৩৯৫ কোটি টাকা মার্জিন ঋণের বিপরীতে শেয়ারদর ৩৪ কোটি
Published: 23rd, January 2025 GMT
মার্চেন্ট ব্যাংক জিএসপি ইনভেস্টমেন্ট এর মূলধনি লোকসানে থাকা ২৭৫ জন গ্রাহকের কাছে মার্জিন ঋণ বাবদ পাবে ৩৯৫ কোটি টাকা। ঋণের বিপরীতে গ্রাহকদের অ্যাকাউন্টে থাকা শেয়ারের বাজারমূল্য মাত্র ৩৩ কোটি ৬৮ লাখ টাকা। ফলে ঋণ আদায়ে সব শেয়ার বিক্রি করলে মার্চেন্ট ব্যাংকটির লোকসান হবে ৩৬১ কোটি টাকার বেশি।
আর্থিক প্রতিষ্ঠান জিএসপি ফাইন্যান্সের সহযোগী প্রতিষ্ঠান জিএসপি ইনভেস্টমেন্ট। আর্থিক প্রতিষ্ঠানটির ৩১ ডিসেম্বর, ২০২৩ সমাপ্ত বছরের নিরীক্ষা প্রতিবেদনে নিরীক্ষক এমন পর্যবেক্ষণ দিয়েছে। গতকাল বুধবার তা প্রকাশ করেছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)।
পর্যবেক্ষণে নিরীক্ষক প্রতিষ্ঠান আরও জানিয়েছে, বিপুল অঙ্কের লোকসানের বিপরীতে মার্চেন্ট ব্যাংকটি মাত্র ৬০ কোটি টাকা মূলধন সংরক্ষণ করেছে। এদিকে জিএসপি ফাইন্যান্সের অবস্থাও একই। একই নিরীক্ষা প্রতিবেদনে নিরীক্ষকের পর্যবেক্ষণ হলো, ২০২৩ সাল পর্যন্ত এর মন্দ ঋণের পরিমাণ ছিল ৪৭৭ কোটি ৭২ লাখ টাকা। এর বিপরীতে ৪৬৪ কোটি ৩৩ লাখ টাকার প্রভিশন রাখার দরকার ছিল। কিন্তু কোম্পানিটি ২৩৫ কোটি ৫৫ লাখ টাকা প্রভিশন করেছে। প্রভিশন ঘাটতি ২২৮ কোটি ৭৮ লাখ টাকা। কোম্পানির সম্পদ মূল্য প্রভিশনিং এ ঘাটতি বিবেচনায় সমপরিমাণ কমিয়ে দেখানো উচিত বলে মত দিয়েছে নিরীক্ষক।
শেয়ারবাজার সংক্ষেপ
টানা তিন দিনে প্রধান সূচক ৬৮ পয়েন্ট বৃদ্ধির পর গতকাল বুধবার ডিএসইতে তালিকাভুক্ত অধিকাংশ কোম্পানির শেয়ারদর কমেছে। গতকাল এ বাজারে ৯২ কোম্পানির দর বৃদ্ধির বিপরীতে ২৪৫টিই দর হারিয়েছে এবং অপরিবর্তিত ছিল ৫৭টির দর। খাতওয়ারি লেনদেন পর্যালোচনায় দেখা গেছে, কাগজ ও ছাপাখানা খাত ছাড়া বাকি সব খাতের অধিকাংশ শেয়ার দর হারিয়েছে। ডিএসইএক্স সূচক আগের দিনের তুলনায় ২৫ পয়েন্ট হারিয়েছে, নেমেছে ৫১৭৭ পয়েন্টে। আবার টাকার অঙ্কে লেনদেনের পরিমাণ ৮৬ কোটি টাকা কমে ৪১৩ কোটি টাকায় নেমেছে।
সাম্প্রতিক সময়ে টানা দরপতনের পর কিছু শেয়ারের হঠাৎ করে দরবৃদ্ধির শীর্ষে উঠে আসতে দেখা যাচ্ছে। যদিও বেশির ভাগেরই পরে দরবৃদ্ধির ধারায় দেখা যায় না। গতকাল ডিএসইতে দরবৃদ্ধির শীর্ষে ছিল বঙ্গজ লিমিটেড। এ কোম্পানির দর ১০ শতাংশ বেড়ে সর্বশেষ ১০৪ টাকা ৫০ পয়সায় কেনাবেচা হয়েছে। গত নভেম্বর থেকে শেয়ারটিকে ৯০ থেকে ১০০ টাকার মধ্যে ঘুরপাক থেকে দেখা গেছে। দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা বিডি অটোকারের দর প্রায় ১০ শতাংশ বেড়ে সর্বশেষ ৯২ টাকা ৭০ পয়সায় কেনাবেচা হয়। গেল নভেম্বর থেকে এ শেয়ারটিও ৮০ থেকে ৯০ টাকার মধ্যে ওঠানামায় ছিল।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: র ব পর ত জ এসপ গতক ল
এছাড়াও পড়ুন:
আইএমএফের পর্ষদ বৈঠক ২৩ জুন, এরপর মিলতে পারে দুই কিস্তি অর্থ
২৩ জুন আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) নির্বাহী পর্ষদের বৈঠক ডাকা হয়েছে। সেই বৈঠকে বাংলাদেশের সঙ্গে আইএমএফের চলমান ঋণ কর্মসূচির দুই কিস্তির অর্থ ছাড়ের বিষয়টি উত্থাপনের কথা রয়েছে। বৈঠকে অনুমোদন হলে চলমান ঋণ কর্মসূচির আওতায় একসঙ্গে দুই কিস্তির অর্থ পাবে বাংলাদেশ। আইএমএফ গতকাল শুক্রবার তার কার্যসূচিতে নির্বাহী পর্ষদের বৈঠকের এ তারিখ নির্ধারণসংক্রান্ত তথ্য প্রকাশ করেছে।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, আইএমএফের এ বৈঠকে চলমান ঋণ কর্মসূচির তৃতীয় ও চতুর্থ পর্যালোচনার (রিভিউ) প্রতিবেদন উপস্থাপনের কথা রয়েছে। এ প্রতিবেদন পর্ষদ অনুমোদন করলে বাংলাদেশ একসঙ্গে পেয়ে যাবে চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তির অর্থ। দুই কিস্তির অর্থ একসঙ্গে হতে পারে ১৩০ কোটি মার্কিন ডলার।
এর আগে ২০২৩ সালের ৩১ জানুয়ারি আইএমএফ বাংলাদেশের জন্য সাড়ে তিন বছর মেয়াদি ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ প্রস্তাব অনুমোদন করে। ঋণ অনুমোদনের সময় আইএমএফ বলেছিল, বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা বজায় রাখা, ঝুঁকিতে থাকা ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে সুরক্ষা দেওয়া এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক ও পরিবেশসম্মত প্রবৃদ্ধি অর্জনে সহায়তা করবে এ ঋণ কর্মসূচি। চলতি হিসাবের ঘাটতি বেড়ে যাওয়া, টাকার দরপতন ও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যাওয়া—মূলত এ তিন কারণে ওই সময় আইএমএফের কাছে ঋণ চেয়েছিল তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার।
আইএমএফের ঋণ কর্মসূচির মধ্যে বর্ধিত ঋণসহায়তা (ইসিএফ) ও বর্ধিত তহবিলসহায়তা (ইএফএফ) বাবদ ঋণ রয়েছে ৩৩০ কোটি ডলার। আর রেজিলিয়েন্স অ্যান্ড সাসটেইনেবিলিটি ফ্যাসিলিটি (আরএসএফ) বাবদ ঋণ রয়েছে ১৪০ কোটি ডলার। আরএসএফ আইএমএফের একটি নতুন তহবিল, যেখান থেকে এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশকেই প্রথম ঋণ দেওয়া হচ্ছে। ২০২৩ সালের ২ ফেব্রুয়ারি আইএমএফের কাছ থেকে প্রথম কিস্তির ৪৭ কোটি ৬৩ লাখ ডলার পায় বাংলাদেশ। একই বছরের ডিসেম্বরে দ্বিতীয় কিস্তির ৬৮ কোটি ১০ লাখ ডলার ও ২০২৪ সালের জুনে তৃতীয় কিস্তির ১১৫ কোটি ডলার পেয়েছে বাংলাদেশ। অর্থাৎ তিন কিস্তিতে আইএমএফ থেকে এখন পর্যন্ত ২৩১ কোটি ডলার পেয়েছে বাংলাদেশ। বাকি আছে ঋণের ২৩৯ কোটি ডলার।
আইএমএফের ঋণের চতুর্থ কিস্তির অর্থ গত বছরের ডিসেম্বরে পাওয়ার কথা থাকলেও তা আর পাওয়া যায়নি। আইএমএফের সদর দপ্তর যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে অবস্থিত। প্রায় প্রতিবছর ওয়াশিংটনসহ প্রতিবেশী রাজ্যগুলোতে বড় ধরনের তুষারপাত হয়। গত বছরও তাই হয়েছে। অতিমাত্রার বরফের কারণে অচল হয়ে যায় জনজীবন। মার্কিন প্রশাসন সতর্কবার্তা জারি করে। তুষারপাতের কারণে আইএমএফসহ অনেক প্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল অনেক দিন।
পরে আইএমএফের পক্ষ থেকে প্রথমে এ বছরের ফেব্রুয়ারি ও পরে মার্চে পর্ষদ বৈঠকের কথা বলা হয়। গত এপ্রিলে আইএমএফের একটি দল পর্যালোচনা করতে ঢাকায় আসে দুই সপ্তাহের জন্য। এর মধ্যে শর্ত পরিপালন নিয়ে দর–কষাকষিতে চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তির অর্থ ছাড় আটকে যায়। এরপর ওয়াশিংটনে গত ২১ থেকে ২৬ এপ্রিল অনুষ্ঠিত আইএমএফ-বিশ্বব্যাংকের বসন্তকালীন বৈঠকে এ বিষয়ে আরও আলোচনা হলেও কোনো সুরাহা হয়নি। তখন দর-কষাকষি হচ্ছিল মূলত মুদ্রা বিনিময় হার বাজারভিত্তিক করা নিয়ে। আইএমএফ তা চাইলেও করতে চাইছিল না সরকার।
সবশেষে গত মাসে এ নিয়ে আইএমএফের সঙ্গে কয়েকটি ভার্চ্যুয়াল বৈঠক করে বাংলাদেশ ব্যাংক। গত ১২ মে দুই পক্ষ চূড়ান্ত সমঝোতায় পৌঁছায় ও বিনিময় হার বাজারভিত্তিক করে বাংলাদেশ। ১৪ মে আইএমএফ ওয়াশিংটন থেকে এক বিবৃতিতে জানায়, দুই পক্ষের মধ্যে সমঝোতা হয়েছে এবং ঋণের অর্থ ছাড় করা হবে জুনে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, সাধারণত পর্ষদ বৈঠকে অনুমোদন হওয়ার দুই থেকে তিন দিনের মাথায় আইএমএফ অর্থ ছাড় করে দেয়। এবারও এর ব্যতিক্রম হবে না।