আনসার ভিডিপির প্রশিক্ষিত তরুণেরা দেশ পরিবর্তনের নিয়ামক শক্তি বলে মন্তব্য করেছেন গৃহায়ণ ও গণপূর্ত এবং শিল্প উপদেষ্টা।

রোববার অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় এবং শিল্প মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদর দপ্তরে আগমন করেন।

নতুন বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে তারুণ্যের উৎসব-২০২৫ উদযাপন উপলক্ষে ঢাকা মহানগরের নগর প্রতিরক্ষা দল (টিডিপি) মৌলিক প্রশিক্ষণ কোর্সের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত হন।

“এসো দেশ বদলায়, পৃথিবী বদলায়” প্রতিপাদ্যকে উপজীব্য করে সারাদেশে উদযাপিত হচ্ছে তারুণ্যের উৎসব-২০২৫। এরই ধারাবাহিকতায় ঢাকা মহানগরের নগর প্রতিরক্ষা দলের মৌলিক প্রশিক্ষণকে সামনে রেখে আনসার সদর দপ্তরে আজকের এই বর্ণাঢ্য উদ্বোধনী আয়োজন।

এই পর্যায়ে ঢাকা মহানগরের খিলগাঁও, মিরপুর, ভাটারা ও লালবাগ থানার মোট ২৫৬ জন নারী ও পুরুষকে মৌলিক প্রশিক্ষণ প্রদান করা হবে। মানব নিরাপত্তা, কমিউনিটি এলার্ট ম্যাকানিজম, সামাজিক সচেতনতা, স্বেচ্ছাসেবা এবং নগর অঞ্চলের অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্যোগ মোকাবিলাসহ জাতীয় যেকোনো বিষয়ে সমন্বিত ও বাস্তব ধারণা প্রদানের মাধ্যমে তরুণ শক্তিকে কিভাবে সামাজিক শক্তি হিসেবে আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীতে ভূমিকা রাখা যায় তা এই প্রশিক্ষণের মূল উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য।

অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণের প্রত্যেয় উদ্দীপ্ত আনসার টিডিপি বাহিনীর তরুণ সদস্যদের  উদ্দেশ্যে বলেন, “তারুণ্যের উৎসব ২০২৫-এর লক্ষ্য জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করা, পারস্পরিক সহযোগিতার মানসিকতা গড়ে তোলা এবং বাংলাদেশের বৈচিত্র্য ও সংস্কৃতির সৌন্দর্যকে উদযাপন করা। আনসার টিডিপি বাহিনীর তরুণ সদস্যরা নতুন দেশ গঠনের বড় নিয়ামক  শক্তি। তারুণ্যের সঙ্গে যদি আরও উন্নত প্রশিক্ষণ যুক্ত হয় তাহলে সেটা আনসার ভিডিপির সমৃদ্ধির গণ্ডি পেরিয়ে দেশের সামগ্রিক কল্যাণে ভূমিকা রাখবে। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত বিস্তৃত আনসার-ভিডিপি ক্লাবগুলো অঞ্চলভিত্তিক উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের ক্ষেত্র ও চিন্তাধারার পারস্পরিক বিনিময়কেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠবে।”

তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে, আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী দেশের ‘গণপ্রতিরক্ষা বাহিনী’ হিসেবে গড়ে ওঠে দেশের আর্থ-সামাজিক বৈষম্য দূরীকরণে অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে। এছাড়াও আনসার ভিডিপি বাহিনীর অগ্রযাত্রায় বিদ্যমান প্রতিবন্ধকতাসমূহ দূরীকরণ এবং এই বাহিনীর তারুণ্য নির্ভর বৃহৎ সম্ভাবনাকে কিভাবে দেশের সামষ্টিক সমৃদ্ধিতে সম্পৃক্ত করা যায় উপদেষ্টা এ সংক্রান্ত ধারণা ও আশাবাদ ব্যক্ত করেন।  

এছাড়াও অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন- বাহিনীর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আব্দুল মোতালেব সাজ্জাদ মাহমুদ।

তিনি বলেন, নতুন বাংলদেশের অভ্যুদয়ে  দেশের তরুণ জনগোষ্ঠীকে বাংলাদেশ আনসার ও ভিডিপির পরিবর্ধিত ও পরিমার্জিত যুগোপযোগী প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে  কর্মসংস্থান ও উদ্যোক্তা তৈরির সুযোগ ও সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। এই উদ্যোগকে অধিক ফলপ্রসূ করতে, সমন্বিত কার্যক্রমের ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ শিল্প কারিগরি সহায়তা কেন্দ্র (বিটাক) ও সমাজসেবা মন্ত্রণালয়সহ অন্যান্য সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন দপ্তরের সঙ্গে সমন্বয়ের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। তারুণ্যের অদম্য শক্তি, দেশপ্রেমের আবেগ ও উদ্যোগী চেতনায় সমৃদ্ধ আমাদের আনসার ভিডিপি বাহিনী নতুন বাংলাদেশকে পরিবর্তনের পথে এগিয়ে নিতে প্রস্তুত। 

এর আগে সকাল সাড়ে ৯টায় উপদেষ্টা আনসার সদর দপ্তরে পৌঁছে নগর প্রতিরক্ষা দলের (টিডিপি) মৌলিক প্রশিক্ষণের উদ্বোধন ঘোষণা করেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বাহিনীর অতিরিক্ত মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ফিদা মাহমুদ, এএফডব্লিউসি, পিএসসি; উপমহাপরিচালকবৃন্দ, বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও প্রশিক্ষণার্থী টিডিপি সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। 

এছাড়াও আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে উক্ত অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য নাইম আবেদীন এবং বিশেষ সেলের সদস্য মো.

মুজতবা মুত্তাফিক তালুকদার।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: আনস র ও ভ ড প আনস র ভ ড প উপদ ষ ট আনস র ও সদস য

এছাড়াও পড়ুন:

প্রার্থনার সুরে শেষ হলো ‘ফাতেমা রানীর’ তীর্থোৎসব 

পাহাড়ের আঁকাবাঁকা প্রায় দুই কিলোমিটারেরও বেশি উঁচুনিচু ঢালু পথ পাড়ি দিয়ে আলোক শোভাযাত্রা করে করলেন হাজারো খৃষ্ট ভক্ত। মা মারিয়ার আশীর্বাদপ্রাপ্ত শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার গারো পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত ‘বারোমারি সাধু লিওর খ্রিষ্টধর্মপল্লি’ তে ছিলো এ বছরের আয়োজন। 

বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) সকাল থেকে শুরু হয় ক্যাথলিক খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ‘ফাতেমা রানীর’ তীর্থোৎসব। দুই দিনব্যাপী এই তীর্থোৎসব শেষ হয়েছে গতকাল শুক্রবার জীবন্ত ক্রুশের পথ ও পবিত্র মহাখ্রিষ্টযাগের মধ্যে দিয়ে। 

এ উৎসবে শুধু ক্যাথলিক খ্রিষ্টানই নন, অন্য ধর্মাবলম্বীরাও প্রতিবছর অংশ নেন। এ বছরও তার ব্যতিক্রম হয়নি। উৎসবের উদ্বোধন করেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ভ্যাটিকান সিটির রাষ্ট্রদূত কেভিন এস র‌্যান্ডেল। 

এসময় জেলা প্রশাসক (ডিসি) তরফদার মাহমুদুর রহমান ও পুলিশ সুপার (এসপি) আমিনুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

আয়োজক কমিটি জানায়, প্রতিবছর অক্টোবর মাসের শেষ বৃহস্পতি ও শুক্রবারে এই তীর্থযাত্রার আয়োজন করা হয়। প্রধান পৌরহিত্যকারী ন্যুনসিওকে বরণ, তীর্থের জুবিলী উদজাপন, পুর্নমিলন সংস্কার, পবিত্র খিষ্টযাগ, জপমালার প্রার্থন, আলোক শোভাযাত্রা, সাক্রান্তের আরাধনা, নিরাময় অনুষ্ঠান, ব্যক্তিগত প্রার্থনা ও নিশি জাগরণের মধ্য দিয়ে প্রথম দিনের অনুষ্ঠান শেষ হয়। শুক্রবার সকাল আটটায় জীবন্ত ক্রুশের পথ অতিক্রম এবং সকাল ১০টায় মহাখ্রিষ্টযোগের মধ্য দিয়ে শেষ হয় এবারের তীর্থোৎসব। 

১৯৪২ সালে ৪২ একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত হয় বারোমারি সাধু লিওর ধর্মপল্লি। ১৯৯৮ সালে প্রয়াত বিশপ ফ্রান্সিস এ গোমেজ স্থানটিকে ‘ফাতেমা রানীর তীর্থস্থান’ হিসেবে ঘোষণা করেন। তখন থেকেই প্রতিবছর আয়োজিত হয়ে আসছে এই ধর্মীয় উৎসব। এ বছর প্রায় ৩০-৪০ হাজার দেশি-বিদেশি রোমান ক্যাথলিক তীর্থযাত্রী অংশ নিয়েছেন উৎসবে। সার্বিকভাবে উৎসব এলাকা ছিল আলো, প্রার্থনা ও শান্তির আবহে মোড়ানো।

রংপুর থেকে আসা তীর্থযাত্রী রিপন আরেং বলেন, “সবাই যখন মোমবাতি প্রজ্বলন করে প্রার্থনা করতে করতে পাহাড়ি আকাঁবাঁকা পথ অতিক্রম করছিলেন, তখন পাহাড় আলোয় আলোকিত হয়ে উঠেছিল। তীর্থে আমরা মা মারিয়ার কাছে প্রার্থনা করতে এসেছি।”

চট্টগ্রাম থেকে আসা রীতা নকরেক বলেন, “পুত্রবধূর সন্তান হচ্ছিল না। গতবার মানত করার পর এবার নাতী পেয়েছি। তাই এবার নাতীকে নিয়ে আবার এসেছি।”

গাজীপুর থেকে পরিবারের সঙ্গে আসা শিক্ষার্থী ঝর্ণা আরেং বলেন, “মারিয়ার কাছে এলে মনে একধরনের শান্তি পাই। আমরা প্রার্থনা করি যেন জীবনের দুঃখ-কষ্ট দূর হয়। প্রতিবছর এই সময়টার অপেক্ষায় থাকি।”

শেরপুরের পুলিশ সুপার মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, “আমরা এই তীর্থযাত্রাকে নিরাপদ ও ঝুঁকি মুক্ত রাখতে তিন স্তর বিশিষ্ট নিরাপত্তা ব্যবস্থায় রেখেছি। পাঁচ শতাধিক পুলিশ পোশাকে এবং সাদা পোশাকে দ্বায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়াও র‌্যাব, বিজিবি, এপিবিএন ও সেচ্ছাসেবক কাজ করছেন। যে কোন ঝুঁকি মোকাবেলায় আমরা প্রস্তুত আছি।”

শেরপুর জেলা প্রশাসক তরফদার মাহমুদুর রহমান বলেন, “উৎসবটি দেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির অনন্য উদাহরণ। সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে ব্যবস্থাপনায়। জেলা ও উপজেলা প্রশাসন দীর্ঘ ১৫ দিন ধরে সহযোগীতা করে আসছে। এবারের তীর্থযাত্রায় সারাদেশের মানুষ শান্তিপূর্ণভাবে তাদের উৎসব পালন করেছে।”

ময়মনসিংহ ধর্মপ্রদেশের বিশপ পনেন পল কুবি সিএসসি বলেন, “এ উৎসবের মাধ্যমে বিশ্ব মানবতার কল্যাণে প্রার্থনা করা হয়েছে। ধর্মীয় চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে এ তীর্থে দেশ-বিদেশের হাজারো মানুষ সমবেত হয়েছেন। তাঁরা দুই দিনব্যাপী তীর্থে নানা ধর্মীয় অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেছেন। মা ফাতেমা রানীর কাছে দেশ ও মানবজাতির কল্যাণে প্রার্থনা শেষে যার যার বাড়ি ফিরে যাবেন।”

ঢাকা/তারিকুল/এস

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সুন্দরবনে দুবলার চরে রাস উৎসব শুরু আজ, এবারও নেই মেলার আয়োজন
  • শেফালি আর দীপ্তিতে নতুন মুম্বাইয়ে নতুন বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ভারত
  • প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর দিনগুলোয় প্রথম আলোর জমজমাট আয়োজন
  • ‘মবের’ পিটুনিতে নিহত রূপলাল দাসের মেয়ের বিয়ে আজ
  • এবারও কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে নেই বাংলাদেশ
  • ডাইনির সাজে শাবনূর!
  • প্রার্থনার সুরে শেষ হলো ‘ফাতেমা রানীর’ তীর্থোৎসব 
  • টগি ফান ওয়ার্ল্ডে উদযাপিত হলো হ্যালোইন উৎসব
  • উদ্ভাবন–আনন্দে বিজ্ঞান উৎসব
  • নবীনদের নতুন চিন্তার ঝলক