সড়কে পড়েছিল কাটা গজারিগাছ, পাশের জঙ্গল থেকে বেরিয়ে আসে ডাকাত দল
Published: 10th, July 2025 GMT
সড়কে দুটি বড় আকারের গজারিগাছ কাটা অবস্থায় পড়েছিল। পাশের জঙ্গল থেকে দা হাতে বেরিয়ে আসে একদল ডাকাত। দা দেখে দৌড়ে উল্টো দিকে পালিয়ে বেঁচে ফিরেছেন। গাজীপুরের শ্রীপুরের ব্যস্ততম মাওনা-কালিয়াকৈর আঞ্চলিক সড়কে ডাকাতের মুখোমুখি হওয়ার অভিজ্ঞতা বলতে গিয়ে যাত্রী রাশেদুল ইসলাম এভাবে ঘটনার বর্ণনা দিচ্ছিলেন।
গতকাল বুধবার রাত সাড়ে ১০টায় ওই সড়কের হাশিখালি সেতুর পশ্চিম পাশে এ ঘটনা ঘটে। রাশেদুল ইসলাম বলেন, তিনি মাওনা চৌরাস্তায় ইলেকট্রনিক পণ্যের ব্যবসা করেন। কাজ শেষে একটি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশায় তাঁরা পাঁচজন বাড়িতে ফিরছিলেন। হঠাৎ হাশিখালি সেতুর কাছে সড়কে দুটি গজারিগাছ পড়ে থাকতে দেখে সবাই আতঙ্কিত হন। মুহূর্তেই পাশের জঙ্গল থেকে ১০–১২ জন হাতে দা নিয়ে সড়কে আসে। এ সময় তাঁরা দ্রুত গাড়ি ঘুরিয়ে উল্টো মাওনা বাজারের দিকে চলে যান। তাঁদের মতো আরও অনেকেই এমন পরিস্থিতির শিকার হয়েছেন।
আজ বৃহস্পতিবার সকালে হাশিখালি সেতুর পাশে গিয়ে দেখা যায়, সড়কের উত্তর পাশে একটি গজারিগাছের গোড়ার দিকের অংশ কাটা। একইভাবে দক্ষিণ পাশেও আরেকটি গাছ কাটা দেখা যায়। এর কিছুটা পশ্চিম পাশে আরও একটি স্থানে গাছ কেটে রাখার দৃশ্য দেখা যায়। স্থানীয় লোকজন বলেন, ডাকাতদের কাটা গাছের টুকরা রাতেই সড়ক থেকে সরানো হয়।
স্থানীয় বাসিন্দা গাড়িচালক মো.
সড়কে নিয়মিত চলাচলকারী শিরিশগুরি গ্রামের বাসিন্দা মো. রুহুল আমিন বলেন, ডাকাত দল ঘটনাস্থলের পশ্চিম ও পূর্ব পাশে অন্তত ৩০০ মিটার দূরত্বে দুটি জায়গায় গাছ ফেলে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেছিল। হাশিখালি সেতুর আশপাশে ও বদনিভাঙা মোড়ে নিয়মিত ডাকাতির ঘটনা ঘটে। আতঙ্কে লোকজন সড়কটিতে রাত ৯টার পর চলাচল করতে ভয় পান।
শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মুহাম্মদ আবদুল বারিক বলেন, ডাকাতির প্রস্তুতিকালে তাঁরা খবর পান। সঙ্গে সঙ্গে সেখানে পুলিশ পাঠালে দুর্বৃত্তরা দৌড়ে পালিয়ে যায়।
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
যশোর-খুলনা মহাসড়ক যেন চাষের জমি
দেখলে মনে হবে চাষ দেওয়া কোনো জমি। এবড়োখেবড়ো কাদামাটির স্তূপ, তাতে বড় বড় গাড়ির চাকার দাগ। কোথাও গভীর গর্ত হয়ে জমে আছে পানি। যশোরের অভয়নগরে যশোর-খুলনা মহাসড়কের চিত্র এখন এমনই। এতে নওয়াপাড়া নদীবন্দরের কার্যক্রমেও বিরূপ প্রভাব পড়ছে।
বর্ষা মৌসুম শুরু হওয়ার পর অভয়নগরের প্রেমবাগ থেকে চেঙ্গুটিয়া পর্যন্ত যশোর-খুলনা মহাসড়ক চলাচলের একেবারেই অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। স্থানীয়রা বলছেন, গত কয়েক দিনের অতিবৃষ্টিতে সড়কটির প্রায় এক কিলোমিটার অংশ মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে। গর্তে জমা পানি, কাদামাটির কারণে রাস্তাটি চেনার উপায় নেই। এর মধ্য দিয়েই ঝুঁকি নিয়ে থেমে থেমে চলছে যাত্রীবাহী বাস, পণ্যবাহী বড় বড় ট্রাক। খানাখন্দে চাকা পড়ে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটে। গত মঙ্গলবার পণ্যবোঝাই একটি ট্রাক উল্টে পাশের খাদে পড়ে যায়।
নওয়াপাড়া নদীবন্দর ও বেনাপোল স্থলবন্দরের বিভিন্ন পণ্য এ সড়ক দিয়ে ঢাকাসহ দেশের অন্যান্য জেলায় পাঠানো হয়। দেশের চাহিদার ৬০ ভাগ আমদানীকৃত সার মোংলা থেকে নদীপথে নওয়াপাড়া নদীবন্দরে এনে খালাস করা হয়। সেই সার ট্রাকের মাধ্যমে উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় পাঠানো হয়। বেহাল সড়কের কারণে নদীবন্দরে যেতে অনীহা দেখাচ্ছেন ট্রাকচালকরা। ফলে আমনের ভরা মৌসুমে সঠিক সময়ে সার কৃষকের কাছে পৌঁছানো নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
নওয়াপাড়া সার সিমেন্ট খাদ্যশস্য ব্যবসায়ী সমিতির নেতা নুরে আলম পাটোয়ারী বলেন, সড়কটির কারণে নওয়াপাড়া মোকাম থেকে সারসহ পণ্য পরিবহনে চালকরা আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। এতে বন্দরের বার্জ কার্গো থেকে সারসহ বিভিন্ন পণ্য সঠিক সময়ে খালাস করা যাচ্ছে না। এতে অতিরিক্ত সময় লাগায় ব্যবসায়ীদের আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়তে হচ্ছে। ভুক্তভোগী উজ্জ্বল কুমার কুণ্ডু বলেন, বৃষ্টি হলেই সড়কটি কাদামাটিতে একাকার হয়ে যায়। সড়কের গর্তে পানি জমে। আর বৃষ্টি না হলে গাড়ির চাকার সঙ্গে ওড়ে ধুলা। মোটরসাইকেলচালকরা বেশি দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন।
যশোরের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী শাহজাদা ফিরোজ মোবাইল ফোনে জানান, ঠিকাদারদের ডাকা হয়েছিল, তাদের সঙ্গে কথা হয়েছে। যত দ্রুত সম্ভব আমরা এই সমস্যার সমাধান করব। ভারী বর্ষণের কারণে কাজে বিলম্ব হচ্ছে। আশা করছি, দ্রুতই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। আপাতত ইট ফেলে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করছি।
মোংলা সমুদ্রবন্দরের সঙ্গে বেনাপোল স্থলবন্দর এবং নওয়াপাড়া নদীবন্দরের সঙ্গে দেশের বিভিন্ন জেলার যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম এই মহাসড়ক। খুলনা থেকে ঢাকাগামী বিভিন্ন পরিবহনের বাসও অভয়নগর হয়ে যাতায়াত করে। খুলনা থেকে চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, ঝিনাইদহ, কুষ্টিয়ায় যাতায়াতের এটিই প্রধান সড়ক। এখন বাসগুলোকে মনিরামপুর, সাতক্ষীরা ঘুরে যেতে হয়।
বর্তমানে সড়ক ও জনপথ বিভাগের তত্ত্বাবধানে সড়কটির বিভিন্ন অংশে আরসিসি ঢালাইয়ের কাজ চলছে। ২ হাজার ৩৫২ মিটার কাজের মধ্যে ৭০২ মিটার পড়েছে যশোর মুরলী মোড়ে। বাকিটা নওয়াপাড়া থেকে প্রেমবাগ গেট পর্যন্ত বিভিন্ন অংশে। কাজটি বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে ৩১ কোটি ৬৮ লাখ ৪৮ হাজার টাকা। কাজটি শুরু হয়েছে গত ২৩ মার্চ।
এর আগে ২০১৮ সালে দু’জন ঠিকাদার ৩২১ কোটি টাকা ব্যয়ে সড়কের অভয়নগরের রাজঘাট থেকে যশোরের পালবাড়ি মোড় পর্যন্ত ৩৮ কিলোমিটার নির্মাণকাজ বাস্তবায়ন করে। কাজটি ২০২২ সালের জুনে শেষ হয়। ওই সময় কাজে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ ওঠে। তিন বছরের মধ্যেই সড়কটির বিভিন্ন অংশ বেহাল হয়ে পড়ায় আবার সংস্কারকাজ করতে হচ্ছে।