মুক্তিপণ দেওয়ার পর নদে ভেসে উঠল স্কুলছাত্রের ‘লাশ’
Published: 19th, January 2025 GMT
নরসিংদীর বেলাবতে নিখোঁজের ৫ দিন পর আড়িয়াল খাঁ নদে ভেসে উঠেছে স্কুলছাত্র অনয় চন্দ্র মোদক (১৩) এর মরদেহ। আজ রোববার বেলাব উপজেলার দীঘলদীকান্দা এলাকার আড়িয়াল খাঁ নদে তার ভেসে উঠে।
এদিকে আড়িয়াল খাঁ নদে ভাসমান লাশটি নিখোঁজ স্কুলছাত্র অনয়ের বলে তার পরিবার দাবি করলেও পুলিশ বলছে, লাশটি কার তা ডিএনএ টেস্টের পরই নিশ্চিত হওয়া যাবে। লাশ ফুলে বিকৃত হয়ে যাওয়ায় চেনা যাচ্ছে না।
অনয় উপজেলার বেলাব মাটিয়াল পাড়া গ্রামের গৌরাঙ্গ চন্দ্র মোদকের ছেলে। সে বেলাব পাইলট সরকারি মর্ডান উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র। নিখোঁজের পর অজ্ঞাত নাম্বার থেকে তাকে অপহরণ করা হয়েছে দাবি করে, এক লাখ টাকা মুক্তিপণ চাওয়া হয়। তাদের কথামত মুক্তিপণ হিসাবে টাকা দেওয়া হয়।
জানা যায়, ১৪ জানুয়ারি সন্ধ্যায় অনয় চন্দ্র মোদক বাড়ি থেকে শিক্ষা উপকরণ কিনতে বেলাব বাজারে যায়। সেখান থেকে সে নিখোঁজ হয়। তার পরিবার বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুঁজি করে কোনো সন্ধান পায়নি। এ ঘটনায় ওই দিন রাতেই বেলাব থানায় সাধারণ ডায়রি করে তার পরিবার, যা পরবর্তীতে মামলায় রূপান্তর হয়।
এদিকে নিখোঁজের পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লেখালেখি হয়। পরে অপরিচিত নাম্বার থেকে অনয়ের পরিবারের নাম্বারে ফোন করে এক লাখ টাকা মুক্তিপণ চাওয়া হয়। তাদের কথামত বিকাশের মাধ্যমে দেওয়া হয় মুক্তিপণের টাকা।
এদিকে অপহরণকারীদের মোবাইল নাম্বার ট্র্যাকিং শুরু করে বেলাব থানা-পুলিশ। এতে টাকা পাঠানো বিকাশ নাম্বারটি বরিশালের ভোলায় বলে জানতে পারে। অয়নকে উদ্ধারে বেলাব থানা-পুলিশের একটি দল বর্তমানে বরিশালের ভোলায় অবস্থান করছে বলে জানা গেছে।
এরই মধ্যে আজ রোববার বিকেলে বেলাব উপজেলার বিন্নাবাইদ ইউনিয়নের দীঘলদিকান্দি এলাকায় আড়িয়াল নদে একটি ভাসমান লাশ দেখতে পেয়ে পুলিশে খবর দেন স্থানীয়রা। ঘটনাস্থল পুলিশ, পিবিআই, সিআইডি, ডিবির সদস্যরা পরিদর্শন করেছেন।
অনয়ের পরিবারের দাবি এটি হত্যাকাণ্ড। তারা অনয় হত্যার সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন।
নিখোঁজ অনয়ের চাচাতো ভাই পলাশ মোদক বলেন, অনয় নিখোঁজ হওয়ার পরে আমরা বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুঁজি করে তার সন্ধান না পেয়ে থানায় সাধারণ ডায়রি করি। লাখ টাক মুক্তিপণ দিয়েও অনয়কে জীবিত পেলাম না। তারা অনয়কে হত্যা করেছে।
বেলাব থানার ওসি মীর মাহবুবুর রহমান বলেন, নদীতে ভাসমান মরদেহের খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে যাই। নিখোঁজের স্বজনরা ধারণা করছেন এটি অনয়ের মরদেহ। সুরতহাল ও ডিএনএ পরীক্ষার শেষে জানা যাবে এটি তার মরদেহ কি না।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: নরস দ র পর ব র মরদ হ
এছাড়াও পড়ুন:
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় রাতে ‘টর্চলাইট জ্বালিয়ে’ দুই পক্ষের সংঘর্ষ, ইউএনও-ওসিসহ আহত ৩০
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলে পূর্ববিরোধের জের ধরে দুটি গ্রামবাসীর সংঘর্ষে ইউএনও, ওসিসহ ৩০ জন আহত হয়েছেন। গতকাল বুধবার রাত ৮টা থেকে সাড়ে ১০টা পর্যন্ত উপজেলার সদর ইউনিয়নের চানমনিপাড়া ও মোঘলটুলা গ্রামের বাসিন্দাদের মধ্যে এই সংঘর্ষ হয়। এ সময় বসতবাড়ি ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে।
সংঘর্ষ থামাতে গিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোশাররফ হোসাইন ও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রফিকুল হাসান আহত হন। এ ঘটনায় পুলিশ তিনজনকে আটক করেছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, কয়েক মাস আগে মুঠোফোনের চার্জার কেনাবেচা নিয়ে চানমনিপাড়া ও মোঘলটুলা গ্রামের লোকজনের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এর জের ধরে দুই পক্ষের মধ্যে চাপা উত্তেজনা ছিল। গতকাল সন্ধ্যায় চানমনিপাড়া গ্রামের প্রয়াত হেলাল মিয়ার স্ত্রী হালিমা বেগম (৪২) ও তাঁর ছেলে সাইফুল ইসলাম (২০) গ্রামের অদূরে একটি চালকলে চাল ভাঙাতে যান। সেখানে সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে মোঘলটুলা গ্রামের তৌহিদ মিয়া (২০) হালিমা বেগমকে কটূক্তি করেন। এর প্রতিবাদ করেন তাঁর ছেলে সাইফুল ইসলাম। এ নিয়ে সাইফুল ও তৌহিদের মধ্যে হাতাহাতি হয়।
এর জের ধরে গতকাল রাত আটটার দিকে উভয় পক্ষের লোকজন দা, বল্লম, লাঠিসোঁটা ও ইটপাটকেল নিয়ে দুই গ্রামের মাঝখানের সড়কে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। এ সময় অন্ধকারে অনেকের হাতে ছিল টর্চলাইট।
খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসেন ইউএনও মোশাররফ হোসাইন, ওসি রফিকুল হাসানসহ পুলিশের একটি দল। রাত সাড়ে ৯টার দিকে ইউএনও এবং রাত ১০টার দিকে ওসি ইটের আঘাতে আহত হন। ইউএনও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিয়েছেন। তিনি ডান হাঁটুর নিচে আঘাত পেয়েছেন। গুরুতর আহত হয়েছেন ওসি রফিকুল হাসান। তাঁর ডান চোখের ওপরে অস্ত্রোপচার করতে হয়েছে। তাঁকে জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সহকারী পুলিশ সুপার (সরাইল সার্কেল) তপন সরকার প্রথম আলোকে বলেন, সরাইল থানার ওসি রফিকুল হাসান ঘটনাস্থলে গুরুতর আঘাত পেয়েছেন। তাঁকে জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। সংঘর্ষের ঘটনার সঙ্গে জড়িত তিনজনকে আটক করা হয়েছে। অভিযান অব্যাহত আছে।
ইউএনও মোশাররফ হোসাইন প্রথম আলোকে বলেন, ‘কয়েক দিন আগে সরাইলে সংঘর্ষে একজন প্রাণ হারিয়েছেন। এ ঘটনা আমি মেনে নিতে পারিনি। সংঘর্ষের ঘটনা শুনে না গিয়ে পারলাম না। কথায় কথায় সংঘর্ষের সংস্কৃতি থেকে সবাইকে বেরিয়ে আসতে হবে।’