মহাসড়ক অবরোধ করে ছিনতাই বন্ধের দাবি
Published: 25th, January 2025 GMT
ছিনতাই বন্ধের দাবি জানিয়ে গাজীপুরের টঙ্গীতে মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। গতকাল শনিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে স্টেশন রোড এলাকায় অবস্থান নেন তারা। এ সময় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের উভয় পাশে আধা ঘণ্টার বেশি সময় যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকে। সোয়া ১২টার দিকে সরে যান বিক্ষোভকারীরা।
বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের ভাষ্য, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের টঙ্গী বাজার থেকে টঙ্গীর গাজীপুরা পর্যন্ত প্রতিনিয়ত ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে। কয়েক দিনে অন্তত ২০ জন শিক্ষার্থী এ মহাসড়কের টঙ্গী এলাকায় ছিনতাইয়ের শিকার হয়েছেন। পুলিশ ছিনতাই প্রতিরোধে ব্যর্থ হয়েছে বলেই সাধারণ শিক্ষার্থীদের মহাসড়কে বিক্ষোভ করতে হচ্ছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে ছিনতাইকারীদের দৌরাত্ম্য বন্ধের দাবি জানিয়ে তারা বলেন, না হলে শিক্ষার্থীরা মহাসড়কে নেমে কঠোর আন্দোলনের কর্মসূচি দেবে।
তাদের দাবির প্রতি সমর্থন জানিয়ে মাদ্রাসা শিক্ষক ফারুক হোসেন বলেন, গত ডিসেম্বরে ময়মনসিংহ থেকে তাঁর ভাই রাসেল বেড়াতে এসেছিলেন। টঙ্গী পূর্ব থানার সামনে ৫-৬ জন অল্প বয়সী ছেলে ছুরি-চাপাতির ভয় দেখিয়ে রাসেলের কাছ থেকে টাকা ও মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয়। এ ঘটনায় থানায় অভিযোগ করা হয়েছে। প্রায় দেড় মাস হয়ে গেল কোনো সংবাদ পাননি।
রহমত উল্লাহ বাবু নামের আরেক ব্যক্তি বলেন, ‘২২ জানুয়ারি সকাল ৮টার দিকে আমি টঙ্গী মেডিকেলে যাওয়ার জন্য রাস্তা পার হচ্ছিলাম। এ সময় কয়েকজন আমাকে ধাক্কা মেরে ফেলে দেয়। পরে আমার মোবাইল ফোন নিয়ে চলে
যায়। এ ঘটনা পুলিশকে জানিয়েছি। কিন্তু কোনো সমাধান পাইনি।’
মহাসড়কে বিক্ষোভ শেষে শিক্ষার্থীরা এসব বিষয়ে কথা বলতে যান গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের সহকারী উপকমিশনার (টঙ্গী জোন) মেহেদী হাসান দিপুর কাছে। তাঁর কাছে বিক্ষোভকারীরা মৌখিক অভিযোগ করেন। এ বিষয়ে মেহেদী হাসান দিপু বলেন, ছিনতাই বন্ধের দাবিতে শিক্ষার্থীরা মৌখিক অভিযোগ দিয়েছেন। ছিনতাইকারীদের গ্রেপ্তারে পুলিশের কয়েকটি টহল দল কাজ করছে। ছাত্ররা জানিয়েছেন, ছিনতাই বন্ধে তারাও পুলিশের সঙ্গে মহাসড়ক ও বিভিন্ন এলাকায় কাজ করতে চান। বিষয়টি নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলবেন।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
সুন্দর কাঠ ও ফুলের গামারি
ময়মনসিংহ শহরের ব্রহ্মপুত্র তীরের কাছারিঘাট ও শিল্পাচার্য জয়নুল উদ্যান সকালে প্রাতভ্র৴মণকারীদের পদচারণে মুখর থাকে। কয়েক দিন আগে হেঁটে ফেরার পথে জেলা নির্বাচন অফিসের পেছনে গামারিগাছে ফুল ফুটতে দেখলাম। এই গাছের পাতা শীতে ঝরে গিয়েছিল। বসন্তে পত্রশূন্য গাছে ফুল ফুটেছে। ফুল ফোটার পর আবার পাতা গজাচ্ছে। কাঠের জন্য লাগানো হলেও এর হলুদ ফুলও কিন্তু সুন্দর। গামারি ফুল ভ্রমরের খুব প্রিয়; কারণ, এই ফুলে বেশ মধু আছে। তাই গামারির আরেক নাম ভ্রমরপ্রিয়া। টিয়া ও কাঠবিড়ালিরও প্রিয় এই ফুল। ফুলের নিচের দিকটা খয়েরি বাদামি।
গামারি সবুজ ও ঘন পাতাবিশিষ্ট, দ্রুত বর্ধনশীল পত্রঝরা বৃক্ষ। গামারি কাঠের জন্য লাগানো হলেও এর ফুলও কম সুন্দর নয়। এর বৈজ্ঞানিক নাম Gmelina arborea, এটি Lamiaceae পরিবারের বৃক্ষ। ইংরেজিতে এই গাছ কান্ধার ট্রি, কাশ্মীর ট্রি, গুমার ট্রি, মালয় বুশ-বিচ, হোয়াইট বিচ, হোয়াইট টিক ইত্যাদি নামে পরিচিত। এ ছাড়া বাংলা নাম গামার, গাম্বার, গাম্ভারি, তার কাঠ, গাম্ভারিকা ইত্যাদি নাম রয়েছে। এর সংস্কৃত নামগুলো হলো মধুমতি, গাম্ভারি, সিন্ধুপর্ণী, ভাদ্রাপর্ণী, গামহার ইত্যাদি।
আদিনিবাস ভারতবর্ষ ও মিয়ানমার। বাংলাদেশসহ দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ায় জন্মে। ভারতের আসাম, দক্ষিণ বিহার, ওডিশা ও পশ্চিমবঙ্গের উত্তরাঞ্চল–সংলগ্ন এলাকায় এ গাছ হয়। বাংলাদেশের মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, চট্টগ্রাম, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি, বান্দরবান ও কক্সবাজার জেলায় বেশি দেখা যায়।
এই গাছ লম্বায় ১৫ থেকে ৩৫ মিটার উঁচু হয়। গাছের প্রশাখা ও কুঁড়ি রোমশ। বাকল সাদা বা উজ্জ্বল ধূসর। পাতা পানপাতার আকৃতির, ২০ থেকে ২৪ সেন্টিমিটার লম্বা হয়। পাতার ওপর দিক উজ্জ্বল সবুজ, নিচে পাণ্ডুর, বোঁটা ৬ থেকে ১০ সেন্টিমিটার লম্বা। শীতে পাতা ঝরে। এটি অত্যধিক খরা–সহনশীল। বসন্তকালে পাতাহীন ডালে ডালে দেখা যায় গাঢ় হলুদ ফুল। পাঁচটি পাপড়ি থাকলেও মাঝের পাপড়িটি অন্যগুলোর চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ লম্বা। বড় পাপড়িটির লম্বা পতাকার মতো অংশটি গাঢ় হলুদ। ফুলের গোড়ার দিকে হলুদ রঙের পাশাপাশি দেখা মেলে লালচে-বাদামি ও খয়েরি রঙের। ফুলের অনেক মিষ্টি গন্ধ, ফুল ৩ থেকে ৩ দশমিক ৫ সেন্টিমিটার লম্বা, ২ ভাগে বিভক্ত। এর পুষ্পমধু ভোমরাদের খুবই প্রিয়। গামারির ফল দেখতে গোলাকার, ডিম্বাকৃতির, ফলে এক-দুটি বীজ হয়। ফল তিন সেন্টিমিটার চওড়া, শাঁসাল, পাকলে হালকা হলুদ হয়। শীতের পর ফুল এবং তাঁর দুই মাস পর ফল হয়।
কাঠ হলুদ, খানিকটা লাল অথবা সাদা। কাঠ টেকসই, সহজে কাজ করা যায়। সেগুনের পরেই গামারি কাঠের স্থান। এ জন্য ইংরেজিতে একে হোয়াইট টিক বলে। এই কাঠ আসবাব নির্মাণের জন্য বিশেষ উপযোগী। খোদাইয়ের কাজ, তক্তা, বাক্স, চিরুনি, খেলনা, গাড়ি ও নৌকা এই কাঠ দিয়ে বানানো যায়। এই কাঠের প্লাইউড বেশ ভালো।
গামারির অনেক ভেষজ গুণ রয়েছে। কটু–তিক্ত রস, গুরুপাক, উষ্ণবীর্য, কফ ও ত্রিদোষনাশক, বিষদোষ দাহ, জ্বর, তৃষ্ণা ও রক্তদোষনাশক। এর ছাল এবং কাঠে আছে অনেক তিক্ত পদার্থ ও স্টেরোল। পাতার রসে আছে জীবাণুনাশক শক্তি। কচি পাতার রস গনোরিয়া ও কাশিতে উপকারী। শিকড় কৃমিনাশক ও কুষ্ঠরোগে উপকারী। ক্ষতের পুঁজ বের করে দেয়। ফল চর্মরোগ ও চুল ওঠা বন্ধ করার মহৌষধ। শিকড় কৃমিনাশক ও কুষ্ঠরোগে উপকারী। গামারিগাছের পাতা এবং ফল গবাদিপশুর খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এগুলো পুষ্টিকর এবং প্রাণীদের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী।
চয়ন বিকাশ ভদ্র: অধ্যাপক, উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগ, মুমিনুন্নিসা সরকারি কলেজ, ময়মনসিংহ