাছের দাম বেড়েছে। বাজারে এখন মাঝারি সাইজের চাষের রুই মাছ বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে থেকে ৩৫০ টাকায়। চাষের পাঙাসের কেজি ২০০ থেকে ২২০ টাকা, তেলাপিয়া ২০০ থেকে ২২০ টাকা, মাঝারি সাইজ কৈ মাছ ২৫০ থেকে ২৮০ টাকা, দেশি শিং ৬৫০ থেকে ৭০০ টাকা, বড় সাইজের পাবদা ৬০০ টাকা, চিংড়ি ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা, দেশি পাঁচমিশালি ছোট মাছ ৬০০ টাকা এবং এক কেজির বেশি ওজনের ইলিশ মাছ বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৫০০ থেকে ২ হাজার ৬০০ টাকায়।

এ সপ্তাহে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে  ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা, যা গত সপ্তাহ ছিল ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা। সোনালি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকায়। গরুর মাংস ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকা এবং খাসির মাংস ১ হাজার ১৫০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

ঢাকা/রায়হান/রফিক 

সম্পর্কিত নিবন্ধ