চট্টগ্রাম ওয়াসার গাড়িচালক স্বামী তাজুল ইসলামের ‘দুর্নীতির’ ৩২ লাখ টাকার সম্পদ আড়াল করতে গিয়ে ফাঁসলেন স্ত্রী খায়রুন নেছা। কাগজে-কলমে দুদক ৩১ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদ পেলেও বাস্তবে ওই সম্পদের বর্তমান বাজারমূল্য পাঁচ থেকে ছয় কোটি টাকা। ১৯৮৯ সালে মাত্র দুই হাজার টাকা বেতনে ওয়াসায় চালকের সহকারী (হেলপার) হিসেবে চাকরি শুরু করেছিলেন তাজুল। পদোন্নতি পেয়ে গাড়িচালক হলেও এখন বেতন পান ৩৫ হাজার টাকা। ওয়াসায় নিয়োগ বাণিজ্য, টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ, চোরাই পানি বিক্রিসহ অনিয়ম আর দুর্নীতির মাধ্যমে কোটিপতি বনে গেছেন তিনি। দুর্নীতির অর্থ বৈধ করতে স্ত্রীকে কখনও পোলট্রি ব্যবসায়ী, কখনও কমিশন ব্যবসায়ী সাজিয়েছেন।

দুদক চট্টগ্রাম সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১-এর উপপরিচালক নাজমুচ্ছায়াদাত বলেন, চালক তাজুল তাঁর অবৈধ অর্থ বৈধ করতে গৃহিণী স্ত্রীকে ব্যবসায়ী সাজালেও কোনো কাগজপত্র দেখাতে পারেননি। তদন্ত করে তাঁর স্ত্রীর নামে প্রায় ৩২ লাখ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের তথ্য পেয়েছি। তাদের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে। গত বুধবার চার্জশিট গ্রহণ করেছেন চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্পেশাল জজ আদালত।

খায়রুন নেছা বলেন, অনেক দিন ধরে আমরা ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে আসছি। মানবিক মানুষ হিসেবে আমার স্বামী আত্মীয়স্বজনের পাশাপাশি অনেককেই বিনা পয়সায় চাকরি দিয়েছেন। আমাদের মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হয়েছে। আমি ব্যবসা করে কোটিপতি হয়েছি।
ওয়াসার এই গাড়িচালক ও তাঁর স্ত্রীর নামে নগরীর পশ্চিম শহীদনগরের ৬৪৭/আই/১২১৪ নম্বর হোল্ডিংয়ে পাঁচতলা নিজস্ব বাড়ি রয়েছে। এ দম্পতি স্থাবর ও অস্থাবর ১ কোটি ৭২ হাজার টাকার সম্পদ অর্জন করে।

দুদক চার্জশিটে উল্লেখ করে, পেশায় গৃহিণী খায়রুন নেছা জমি, বাড়ি ও গাড়ির মালিক বনে যাওয়ার নেপথ্যে রয়েছে তাঁর স্বামীর দুর্নীতি। খায়রুন নেছা তাঁর আয়কর নথিতে ২০০২-০৩ থেকে ২০২১-২২ করবর্ষ পর্যন্ত পোলট্রি ফার্মিং থেকে ২ লাখ ৮৯ হাজার টাকা, অন্য উৎস থেকে ১৪ লাখ, কমিশন ব্যবসা থেকে প্রায় পাঁচ লাখ, বাসা ভাড়া থেকে আট লাখ টাকা, সঞ্চয়পত্র থেকে আট লাখ, কর অব্যাহতিপ্রাপ্ত আয় সাড়ে পাঁচ লাখ এবং মেয়ের বিয়ে বিচ্ছেদ বাবদ ১১ লাখসহ ৫৫ লাখ টাকা আয় প্রদর্শন করেছেন। দুদকের তদন্তে উঠে আসে, খায়রুন নেছার নিজস্ব কোনো আয়ের উৎস নেই। পৈতৃক জমি বিক্রি থেকে প্রাপ্ত অর্থ, স্বামীর উপার্জনের টাকা এবং ব্যাংক ঋণের মাধ্যমে জমি ক্রয় ও ভবন নির্মাণ করেছেন। তাঁর বৈধ আয় সাড়ে ৩৩ লাখ টাকা। 

অন্যদিকে পোলট্রি ফার্ম থেকে, অন্য উৎস, কর অব্যাহতি ও কমিশন ব্যবসা থেকে আয়ের সপক্ষে তদন্তকালে তিনি কোনো দালিলিক প্রমাণ ও রেকর্ডপত্র দুদকের কাছে উপস্থাপন করতে পারেননি। খায়রুন নেছা তাঁর চাকরিজীবী স্বামীর অসাধু উপায়ে অর্জিত অর্থকে বৈধ করার অসৎ উদ্দেশ্যে আয়কর নথিতে ভুয়া আয়ের উৎস মিথ্যাভাবে প্রদর্শন করেছেন। গত ২০ বছরে তাঁর পারিবারিক ও অন্য খরচ সাড়ে ১০ লাখ টাকার তথ্য পাওয়া যায়। সে হিসাবে তাঁর বৈধ আয়ের উৎস সাড়ে ৩৩ লাখ টাকা থেকে কমে দাঁড়ায় ২৩ লাখ টাকা। তাঁর নামে স্থাবর ৩৮ লাখ ৬৮ হাজার টাকা এবং অস্থাবর ২১ লাখ ৩০ হাজারসহ ৬০ লাখ টাকার সম্পদের মালিক খায়রুন নেছা। এখানে তিনি ১০ লাখ ১১ হাজার টাকার সম্পদের তথ্য গোপন করেছেন। জ্ঞাত আয়ের সঙ্গে অসংগতিপূর্ণ সম্পদ অর্জন করেছেন ৩১ লাখ ৩৮ হাজার টাকার।  

দুদক হিসাবে ৩১ লাখ টাকার সম্পদ পেলেও বাস্তবে তাদের সম্পদের পরিমাণ পাঁচ থেকে ছয় কোটি টাকার বেশি। তাঁর পাঁচতলা বাড়িতে ১৭টি ফ্ল্যাট রয়েছে। এখানে একটি ফ্ল্যাট সোয়া চার কোটি টাকা। জায়গার দাম কোটি টাকারও বেশি।
চালক তাজুল ইসলাম বলেন, আমি কোনো দুর্নীতি করিনি। বৈধভাবে স্ত্রী ব্যবসা করেই সম্পদের মালিক হয়েছেন। আদালতে সব প্রমাণ দিয়ে আইনি লড়াই করব।

 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: কর ছ ন ব যবস

এছাড়াও পড়ুন:

শততম ম্যাচটি স্মরণীয় করে রাখতে চান ইয়ামাল

জুলাইয়ে পা দেবেন আঠারোতে, ড্রাইভিং লাইসেন্সটাও পেয়ে যাবেন তখন। এর আগেই ফুটবলে যে অনেক কিছু পেয়ে গেছেন বার্সার স্প্যানিশ উইঙ্গার লামিনে ইয়ামাল। আজ ঘরের মাঠে বার্সার জার্সিতে নিজের শততম ম্যাচ খেলতে নামছেন তিনি। চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সেমিফাইনালের প্রথম লেগে বার্সার প্রতিপক্ষ ইতালিয়ান ক্লাব ইন্টার মিলান। তাই গতকাল ইয়ামালকে নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে আসেন বার্সা কোচ হ্যান্সি ফ্লিক। সেখানে মন খুলে অনেক কথা বলেন ইয়ামাল। জানিয়ে দেন প্রথমবারের মতো চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সেমিফাইনাল খেলার উত্তেজনা তাঁর মতো দলের অনেকের মধ্যে কাজ করছে। 

মেসি-পরবর্তী সময়ে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে আর খেলা হয়নি বার্সার। পেদ্রি-ইয়ামালদের দিয়ে সেই অপূর্ণতা কাটানোর দারুণ সম্ভাবনা এখন দলটির সামনে। এস্তাদিও অলিম্পিক স্টেডিয়ামে মাইলফলকের ম্যাচটি জিতে স্মরণীয় করে রাখতে চান ইয়ামাল। ‘আমি নিজেকে কারও সঙ্গে তুলনা করি না, এমনকি মেসির সঙ্গেও নয়। এটা আমি আপনাদের ওপরই ছেড়ে দিলাম। আমি শুধু খেলাটা উপভোগ করতে চাই আর নিজের মতো করে পথে চলতে চাই। মেসির সঙ্গে আমার কথাও হয় না।’ 

সংবাদ সম্মলনে কেউ একজন মনে করিয়ে দেন মেসি তাঁর ক্যারিয়ারে ইন্টার মিলানের বিপক্ষে কখনও গোল করতে পারেননি। তথ্যটি জানা ছিল না ইয়ামালের। ‘যেখানে সব দলের বিপক্ষে গোল করেছেন তিনি, সেখানে আমি নিশ্চিত তিনি হয়তো গোল করতে ভুলে গিয়েছিলেন। আশা করছি, আমি সেটি করতে পারব।’ হেসে মাতিয়ে দেন পুরো সংবাদ সম্মেলন।

কোপা দেলরে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর মাত্র তিন দিনের বিরতি পায় বার্সা। এর মধ্যে পুরো দলকে ফের গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচের জন্য তৈরি করার একটা চ্যালেঞ্জ রয়েছে কোচ হ্যান্সি ফ্লিকের মধ্যে। তবে ম্যাচটি হচ্ছে ঘরের মাঠে, যেখানে বার্সার ইতিহাসে তারা ইন্টারের বিপক্ষে এ পর্যন্ত ছয়বার মুখোমুখি হয়ে কখনও হারেনি। সেই রেকর্ড প্রেরণা দেবে কাতালানদের। এই ম্যাচেও দলের গুরুত্বপূর্ণ স্ট্রাইকার লেভানডস্কিকে পাচ্ছে না বার্সা। চ্যাম্পিয়ন্স লিগে ইন্টার এবার নাম করছে তাদের কোচ ইনজাঘির ৩-৫-২ ফরমেশনের জন্য। যেখানে তাদের রক্ষণ লোহার দরজার মতো শক্ত! বাস্তোনি, একার্ভি, পাভার্ডদের এই রক্ষণ জার্মান ক্লাব বায়ার্নের গতি আটকে দিয়েছিল। সেখানে গোল করতে হলে বক্সের সামনে তিকিতাকার মতো পাসিং, কিংবা জায়গা বের করে গোলপোস্টের কাছে যাওয়াটা বেশ চ্যালেঞ্জিং। এ ধরনের দলের বিপক্ষে ক্রস পাসিংয়ে হেড থেকে গোল করার সম্ভাবনা তৈরি করে নিতে হয়। সেখানে লেভানডস্কিকে নিশ্চিতভাবে মিস করবেন ফ্লিক। 

বার্সার মাঠে এসে ম্যাচটি ড্র করতে পারলেও ইন্টার মিলান এক প্রকার এগিয়ে থাকবে। সেখানে তাদের কাউন্টার অ্যাটাকের জন্য লাওতারো মার্টিনেজ আর নিকোলো বারেলা রয়েছেন। তবে ইন্টারের এই রক্ষণভাগকে প্রশংসা করে ইয়ামাল জানিয়ে দিয়েছেন তাঁরাও তৈরি আছেন। ‘ইন্টারের খেলা দেখতে আমার বেশ ভালো লাগে। তাদের লাওতারো, বারেলার মতো খেলোয়াড় রয়েছেন। যারা জানেন, কীভাবে ভালো খেলতে হয়। তবে আমরাও তৈরি আছি।’ 

পেদ্রি আর ডি জং আজও বার্সার মাঝমাঠের প্রাণ হয়ে থাকবেন। আক্রমণভাগে তোরেস, রাফিনিয়াহ আর ইয়ামালতো আছেনই। এ বছর ২৮ ম্যাচের মাত্র একটিতে হেরেছে তারা। গোল করেছে ৮৩টি। তাহলে কি বার্সার সেই ‘মেসি যুগ’-এর মতো এই দলে এখন ‘ইয়ামাল যুগ’ চলছে বলা যায়, ইয়ামালের কাছেই এটি জানতে চেয়েছিলেন এক সাংবাদিক। ‘আমি মনে করি এটি বার্সা যুগ, ইয়ামাল যুগ নয়। আসলে আমার মতো এই বয়সে বার্সার হয়ে এতোগুলো ম্যাচ খেলার সুযোগ অনেকে খুব কমই পেয়েছে, সে হিসেবে আমি ভাগ্যবান। আসলে ফুটবলে কোনো বয়স হয় না। এটি এমন ধরনের খেলা, যার গুণমানই শেষ কথা। বয়স এখানে শুধু সংখ্যা।’ 

ইয়ামাল যেমন নিজেকে ভাগ্যবান মনে করছেন, তেমনি বার্সাও তাঁকে আশীর্বাদ হিসেবে মনে করতে পারে। ইয়ামাল ৯৯ ম্যাচ খেলে ২১ গোলের পাশাপাশি ৩৩টিতে অ্যাসিস্ট করেছেন, ৭১ ম্যাচে জয় আর ১৩টি ড্র করেছেন এ সময়ে। হারের স্বাদ পেয়েছেন মাত্র ১৫টিতে। তাই বার্সেলোনা শহরে বৈদ্যুতিক সমস্যা (পাওয়ার কাট) থাকলেও মাঠে ইয়ামালের আলোতে তারা আলোকিত হতে চান। লক্ষ্য যে তাদের মিউনিখের ফাইনালে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • চিনি-লবণের অনুপম পাঠ
  • শততম ম্যাচটি স্মরণীয় করে রাখতে চান ইয়ামাল
  • পোশাক রপ্তানিতে উৎসে কর হার ০.৫০% করার প্রস্তাব এফবিসিসিআইয়ের
  • চেয়ারম্যানের দপ্তরে বুধবারও অবস্থান করবেন কর্মকর্তারা
  • নির্মাতার ঘোষণার অপেক্ষায় চিত্রাঙ্গদা
  • ২০২৭ সালের জুনের পর ‘করছাড়’ থাকবে না
  • খালেদা জিয়ার ভাগনে শাহরিনকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ
  • আয়কর ফাঁকির মামলায় আদালতে আত্মসমর্পণ করেছেন খালেদা জিয়ার ভাগনে শাহরিন
  • শিশুর মাথা ঘামে কেন
  • কাঠফাটা রোদ্দুরে তপ্ত হাওয়া