ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে যেসব ছবি পুরস্কার পেল
Published: 19th, January 2025 GMT
ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের ২৩তম আসরের পর্দা নামল রোববার। ১০ টি ভিন্ন ভিন্ন বিভাগে ৭৫ টি দেশের ২০৩ টি চলচ্চিত্র নিয়ে ঢাকার ৫ টি ভেন্যুতে ৯ দিন ব্যাপী আয়োজিত এই উৎসবে সরাসরি অংশগ্রহণ করেন ৪৪ জন বিদেশি প্রতিনিধি। চীন ও বাংলাদেশের ৫০ বছরের কূটনৈতিক সম্পর্কের উদযাপন লক্ষ্যে এবার উৎসবের ওয়াইড অ্যাঙ্গেল সেকশনটি চীনা চলচ্চিত্রের জন্য উৎসর্গ করা হয়।
উৎসবে অংশ নেওয়াচিলড্রেন ফিল্ম সেকশনের বাদল রহমান অ্যাওয়ার্ড পেয়েছে মাইকেল লুকাচেভস্কি পরিচালিত রাশিয়ান সিনেমা ‘কিতালিকতাখ কির্দালিম্’।স্পেশাল অডিয়্যান্স অ্যাওয়ার্ড পেয়েছে জোসেলিটো আলতারেজোস পারিচালিত ফিলিপাইনস সিনেমা ‘গার্ডিয়া ডি অনার’। বেস্ট অডিয়্যান্স অ্যাওয়ার্ড পেয়েছে সৃজিত মুখার্জী পরিচালিত ভারতীয় সিনেমা ‘পদাতিক’।
উইম্যান ফিল্মমেকার সেকশনে স্পেশাল মেনশন অ্যাওয়ার্ড যৌথভাবে পেয়েছে ক্লাভদিয়া কোরশুনোভা পরিচালিত ‘মলডোভা’ এবং রাশিয়ার যৌথ প্রযোজনার সিনেমা ‘তাকোই ইমেনো ডেন’। একই সেকশনের বেস্ট শর্ট ফিল্ম অ্যাওয়ার্ড পেয়েছে মারিয়া বোবেভা নির্মিত বুলগেরিয়ার সিনেমা ‘স্কারলেট’। বেস্ট ফিচার ফিল্ম অ্যাওয়ার্ড প্রাপ্ত সিনেমাটি হচ্ছে সারাহ মালেগোল পরিচালিত ফ্রান্সের সিনেমা ‘কুমভা হুইচ কাম ফ্রম সাইনলেন্স’।
বেস্ট ডিরেক্টর অ্যাওয়ার্ড প্রাপ্ত সিনেমাটি হচ্ছে আগুস্টিনা সানচেজ গ্যাভিয়ে পরিচালিত আর্জেন্টিনা ও জার্মানীর যৌথ প্রযোজিত ‘নুয়েস্ট্রা সোমব্রা’। স্পিরিচুয়াল ফিল্ম সেকশনের বেস্ট শর্ট ফিল্ম লুইস ক্যাম্পোস পরিচালিত পর্তুগিজ সিনেমা ‘মন্টে ক্লেরিগো’। উক্ত বিভাগের স্পেশাল মেনশন অ্যাওয়ার্ডটি পেয়েছে অভিলাষ শর্মা পরিচালিত ‘স্বাহা’ এবং বেস্ট ফিচার ফিল্ম অ্যাওয়ার্ডটি জিতে নেয় ইভান সোসনের রাশিয়ান সিনেমা ‘প্রিশেলেক (দ্য এলিয়েন)।’
বাংলাদেশ প্যানোরামার ট্যালেন্ট সেকশনে ৩ টি সিনেমা পুরষ্কৃত হয়। এরমধ্যে সেকেন্ড রানার আপ হয়েছে মোবারক হোসেন পরিচালিত ‘পৈত্রিক ভিটা’, ফার্স্ট রানার আপ সিনেমাটি হচ্ছে আসিফ উদ্দিন পরিচালিত ‘ফুলেরা পোসাক পরে না’। বেস্ট শর্ট ফিল্ম অ্যাওয়ার্ডটি পায় চলচ্চিত্র পরিচালক মনন মুন্তাকা নির্মিত‘অ্যা লেজি মুন’।
বেস্ট ফুল লেন্থ সিনেমা অ্যাওয়ার্ড পেয়েছে শঙ্খ দাসগুপ্ত পরিচালিত ‘প্রিয় মালতী’।
এশিয়ান ফিল্ম কমপিটিশন সসের ব্যাস্ট স্ক্রিপ্টরাইটার অ্যাটওয়ার্ডটি পায় টাকাতো নিশি এবং নরিকো ইউয়াসার সিনেমা ‘পারফমিং কাউরুর ফিউরেনা’। এছাড়াও ‘পান মেন কিয়ান বাও দি’ সিনেমার জন্য হাওফেং জু এবং জুনফেং জু বেস্ট ডিরেক্টর অ্যাওয়ার্ড পায়।
সমাপনী অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ছিলেন সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। সমাপনী অনুষ্ঠানের সভাপতিত্বে ছিলেন বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের চেয়ারম্যান জালাল আহমেদ। এদিন সমাপনী সিনেমা হিসেবে প্রদর্শিত হয় ইকবাল এইচ চৌধুরী পরিচালিত সিনেমা ‘বলী’।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: চলচ চ ত র পর চ ল ত স কশন
এছাড়াও পড়ুন:
তুলশীগঙ্গার তীরে সন্ন্যাসতলীর শতবর্ষী ঘুড়ির মেলা
জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলার মামুদপুর ইউনিয়নের মহব্বতপুর গ্রাম ঘেঁষে তুলশীগঙ্গা নদীর অদূরে সন্ন্যাসতলীর বটতলা। জায়গাটিতে প্রায় একশ বছর আগে থেকে বাংলা জ্যৈষ্ঠ মাসের শেষ শুক্রবার আয়োজন হয় ঘুড়ির মেলা। এবারও এর ব্যতিক্রম হয়নি। অন্তত ৫০ গ্রামের হাজারো মানুষের উপস্থিতিতে শুক্রবার সন্ন্যাসতলী ঘুড়ি উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে।
মেলার দিনক্ষণ মনে রেখে সময়মতো দোকানিদের পাশাপাশি দর্শনার্থীরা ভিড় জমান নিভৃত পল্লীতে। আগে মেলার দিন বৃষ্টি হওয়া যেন নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছিল। কিন্তু এবার ব্যতিক্রম ঘটনা ঘটেছে। প্রচণ্ড গরম ও তাপপ্রবাহের মধ্যেই চলে এ আয়োজন। বৈরী পরিবেশের কারণে উৎসবের স্বাভাবিক কর্মকাণ্ডে কিছুটা ব্যাঘাত ঘটেছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
স্থানীয় প্রবীণ বাসিন্দারা বলছেন, সন্ন্যাসতলীর এ ঘুড়ি উৎসব শুরুর দিন বিকেলে বটতলায় স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায় সন্ন্যাস পূজা পালন করেন। তাদের এ পূজা-অর্চনা ঘিরেই মূলত এ মেলার উৎপত্তি। তবে শুরুর কথা কেউ বলতে পারেননি। প্রবীণরা শুধু জানেন, একশ বছরের বেশি সময় ধরে তারা এ মেলার আয়োজন দেখে আসছেন।
মেলার নিজস্ব জায়গা না থাকলেও এর ব্যাপ্তি প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকাজুড়ে। প্রচণ্ড গরমের মধ্যেই এক দিনের এ মেলা ঘিরেই জেলার জামালগঞ্জ চারমাথা থেকে ঐতিহাসিক আছরাঙ্গাদীঘি পর্যন্ত রকমারি পণ্যের দোকান বসে। এখান থেকে সংসারের প্রয়োজনীয় বিভিন্ন আসবাব থেকে শুরু করে ছোট মাছ ধরার বাঁশের তৈরি পণ্য খলসানি, টোপা, ডালা, চালুন কিনে নেন অনেকে।
সুতার তৈরি তৌরা জাল, গৃহস্থালি কাজে ব্যবহৃত দ্রব্যাদি, বিভিন্ন ধরনের খেলনা, মিষ্টান্ন, প্রসাধনী, মাটির তৈজসপত্রসহ বিভিন্ন সামগ্রী বিক্রি হয়। শিশুদের বিনোদনের জন্য ছিল নাগরদোলার ব্যবস্থাও। আর মেলার বড় আকর্ষণ ঘুড়ি ওড়ানো ও বিক্রি। পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন জেলা থেকে ব্যবসায়ীরা এসেছিলেন ঘুড়ি বিক্রি করতে।
প্রচণ্ড গরমের পাশাপাশি তেমন হাওয়া-বাতাস না থাকায় এবার ঘুড়ি ওড়ানোর প্রতিযোগিতা সেভাবে জমে ওঠেনি। তবে ঘুড়ি বেচাকেনা ও শিশু-কিশোরদের উচ্ছ্বাস ছিল চোখে পড়ার মতো। এ উপলক্ষে আসা হাজার হাজার দর্শনার্থীর নিরাপত্তার জন্য মেলায় সার্বক্ষণিক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের টহল ছিল।
আদমদীঘির শিববাটি গ্রামের ঘুড়ি ব্যবসায়ী সালাম হোসেনের ভাষ্য, সন্ন্যাসতলীর মেলা বড় হওয়ায় তিনি এসেছেন ঘুড়ি বিক্রির জন্য। মেলায় প্রত্যাশা অনুযায়ী ঘুড়ি বিক্রি করতে পেরে তিনি খুশি। জয়পুরহাটের পার্বতীপুর এলাকার ঘুড়ি ব্যবসায়ী মফিজ উদ্দিন ও মজনু সরদার বলেন, পূর্বপুরুষের আমল থেকে এ মেলার কথা শুনে আসছেন তারা।
মেলা উদযাপন ও পূজা কমিটির সদস্য মহব্বতপুর গ্রামের মন্টু মণ্ডল বলেন, মেলাটি হিন্দু সম্প্রদায়ের হলেও এটি আসলে সব ধর্মালম্বীর মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে।
মামুদপুর ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান মিলন হোসেনের ভাষ্য, এক দিনের আয়োজনে যে এত লোকের সমাগম হতে পারে, তা চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন। মেলায় যেন অনৈতিক কর্মকাণ্ড না হয়, সে ব্যাপারে ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
ক্ষেতলাল থানার ওসি মোহাম্মদ ফরিদ হোসেন বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে এবং মেলায় আসা দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশ প্রশাসন সতর্ক আছে। মেলায় অনৈতিক আচরণ লক্ষ্য করা গেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।