চিন্তাই ছিল আমাকে কামব্যাক করতে হবে: নমিরা
Published: 26th, January 2025 GMT
তাশদিক নমিরা আহমেদ। অভিনেত্রী ও মডেল । ২০১১ সালে পথচলা শুরু। টানা আট বছর ব্যস্ত ছিলেন নৃত্য, মডেলিং ও অভিনয় নিয়ে। হঠাৎ করেই বিরতি দিয়েছেন। বিরতি ভেঙে ফের কাজে ফিরেছেন তিনি। গেলো বছরে শুরু থেকেই অভিনয়ে নিয়মিত হয়েছেন তিনি। তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন বুলবুল ফাহিম।
বছরের শুরুতে ওয়েব সিরিজ ‘ব্ল্যাকমানি’ মুক্তি পেলো.
..
হ্যাঁ। এটির অনুভূতি দারুণ। চরিত্র ছোট হলেও দারুণ এনজয় করেছি।
আট বছর কাজের পর হঠাৎ দীর্ঘ বিরতির কারণ?
চার-পাঁচ বছরের একটি লম্বা বিরতিতে ছিলাম। মূলত পারিবারিক ও মাতৃত্বজনিত কারণে এ বিরতি নেওয়া। আমার ছেলেমেয়ে দুইজন। ওরা একদম ছোট। বিরতির ফাঁকে ফাঁকে দু’একটা নাচের অনুষ্ঠান করেছি। এক বছর আগে একটি সিনেমা দিয়ে আবারও শুরু করলাম। সবাই স্বাগত জানিয়েছে। বিষয়টি আমার খুবই ভালো লেগেছে।
বিরতি থেকে ফিরে ইন্ডাস্ট্রিতে কী পরিবর্তন দেখেছেন?
অনেক পরিবর্তন। কারণ, আমি যখন নিয়মিত কাজ করেছি তখন ইউটিউবও অতটা জনপ্রিয় ছিল না। এখন টেলিভিশন, ইউটিউব, ওটিটিসহ আরও অনেক মাধ্যম। এখন অনেকেই টিটিভির জন্য ফোন দিয়ে বলেন আপু, একটি ওভিসি আছে। তখন অবাক হই। কারণ, এটি নিয়ে আমার জানাশোনাই ছিল না। মনে হয় আমি এখন নতুন জগতে এসেছি। বলা চলে, আবার নতুন করে শুরু হয়েছে। এখন নতুন ও পুরাতন পরিচালক, নতুন শিল্পীদের সঙ্গে কাজ করছি। সবার সঙ্গে কাজ করার মাধ্যমে নিজেকে খাপ খাইয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছি।
বাচ্চা হওয়ার পর নায়িকাদের ফিটনেস নিয়ে একটা সমস্যা থাকে। কিন্তু আপনার ক্ষেত্রে সেটা উল্টো।
এটার পেছনে আছে কঠোর পরিশ্রম। পরপর মা হওয়ার পরও আমি নিজেকে অনেক ফিট রাখার চেষ্টা করেছি। কারণ, আমার চিন্তুা ছিল আমাকে কামব্যক করতেই হবে। যেহেতু আমার ব্যকগ্রাউন নাচ সেহেতু কিছু করি বা না করি পৃথিবী উল্টে গেলেও এটা আমাকে নাচ করতেই হবে। সেই জায়গা থেকে সবকিছু নিয়ম মাফিক করেছি।
একটা সময় একসঙ্গে আপনি অনেক কাজ করেছেন...
আমার মনে আছে, আমি বিরতিতে যাওয়ার এক দিন আগেও আমি একসঙ্গে ৮টি সিরিয়ালে কাজ করেছি। সেই সঙ্গে একক নাটক তো ছিলই। কয়েক মাস হলো আমি আবার সেটি অনুভব করছি। ব্যাক টু ব্যাক কাজের মধ্যেই আছি।
নাটকের মান নিয়ে এখন অনেক প্রশ্ন। বিশেষ করে ইউটিউবে...
এ জায়গায় অন্তত তাল মেলানো যাবে না। কারণ, আমার যে জায়গা সেখান থেকে আমি যদি বিচ্যুত হই তাহলে আমার দর্শকই আমাকে গালি দেবে। এখন ইউটিউবে যে নাটক হচ্ছে তার মধ্যে বেশির ভাগই মানহীন। এমন অনেক নাটকে অভিনয়ের প্রস্তাব এসেছে। সোজা না করে দিয়েছি। আমি যে মানে আগে কাজ করতাম এখনও সে মানেই কাজ করছি। আগামীতেও মান বজায় রেখে কাজ করার চেষ্টা করব।
আপনি যে সময়টাতে কাজ করেছেন সেই সময়ের শিল্পীরা এখন ওটিটিমুখী...
এটা ঠিক। কিন্তু আমিও এই প্ল্যাটফর্মে কাজ করছি। তবে ভালো লাগছে এই ভেবে আমার যে জায়গা আমি রেখে গিয়েছিলাম সে জায়গাটা ফিরে এসে আমি পেয়েছি। হয়ত ম্যাচিভ পিপলের কাছে আমার জনপ্রিয়তা অনেক কম কিন্তু নির্মাতা, গুণীশিল্পীসহ আরও যারা আছেন তাদের কাছে আমি নমিরাই আছি। যাদের সঙ্গে কাজ করেছে তার আমাকে দারুনভাবে গ্রহণ করেছে। এটাই আমার জন্য বড় পাওয়া। সুতরাং মাধ্যম কোনো বিষয় নয়, কাজটাই আসল।
এখন কোন ধরনের অভিনয়ে মনোযোগ বেশি দিচ্ছেন?
একটু চিন্তাভাবনা করেই কাজে হাত দিচ্ছি। আমাকে বেজ করে রোমান্টিক, থ্রিলারসহ যেকোনো কাজেই বেশি মনোযোগী হচ্ছি। তার মানে এই না যে শুধু নায়িকার চরিত্রেই অভিনয় করতে হবে। ভালো চরিত্র হলে রাজি হয়ে যাচ্ছি।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ক জ কর ছ
এছাড়াও পড়ুন:
পবিত্র কোরআনে ‘রুকু’ কীভাবে এল
আমরা কোরআন তিলাওয়াত করার সময় প্রতিটি সুরার শুরুতেই আয়াত সংখ্যার সঙ্গে ‘রুকু’ সংখ্যাও লেখা দেখি। পৃষ্ঠার মাঝেও রুকু লেখা থাকে। এই রুকু মানে কী? কী কাজ এই রুকুর?
এই প্রবন্ধে রুকুর ধারণা, কোরআন তিলাওয়াতের সঙ্গে এর সম্পর্ক এবং কোরআনে রুকুর সংখ্যা নিয়ে আলোচনা করা হলো।
রুকু কীরুকু আরবি শব্দ, যার অর্থ ‘নমন’ বা ‘বাঁকানো’। নামাজে রুকু বলতে কোমর ঝুঁকিয়ে আল্লাহর প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শনের অঙ্গভঙ্গিকে বোঝায়।
তবে কোরআন তিলাওয়াতের ক্ষেত্রে রুকু একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ আয়াতের সংকলনকে বোঝায়, যা তিলাওয়াতকে সংগঠিত ও সহজতর করে। এটি বিশেষ করে হাফেজদের (যাঁরা কোরআন মুখস্থ করেন) জন্য সুবিধাজনক।
ইমাম সারাখসি (মৃ. ৪৮৩ হি.) রুকুকে রাকাতের সঙ্গে সম্পর্কিত করে বলেছেন, এক রাকাতে তিলাওয়াতের জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণ আয়াতের সংকেত হিসেবে রুকু ব্যবহৃত হতো।কোরআন তিলাওয়াতে রুকুর ভূমিকারুকু নির্ধারণের উদ্দেশ্য ছিল তিলাওয়াতের সময় আয়াতের বিষয়বস্তুর ধারাবাহিকতা বজায় রাখা এবং বিরতি নেওয়ার সুবিধা প্রদান। ইসলামের প্রাথমিক যুগে, বিশেষ করে হাফেজরা তিলাওয়াতের পর নির্দিষ্ট আয়াতে এসে রুকুতে যেতেন, যা এই প্রথার উৎপত্তির ইঙ্গিত দেয়।
ঐতিহাসিকভাবে রুকু নির্ধারণের প্রথা মা-ওয়ারাউন্নাহার (বুখারা, সমরখন্দ) অঞ্চলে ব্যাপকভাবে প্রচলিত ছিল। এটি তারাবিহ নামাজের সময় কোরআন তিলাওয়াতকে সংগঠিত করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করত।
ইমাম সারাখসি (মৃ. ৪৮৩ হি.) রুকুকে রাকাতের সঙ্গে সম্পর্কিত করে বলেছেন, এক রাকাতে তিলাওয়াতের জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণ আয়াতের সংকেত হিসেবে রুকু ব্যবহৃত হতো। অন্য একটি মত অনুসারে, হাফেজরা নির্দিষ্ট পরিমাণ তিলাওয়াতের পর রুকুতে যাওয়ার কারণে এই নামকরণ হয়েছে। (আল-সারাখসি, আল-মাবসুত, বৈরুত: দার আল-মা’রিফা)
আরও পড়ুনধীরে ধীরে কোরআন অবতীর্ণ হওয়ার কারণ৩০ মে ২০২৫কোরআনে রুকুর সংখ্যাকোরআনে রুকুর সংখ্যা বিভিন্ন অঞ্চলে ও ঐতিহ্য অনুসারে ভিন্নতা দেখায়। প্রধানত তিনটি ধারা প্রচলিত: ৫৫৮, ৫৪০ ও ৪৮০।
৫৫৮ রুকু: বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানের মুসহাফে সাধারণত ৫৫৮টি রুকু ব্যবহৃত হয়। প্রতিটি সুরায় রুকুর সংখ্যা উল্লেখ থাকে এবং আরবি অক্ষর ‘আইন’ দিয়ে রুকু চিহ্নিত করা হয়। এই চিহ্নে তিনটি সংখ্যা থাকে:
১. ওপরের সংখ্যা: সুরার মধ্যে রুকুর ক্রম।
২. মাঝের সংখ্যা: রুকুর আয়াতসংখ্যা।
৩. নিচের সংখ্যা: পারার (জুজ) মধ্যে রুকুর ক্রম।
এই পদ্ধতি তিলাওয়াতকে সুসংগঠিত করে এবং হাফেজদের জন্য সুবিধাজনক। (সিদ্দিকি, এ, ২০১৭, কোরআনিক ম্যানুস্ক্রিপ্টস অ্যান্ড দেয়ার ডিভিশনস, জার্নাল অব ইসলামিক স্টাডিজ, ২৮(২), (১৪৫-১৬৭)
বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানের মুসহাফে সাধারণত ৫৫৮টি রুকু ব্যবহৃত হয়। প্রতিটি সুরায় রুকুর সংখ্যা উল্লেখ থাকে এবং আরবি অক্ষর ‘আইন’ দিয়ে রুকু চিহ্নিত করা হয়।৫৪০ রুকু: বুখারায় প্রথম রুকু নির্ধারণের সময় এর সংখ্যা ছিল ৫৪০। বুখারার মাশায়েখরা রমজানে তারাবিহ নামাজে প্রতি রাকাতে ১০টি আয়াত তিলাওয়াতের প্রথা অনুসরণ করতেন। এভাবে ৩০ দিনে কোরআনের প্রায় ৬ হাজার আয়াত তিলাওয়াত হতো। তবে দশ আয়াতের ভিত্তিতে তিলাওয়াত করলে বিষয়বস্তুর মাঝখানে বিরতি পড়ত, তাই তারা বিষয়ের ধারাবাহিকতা রক্ষার জন্য রুকু নির্ধারণ করেন। (রহিম বখশ, আল-খাত্ত আল-উসমানি ফি রাসমিল কোরআন, লাহোর: মাকতাবা কুদ্দুসিয়া, ১৯৮২)
৪৮০ রুকু: সিন্ধুর হাশিম থাট্টুভি কোরআনের রুকুসংখ্যা ৪৮০ নির্ধারণ করেছিলেন। তিনি সুরাভিত্তিক নয়, বরং পারাভিত্তিক রুকু নির্ধারণ করেন। প্রতি পারায় ১৬টি রুকু ধরে ৩০ পারায় মোট ৪৮০ রুকু হয়।
তিনি ‘রুকু’ শব্দের পরিবর্তে ‘মাকরা’ বা ‘মাকারি’ শব্দ প্রস্তাব করেন, যা ‘কিরআত’ (পাঠ্যাংশ) থেকে উদ্ভূত। (আজমি, এম এম, ২০০৩, দ্য হিস্ট্রি অব দ্য কোরআনিক টেক্সট: ফ্রম রেভল্যুশন টু কম্পাইলেশন, যুক্তরাজ্য: আল-কোরআন সোসাইটি)
আরও পড়ুনসহজে কোরআন বোঝার পাঁচটি কৌশল০৩ মে ২০২৫রুকুর প্রচলনহিজাজ, আন্দালুসিয়া, মিসর, আফ্রিকা ও সিরিয়ায় রুকুর প্রচলন তেমন ছিল না। রুকুর প্রচলন মূলত মা-ওয়ারাউন্নাহার (বুখারা, সমরখন্দ), ভারতবর্ষ ও তুরস্কে ব্যাপক ছিল। ওসমানি খেলাফতের পর তুরস্কে এটা বিলুপ্ত হয়ে, তবে বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানে এখনো রুকুর প্রচলন আছে।
বুখারার মাশায়েখরা রমজানে তারাবিহ নামাজে প্রতি রাকাতে ১০টি আয়াত তিলাওয়াতের প্রথা অনুসরণ করতেন। তবে এভাবে তিলাওয়াত করলে বিষয়বস্তুর মাঝখানে বিরতি পড়ত, তাই তারা বিষয়ের ধারাবাহিকতা রক্ষার জন্য রুকু নির্ধারণ করেন।ইমাম দানি (মৃ. ৪৪৪ হি.) তাঁর গ্রন্থ আল-বায়ান ফি আদ্দি আয়িল কোরআন-এ কোরআনের বিভিন্ন ভাগ নিয়ে আলোচনা করলেও রুকু নিয়ে বিস্তারিত বলেননি। তবে ইমাম সারাখসি এবং রহিম বখশ তাঁদের লেখায় রুকুর ঐতিহাসিক বিবরণ দিয়েছেন।
রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সময়ে সাহাবিরা ১০টি আয়াত করে মুখস্থ করতেন এবং এর ব্যাখ্যা বুঝে পরবর্তী আয়াত শিখতেন, যা রুকু নির্ধারণের প্রাথমিক ধারণার সঙ্গে সম্পর্কিত। (আল-দানি, আল-বায়ান ফি আদ্দি আয়িল কুরআন, কায়রো: দার আল-মা’আরিফ)
সারকথা, রুকু কোরআন তিলাওয়াতকে সহজ ও সংগঠিত করে, বিশেষ করে হাফেজদের জন্য। এটি ইসলামের প্রাথমিক যুগ থেকে প্রচলিত একটি পদ্ধতি, যা বুখারা, সমরখন্দ ও ভারতীয় উপমহাদেশে ব্যাপকভাবে গৃহীত হয়েছে। ৫৫৮, ৫৪০ ও ৪৮০ রুকুর ধারা বিভিন্ন অঞ্চলে প্রচলিত হলেও বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানে ৫৫৮ রুকুই বেশি ব্যবহৃত হয়।
লেখক: খণ্ডকালীন শিক্ষক, আরবি বিভাগ, আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
আরও পড়ুনযে ঘটনায় কোরআনে পূর্ণ দুটি রুকু নাজিল হয়১০ সেপ্টেম্বর ২০২৪