পিঠা উৎসব ঘিরে ভাওয়াল কলেজ শিক্ষার্থীদের মিলনমেলা
Published: 20th, January 2025 GMT
গাজীপুরের ঐতিহ্যবাহী ভাওয়াল বদরে আলম সরকারি কলেজে পিঠা উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে। এ উৎসবকে ঘিরে বিভাগ ভিত্তিক স্টলগুলোতে ছিল উপচেপড়া ভিড়। পুরো কলেজ আঙিনা পরিণত হয়েছিল শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মিলনমেলায়।
গত বছরের ন্যায় সোমবার (২০ জানুয়ারি) কলেজ মাঠে শিক্ষার্থীদের সৃজনশীলতা ও বাঙালির ঐতিহ্যবাহী পিঠাপুলির সঙ্গে নতুন প্রজন্মের পরিচয় করিয়ে দিতেই এ উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, কন্ট্রোল রুমসহ মাঠে ২৪টি স্টল বরাদ্দ ছিল। এতে অংশ নেন উচ্চমাধ্যমিক, স্নাতক (সম্মান), স্নাতক (পাস) শ্রেণির বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীসহ বিএনসিসি, রোভার ও রেড ক্রিসেন্টের সদস্যরা। অংশগ্রহণকারীরা তাদের নিজস্ব উদ্যোগ ও সৃজনশীলতায় পিঠার স্টলগুলো সাজিয়েছেন ভিন্ন সাজে। গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য ফুটে ওঠেছে স্টলগুলোতে। প্রতিটি স্টলেই ছিল নিজস্বতার শৈল্পিক ছোঁয়া।
কলেজ আঙিনায় জুলাই বিপ্লবের বীরত্ব গাঁথার গল্প ফুটিয়ে তোলা হয় বিভিন্ন ফেস্টুনে। শহীদ আবু সাঈদ, মীর মুগ্ধের হাস্যোজ্জ্বল ছবির পাশাপাশি আগত দর্শনার্থীদের অশ্রুসিক্ত করেছে কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী শহীদ তানজিল মাহমুদ সুজয়ের হাসিমাখা ছবির ফেস্টুন।
প্রতিটি স্টলে পরিবেশিত হয় ঐতিহ্যবাহী ও সুস্বাদু পিঠার নানা রকমফের। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল- চিতই, পাটিসাপটা, নারকেলের সন্দেশ, দুধপিঠা এবং পুলি।
চেনা-জানা পিঠাকেও আকর্ষণীয় উপস্থাপন করা হয় বাহারি নামে। অতিরঞ্জিত কোনো অফার ছাড়াই সাশ্রয়ী মূল্য তালিকায় আস্থা ছিল দর্শনার্থী ও পিঠা প্রেমীদের।
বিভিন্ন বিভাগের ফটো বুথেও ছিল আগতদের দৃশ্যমান ভিড়। উৎসবময় দিনকে ফ্রেমবন্দি করে অনেকেরই স্মৃতি জমাতে ব্যস্ত থাকতে দেখা যায়।
কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ছাড়াও অভিভাবক, অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে আগত শিক্ষার্থীসহ অনেকেই ভিড় করেন এ আয়োজনে। কেউ এসেছেন একা, আবার কেউ পরিবার, বন্ধু-বান্ধবদের নিয়ে দলবেঁধে।
শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, এ উৎসবের মাধ্যমে তারা পিঠা তৈরি ও পরিবেশনের মাধ্যমে নিজেদের সাংস্কৃতিক শেকড়ের সঙ্গে গভীরভাবে পরিচিত হওয়ার সুযোগ পেয়েছেন। অনেকে পিঠার সঙ্গে নিজেদের শৈশবের স্মৃতি ভাগ করে নিয়ে পরিবেশটিকে আরও প্রাণবন্ত করে তোলেন।
সকালে অধ্যক্ষ অধ্যাপক ছানোয়ারা সুলতানার উদ্বোধনের মাধ্যমে শুরু হয় উৎসব। পিঠার স্বাদ এবং সৃজনশীল উপস্থাপনার ওপর ভিত্তি করে সেরা স্টলগুলোকে পুরস্কৃত করা হয়।
উৎসব শেষে উপস্থিত সবাই এই আয়োজনের ভূয়সী প্রশংসা করেন এবং প্রতি বছর এ ধরনের আয়োজনের প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন।
(লেখক: শিক্ষার্থী, ভাওয়াল বদরে আলম সরকারি কলেজ, গাজীপুর)
ঢাকা/মেহেদী
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
ভালো ফলনের আশায় গাছকে খাওয়ান তাঁরা
চীনের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের পাহাড়ি প্রদেশ গুইঝৌতে প্রাচীনকাল থেকে ‘গেলাও’ জনগোষ্ঠীর বসবাস। ভিয়েতনামেও এই জনগোষ্ঠীর মানুষ বাস করেন। চীনে তাঁদের সংখ্যা প্রায় ৬ লাখ ৭৭ হাজার।
কৃষিনির্ভর গেলাও জনগোষ্ঠীর সদস্যরা আজও প্রাচীনকালের পুরোনো এক ঐতিহ্য আগলে রেখেছেন। বছরের নির্দিষ্ট দিনে তাঁরা গাছকে খাওয়ান, যা চীনা ভাষায় ‘ওয়েই শু’ রীতি নামে পরিচিত।
এই প্রাচীন রীতি মূলত একধরনের প্রার্থনা। স্থানীয় অধিবাসীদের বিশ্বাস, এতে প্রকৃতি তুষ্ট হয়, ফসল ভালো হয়, পরিবারে শান্তি ও সমৃদ্ধি আসে। প্রতিবছর দুটি উৎসবের সময় এই অনুষ্ঠান পালন করা হয়—চীনা নববর্ষে, যা বসন্ত উৎসব নামে পরিচিত। আর গেলাও নববর্ষে, যা চান্দ্র পঞ্জিকার তৃতীয় মাসের তৃতীয় দিনে পালিত হয়।
অনুষ্ঠানের দিন সকালে আত্মীয়স্বজন ও গ্রামবাসী পাহাড়ের ঢালে জড়ো হন। তাঁরা সঙ্গে করে চাল থেকে তৈরি মদ, শূকরের মাংস, মাছ ও লাল আঠালো চাল নিয়ে আসেন। পাহাড়ে পৌঁছে প্রথমে আতশবাজি পোড়ানো হয়। এতে করে উৎসবমুখর পরিবেশের সৃষ্টি হয়।
এর মধ্যেই একটি পুরোনো ও শক্তিশালী গাছ বাছাই করা হয়। এরপর সবাই ধূপ জ্বালিয়ে নতজানু হয়ে প্রার্থনা করেন। সবশেষে মূল পর্ব ‘গাছকে খাওয়ানো’ শুরু হয়।
একজন কুঠার বা ছুরি দিয়ে গাছে তিনটি জায়গায় ছোট করে কেটে দেন। সেই ক্ষতস্থানে চাল, মাংস ও মদ ঢেলে দেওয়া হয়, যাতে গাছ তাঁদের দেওয়া ভোগ গ্রহণ করতে পারে। পরে ওই জায়গা লাল কাগজে মুড়ে দেওয়া হয়।
এ ছাড়া গাছের গোড়া ঘিরে আগাছা পরিষ্কার করা হয়, মাটি আলগা করে দেওয়া হয়। এতে নতুন জীবনের বার্তা মেলে বলে মনে করেন গেলাও জনগোষ্ঠীর সদস্যরা।
যে গাছকে খাওয়ানো হয়, সেটি যদি ফলদ হয়, তাহলে ভোগ দানকারীরা একটি আশাব্যঞ্জক শ্লোক উচ্চারণ করেন। বলেন, ‘তোমায় চাল খাওয়াই, ফল দিয়ো গুচ্ছ গুচ্ছ; তোমায় মাংস খাওয়াই, ফল দিয়ো দলা দলা।’