Samakal:
2025-08-01@04:40:40 GMT

বার্সার ‘মানিতা’ মৌসুম

Published: 23rd, January 2025 GMT

বার্সার ‘মানিতা’ মৌসুম

লাল রঙের ফুলটি দেখতে বেশ অদ্ভুত; পাঁচটি পাপড়ি দেখতে মানুষের পাঁচটি আঙুলের মতোই সরু ও লম্বা। উত্তর আমেরিকার মানুষের কাছে ডেভিলস বা মাঙ্কি নামে পরিচিত। ইউরোপে হ্যান্ড ফ্লাওয়ার বললে চিনে নেন অনেকে। আর স্প্যানিশরা ডাকেন ‘মানিতা’ বলে। রক্তবর্ণা এই ফুল ফোটে সাধারণত বসন্তের শেষে কিংবা গ্রীষ্মের শুরুতে। তবে স্প্যানিশ ফুটবলে সেই মানিতা ফুটছে এবার উইন্টারেই! 

আসলে প্রতিপক্ষের জালে ৫ গোল করে হাতের পাঁচটি আঙুল দেখিয়ে সেলিব্রেশন করার এই ভঙ্গিমা স্প্যানিশ ফুটবলের এক ঐতিহ্যের জায়গায় নিয়ে গেছে বার্সেলোনা। কাতালানরা যার শুরুটা করেছিল, সেই ইয়োহান ক্রুইফের সময় থেকে। বিশেষ করে প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বী রিয়াল মাদ্রিদকে ৫ গোলে ঘোল খাওয়ালেই কাতালানরা পাঁচ আঙুল ছড়িয়ে এই ‘মানিতা’ ট্রল করে। 

সেদিন যেমন জেদ্দায় সুপার কাপের ফাইনাল জিতে পিকে ‘মানিতা’ দেখিয়েছেন ক্যাসিয়াসকে! তেমনই বেনফিকার বিপক্ষে রোববার চ্যাম্পিয়ন্স লিগে অবিশ্বাস্য এক প্রত্যাবর্তনের ম্যাচে বেনফিকাকে ৪-৫ গোলে হারিয়েও বার্সা সমর্থকরা সোশ্যাল মিডিয়ায় ‘মানিতা’ লিখে হ্যাশট্যাগ দিচ্ছেন। আসলে এখন যে তাদের চলছেই এই মানিতা সিজন, গত ছয় মাসে ৯টি ম্যাচে প্রতিপক্ষকে ৫ গোল করে দিয়েছে ইয়ামালদের দলটি। সেখানে যেমন লা লিগার ম্যাচ ছিল, তেমনি চ্যাম্পিয়ন্স লিগেরও বড় মঞ্চ ছিল।

বার্সার মেরুন রং কখন যে মানিতার মতো লাল হয়ে গেছে, তা বোধ হয় সূক্ষ্মভাবে অনেকেই খেয়াল করেননি। গত আগস্টে ভায়াদোলিদকে ৭-০ গোলে হারানো দিয়ে শুরু হয় বার্সার এই মৌসুমের মানিতাযাত্রা। এর পর সেপ্টেম্বরে ভিয়ারিয়ালকে ১-৫ গোলে হারানো, অক্টোবরে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে সুইস ক্লাব ইয়াং বয়েজকে ৫-০ গোলে বিধ্বস্ত করে কাতালোনিয়ার আপন ক্লাবটি। ওই মাসেই লা লিগায় সেভিয়াকে ৫-১ গোল দেওয়া, নভেম্বরের ধারাবাহিকতায় সার্বিয়ান ক্লাব ক্রেভেনা জাভেজাকে ২-৫-এ হারানো। 

সবকিছুই হয়েছে কোচ হ্যান্সি ফ্লিকের তৈরি ইয়ামাল, রাফিনহা, লেভানডস্কি, পেদ্রিদের দিয়ে দারুণ একটি রসায়নে। গেল ডিসেম্বরেও লা লিগায় মায়ার্কোর বিপক্ষে ১-৫ গোলের দারুণ একটি ম্যাচ উপহার দেয় বার্সা। তবে সবকিছু ছাপিয়ে যায় বোধ হয় জানুয়ারির এই সপ্তাহটিতে। যেখানে রিয়াল মাদ্রিদকে হতভম্ব করে জেদ্দায় ২-৫ গোলে সুপার কাপের শিরোপা জিতে নেন ইয়ামালরা।

বুধবার রাতে সেই ট্রফি হাতে নিয়েই ঘরের মাঠের দর্শকদের সামনে নেমেছিলেন ইয়ামালরা। ‘মানিতা উইন’ এর দারুণ একটা স্বাদ লেগে ছিল গোটা দলের মধ্যেই। গোলের জন্য জালে বল পাঠান গাভি, রাফিনহা, ইয়ামাল, তোরেস ও জুল কুন্দে। আত্মবিশ্বাসে ভরপুর কোচ ফ্লিক সেই সুযোগে এদিন কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষাও সেরে নেন। শুরুর একাদশে সেন্ট্রাল কোনো স্টাইকার না রেখে অতিরিক্ত একজন মিডফিল্ডার খেলান দুই উইঙ্গারের সঙ্গে। 
লেভানডস্কিকে বিশ্রাম দিয়ে দানি ওলমোকে ফলস নাইনে খেলান তিনি। যেখানে বেটিস ডিফেন্ডারদের বোকা বানিয়ে ওলমো বারবার ঢুকে যান ডি বক্সে। ওলমোকে কোনোভাবেই ডিকোড করতে পারছিলেন না প্রতিপক্ষের কেউ। ঠিক এখানেই পুরোপুরি সফল ছিলেন ফ্লিক। আর এভাবেই দল নিয়ে গভীর সব পর্যবেক্ষণেই দারুণ এক মৌসুম পার করছে বার্সা। তাদের সেই মানিতার পাঁচটি পাপড়িতে ইয়ামালের সুগন্ধ হয়তো সবচেয়ে প্রখর। বছর সতেরোর এই ফরোয়ার্ড তাদের মানিতা মৌসুমে ৯ গোল ও ১৩ অ্যাসিস্ট করেছেন। 

তবে ইয়ামাল কিন্তু মানিতা সেলিব্রেশন করতে জানেন না, ‘থ্রি জিরো ফোর’ তাঁর গ্রাম রোকাফোনডার পোস্টাল কোডই আঙুল দিয়ে তুলে ধরেন। অবশ্য বেটিসের বিপক্ষে এদিন গোল করে সেটাও করেননি। কেননা, বেটিসের একাডেমি থেকেই তো তাঁর যাত্রা শুরু। তাই আর যাই হোক সেখানে ‘মানিতা’ উদযাপন করা যায় না। সেটি করতে হয় বোধ হয় কেবল রিয়াল মাদ্রিদের বিপক্ষেই।

বার্সার পাঁচ গোলের সাম্প্রতিক ম্যাচ

স্কোর      প্রতিপক্ষ      টুর্নামেন্ট      সময়
৪-৫ বেনফিকা      চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ২২ জানুয়ারি
৫-১  রিয়াল বেটিস কোপা দেল রে  ১৬ জানুয়ারি
২-৫ রিয়াল মাদ্রিদ  সুপার কাপ  ১৫ জানুয়ারি
১-৫ মায়ার্কো  লা লিগা ৪ ডিসেম্বর
২-৫ ক্রেভেনা জাভেজা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ৭ নভেম্বর
৫-১ সেভিয়া  লা লিগা ২১ অক্টোবর
৫-০  ইয়াং বয়েজ চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ২ অক্টোবর
১-৫ ভিয়ারিয়াল  লা লিগা ২২ সেপ্টেম্বর
৭-০  ভায়াদোলিদ  লা লিগা ৩১ আগস্ট
.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: দ র ণ এক

এছাড়াও পড়ুন:

অনশনের পর ডিবি কার্যালয় থেকে ছাড়া পেলেন ছয় সমন্বয়ক

নিরাপত্তার অজুহাতে গোয়েন্দা (ডিবি) কার্যালয়ে আটকে রাখা হয়েছিল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সম্মুখসারির ছয়জন সমন্বয়ককে। আটক থাকার এক পর্যায়ে তাঁরা অনশন শুরু করেন। ৩২ ঘণ্টা অনশনের পর ১ আগস্ট (২০২৪ সাল) দুপুরে ছয় সমন্বয়ককে ডিবি কার্যালয় থেকে কালো রঙের দুটি গাড়িতে করে যাঁর যাঁর ঠিকানায় পৌঁছে দেওয়া হয়।

সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম, আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া ও আবু বাকের মজুমদারকে ছয় দিন; সারজিস আলম ও হাসনাত আবদুল্লাহকে পাঁচ দিন এবং নুসরাত তাবাসসুমকে চার দিন ডিবি কার্যালয়ে তখন আটক রাখা হয়েছিল। এই ছয় সমন্বয়কের মধ্যে নাহিদ এখন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক। আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া বর্তমানে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা। সারজিস, হাসনাত ও নুসরাত এনসিপির গুরুত্বপূর্ণ নেতা। আবু বাকের এখন গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের আহ্বায়ক।

ডিবি কার্যালয় থেকে ছাড়া পাওয়ার সেই ঘটনা সম্পর্কে সমন্বয়ক আবু বাকের মজুমদার গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি আমার বোনের বাসার লোকেশন (ঠিকানা) দিয়েছিলাম ডিবিকে। ১ আগস্ট (২০২৪ সাল) ডিবি তাদের তত্ত্বাবধানেই আমাদের ছয়জনকে যার যার গন্তব্যে পৌঁছে দেয়। বোনের বাসায় পৌঁছানোর কিছুক্ষণ পর আমি প্রথমে আসিফ ভাইয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করে মানিকনগরের একটা জায়গায় দেখা করি। আমরা পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করি। কীভাবে এক দফার (সরকার পতনের) ঘোষণায় যাওয়া যায়, সে বিষয়েও সেদিন আমরা চিন্তা করি।’

সেদিন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে নিহত ব্যক্তিদের স্মরণ ও হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবিতে ‘রিমেম্বারিং আওয়ার হিরোজ’ কর্মসূচি পালিত হয়। এ কর্মসূচির আওতায় গণসংগীত, পথনাটক, দেয়াললিখন, স্মৃতিচারণা ও বিক্ষোভ সমাবেশ হয় রাজধানী ঢাকাসহ অন্তত ১৬টি জেলা ও মহানগরে। এসব কর্মসূচিতে শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি কিছু জায়গায় শিক্ষক ও আইনজীবীরা অংশ নেন। তবে কোথাও কোথাও কর্মসূচিতে বাধা দেয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। কোথাও কোথাও পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। অনেক জায়গায় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের আটক করা হয়।

প্রতিবাদ, বিক্ষোভ

সেদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের সাতটি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের উদ্যোগে পৃথক সমাবেশ-মানববন্ধন ও মিছিল করা হয়। পাশাপাশি সেদিন দেশের বিভিন্ন স্থানে সড়ক ও মহাসড়ক অবরোধ করে ছাত্র-জনতা।

‘কোটা সংস্কার আন্দোলনে সরকারের কঠোর দমনপ্রক্রিয়া ও গুলিতে ছাত্র-জনতা হত্যা’র প্রতিবাদে ১ আগস্ট বেলা ১১টায় মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে জাতীয় সংসদের সামনে সমাবেশের কর্মসূচি ছিল শিল্পী ও কলাকুশলীদের। ‘দৃশ্যমাধ্যম শিল্পীসমাজ’-এর ব্যানারে তাঁরা প্রথমে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ–সংলগ্ন ইন্দিরা রোডের প্রান্তে সমবেত হন। সেদিন সকাল থেকেই প্রবল বৃষ্টি হচ্ছিল। বৃষ্টি উপেক্ষা করে শিল্পীরা ব্যানার-পোস্টার নিয়ে স্লোগান দিতে দিতে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউর দিকে এগিয়ে যেতে থাকলে পুলিশের বাধার মুখে পড়েন।

পরে শিল্পীরা ইন্দিরা রোড দিয়ে শোভাযাত্রা করে ফার্মগেটে আনন্দ সিনেমা হলের কাছে সমবেত হন। প্রবল বৃষ্টির মধ্যেই তাঁরা সেখানে সড়কের পাশে ব্যানার-পোস্টার নিয়ে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে স্লোগান দিতে থাকেন। শিল্পী, নির্মাতা ও কলাকুশলীরা ছাত্র-জনতার হত্যার প্রতিবাদ জানিয়ে বক্তব্য দেন। তাঁরা বলেন, যে বর্বর পন্থায় শিক্ষার্থীদের ন্যায়সংগত আন্দোলনকে দমন করা হচ্ছে, তা কোনো গণতান্ত্রিক সভ্য সমাজে ঘটতে পারে না।

দৃশ্যমাধ্যমের শিল্পীদের সমাবেশ থেকে সেদিন শিক্ষার্থীদের ৯ দফা দাবির প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানানো হয়। একই সঙ্গে হত্যাকাণ্ডের বিচার, গণগ্রেপ্তার, মামলা ও হয়রানি বন্ধের দাবি করা হয়। সমাবেশ থেকে আরও জানানো হয়, শিল্পীরা তাঁদের প্রতিবাদ কর্মসূচি অব্যাহত রাখবেন।

সেদিন বিকেলে ঢাকায় ডিবি কার্যালয়ের সামনে ‘বিক্ষুব্ধ নাগরিক সমাজ’–এর ব্যানারে মানববন্ধন করেন নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা। মানববন্ধনে অর্থনীতিবিদ দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছিলেন, গুলি করে শিশুসহ নির্বিচার মানুষ হত্যার তদন্ত জাতিসংঘের অধীনে করতে হবে।

সেই মানববন্ধনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আসিফ নজরুল (এখন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা) বলেন, হত্যার বিচার করতে হবে। হুকুমদাতাদেরও বিচার করতে হবে।

কূটনীতিকদের ‘ব্রিফ’

জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরকে রাজনৈতিক দল ও সংগঠন হিসেবে নিষিদ্ধ করে ১ আগস্ট বিকেলে প্রজ্ঞাপন জারি করেছিল তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার। সেদিন বিকেলে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় তৎকালীন সরকারের পক্ষ থেকে জাতিসংঘ ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিসহ বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদের ব্রিফ করা হয়। সেই ব্রিফিংয়ে বিদেশি কূটনীতিকেরা সহিংসতায় হতাহতের ঘটনা ও সম্পদের ক্ষয়ক্ষতির বিশ্বাসযোগ্য তদন্তের দাবি জানান।

সম্পর্কিত নিবন্ধ