পল্লিকবি জসীম উদ্দীন একাধারে কবি, কাব্যোপন্যাসিক, ঔপন্যাসিক, গীতিকার, ভ্রমণকাহিনিকার, নাট্যকার, স্মৃতিকথক, প্রাবন্ধিক, শিশুসাহিত্যিক বহুবিধ পরিচয়ে পরিচিত। জসীম উদ্দীনের সাহিত্যের ভাষায় প্রকাশ পায়, ভাষা গ্রামের মানুষের মতো কিন্তু গ্রাম্য নয়। তাঁর লেখায় গ্রামীণ সংস্কৃতির গভীর এবং প্রকৃত রূপ ফুটে উঠেছে। তাঁর কবিতার অলংকার বা উপমা, রূপক গ্রামের মানুষের মনস্তত্ত্বের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। একমাত্র জসীম উদ্দীনের কবিতায় পল্লির প্রকৃত চিত্র ও স্বাদ পাওয়া যায়। এ কারণে তাঁকে পল্লিকবি বলা হয়। তাঁর রচিত অধিকাংশ সাহিত্যের পটভূমি গ্রাম ও গ্রামীণ জীবন। পল্লিজীবনের নানা অস্ফুট চিত্রও তাঁর কবিতায় অতি যত্নের সঙ্গে চিত্রিত হয়েছে। পল্লির মানুষের জীবনাচার তাঁর কবিতায় স্থান পেয়েছে। সহজ-সরল মানুষের সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনার অনুভূতি অতি দরদ দিয়ে কবি তাঁর কবিতায় চিত্রিত করেছেন। রাজবাড়ী সুহৃদ সমাবেশের পাঠচক্রের আলোচনায় এমন কথাই উঠে এসেছে আলোচকদের কথায়।
১ জানুয়ারি ছিল পল্লিকবি জসীম উদ্দীনের ১২২তম জন্মবার্ষিকী। যিনি ফরিদপুরের তাম্বুলখানা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। রাজবাড়ী সুহৃদ সমাবেশের নিয়মিত আয়োজন পাঠচক্র ছিল তাঁকে ঘিরে। ৩ জানুয়ারি শুক্রবার সমকাল প্রতিনিধির কার্যালয়ে এ পাঠচক্র অনুষ্ঠিত হয়। জসীম উদ্দীনকে কেন বলা হয় পল্লিকবি। কীভাবে তিনি সাধারণ মানুষের মণিকোঠায় স্থান পেলেন। এসব অনেক প্রশ্নের উত্তর খুঁজেছেন পাঠচক্রে উপস্থিত সুহৃদরা। পাঠচক্রে কবি জসীম উদ্দীনের জীবনী ছাড়াও পাঠ করা হয় তাঁর বিখ্যাত তিনটি কবিতা। সেগুলো হলো নক্সী-কাঁথার মাঠ, আসমানী ও কবর।
প্রধান আলোচক ছিলেন সুহৃদ উপদেষ্টা সাবেক জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা সৈয়দ সিদ্দিকুর রহমান। জসীম উদ্দীন ছিলেন মানবপ্রেমী। দরিদ্র কৃষক, দিনমজুর, রাখালের প্রতি তাঁর অসম্ভব মমতা, প্রান্তিক জনগোষ্ঠী, হিন্দু-মুসলমানের যাপিত জীবন অসামান্য দরদে উপস্থাপন করেছেন। সমাজ বাস্তবতায় মানুষের জাগতিক দুঃখের রূপায়ণ করেছেন। সবসময় সহানুভূতিশীল ছিলেন নিপীড়িত ও অবহেলিত মানুষের প্রতি। সমন্বয়বাদী ও উদারপন্থি সাহিত্যসাধক বাংলার মানুষের জীবন-কর্ম নিয়ে অনবদ্য সৃষ্টি করে অমর হয়ে থাকবেন কাল থেকে কালান্তর।
আলোচকরা বলেন, জসীম উদ্দীন হতে চেয়েছেন গ্রামীণ মানুষের অলিখিত জীবনের রূপকার। নদীমাতৃক বাংলাদেশের লোকজীবনের রূপায়ক জসীম উদ্দীন। এই দেশের মা-মাটি মানুষের প্রকৃতিগত জীবন তাঁর হাতে রূপ পেয়েছে অনন্যভাবে। সেই সঙ্গে তাঁর জীবন ও কর্ম আধুনিক সাহিত্যেরই অংশীদার।
সমকালের রাজবাড়ী প্রতিনিধি সৌমিত্র শীল চন্দনের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন রাজবাড়ী সুহৃদ সভাপতি কমল কান্তি সরকার। আলোচনায় অংশ নেন উপদেষ্টা আহসান হাবীব, মুহাম্মদ সাইফুল্লাহ, পাঠচক্র সম্পাদক আব্দুর রব সুমন, কার্যনির্বাহী সদস্য রিফাত মোল্লা প্রমুখ। পল্লিকবি জসীম উদ্দীনের জীবনী পাঠ করেন রাজবাড়ী সুহৃদ সমাবেশের পরিবেশ সম্পাদক তানজিনা তাজিন ও কার্যনির্বাহী সদস্য সানজিদা সিদ্দিকী। নকশী কাঁথার মাঠ, আসমানী ও কবর কবিতা তিনটি পাঠ করেন যথাক্রমে মৌসুমী আক্তার সাথী, মুন্নি আক্তার ও তাসকিন হাসান বর্ষণ। অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সহসাংগঠনিক সম্পাদক রাফিদুল ইসলাম, সোহাগ শেখ, আরিফ আঞ্জুম, আব্দুল্লাহ আল মামুন প্রমুখ।
সমন্বয়ক সুহৃদ সমাবেশ, রাজবাড়ী
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
বিএনপির শ্রমিক সমাবেশ শুরু
কোরআন তেলাওয়াতের মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে বিএনপির শ্রমিক সমাবেশ। মহান মে দিবস উপলক্ষে ঢাকার নয়াপল্টনে জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দল আয়োজিত এ সমাবেশে হাজার হাজার নেতকর্মী উপস্থিত হয়েছেন।
বৃহস্পতিবার (১ মে) দুপুর ২টা ১৫ মিনিটে ওলামা দলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক কারী গোলাম মোস্তফার কোরআন তেলাওয়াত শুরু করেন।
এর আগে দুপুর ১২টা থেকে সমাবেশ মঞ্চে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শুরু হয়। এতে বিএনপির সাংস্কৃতিক সংগঠন জাসাসের শিল্পীরা গান পরিবেশন করেন।
দুপুর আড়াইটায় আনুষ্ঠানিকভাবে সমাবেশ শুরু হওয়ার কথা থাকলেও সকাল থেকেই মিছিল নিয়ে ঢাকা মহানগরী ও আশপাশের জেলা থেকে দলে দলে নেতাকর্মীরা যোগ দেন সমাবেশে।
নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে আয়োজিত এ সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে লন্ডন থেকে ভার্চুয়াল মাধ্যমে যুক্ত হয়ে বক্তব্য দেবেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
শ্রমিক দলের সভাপতি আনোয়ার হোসেনের সভাপতিত্বে সমাবেশ মঞ্চে উপস্থিত আছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমানউল্লাহ আমান, ভাইস চেয়ারম্যান আহমেদ আজম খান, সহ দপ্তর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপুসহ বিএনপির সিনিয়র নেতারা। সমাবেশে শ্রমিক দলের পক্ষ থেকে তুলে ধরা হবে ১২ দফা দাবি।
সমাবেশ স্থলে দেখা যায়, নেতাকর্মীরা ব্যানার, মাথায় নানা রঙের ক্যাপ, দলীয় টি-শার্ট পরে নয়পল্টনে আসছেন। জায়গায় জায়গায় চলছে স্লোগান, দলীয় সংগীত আর ঢাক-ঢোলের বাদ্য।
সমাবেশস্থলে দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের পাশাপাশি উপস্থিত রয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, জাতীয়তাবাদী সাংস্কৃতিক সংস্থা (জাসাস) আহ্বায়ক হেলাল খান, সদস্যসচিব জাকির হোসেন রোকন প্রমুখ।
এদিকে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সমাবেশস্থলে পুলিশসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা সতর্ক অবস্থানে রয়েছেন। জিরো পয়েন্ট থেকে পল্টনমুখী সড়ক সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা রাখা হয়েছে।
টানা চার মেয়াদে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগের সরকার পতনের পর নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে প্রথম এতো বড় সমাবেশ করছে জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দল।
এর আগে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর গত বছরের ৮ আগস্ট প্রথম বাধাহীন সমাবেশ করে বিএনপি। এতে বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী অংশ নেন। পুরো এলাকায় ছিল উচ্ছ্বল নেতাকর্মীদের ভিড়।
ঢাকা/এএএম/ইভা