স্বৈরাচারের দেওয়া বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় নাম প্রত্যাহার দাবি
Published: 19th, January 2025 GMT
ফ্যাসিস্ট সরকারের দেওয়া রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) নাম বাদ দিয়ে প্রতিষ্ঠাকালীন নাম ‘রংপুর বিশ্ববিদ্যালয়’ পুনর্বহালসহ তিন দফা দাবিতে মানববন্ধন করেছেন শিক্ষার্থীরা।
রবিবার (১৯ জানুয়ারি) বিকেল ৪টায় বেরোবির প্রধান ফটকের সামনে এ মানববন্ধন করেন তারা।
এ সময় শিক্ষার্থীরা ‘পরিবর্তন নয়, পুনর্বহাল চাই’, ‘প্রতিষ্ঠাকালীন নাম ফেরত দিতে হবে, দিতেই হবে’, ‘শতভাগ আবাসন, দিতে হবে দিতেই হবে’, ‘শিক্ষার্থীদের গণরায়, মানতে হবে মানতে হবে’ ইত্যাদি স্লোগান দেন।
বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক শামসুর রহমান সুমন বলেন, “২০০৮ সালের রংপুর বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশ জারি হয়। রংপুরের মানুষের বহু আন্দোলনের ফসল হচ্ছে এ বিশ্ববিদ্যালয়। সেটা ২০০৯ সালে ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকার নাম পরিবর্তন করে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় ঘোষণা করেন। এ নাম পরিবর্তনের মাধ্যমে ফ্যাসিস্ট সরকার রংপুরের মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করেছে, তাদের দাবির সঙ্গে প্রতারণা করেছে।”
তিনি বলেন, “এখন আমরা নাম পরিবর্তন চাই না, আমরা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম পুনর্বহাল চাচ্ছি । আমরা প্রতিষ্ঠাকালীন নাম ফেরত চাই। বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় ২৪ এর আন্দোলনের আতুর ঘর। আমরা এ বিশ্ববিদ্যালয়ে ফ্যাসিস্ট সরকারের কোন চিহ্ন রাখতে দেব না। অনতিবিলম্বে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাকালীন নাম ফেরত দিতে হবে।”
সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী রাকিব মিয়া বলেন, “২০০৮ সালে ১২ অক্টোবর রংপুর বিশ্ববিদ্যালয় নামে এর যাত্রা শুরু হয় এবং ২০১১ সালের দিকে নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর। আমরা এ বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম পুনর্বহাল চাচ্ছি কারণ, এর প্রতিষ্ঠাকালীন নাম ছিল রংপুর বিশ্ববিদ্যালয়। বিভাগীয় শহরের একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম ব্যক্তির নামে কিভাবে হয়, এটাই আমাদের প্রশ্ন?”
তিনি বলেন, “রংপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন করে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় হলে সেটা পরিবর্তন করতে সমস্যা কোথায়? যখন আমরা চাকরির ফর্ম তুলতে যাই, সেখানে দেখতে পাই বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম নেই; আছে রংপুর বিশ্ববিদ্যালয়। সে সঙ্গে আমরা আশেপাশের কাউকে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হিসেবে পরিচয় দিতেই পারি না। কারণ তারা বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় চেনে না।”
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক রহমত আলী বলেন, “গতকাল (শনিবার) রাতেই বেরোবির প্রায় ৮৫ শতাংশ শিক্ষার্থী ফেসবুকে তাদের মতামত দিয়েছেন। ফ্যাসিবাদের চিহ্ন, ফ্যাসিস্টদের দেওয়া নাম তারা মানবেন না। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাকালীন যে নাম, উত্তরবঙ্গের মানুষের গণপ্রতিনিধিত্বকারী সেই রংপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের নামকে তারা পুনর্বহাল চান।”
তিনি বলেন, “শিক্ষার্থীরা তাদের আবাসন সংকট থেকে মুক্তি চান। এ বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি পূর্ণাঙ্গ আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর করতে হবে এবং শিক্ষার্থীদের প্রতিষ্ঠাকালীন নাম ফেরতের গণ রায় অনতিবিলম্বে কার্যকর করতে হবে। শিক্ষার্থীদের দেওয়া তিন দফা নিরাপত্তা নিয়ে যদি কোন ধরনের তালবাহানা করা হয়, তাহলে শিক্ষার্থীরা দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলবে।
তাদের তিন দফা দাবিগুলো হলো- বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) নাম বাদ দিয়ে প্রতিষ্ঠাকালীন নাম ‘রংপুর বিশ্ববিদ্যালয়’ পুনর্বহাল করতে হবে, পূর্ণাঙ্গ আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর করতে হবে এবং পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
ঢাকা/সিয়াম/মেহেদী
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
শিবচরে তরুণকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় মামলা, বিচারের দাবিতে মানববন্ধন
মাদারীপুরের শিবচরে জামিনে থাকা আসামি রাকিব মাদবরকে (২৫) প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় মামলা হয়েছে। এতে ২২ জনকে এজাহারভুক্ত ও অজ্ঞাত আরও ৭ জনকে আসামি করা হয়েছে। আজ মঙ্গলবার সকালে নিহত ব্যক্তির চাচি পারুল আক্তার বাদী হয়ে শিবচর থানায় মামলাটি করেন।
এর আগে গত রোববার রাত আটটার দিকে শিবচর পৌর বাজারের প্রধান সড়কে একটি ব্যাংকের সামনে রাকিব মাদবরকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। রাকিব শিবচর উপজেলার চরশ্যামাইল এলাকার নাসির মাদবরের ছেলে। তিনি সরকারি বরহামগঞ্জ কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের স্নাতক শেষ বর্ষের ছাত্র ছিলেন।
দুই দিন পার হয়ে গেলেও এই ঘটনায় কোনো আসামিকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। এর প্রতিবাদে আজ দুপুরে শিবচর পৌর বাজারের সদর রোডে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেছেন শিক্ষার্থী ও স্থানীয় লোকজন। এ সময় বক্তারা বলেন, প্রকাশ্যে শত শত মানুষের সামনে হত্যাকাণ্ড কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। একটা সভ্য স্বাধীন দেশে এমন নৃশংস হত্যাকাণ্ড হতে পারে না। হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও বিচার না করা হলে ভবিষ্যতে কঠোর আন্দোলনের ডাক দেবেন তাঁরা।
মামলার বাদী নিহত ব্যক্তির চাচি পারুল আক্তার বলেন, ‘রাকিবরে এতগুলো মানুষের সামনে কুপাইয়া মাইরা ফালাইলো। কেউ বাঁচাতে এগিয়ে আসলো না। যারা খুন করছে, তারা রাকিবের পূর্বশত্রু। আবুল কালাম সরদারের নির্দেশে তার লোকজন এই খুন করেছে। পুলিশ এ ঘটনায় কোনো আসামি এখন অবধি গ্রেপ্তার করে নাই। আসামিগো গ্রেপ্তার চাই, ফাঁসি চাই।’
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শিবচর উপজেলার শিরুয়াইল ইউনিয়নের চরশ্যামাইল গ্রামের আবুল কালাম সরদারের লোকজনের সঙ্গে নিহত রাকিব মাদবরের লোকজনের আধিপত্য বিস্তার নিয়ে গত ৬ মে সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে প্রতিপক্ষের হামলায় আবুল কালাম সরদারের ছেলে ইবনে সামাদ নিহত হন। ইবনে সামাদ হত্যা মামলার আসামি রাকিব সম্প্রতি জামিন নিয়ে জেল থেকে বের হয়ে এলাকায় আসেন। রোববার রাত আটটার দিকে শিবচর পৌর বাজারের একটি সড়কে দাঁড়িয়ে ছিলেন রাকিব। এ সময় ৪ থেকে ৫ জনের একটি দল ধারালো অস্ত্র দিয়ে তাঁর ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। হাসপাতালে নেওয়ার পথে রাকিবের মৃত্যু হয়।
শিবচর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রকিবুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, প্রকাশ্যে হত্যার ঘটনায় ২২ জনকে আসামি করে মামলা হয়েছে। নিহত ব্যক্তির স্বজন ও স্থানীয় লোকজন মানববন্ধন করে এ ঘটনার প্রতিবাদ ও বিচার দাবি করেছেন। আসামিদের গ্রেপ্তারের জন্য সব ধরনের চেষ্টা অব্যাহত আছে।
আরও পড়ুনশিবচরে হত্যা মামলায় জামিনে থাকা আসামিকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫