লাল রঙের ফুলটি দেখতে বেশ অদ্ভুত; পাঁচটি পাপড়ি দেখতে মানুষের পাঁচটি আঙুলের মতোই সরু ও লম্বা। উত্তর আমেরিকার মানুষের কাছে ডেভিলস বা মাঙ্কি নামে পরিচিত। ইউরোপে হ্যান্ড ফ্লাওয়ার বললে চিনে নেন অনেকে। আর স্প্যানিশরা ডাকেন ‘মানিতা’ বলে। রক্তবর্ণা এই ফুল ফোটে সাধারণত বসন্তের শেষে কিংবা গ্রীষ্মের শুরুতে। তবে স্প্যানিশ ফুটবলে সেই মানিতা ফুটছে এবার উইন্টারেই!
আসলে প্রতিপক্ষের জালে ৫ গোল করে হাতের পাঁচটি আঙুল দেখিয়ে সেলিব্রেশন করার এই ভঙ্গিমা স্প্যানিশ ফুটবলের এক ঐতিহ্যের জায়গায় নিয়ে গেছে বার্সেলোনা। কাতালানরা যার শুরুটা করেছিল, সেই ইয়োহান ক্রুইফের সময় থেকে। বিশেষ করে প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বী রিয়াল মাদ্রিদকে ৫ গোলে ঘোল খাওয়ালেই কাতালানরা পাঁচ আঙুল ছড়িয়ে এই ‘মানিতা’ ট্রল করে।
সেদিন যেমন জেদ্দায় সুপার কাপের ফাইনাল জিতে পিকে ‘মানিতা’ দেখিয়েছেন ক্যাসিয়াসকে! তেমনই বেনফিকার বিপক্ষে রোববার চ্যাম্পিয়ন্স লিগে অবিশ্বাস্য এক প্রত্যাবর্তনের ম্যাচে বেনফিকাকে ৪-৫ গোলে হারিয়েও বার্সা সমর্থকরা সোশ্যাল মিডিয়ায় ‘মানিতা’ লিখে হ্যাশট্যাগ দিচ্ছেন। আসলে এখন যে তাদের চলছেই এই মানিতা সিজন, গত ছয় মাসে ৯টি ম্যাচে প্রতিপক্ষকে ৫ গোল করে দিয়েছে ইয়ামালদের দলটি। সেখানে যেমন লা লিগার ম্যাচ ছিল, তেমনি চ্যাম্পিয়ন্স লিগেরও বড় মঞ্চ ছিল।
বার্সার মেরুন রং কখন যে মানিতার মতো লাল হয়ে গেছে, তা বোধ হয় সূক্ষ্মভাবে অনেকেই খেয়াল করেননি। গত আগস্টে ভায়াদোলিদকে ৭-০ গোলে হারানো দিয়ে শুরু হয় বার্সার এই মৌসুমের মানিতাযাত্রা। এর পর সেপ্টেম্বরে ভিয়ারিয়ালকে ১-৫ গোলে হারানো, অক্টোবরে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে সুইস ক্লাব ইয়াং বয়েজকে ৫-০ গোলে বিধ্বস্ত করে কাতালোনিয়ার আপন ক্লাবটি। ওই মাসেই লা লিগায় সেভিয়াকে ৫-১ গোল দেওয়া, নভেম্বরের ধারাবাহিকতায় সার্বিয়ান ক্লাব ক্রেভেনা জাভেজাকে ২-৫-এ হারানো।
সবকিছুই হয়েছে কোচ হ্যান্সি ফ্লিকের তৈরি ইয়ামাল, রাফিনহা, লেভানডস্কি, পেদ্রিদের দিয়ে দারুণ একটি রসায়নে। গেল ডিসেম্বরেও লা লিগায় মায়ার্কোর বিপক্ষে ১-৫ গোলের দারুণ একটি ম্যাচ উপহার দেয় বার্সা। তবে সবকিছু ছাপিয়ে যায় বোধ হয় জানুয়ারির এই সপ্তাহটিতে। যেখানে রিয়াল মাদ্রিদকে হতভম্ব করে জেদ্দায় ২-৫ গোলে সুপার কাপের শিরোপা জিতে নেন ইয়ামালরা।
বুধবার রাতে সেই ট্রফি হাতে নিয়েই ঘরের মাঠের দর্শকদের সামনে নেমেছিলেন ইয়ামালরা। ‘মানিতা উইন’ এর দারুণ একটা স্বাদ লেগে ছিল গোটা দলের মধ্যেই। গোলের জন্য জালে বল পাঠান গাভি, রাফিনহা, ইয়ামাল, তোরেস ও জুল কুন্দে। আত্মবিশ্বাসে ভরপুর কোচ ফ্লিক সেই সুযোগে এদিন কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষাও সেরে নেন। শুরুর একাদশে সেন্ট্রাল কোনো স্টাইকার না রেখে অতিরিক্ত একজন মিডফিল্ডার খেলান দুই উইঙ্গারের সঙ্গে।
লেভানডস্কিকে বিশ্রাম দিয়ে দানি ওলমোকে ফলস নাইনে খেলান তিনি। যেখানে বেটিস ডিফেন্ডারদের বোকা বানিয়ে ওলমো বারবার ঢুকে যান ডি বক্সে। ওলমোকে কোনোভাবেই ডিকোড করতে পারছিলেন না প্রতিপক্ষের কেউ। ঠিক এখানেই পুরোপুরি সফল ছিলেন ফ্লিক। আর এভাবেই দল নিয়ে গভীর সব পর্যবেক্ষণেই দারুণ এক মৌসুম পার করছে বার্সা। তাদের সেই মানিতার পাঁচটি পাপড়িতে ইয়ামালের সুগন্ধ হয়তো সবচেয়ে প্রখর। বছর সতেরোর এই ফরোয়ার্ড তাদের মানিতা মৌসুমে ৯ গোল ও ১৩ অ্যাসিস্ট করেছেন।
তবে ইয়ামাল কিন্তু মানিতা সেলিব্রেশন করতে জানেন না, ‘থ্রি জিরো ফোর’ তাঁর গ্রাম রোকাফোনডার পোস্টাল কোডই আঙুল দিয়ে তুলে ধরেন। অবশ্য বেটিসের বিপক্ষে এদিন গোল করে সেটাও করেননি। কেননা, বেটিসের একাডেমি থেকেই তো তাঁর যাত্রা শুরু। তাই আর যাই হোক সেখানে ‘মানিতা’ উদযাপন করা যায় না। সেটি করতে হয় বোধ হয় কেবল রিয়াল মাদ্রিদের বিপক্ষেই।
বার্সার পাঁচ গোলের সাম্প্রতিক ম্যাচ
| স্কোর | প্রতিপক্ষ | টুর্নামেন্ট | সময় |
| ৪-৫ | বেনফিকা | চ্যাম্পিয়ন্স লিগ | ২২ জানুয়ারি |
| ৫-১ | রিয়াল বেটিস | কোপা দেল রে | ১৬ জানুয়ারি |
| ২-৫ | রিয়াল মাদ্রিদ | সুপার কাপ | ১৫ জানুয়ারি |
| ১-৫ | মায়ার্কো | লা লিগা | ৪ ডিসেম্বর |
| ২-৫ | ক্রেভেনা জাভেজা | চ্যাম্পিয়ন্স লিগ | ৭ নভেম্বর |
| ৫-১ | সেভিয়া | লা লিগা | ২১ অক্টোবর |
| ৫-০ | ইয়াং বয়েজ | চ্যাম্পিয়ন্স লিগ | ২ অক্টোবর |
| ১-৫ | ভিয়ারিয়াল | লা লিগা | ২২ সেপ্টেম্বর |
| ৭-০ | ভায়াদোলিদ | লা লিগা | ৩১ আগস্ট |
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: দ র ণ এক
এছাড়াও পড়ুন:
ফেসবুকে বিদ্বেষপূর্ণ মন্তব্য না করার নির্দেশনা সিলেট জেলা বিএনপির
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দায়িত্বহীন, অশালীন বা বিদ্বেষপূর্ণ পোস্ট, মন্তব্য কিংবা তথ্য শেয়ার থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে সিলেট জেলা বিএনপি। দলের কেউ এ নির্দেশনা লঙ্ঘন করলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানানো হয়েছে।
গতকাল রোববার রাতে জেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক এমরান আহমদ চৌধুরী স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বিবৃতিটি গণমাধ্যমে পাঠিয়েছেন জেলা বিএনপির সহদপ্তর সম্পাদক মাহবুব আলম।
এদিকে দলের একজন জ্যেষ্ঠ নেতার বিরুদ্ধে ফেসবুকে কুরুচিপূর্ণ ও শিষ্টাচার–বহিভূর্ত মন্তব্য করায় গতকাল রাতে বিশ্বনাথ উপজেলার লামাকাজী ইউনিয়ন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আবেদুর রহমানকে (আছকির) সাময়িক বহিষ্কারের পাশাপাশি সাত দিনের মধ্যে কারণ দর্শাতে বলেছে জেলা বিএনপি। এ ছাড়া অনলাইন গণমাধ্যমে দলীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থী বক্তব্য দেওয়ার জন্য জেলা বিএনপির সহসভাপতি ফখরুল ইসলামকে (ফারুক) সতর্কীকরণ নোটিশ দেওয়া হয়েছে।
জেলা বিএনপির বিবৃতিতে বলা হয়, সাম্প্রতিক সময়ে সিলেট জেলা বিএনপির আওতাধীন কিছু ইউনিটের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম কার্যক্রমে অনভিপ্রেত ও পরস্পরবিরোধী বক্তব্য পরিলক্ষিত হয়েছে। বিশেষ করে বিশ্বনাথ উপজেলা, বিশ্বনাথ পৌরসভা ও ওসমানীনগর উপজেলা বিএনপি এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের কিছু নেতা-কর্মীর মধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিদ্বেষমূলক মন্তব্য, কটূক্তি ও বিভাজন সৃষ্টিকারী পোস্ট প্রচারিত হয়েছে। যা দলীয় শৃঙ্খলা ও ঐক্যের পরিপন্থী।
বিএনপি সব সময় সংগঠনের ঐক্য, শালীনতা ও পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধের রাজনীতি বিশ্বাস করে উল্লেখ করে বিবৃতিতে আরও বলা হয়, দলের কোনো পর্যায়ের নেতা বা কর্মীর কাছ থেকে বিভেদমূলক আচরণ, বিদ্বেষ ছড়ানো বা প্রকাশ্যে অপপ্রচার কখনোই কাম্য নয়। অতএব জেলা বিএনপির পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট সব ইউনিটের নেতা-কর্মীদের কঠোরভাবে সতর্ক করা হচ্ছে, যেন ভবিষ্যতে তাঁরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দায়িত্বহীন, অশালীন বা বিদ্বেষপূর্ণ পোস্ট, মন্তব্য বা শেয়ার থেকে সম্পূর্ণ বিরত থাকেন।
যোগাযোগ করলে জেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, সম্প্রতি ফেসবুকে কিছু নেতা-কর্মীকে একে অন্যের বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করতে দেখা গেছে। এ অবস্থায় জেলা বিএনপি একটি নির্দেশনা দিয়েছে। তা অমান্যকারী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।