আনসারে প্রশিক্ষিত তরুণরা দেশ পরিবর্তনের নিয়ামক শক্তি: শিল্প উপদেষ্টা
Published: 20th, January 2025 GMT
আনসার ভিডিপির প্রশিক্ষিত তরুণেরা দেশ পরিবর্তনের নিয়ামক শক্তি বলে মন্তব্য করেছেন গৃহায়ণ ও গণপূর্ত এবং শিল্প উপদেষ্টা।
রোববার অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় এবং শিল্প মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদর দপ্তরে আগমন করেন।
নতুন বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে তারুণ্যের উৎসব-২০২৫ উদযাপন উপলক্ষে ঢাকা মহানগরের নগর প্রতিরক্ষা দল (টিডিপি) মৌলিক প্রশিক্ষণ কোর্সের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত হন।
“এসো দেশ বদলায়, পৃথিবী বদলায়” প্রতিপাদ্যকে উপজীব্য করে সারাদেশে উদযাপিত হচ্ছে তারুণ্যের উৎসব-২০২৫। এরই ধারাবাহিকতায় ঢাকা মহানগরের নগর প্রতিরক্ষা দলের মৌলিক প্রশিক্ষণকে সামনে রেখে আনসার সদর দপ্তরে আজকের এই বর্ণাঢ্য উদ্বোধনী আয়োজন।
এই পর্যায়ে ঢাকা মহানগরের খিলগাঁও, মিরপুর, ভাটারা ও লালবাগ থানার মোট ২৫৬ জন নারী ও পুরুষকে মৌলিক প্রশিক্ষণ প্রদান করা হবে। মানব নিরাপত্তা, কমিউনিটি এলার্ট ম্যাকানিজম, সামাজিক সচেতনতা, স্বেচ্ছাসেবা এবং নগর অঞ্চলের অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্যোগ মোকাবিলাসহ জাতীয় যেকোনো বিষয়ে সমন্বিত ও বাস্তব ধারণা প্রদানের মাধ্যমে তরুণ শক্তিকে কিভাবে সামাজিক শক্তি হিসেবে আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীতে ভূমিকা রাখা যায় তা এই প্রশিক্ষণের মূল উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণের প্রত্যেয় উদ্দীপ্ত আনসার টিডিপি বাহিনীর তরুণ সদস্যদের উদ্দেশ্যে বলেন, “তারুণ্যের উৎসব ২০২৫-এর লক্ষ্য জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করা, পারস্পরিক সহযোগিতার মানসিকতা গড়ে তোলা এবং বাংলাদেশের বৈচিত্র্য ও সংস্কৃতির সৌন্দর্যকে উদযাপন করা। আনসার টিডিপি বাহিনীর তরুণ সদস্যরা নতুন দেশ গঠনের বড় নিয়ামক শক্তি। তারুণ্যের সঙ্গে যদি আরও উন্নত প্রশিক্ষণ যুক্ত হয় তাহলে সেটা আনসার ভিডিপির সমৃদ্ধির গণ্ডি পেরিয়ে দেশের সামগ্রিক কল্যাণে ভূমিকা রাখবে। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত বিস্তৃত আনসার-ভিডিপি ক্লাবগুলো অঞ্চলভিত্তিক উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের ক্ষেত্র ও চিন্তাধারার পারস্পরিক বিনিময়কেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠবে।”
তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে, আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী দেশের ‘গণপ্রতিরক্ষা বাহিনী’ হিসেবে গড়ে ওঠে দেশের আর্থ-সামাজিক বৈষম্য দূরীকরণে অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে। এছাড়াও আনসার ভিডিপি বাহিনীর অগ্রযাত্রায় বিদ্যমান প্রতিবন্ধকতাসমূহ দূরীকরণ এবং এই বাহিনীর তারুণ্য নির্ভর বৃহৎ সম্ভাবনাকে কিভাবে দেশের সামষ্টিক সমৃদ্ধিতে সম্পৃক্ত করা যায় উপদেষ্টা এ সংক্রান্ত ধারণা ও আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
এছাড়াও অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন- বাহিনীর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আব্দুল মোতালেব সাজ্জাদ মাহমুদ।
তিনি বলেন, নতুন বাংলদেশের অভ্যুদয়ে দেশের তরুণ জনগোষ্ঠীকে বাংলাদেশ আনসার ও ভিডিপির পরিবর্ধিত ও পরিমার্জিত যুগোপযোগী প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে কর্মসংস্থান ও উদ্যোক্তা তৈরির সুযোগ ও সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। এই উদ্যোগকে অধিক ফলপ্রসূ করতে, সমন্বিত কার্যক্রমের ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ শিল্প কারিগরি সহায়তা কেন্দ্র (বিটাক) ও সমাজসেবা মন্ত্রণালয়সহ অন্যান্য সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন দপ্তরের সঙ্গে সমন্বয়ের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। তারুণ্যের অদম্য শক্তি, দেশপ্রেমের আবেগ ও উদ্যোগী চেতনায় সমৃদ্ধ আমাদের আনসার ভিডিপি বাহিনী নতুন বাংলাদেশকে পরিবর্তনের পথে এগিয়ে নিতে প্রস্তুত।
এর আগে সকাল সাড়ে ৯টায় উপদেষ্টা আনসার সদর দপ্তরে পৌঁছে নগর প্রতিরক্ষা দলের (টিডিপি) মৌলিক প্রশিক্ষণের উদ্বোধন ঘোষণা করেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বাহিনীর অতিরিক্ত মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ফিদা মাহমুদ, এএফডব্লিউসি, পিএসসি; উপমহাপরিচালকবৃন্দ, বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও প্রশিক্ষণার্থী টিডিপি সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়াও আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে উক্ত অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য নাইম আবেদীন এবং বিশেষ সেলের সদস্য মো.
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: আনস র ও ভ ড প আনস র ভ ড প উপদ ষ ট আনস র ও সদস য
এছাড়াও পড়ুন:
২০০ বছরের ঐতিহ্য নিয়ে ভোলার বৈষা দধি
ভোলার ভ্যাপসা গরম, দুপুর গড়াতে না গড়াতেই সদর রোডজুড়ে তীব্র যানজট নাগরিক জীবনকে ব্যস্ত করে ফেলে। গরমে হাঁসফাঁস করা মানুষ একটু স্বস্তি খোঁজে। আর সেই স্বস্তি এনে দিতে পারে ভোলার বিখ্যাত বৈষা দধি।
দুপুরের আগেই সব দোকানের হাঁড়ি ফাঁকা হয়ে যায়। মহিষের কাঁচা দুধে পাতানো এই দই ভোলার স্বাদ, ইতিহাস ও গর্বের এক অনন্য বহিঃপ্রকাশ।
ভোলার দোকানগুলোতে প্রতিদিন মণকে মণ বৈষা দধি তৈরি হয়। এই দইয়ের বিশেষত্ব হলো, মহিষের কাঁচা দুধ দিয়ে এটি পাতা হয়। বাজারে সচরাচর যে দই পাওয়া যায়, সেসব তৈরি হয় গরুর দুধ দিয়ে এবং দুধ জ্বালিয়ে গাঢ় করে। কিন্তু ভোলার বৈষা দধি হয় মহিষের কাঁচা দুধ দিয়ে।
জলবেষ্টিত দ্বীপ জেলা ভোলার এক অমূল্য সম্পদ মহিষ। পূর্বে মেঘনা, পশ্চিমে তেঁতুলিয়া, উত্তরে ইলিশা আর দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর—এই চার নদী ও সমুদ্রবেষ্টিত চরাঞ্চলে ঘুরে বেড়ায় হাজার হাজার মহিষ। সরকারি হিসাবে এই সংখ্যা দেড় লাখের কাছাকাছি, তবে স্থানীয় লোকজনের মতে তা দুই লাখ ছাড়িয়েছে। এই মহিষের দুধই বৈষা দধির প্রাণ।
প্রায় দুই শতাব্দী ধরে এ অঞ্চলের মানুষের দৈনন্দিন খাদ্য তালিকায় থাকে এই দই। এ ছাড়া অতিথি আপ্যায়নের অন্যতম প্রধান উপাদান এটি। উৎসব-পার্বণ, বিয়েশাদি কিংবা যেকোনো সামাজিক আয়োজনে বৈষা দধি ছাড়া যেন ভোলার কোনো উৎসব পরিপূর্ণতা পায় না।
মুহাম্মদ শওকাত হোসেনের ‘ভোলা জেলার ইতিহাস’ বই থেকে জানা যায়, দুই শ বছর আগে থেকে ভোলায় চর জাগতে শুরু করে। বসতি হয়, মহিষ পালন শুরু হয়। দুধ সংরক্ষণের উপায় ছিল না বলে স্থানীয় বাসিন্দারা দই বানাতেন। সেখান থেকেই বৈষা দধির যাত্রা শুরু, যা পরে ছড়িয়ে পড়ে পুরো অঞ্চলে।
ভোলার মানুষের খাদ্যসংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে এই দই। এটি ভাতের সঙ্গে খাওয়া হয়, চিড়া-মুড়ির সঙ্গে মিশিয়ে তৈরি হয় মুখরোচক খাবার, আবার গরমের দিনে দই, পানি ও চিনি মিশিয়ে তৈরি করা হয় ঘোল—যা শরীরকে শীতল রাখে। শীতকালে হাঁসের মাংসের সঙ্গে টক দই ও খেজুরের গুড়—ভোলার ভোজনরসিকদের কাছে এক অনন্য স্বাদ। পান্তাভাতের সঙ্গে দই ও খেজুরের গুড় এই অঞ্চলের জনপ্রিয় একটি খাবার।
বর্তমানে প্রতি কেজি বৈষা দই বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকায়। তবে ঈদে দাম বেড়ে যায়। ঈদের আগেই বিক্রেতারা দুধ জমাতে শুরু করেন এবং এ সময়ে প্রতিদিন ৮০০–৯০০ কেজি পর্যন্ত দই বিক্রি হয়।
ভোলার দোকানগুলোতে প্রতিদিন মণকে মণ বৈষা দধি তৈরি হয়