দেশের সর্ববৃহৎ সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে ১৪ হাজারের বিপরীতে পানিপ্রবাহ রয়েছে মাত্র আড়াই হাজার কিউসেক। ভয়াবহ পানি সংকটের শঙ্কা নিয়েই এ ব্যারাজের মাধ্যমে সেচ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। রংপুর ও দিনাজপুর প্রধান সেচ খালে পানি ছাড়া হয় গত ১৫ জানুয়ারি। সেচ কার্যক্রম চালু রাখতে বন্ধ রাখা হয়েছে ব্যারাজের ৪৪টি স্লুইসগেট। এতে গেটের ভাটিতে নদী প্রায় পনিশূন্য হয়ে পড়েছে। যদিও গত বছর সেচ কার্যক্রম শুরুর প্রাক্কালে পানিপ্রবাহ ছিল চার হাজার কেউসেকের বেশি। 

সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বলছে, এবারও তিস্তার পানি দিয়ে শতভাগ সেচ দেওয়া সম্ভব হবে না। অনেক জমিতে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় কৃষকদের সেচ দিতে হবে। 
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, প্রকল্পের আওতায় গত বছর ৪৫ হাজার হেক্টর জমিতে সেচ সুবিধা দেওয়া হয়। চলতি বোরো মৌসুমে নীলফামারী, রংপুর ও দিনাজপুরের ১২ উপজেলায় ৫৫ হাজার হেক্টর জমিতে সেচ দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ৮৪ হাজার হেক্টর জমিতে সেচ সুবিধা দেওয়ার কথা থাকলেও তিস্তায় পানি সংকটসহ নানা জটিলতার কারণে ২০১৪ সালে তিন জেলায় মাত্র ৮ হাজার হেক্টর, ২০১৫ ও ’১৬ সালে ১০ হাজার হেক্টর, ২০১৭ সালে ৮ হাজার হেক্টর, ২০১৮ সালে ৩৫ হাজার হেক্টর, ২০১৯ ও ’২০ সালে ৪০ হাজার হেক্টর, ২০২১ সালে ৫৩ হাজার হেক্টর, ২০২২ ও ’২৩ সালে ৩৫ হাজার হেক্টর এবং সর্বশেষ ২০২৪ সালে ৪৫ হাজার হেক্টর জমিতে সেচ দেওয়া সম্ভব হয়। 
সরেজমিন তিস্তা সেচ প্রকল্পের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, সেচ খালে পানি সরবরাহ শুরু হওয়ায় কৃষকরা বোরো চাষের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। কেউ জমি কাদা করছেন; কেউবা রোপণ করছেন ধানের চারা। কৃষকরা জানান, জমি তৈরি থেকে শুরু করে ধান কাটা পর্যন্ত সেচ প্রকল্পের আওতায় প্রতি একর জমিতে সেচ খরচ দিতে হয় ৪৮০ টাকা। অর্থাৎ প্রতি বিঘায় খরচ পড়ে মাত্র ১৬০ টাকা। সেখানে নিজস্ব কিংবা ভাড়ায় সেচযন্ত্র ব্যবহার করলে বিঘাপ্রতি সেচ খরচ গুনতে হয় কমপক্ষে আড়াই হাজার টাকা। সে কারণে বোরো চাষে প্রকল্পের সেচ খালে পানি আসার অপেক্ষায় থাকেন তারা। কিন্তু মৌসুমের কোনো কোনো সময় ঠিকমতো পানি মেলে না।

নীলফামারীর জলঢাকার দুন্দিবাড়ি এলাকার কৃষক আব্দুস সবুর বলেন, তিস্তায় পানি সংকটের ফলে কখনও কখনও সেচ খালে পানি থাকে না। ফসল রক্ষায় তখন জমিতে সেচযন্ত্র বসিয়ে পানি দিতে হয়। এতে খরচ বেড়ে যায়। 
পানি উন্নয়ন বোর্ডের মুখ্য সম্প্রসারণ কর্মকর্তা অমলেশ চন্দ্র রায় জানান, প্রকল্প এলাকায় সেচ দেওয়া এবং নদীর প্রবাহমাত্রা ঠিক রাখতে ব্যারাজ পয়েন্টে স্বাভাবিক প্রবাহমাত্রা থাকা প্রয়োজন ২০ হাজার কিউসেক। শুধু সেচ প্রকল্প চালাতেই প্রবাহমাত্রা থাকা প্রয়োজন ১৪ হাজার কিউসেক। কিন্তু তিস্তায় প্রয়োজনীয় পানি মিলছে না। এ কারণে সব স্লুইসগেট বন্ধ করে সেচের পানি সরবরাহ করা হচ্ছে। ফলে ব্যারাজের ভাটিতে তিস্তায় আর প্রবাহ থাকছে না। শুষ্ক মৌসুমে ভারতের একচেটিয়া পানি প্রত্যাহারের কারণে বাংলাদেশ অংশে তিস্তার পানি ক্রমাগত কমে গেছে। 
পানি উন্নয়ন বোর্ড-রংপুরের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মিজানুর রহমান জানান, লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে প্রকল্পের আওতায় এ পর্যন্ত পাঁচ হাজার হেক্টরের বেশি জমিতে চারা রোপণ করা হয়েছে। ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহের মধ্যে ৩০ হাজার হেক্টর ছাড়িয়ে যাবে। বর্তমানে ব্যারাজ পয়েন্টে পানিপ্রবাহ রয়েছে আড়াই হাজার কিউসেক। এর থেকে আরও কমলে সেচের পানি সরবরাহে ব্যাঘাত ঘটবে। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: স চ প রকল প প রকল প র

এছাড়াও পড়ুন:

বাজারে সবজির সরবরাহ বেড়েছে, নিম্নমুখী চালের দাম

ঈদের বন্ধের আমেজ কাটতেই ব্যস্ত হয়ে পড়েছে চট্টগ্রামের পাইকারি ও খুচরা বাজারগুলো। ক্রেতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাজারগুলোতে বেড়েছে সবজিসহ বিভিন্ন পণ্যের সরবরাহ। বাজার ঘুরে দেখা গেছে, কয়েক দিনের ব্যবধানে কিছুটা কমেছে সবজির দাম। পেঁয়াজ, রসুন ও চালের মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দামও নিম্নমুখী।

বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ঈদের ছুটি শুরু হওয়ার পর নগরের কাঁচাবাজারে সবজির সরবরাহ কমে যায়। ফলে দাম ছিল কিছুটা বাড়তি। গত রোববার ও সোমবারের দিকে নগরের আড়তগুলোতে কাঁচামরিচ বিক্রি হয়েছে প্রতি কেজি ৬০ টাকা দরে। অধিকাংশ সবজির দামও ৪০ টাকার আশপাশে ছিল। তবে গত মঙ্গলবার থেকে আবারও বাজারে পুরোদমে সবজির সরবরাহ শুরু হয়েছে। যার কারণে দাম কমতে শুরু করেছে।

আজ শুক্রবার নগরের রিয়াজউদ্দিন বাজারের পাইকারি আড়তে কাঁচামরিচ বিক্রি হয়েছে প্রতি কেজি ২০ থেকে ৪০ টাকা দরে। বেশির ভাগ সবজির দাম প্রতি কেজি ১০ থেকে ৩৫ টাকা। তবে খুচরা বাজারগুলোতে প্রায় দ্বিগুণ দামে সবজি বিক্রি হতে দেখা যায়। নগরের বহদ্দারহাট, চকবাজার, সাব এরিয়া ও কাজির দেউড়ি বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এসব বাজারে অধিকাংশ সবজির দাম ৬০ টাকার বেশি। লাউ, মিষ্টিকুমড়া ও ফুলকপির দাম কিছুটা কম। এসব সবজির দাম ৫০ টাকার আশপাশে। খুচরা বাজারগুলোতে কাঁচামরিচ বিক্রি হয়েছে ৮০ টাকা কেজি দরে। পরিবহন খরচ ও আগে কেনার অজুহাতে বাড়তি দাম নিচ্ছেন বিক্রেতারা। রিয়াজউদ্দিন বাজারের আড়তদার নুরুল ইসলাম বলেন, বাজারে সব সবজির দাম কম। কিন্তু খুচরা ব্যবসায়ীদের কারণে ভোক্তাদের ভোগান্তি হচ্ছে। আড়তের দামের দ্বিগুণ দামে তাঁরা সবজি বিক্রি করছেন।

সবজির বাজারের পাশাপাশি পেঁয়াজ, রসুন ও চালের দামও নিম্নমুখী। খাতুনগঞ্জের পাইকারি আড়তে আজ পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে প্রতি কেজি ৪৫ থেকে ৫২ টাকা দরে। খুচরা পর্যায়ে দাম ছিল ৬৫ থেকে ৭০ টাকা কেজি। অন্যদিকে রসুনের কেজি আড়তে ছিল ৮৫ থেকে ১১০ টাকা। খুচরায় সেটি ১০০ থেকে ১৩০ টাকা।

পাহাড়তলী চালের আড়তে মোটা চাল (গুটি, স্বর্ণা) কেজিপ্রতি ৪৮ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অন্যদিকে জিরাশাইল ৭২ টাকায় বিক্রি হয়েছে। গত তিন দিন আগ থেকে চালের বাজার কিছুটা নিম্নমুখী বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। বস্তাপ্রতি (৫০ কেজি) চালের দাম কমেছে ৩০০ টাকা পর্যন্ত। পাহাড়তলী বণিক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন বলেন, চালের সরবরাহ যথেষ্ট আছে। চালের দাম বাড়ার আশঙ্কা নেই এখন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সুপেয় পানির সংকট, কাজে আসছে না কোটি টাকার প্রকল্প
  • নেপাল থেকে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু
  • সুপারম্যানের কাছে আছে পৃথিবীর শক্তি সংকটের সমাধান
  • ইরান হরমুজ প্রণালি বন্ধ করলে কী কী ঘটতে পারে?
  • ইরান–ইসরায়েলের পাল্টাপাল্টি হামলা রূপ নিতে পারে দীর্ঘমেয়াদি সংঘাতে
  • ইরানে হামলার আগে গোপনে ইসরায়েলে হেলফায়ার ক্ষেপণাস্ত্র পাঠিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র
  • ভারত থেকে আইফোন রপ্তানি কেন বাড়ছে
  • সুনামগঞ্জে তাজা গ্রেনেড উদ্ধারের পর নিষ্ক্রিয় করল সেনাবাহিনী
  • কমেছে সবজির দাম
  • বাজারে সবজির সরবরাহ বেড়েছে, নিম্নমুখী চালের দাম