‘বহু প্রকাশনী তরুণদের বই বিক্রি করে মহীরুহ হয়ে উঠেছে’
Published: 21st, January 2025 GMT
তরুণ প্রজন্মের পাঠকনন্দিত কবি হাসনাইন হীরা। তার প্রথম কবিতার বই ‘বাঁক বাচনের বৈঠা' ২০২০ সালে প্রকাশ হয়। প্রথম বইয়ের পাণ্ডুলিপির জন্য হাসনাইন হীরা অর্জন করেছেন জেমকন তরুণ কবিতা পুরস্কার-২০২০। ২০২৫ বইমেলায় প্রকাশ হচ্ছে হাসনাইন হীরার দ্বিতীয় কবিতার বই ‘ব্রাত্যভিটার নকশা’। এই বইয়ের পাণ্ডুলিপির জন্য হাসনাইন হীরা অর্জন করেছেন ‘অনুপ্রাণন তরুণ কবিতা পুরস্কার-২০২৪’।
কী আছে ব্রাত্যভিটার নকশায়? এই প্রশ্নের জবাবে হাসনাইন হীরা রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘‘আমরা যে ভূখণ্ডে বাস করি, সেখানকার যে মানব ইতিহাস, তার যে সবচেয়ে উঁচু ও উজ্জলতম চূড়াটায় আমাদের ওঠার কথা ছিল, তা আমরা পারি নাই। অর্থাৎ ইতিহাসের পরম্পরায় আমাদের সোসাইটি যে জায়গায় পৌঁছানোর কথা ছিল, সেখানে আমরা পৌঁছাতে পারি নাই। বারবারই আমাদের আত্মপরিচয়ের ওপর আঘাত এসেছে। ফলে নানা সংকট এবং বিদ্রোহের ভেতর দিয়ে যেতে হয়েছে। এখনও সেই পরিসর অতিক্রম করতে পারি নাই। কারণ এখনও আমরা জাতিগত একটা ন্যারেশনের ওপর দাঁড়াতে পারি পারছি না। একটা মীমাংসিত তর্ক অমীমাংসিতে রূপ নেয়। ফলে বারবারই ভয়াবহ জেনোসাইডের মুখোমুখি হতে হয় আমাদের। সংকটটা আসলে কোথায়? মীমাংসিত ঘটনা কিভাবে অমীমাংসায় রূপ নেয়? সেইটা ভাবতে গিয়ে মনে হয়েছে, সাংস্কৃতিকভাবে আমাদের বড় একটা বিপর্যয় ঘটে গেছে। যার ফলে রাজনৈতিক ও দার্শনিকভাবেও আমাদের ব্যর্থতার কমতি নেই। ফলে বিদঘুটে একটা ঘূর্ণিবায়ুর ভেতর দিয়ে আমরা যাচ্ছি। নিজেদের এলাকায় নিজেদেরকে এখন ব্রাত্যজনের মতোই মনে হয়। কিন্তু আমরা ব্রতচারী। আমাদের পরাজিত করা যায় না। ভাঙা-গড়ার ভেতর দিয়ে গড়ে উঠেছে সংগ্রামশীল জীবন। যে কোনো সংকটে সে শক্ত হাতে হালের বৈঠা চালিয়েছে। বিপুল হতাশার মধ্যে আশার মনোভূমি হয়ে যে স্বতন্ত্র আত্মপ্রকাশ তার নাম 'ব্রাত্যভিটার নকশা'। মূলত, এই জনপদ ও মানুষের ইতিহাসের সবুজ কিছু আলো কবি মনে জারিত হওয়ার প্রক্রিয়া। স্বভাবতই এ বইয়ের বহুশব্দ পাওয়া যাবে, যাতে লেগে আছে ফসলের ঘ্রাণ, কৃষকের রক্ত ও ইতিহাসের নানা বুদবুদ.
হাসনাইন হীরা মনে করেন, কবিকে মগ্নতায় পাওয়া যায়। যে নিজের সৃজনশীল শক্তির ভেতর দিয়ে পৌঁছাতে চায় পাঠকের হৃদয়ে। প্রান্তরের নিঃসঙ্গ উদ্ভিদের মতো। অকারণে সে বাঁচতে চায় না। আত্মপ্রচারও তার কাম্য নয়।
একজন কবি কীভাবে নিজের বইয়ের প্রচার করতে পারেন?— এই প্রশ্নের জবাবে হাসনাইন হীরা বলেন, ‘‘বই প্রচারে কার্পণ্য কাম্য নয় বলে মনে করেন হাসনাইন হীরা। তার মতে, অন্যান্য পণ্যের চেয়ে বইয়ের প্রচার তুলনামূলক বেশি হওয়া উচিত। কেননা, বই স্বাভাবিক পণ্য নয়। ভালো বইয়ের বিনাশ নেই। নিছক অর্থমূল্যেও তাকে বিবেচনা করা সমীচীন নয়। ভালো বই নিজেই একটা বিজ্ঞাপন। স্বকীয় আলোয় উদ্ভাসিত হয়। সময় ক্ষেপণ হতে পারে, কিন্তু তাকে থামনো যায় না। দূরের মকডালে বসে গান গাওয়া কোকিলের মতো আপন মনে উদযাপন করে বসন্ত।
কোনো বইয়ের মূল বিষয় বা প্রেক্ষাপট বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর চাওয়ার সঙ্গে মিলে যেতে পারে। কিন্তু যেকোন ভালো বইয়ের পাঠকও নির্দিষ্ট ঘরানা বা নির্দিষ্ট সংখ্যক হয়ে থাকে। এমনটাই মনে করেন হাসনাইন হীরা। তিনি বলেন, ‘‘ একটি বইয়ের যত বড় বিজ্ঞাপনই হোক, আমার মনে হয় তার অডিয়েন্স নির্দিষ্ট থাকে। কারণ, একজন লেখক বা সৃজনশীল শিল্পীর চিন্তা সবার চিন্তা হয়ে উঠতে পারে না। কিন্তু সোসাইটির বৃহত্তর অংশ তার চাহিদা বহন করে। ফলে কবিকে নিঃসঙ্গ বৃক্ষের মতো ফুলে ফলে ছড়িয়ে পড়তে হয়। কেননা ভালো টেক্সট ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্রের নষ্ট জায়গাগুলোতে আঘাত করতে পারে। যা সোসাইটিকে নতুন অভিঘাতের দিকে উস্কে দেয়। লেখককে তাই বৃহত্তর অডিয়েন্সে ঢুকে পড়া দরকার। বিশেষ করে সাংস্কৃতিক বিপর্যয় মোকাবিলায়। ভালো টেক্সটের তাই প্রচার হওয়া দরকার। এতে প্রকাশক ও মিডিয়ার দায় বেশি। লেখকের দায় লেখার ভেতর দিয়ে একটা ব্রান্ড তৈরি করা। তবে আজকের সময়ে লেখক প্রত্যক্ষভাবেও প্রচারে অংশ নিতে পারে। সেই সুযোগ তার আছে। এতে হীনমন্যতা কিংবা লজ্জার কিছু নাই। কারণ, পাঠকও এখন মিডিয়া নির্ভর। সুতরাং যার মিডিয়া কাভারেজ বেশি তার দিকেই পাঠক হেলে পড়তে থাকে।’’
দেশের বেশিরভাগ প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান বই প্রচারে সেভাবে দাঁড়াতে পারে নাই বলে মনে করেন হাসনাইন হীরা। তিনি বলেন, ‘‘ প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান শিল্পের অংশ। নিছক কোনো দোকানদারি না। প্রচার এবং প্রকাশনায় ব্যাপক যত্নশীল হওয়ার বিকল্প নাই। কিন্তু আমাদের প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান সেভাবে দাঁড়াতে পারে নাই।বিশেষ করে তরুণ লেখকদের প্রতি তাদের দৃষ্টিভঙ্গি একেবারেই বাজে। অথচ বহু প্রকাশনী তরুণদের বই বিক্রি করে মহীরুহ হয়ে উঠেছে। শুধু প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান কেন! রাষ্ট্রের অবহেলাও চরম পর্যায়ের। না হলে, বছরে ক্যাটাগরি অনুযায়ী মিনিমাম ১০ জন করে মেধাবী তরুণের পাণ্ডুলিপি বাছাই করে তাদের বইয়ের প্রকাশনা ও প্রচারে অংশ নিতে পারতো। সেটা করে না। ফলে অনেক তরুণ লেখকসত্তার মৃত্যু হয়। যা আমাদের গভীরতর সংকটের দিকেই ঠেলে দেয়।’’
হাসনাইন হীরার কবিতাভাবনা এমন— সাহিত্যে বাস্তব বলে কিছু নয়, আবার অবাস্তব বলেও কিছু নয়। বাস্তব এবং অবাস্তবের মাঝখানে যে জগত, তাই মূলত সাহিত্যের জগত।কবিতা আরো বেশি ধূসর ও নির্জনতম পথের অভিযাত্রী। অনেক বেশি অবাস্তবের বাস্তব কুহক। তাকে ধরা যায় না, লেখাও যায় না। কেবল লিখবো বলেই লিখে যেতে হয় সারাটা জীবন। ফলে বাস্তব অর্থে আমার কাছে কবিতা হলো মানুষের না বলা কথার দীর্ঘ ইতিহাস। এবং তার অস্তিত্বের লড়াই। লিখিত এবং অলিখিত দুই অবস্থাতেই কোথাও না কোথাও কবিতা বিরাজমান।
ব্রাত্যভিটার নকশা বইয়ে মোট কবিতার সংখ্যা ৫০ টি। এই বই কারো কাছে মনে হতে পারে অনার্যের অমীমাংসিত চিঠি। কারো কাছে মনে হতে পারে বাঙালিকে পুনঃআবিস্কার কিংবা শেকড়ের সন্ধান করা। কারো কাছে মনে হতে পারে বাঙালির নতুন জাগরণ। কবির চাওয়া, বাঙালি তার নিজের কাছে ফিরুক।
হাসনাইন হীরার জন্ম ১৮ ই নভেম্বর-১৯৮৫, সিরাজগঞ্জ জেলার উল্লাপাড়া থানার বাঙ্গালা গ্রামে। সমাজবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর শেষে একটা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ব্যবস্থাপক হিসাবে কর্মরত আছেন।
ঢাকা/লিপি
উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
লামিনে ‘মেসি’ ইয়ামাল
১৭ বছর বয়সী ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো: ১৯ ম্যাচ, ৫ গোল, ৪ গোলে সহায়তা।
১৭ বছর বয়সী লিওনেল মেসি: ৯ ম্যাচ, ১ গোল, গোলে সহায়তা নেই।
১৭ বছর বয়সী লামিনে ইয়ামাল: ১০০ ম্যাচ, ২২ গোল, ৩৩ গোলে সহায়তা।
মেসি–রোনালদোর সঙ্গে তুলনা নয়, লামিনে ইয়ামালের শুরুটা বোঝাতে এই পরিসংখ্যান হাজির করেছে টিএনটি স্পোর্টস। ধূমকেতুর মতো শুরু হলেও ধূমকেতুর মতোই মিলিয়ে যাওয়ার পাত্র তিনি নন।
বার্সেলোনার এস্তাদি অলিম্পিক লুইস কোম্পানিসে গত রাতের ম্যাচটি স্মরণ করতে পারেন। ৬ গোলের থ্রিলার, যেখানে বার্সেলোনা–ইন্টার মিলান সেমিফাইনাল প্রথম লেগের ‘ক্লাসিক’ লড়াই ৩–৩ গোলে অমীমাংসীত। দুই দলের হয়েই ‘সুপার হিরো’ ছিলেন বেশ কজন। ইন্টারের যেমন ডেনজেল ডামফ্রিস ও মার্কাস থুরাম, বার্সার তেমনি রাফিনিয়া, ফেরান তোরেসরা। কিন্তু সবাইকে ছাপিয়ে ঠিকই রবির কিরণের মতো আলো দিয়েছেন এক কিশোর—লামিনে ইয়ামাল নাসরাউয়ি এবানা। সংক্ষেপে লামিনে ইয়ামাল।
আরও পড়ুন৬ গোলের থ্রিলারে বার্সেলোনা–ইন্টার সেয়ানে সেয়ানে টক্কর৮ ঘণ্টা আগে২৪ মিনিটে ইয়ামালের করা গোলটির প্রসঙ্গে পরে আসা যাবে। যেভাবে খেলেছেন তাতে গোলটি না করলেও লোকে কাল রাতে তাঁর পারফরম্যান্স মনে রাখতেন। পরিসংখ্যান বলছে ১০২টি টাচ, একটি গোল, ২টি গোল হওয়ার মতো পাস, ৬টি শট (পোস্টে মেরেছেন দুবার) এবং ১০টির মধ্যে ৬টি সফল ড্রিবলিং।
কিন্তু পরিসংখ্যানে এ তথ্য নেই—মাঠে ডান প্রান্তকে ইয়ামাল ফাইনালে ওঠার হাইওয়ে বানিয়ে যতবার কাট–ইন করে ইন্টারের বক্সে ঢুকেছেন, সেটা আসলে ইতালিয়ান ক্লাবটির রক্ষণের জন্য দুঃস্বপ্নের। প্রতিবারই মৌমাছির মতো ছেঁকে ধরা হয়েছে ইয়ামালকে। কিন্তু আটকানো কি সম্ভব হয়েছে? রাত থেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভিডিওগুলো ভাসছে। সেসব আসলে ইয়ামালের পায়ের কারুকাজে ইন্টারের রক্ষণকে স্রেফ খোলামকুচির মতো উড়িয়ে দেওয়ার ভিডিও।
ইয়ামাল কত ভয়ংকর সেটা এই এক ছবিতেই পরিস্কার। সবাই ছেঁকে ধরেও তাঁকে আটকাতে পারেননি