সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ব্রিটিশ ব্যারিস্টারের কাছে গিয়েছিল হাসিনা সরকার
Published: 19th, January 2025 GMT
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরায় ‘অল দ্য প্রাইম মিনিস্টারস ম্যান’ নামের আলোচিত প্রামাণ্যচিত্রটি সম্প্রচারের পর সংবাদিকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে যুক্তরাজ্যের খ্যাতনামা একজন ব্যারিস্টারের কাছে গিয়েছিল বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার। ওই ব্যারিস্টারের নাম ডেসমন্ড ব্রাউনি কে সি। সম্প্রতি গণভবন থেকে যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য সানডে টাইমসের উদ্ধার করা একটি নথিতে এই যোগাযোগের তথ্য বেরিয়ে এসেছে বলে রবিবার জানিয়েছে সংবাদমাধ্যমটি।
নথির তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে ডেসমন্ড ব্রাউনির সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন লন্ডনে অবস্থিত বাংলাদেশ হাইকমিশনের কর্মকর্তারা। তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে রাজিও হয়েছিলেন ব্রাউনি। এরপর তিনি হাইকমিশনের কর্মকর্তাদের একজন আইনজীবীর সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন। পরের কয়েক মাস ধরে তারা দুজন শেখ হাসিনা সরকারকে নানা পরামর্শ দেন।
আল-জাজিরার ‘অল দ্য প্রাইম মিনিস্টারর্স ম্যান’ নামের ওই প্রামাণ্যচিত্রে বাংলাদেশের সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদের ভাইকে বলতে শোনা যায়, বিরোধীদের অপহরণ করতে এবং বিপুল অঙ্কের ঘুষ নিতে তিনি পুলিশ ও আধা সামরিক বাহিনীকে ব্যবহার করতে পারেন। প্রামাণ্যচিত্রে শেখ হাসিনা সরকারের দুর্নীতির বিভিন্ন তথ্যপ্রমাণ তুলে ধরা হয়েছিল। তবে ওই প্রামাণ্যচিত্রটি ‘মিথ্যা’ ও ‘রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ বলে দাবি করেছিল বাংলাদেশ সরকার।
গণভবনে পাওয়া নথি অনুযায়ী, ২০২১ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি লন্ডনে বাংলাদেশ হাইকমিশনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠক করেছিলেন ব্যারিস্টার ডেসমন্ড ব্রাউনি। বৈঠকে তার কথায় মনে হয়েছে, ভবিষ্যতে আল-জাজিরার বিরুদ্ধে তাদের হয়ে (হাইকমিশনের কর্মকর্তাদের পক্ষে) মামলা লড়তে তিনি প্রস্তুত ছিলেন। কিন্তু হাইকমিশনের কর্মকর্তাদের আগে একজন আইনজীবীর সঙ্গে যোগাযোগ করা দরকার, যিনি তাকে (ব্যারিস্টার ব্রাউনি) পরামর্শ দেবেন। এরপর ব্রাউনির পরামর্শে লন্ডনের আইনি সহায়তা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান পেনিংটন মানচেস কুপারের বিশেষজ্ঞ জেরেমি ক্লার্ক–উইলিয়ামসের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল শেখ হাসিনা সরকার। কিছুদিন পরে তিনিও বাংলাদেশ সরকারের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন।
২০২১ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৬টায় অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে শেখ হাসিনার প্রতিনিধিরা ক্লার্ক–উইলিয়ামসকে বলেছিলেন, আল-জাজিরার প্রামাণ্যচিত্রে ‘সারবত্তা তেমন কিছু না থাকলেও’ তা শেখ হাসিনার সুনাম ‘ব্যাপকভাবে ক্ষুণ্ন’ করেছে। বাংলাদেশ সরকার বা সেনাবাহিনীর মতো কোনো প্রতিষ্ঠান বা সেনাপ্রধানের মতো কোনো ব্যক্তি এই প্রামাণ্যচিত্র নিয়ে আদালতে মানহানির মামলা করবে কি না, সে বিষয়ে পরামর্শ নেওয়ার জন্য ঢাকা থেকে তাঁদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কোনো কর্মকর্তা যদি মনে করেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর মানহানি হয়েছে, তাহলে তার মতো তৃতীয় কোনো পক্ষ মানহানির মামলা করবে কি না। সে বিষয়েও পরামর্শ নিতে বলা হয়েছিল লন্ডন হাইকমিশনের কর্মকর্তাদের।
নথির তথ্য অনুযায়ী, আল-জাজিরার ওই প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণে কাজ করা ব্রিটিশ সাংবাদিক ডেভিড বার্গম্যানকে গ্রেপ্তারের পরিকল্পনাও করেছিল শেখ হাসিনা সরকার। ক্লার্ক-উইলিয়ামসকে বাংলাদেশের কর্মকর্তারা জানিয়েছিলেন, তারা বার্গম্যানের বিরুদ্ধেও মামলা করার জন্য প্রস্তুত। ওই কর্মকর্তাদের ভাষ্য অনুযায়ী, ‘রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ প্রামাণ্যচিত্রটি নির্মাণের পেছনে ছিলেন ডেভিড বার্গম্যন। তাকে বাংলাদেশে গ্রেপ্তার করা হবে।
বাংলাদেশ সরকার শেষ পর্যন্ত যুক্তরাজ্যের আদালতে মামলা না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। এর পরিবর্তে তারা নিজেদের প্ল্যাটফর্ম থেকে আল-জাজিরার প্রামাণ্যচিত্রটি সরিয়ে নেওয়ার জন্য ফেসবুক ও ইউটিউবকে চাপ দেওয়ার প্রচেষ্টা শুরু করেছিল। এ নিয়ে বাংলাদেশের হাইকোর্টের রায়ের পরও প্রামাণ্যচিত্রটি সরিয়ে ফেলার বিষয়টি নাকচ করে দেয় দুই প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান।
ঢাকা/শাহেদ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ল দ শ সরক র আল জ জ র র কর ছ ল
এছাড়াও পড়ুন:
কালিয়াকৈরে বিএনপির দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি ধাওয়ায় আটক ২ নেতা, পরে ছাড়া পেলেন একজন
গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি বাতিলের দাবিকে কেন্দ্র করে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া, বিক্ষোভ ও হামলার ঘটনায় বিএনপির দুই নেতাকে আটক করেছে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। গতকাল রোববার রাতে তাঁদের নিজ নিজ বাসা থেকে আটক করা হয়।
তবে আজ সোমবার সকাল আটটার দিকে উপজেলার সাবেক সভাপতি ও বর্তমান আহ্বায়ক কমিটির সদস্য হেলাল উদ্দিনকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। তাঁকে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। আটক অপরজন হলেন উপজেলার সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও নতুন আহ্বায়ক কমিটির সদস্য পারভেজ আহমেদ।
এ বিষয়ে গাজীপুর গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক (এসআই) ফারুক বলেন, ওই দুজনের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ থাকায় আটক করা হয়েছে। হেলাল উদ্দিনকে ছেড়ে দেওয়া হলেও পারভেজ আহমেদ এখনো পুলিশের হেফাজতে রয়েছেন।
স্থানীয় বিএনপির নেতা-কর্মীরা জানান, গাজীপুর জেলা বিএনপি সম্প্রতি কালিয়াকৈর উপজেলা, পৌরসভা ও জেলার আটটি ইউনিটের কমিটি বাতিল করে। এরপর তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে জেলা আহ্বায়ক কমিটি। গত শনিবার সন্ধ্যায় কালিয়াকৈর উপজেলা ও পৌর বিএনপির নতুন আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়। উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক করা হয় মৌচাক ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান নূরুল ইসলাম সিকদারকে এবং সদস্যসচিব করা হয় এম আনোয়ার হোসেনকে। পৌর বিএনপির আহ্বায়ক করা হয় মামুদ সরকারকে এবং সদস্যসচিব করা হয় মহসিন উজ্জামানকে। দুই কমিটিতে মোট ৪১ জন সদস্য রয়েছেন।
পৌর বিএনপির কমিটি নিয়ে আপত্তি না থাকলেও উপজেলা কমিটি নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন সাবেক সাধারণ সম্পাদক পারভেজ আহমেদ ও তাঁর সমর্থকেরা। তাঁরা শনিবার রাতেই বিক্ষোভ মিছিল করেন। গতকাল রোববার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে পারভেজ আহমেদের পক্ষে বিপুলসংখ্যক নেতা-কর্মী নতুন কমিটি বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ করেন। একই সময় নতুন কমিটির পক্ষ থেকেও একটি মিছিল বের হয়।
এ সময় উভয় পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। ইটপাটকেল নিক্ষেপে উভয় পক্ষের অন্তত ১৫ জন আহত হন। তাঁরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নেন। খবর পেয়ে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেন। দুপুর ১২টার দিকে পরিস্থিতি শান্ত হয়।
আরও পড়ুনকালিয়াকৈরে বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ, পাল্টাপাল্টি ধাওয়া২১ ঘণ্টা আগেপরে গতকাল রাতে কালিয়াকৈর থানা ও গাজীপুর গোয়েন্দা পুলিশের যৌথ অভিযানে সাহেববাজার এলাকা থেকে হেলাল উদ্দিন এবং হিজলতলী এলাকা থেকে পারভেজ আহমেদকে আটক করা হয়।
কালিয়াকৈর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল মান্নান বলেন, ‘আটকের বিষয়ে আমি এখনো কিছু জানি না। সম্ভবত রাতে একটি অভিযোগ হয়েছে। বিস্তারিত অভিযোগ দেখে বলা যাবে।’
গোয়েন্দা কার্যালয় থেকে ছাড়া পেয়ে হেলাল উদ্দিন বলেন, কালিয়াকৈর বিএনপির মধ্যে কিছু খারাপ লোক রয়েছে, যারা বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক রেখেছিল। তাঁরা এখন তিন বছর ধরে রাজনীতিতে আসা এক নেতার আশ্রয় নিয়েছেন। এতে এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।