চেয়ারম্যান-মেয়রদের ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা স্নাতক
Published: 24th, January 2025 GMT
মেয়র (পৌরসভা-সিটি করপোরেশন) ও চেয়ারম্যান (ইউনিয়ন-উপজেলা-জেলা পরিষদ) পদে সরাসরি ভোট হবে না। এসব পদে যারা নির্বাচন করবেন, তাদের ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা থাকতে হবে গ্র্যাজুয়েট (স্নাতক) বা সমমান। নিরক্ষর বা স্বল্পশিক্ষিতরা আর নির্বাচন করতে পারবেন না। মতামত বিশ্লেষণ ও যাচাই-বাছাই করে এমন সুপারিশ চূড়ান্ত করতে যাচ্ছে স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশন।
মাঠ পর্যায়ে মতামত নেওয়াসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ ও রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা গত বুধবার শেষ করেছে কমিশন। এখন চলছে সংকলন কার্যক্রম। এর পর আরেক দফা যাচাই-বাছাই শেষে প্রতিবেদন ফেব্রুয়ারির শেষ দিকে জমা দেওয়ার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।
সংস্কার কমিশনের প্রধান স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ড.
জানা গেছে, ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্যদের (মেম্বার) ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবেন ভোটাররা। আর ইউপি সদস্যরা ভোট দিয়ে একজনকে চেয়ারম্যান নির্বাচিত করবেন। চেয়ারম্যানকে অবশ্যই স্নাতক ডিগ্রিধারী হতে হবে। তা না হলে তিনি চেয়ারম্যান হতে পারবেন না। একইভাবে ইউপি সদস্যদের মধ্য থেকে একজনকে সভাধ্যক্ষ নির্বাচিত করা হবে। তাঁকেও স্নাতক ডিগ্রিধারী হতে হবে। একই পদ্ধতিতে সিটি করপোরেশন ও পৌরসভায় সরাসরি ভোটে মেয়র নির্বাচিত হতে পারবেন না। কাউন্সিলরদের ভোটের মাধ্যমে মেয়র ও সভাধ্যক্ষ নির্বাচিত হবেন। ইউনিয়ন চেয়ারম্যান ও মেয়রদের দায়িত্ব হবে সার্বক্ষণিক। ইউপি চেয়ারম্যানদের বেতন হবে উপজেলা পর্যায়ের প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তার সমান। পৌরসভার মেয়রের বেতন হবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সমান। সিটি করপোরেশনের মেয়রের বেতন হবে প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তাদের ওপরে। চেয়ারম্যান বা মেয়রদের কেউ স্নাতক ডিগ্রিধারীর নিচে হতে পারবেন না।
কাউন্সিলর-সদস্য হতে পারবেন সরকারি চাকরিজীবীরা
সিটি করপোরেশন-পৌরসভার কাউন্সিলর ও ইউপি সদস্য পদে সরকারি-বেসরকারি চাকরিজীবীরা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন। কমিশন মনে করে, স্থানীয় পর্যায়ের অনেক চাকরিজীবীর নির্ধারিত কর্মঘণ্টার বাইরে অনেক সময় থাকে। সে সময় তারা এ কাজ করবেন। প্রয়োজনে ছুটির দিন বা সরকারি অফিস সময়ের বাইরে তারা পরিষদের বৈঠকগুলো করবেন। এতে করে দক্ষ লোকজন জনপ্রতিনিধি হওয়ার সুযোগ পাবেন। তবে তারা চেয়ারম্যান বা মেয়র হতে পারবেন না। অবশ্য তাদেরও সন্তোষজনক মাসিক ভাতা থাকবে। কমিশন মনে করে, যোগ্য ব্যক্তিরা মাঠ পর্যায়ে জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হলে স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা শক্তিশালী হবে। চেয়ারম্যান-মেয়রের দায়িত্ব হবে পূর্ণকালীন চাকরির মতো। এ ছাড়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারীরা যাতে এসব নির্বাচনে অংশ নিতে উৎসাহিত হন, কমিশন সে জন্য কিছু সুপারিশ রাখবে।
স্থানীয় সরকারে থাকতে পারবেন না এমপিরা
স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উপজেলা ও জেলা পরিষদে প্রায় একইভাবে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হবেন। ইউপি, পৌরসভা ও সিটি করপোরেশনে একটি ছায়া পরিষদ থাকবে। তারা ইউপি সদস্য বা কাউন্সিলরদের মধ্য থেকে নির্বাচিত হবেন। তারা বিরোধী দলের ভূমিকা পালন করবেন। বৈঠকে সভাপতিত্ব করবেন সভাধ্যক্ষরা। সেখানে উন্নয়ন, পরিকল্পনা প্রণয়নসহ লেজিসলেটিভ (আইনি) অংশ দেখবেন। আর চেয়ারম্যান-মেয়ররা নির্বাহী বিভাগের কার্যক্রম তদারকি করবেন। স্থানীয় সরকারে উপদেষ্টা বা কোনো পদে থাকতে পারবেন না সংসদ সদস্যরা (এমপি)। সভায় উপস্থিত হয়ে শুধু মতামত দিতে পারবেন। কমিশন মনে করে, এমপিদের প্রভাবের কারণে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারেন না। তারা এমপিনির্ভর হয়ে পড়েছিলেন। এ ছাড়া স্থানীয় সরকারে জাতীয় সংসদের মতো স্থায়ী কমিটি থাকবে।
প্রতিটি উপজেলাকে তিন বা ততধিক ওয়ার্ডে ভাগ করে স্থানীয় সরকারের সদস্যদের মধ্য থেকে জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নির্বাচিত হবেন। সদস্যদের কোনো নির্বাহী ক্ষমতা থাকবে না। তারা পরিকল্পনা ও প্রকল্প প্রণয়ন করবেন।
অর্গানোগ্রামে আসবে পরিবর্তন
ইউনিয়ন পরিষদ ও পৌরসভার অর্গানোগ্রামে পরিবর্তনের সুপারিশ আসছে বলে জানা গেছে। সংস্কার কমিশন মনে করে, ইউনিয়ন পরিষদের জনবল কম। অথচ স্থানীয় সরকার ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করতে হলে জনবল বাড়ানো প্রয়োজন। এর পরই পৌরসভা। এখানেও জনবল বাড়াতে হবে। আর ইউনিয়ন থেকে শুরু করে উপজেলা ও জেলার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে হবে সমন্বিতভাবে। এ জন্য প্রতিটি পৌরসভায় পরিকল্পনাবিদ পদ থাকতে হবে। রাজস্ব আয় দিয়ে স্থানীয় সরকার পরিচালনায় সীমাবদ্ধতা থাকায় সরকারি বরাদ্দ বাড়াতে হবে। কমিশন মনে করে, গ্রাম থেকে সরকার প্রচুর রাজস্ব পায়। এর একটা অংশ বরাদ্দ দিয়ে স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালী করা প্রয়োজন। গ্রামে নাগরিকসেবা বাড়ানো জরুরি।
৫০ হাজারের কম জনসংখ্যার পৌরসভা বাতিল
৫০ হাজারের চেয়ে কম জনসংখ্যার পৌরসভাকে বাতিলের সুপারিশ করবে কমিশন। এসব পৌরসভার বেশির ভাগ অতীতে দলীয় নেতাদের পুনর্বাসনের জন্য করা হয়েছে। এ ধরনের পৌরসভায় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মাসের পর মাস বেতন বকেয়া থাকে। এ ধরনের প্রায় শ’খানেক পৌরসভাকে ইউনিয়নের সঙ্গে একীভূত করার সুপারিশ করবে কমিশন।
পার্বত্য জেলায় ভিন্ন পদ্ধতিতে ভোট
দেশের পার্বত্য তিনটি জেলায় ভিন্ন পদ্ধতিতে নির্বাচন আয়োজনের সুপারিশ করবে কমিশন। এসব জেলায় স্থানীয় নৃতাত্ত্বিক জাতিগোষ্ঠীর বাইরে দেশের বিভিন্ন স্থানের বাসিন্দারা বসতি (সেটেলার) গড়েছেন। এ নিয়ে স্থানীয় ও অস্থানীয় বিরোধ মাঝেমধ্যে দেখা দেয়। এ ক্ষেত্রে কমিশন মনে করে, ইউপি বা পৌর নির্বাচনে সদস্য বা কাউন্সিলর পদে ভোট হবে জাতিসত্তাভিত্তিক। ভিন্ন জাতিসত্তার প্রার্থীকে কেউ ভোট দিতে পারবে না। চেয়ারম্যান বা মেয়রের ক্ষেত্রে এই নিয়ম প্রযোজ্য হবে না। তিন পার্বত্য জেলার অন্যান্য নিয়ম বিদ্যমান থাকবে। ১৯৮৯ সালের পর তিন পার্বত্য জেলা পরিষদ নির্বাচন হয়নি। এ নির্বাচনকে অগ্রাধিকার হিসেবে সুপারিশ করা হবে। এটা হলে পাহাড়ে সহিংসতা অনেকটা কমে আসবে বলে মনে করে কমিশন।
স্থানীয় নির্বাচন একসঙ্গে
স্থানীয় সরকারগুলোর নির্বাচন একসঙ্গে করার সুপারিশ করা হবে। কমিশনপ্রধান ড. তোফায়েল জানান, ২০২১ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত স্থানীয় সরকারে ভোট করতে নির্বাচন কমিশনের ২৩ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। একসঙ্গে এসব নির্বাচন করলে খরচ হতো ৬০০ কোটি টাকা। এ জন্য প্রস্তাবে সব স্থানীয় সরকার নির্বাচন একসঙ্গে করার সুপারিশ থাকবে। আর কোনো স্থানীয় সরকার নির্বাচন দলীয় প্রতীকে হবে না।
আরও যত সুপারিশ
প্রার্থীদের সংক্ষিপ্ত হলফনামায় প্রশ্ন থাকবে– কোনো চাঁদাবাজি বা মাদক ব্যবসা-সেবনের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন কিনা। হলফনামায় মিথ্যা তথ্য দিলে তার পদ বাতিল হবে। ৪০ শতাংশের নিচে ভোট পড়লে পুনর্নির্বাচনের বিধান, বছর শেষে জনপ্রতিনিধির কাজের মূল্যায়নের ব্যবস্থা, টানা দুই বছর কার্যক্রম সন্তোষজনক না হলে বরখাস্তের বিধান, জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রস্তাব, কিছু ইউনিয়নে ওয়ার্ড সংখ্যা বাড়ানোর সুপারিশ থাকতে পারে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: স থ ন য় সরক র র স প র শ কর প রসভ র একসঙ গ পর য য় সদস য উপজ ল করব ন ব যবস
এছাড়াও পড়ুন:
ঘাড়ব্যথার কারণগুলো কী কী, প্রতিরোধ ও চিকিৎসা জেনে রাখুন
অনেক কারণে ঘাড়ে ব্যথা হতে পারে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য—
১. সারভাইক্যাল স্পন্ডেলোসিস
২. সারভাইক্যাল স্পন্ডেলোসিস
৩. সারভাইক্যাল রিবস
৪. সারভাইক্যাল ক্যানেল স্টেনোসিস বা স্পাইনাল ক্যানাল সরু হওয়া
৫. সারভাইক্যাল ডিস্ক প্রলেপস বা হারনিয়েশন যেখানে হারনিয়াটেড ডিস্ক নার্ভের ওপর চাপ প্রয়োগ করে
৬. মাংসপেশি, হাড়, জোড়া, লিগামেন্ট, ডিস্ক (দুই কশেরুকার মাঝখানে থাকে) ও স্নায়ুর রোগ বা ইনজুরি
৭. অস্বাভাবিক পজিশনে নিদ্রা
৮. উচ্চ রক্তচাপ ও হৃদ্রোগ
৯. হাড় ও তরুণাস্থির প্রদাহ এবং ক্ষয়
১০. অস্টিওপরোসিস বা হাড়ের ক্ষয় ও ভঙ্গুরতা রোগ
১১. হাড় নরম ও বাঁকা হওয়া
১২. রিউমাটয়েড-আর্থ্রাইটিস ও সেরো নেগেটিভ আর্থ্রাইটিস
১৩. সারভাইক্যাল অস্টিও-আর্থ্রাইটিস
১৪. ফাইব্রোমায়ালজিয়া
১৫. সামনে ঝুঁকে বা পাশে কাত হয়ে ভারী কিছু তুলতে চেষ্টা করা
১৬. হাড়ের ইনফেকশন
১৭. ডিস্কাইটিস (ডিস্কের প্রদাহ)
১৮. পেশাগত কারণে দীর্ঘক্ষণ ঘাড় নিচু বা উঁচু করে রাখলে ইত্যাদি।
উপসর্গ
ঘাড়ব্যথা কাঁধ, বাহু, হাত ও আঙুল পর্যন্ত ছড়াতে পারে।
কাঁধ, বাহু, হাত ও আঙুলে অস্বাভাবিক অনুভূতি বা অবশ ভাব।
বাহু, হাত ও আঙুল দুর্বল হতে পারে।
সব সময় ঘাড় ধরে বা জমে আছে মনে হয়।
ঘাড়ের মুভমেন্ট করলে, ঘাড় নিচু করে ভারী কিছু তোলার পর তীব্র ব্যথা।
হাঁচি, কাশি দিলে বা সামনে ঝুঁকলে ব্যথা বেড়ে যায়।
ব্যথা মাথার পেছন থেকে শুরু হয়ে মাথার সামনে আসতে পারে।
পরীক্ষা-নিরীক্ষা
ঘাড়ব্যথার কারণ নির্ণয় করার জন্য প্রয়োজনীয় ল্যাবরেটরি পরীক্ষা হতে পারে—রক্তের বিভিন্ন পরীক্ষা, ঘাড়ের এক্স-রে, এমআরআই বা সিটি স্ক্যান।
চিকিৎসা
চিকিৎসা এর কারণগুলোর ওপর নির্ভর করে।
কনজারভেটিভ চিকিৎসা: ১. ব্যথা বা প্রদাহনাশক ওষুধ ২.ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা। বিভিন্ন ধরনের ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা যেমন ম্যানুয়াল বা ম্যানুপুলেশন থেরাপি, থেরাপিউটিক এক্সারসাইজ ব্যবহৃত হয়। বিভিন্ন ধরনের ইলেকট্রোমেডিকেল ইকুইপমেন্ট যেমন ইন্টারফ্যারেনশিয়াল থেরাপি, অতি লোহিত রশ্মি, মাইক্রোওয়েভ ডায়াথারমি, আল্ট্রাসাউন্ড থেরাপি, শর্টওয়েভ ডায়াথার্মি ও ইন্টারমিটেন্ট ট্র্যাকশন ইত্যাদির মাধ্যমে চিকিৎসা করা যায়।
সার্জিক্যাল চিকিৎসা: মেডিকেল চিকিৎসায় ভালো না হলে, ব্যথা ক্রমান্বয়ে বাড়তে থাকলে, স্নায়ু সমস্যা দেখা দিলে, বাহু, হাত ও আঙুলে দুর্বলতা এবং অবশ ভাব দেখা দিলে এবং প্রস্রাব বা পায়খানার নিয়ন্ত্রণ না থাকলে দ্রুত সার্জিক্যাল চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে।
ঘাড়ব্যথা প্রতিরোধে করণীয়
১. সামনের দিকে ঝুঁকে দীর্ঘক্ষণ কাজ করবেন না।
২. মাথার ওপর কোনো ওজন নেবেন না।
৩. প্রয়োজনীয় বিশ্রাম নিতে হবে।
৪. শক্ত বিছানায় ঘুমাবেন।
৫. শোবার সময় একটা মধ্যম সাইজের বালিশ ব্যবহার করবেন, যার অর্ধেকটুকু মাথা ও অর্ধেকটুকু ঘাড়ের নিচে দেবেন।
৬. তীব্র ব্যথা কমে গেলেও ঘাড় নিচু বা উঁচু করা, মোচড়ানো (টুইসটিং) বন্ধ করা।
৭. সেলুনে কখনোই ঘাড় মটকাবেন না।
৯. কাত হয়ে শুয়ে পড়বেন না বা টেলিভিশন দেখবেন না।
১০. কম্পিউটারে কাজ করার সময় মনিটর চোখের লেভেলে রাখবেন।
১১. গরম প্যাড, গরম পানির বোতল দিয়ে গরম সেঁক দেবেন।
১২. ঘাড়ের পেশি নমনীয় ও শক্তিশালী হওয়ার ব্যায়াম করতে হবে।
এম ইয়াছিন আলী, চেয়ারম্যান ও চিফ কনসালট্যান্ট, ঢাকা সিটি ফিজিওথেরাপি হাসপাতাল, ঢাকা
আরও পড়ুনকাঁধের ব্যথা বা কাঁধ জমে যাওয়ার কারণ ও করণীয়১৭ এপ্রিল ২০২৫