Samakal:
2025-09-18@01:20:29 GMT

করাতকলে সাবাড় বন

Published: 29th, January 2025 GMT

করাতকলে সাবাড় বন

কমলগঞ্জ উপজেলায় তিনটি বনবিটসহ রাজকান্দি বন রেঞ্জের বিস্তীর্ণ সংরক্ষিত বনাঞ্চল রয়েছে হুমকির মুখে। নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে  উপজেলার বন ও চা বাগান থেকে মূল্যবান গাছ নেওয়া হচ্ছে স্থানীয় করাতকলগুলোতে।

গাছ ও বাঁশমহালসমৃদ্ধ কমলগঞ্জের এই অংশে নজর অসাধু বনখেকো চক্রের। দায়িত্বশীলদের চোখ ফাঁকি দিয়ে চক্রটি এসব গাছ কেটে নিয়ে বিক্রি করছে করাতকলগুলোতে। সে ক্ষেত্রে বিলুপ্ত বা বিরল প্রজাতির পাশাপাশি মহামূল্যবান পুরোনো গাছগুলোই কাটা হচ্ছে বেশি। এতে করে এসব প্রজাতির বনজ বৃক্ষের অস্তিত্ব তীব্র সংকটের মুখে পড়েছে। সম্প্রতি বন বিভাগ অভিযান চালিয়ে সতিঝির গ্রামের করাতকল থেকে ৪২ টুকরো আকাশি গাছের গুঁড়ি জব্দ করে। একইভাবে উপজেলার বৈধ ও অবৈধ মিলিয়ে ৩২টি করাতকলে নিয়মিতই চলছে বিরল এসব গাছের নিধন। শুধু তাই নয়, গাছলুটেরা এবং অবৈধ করাতকলগুলোর মালিকরা বন বিভাগের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্তাব্যক্তির সঙ্গে আঁতাত করেই এই চক্র পরিচালনা করছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। প্রভাবশালী এই গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে মুখ খুলতে নারাজ স্থানীয়রা।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, রাজকান্দি বনরেঞ্জ ও লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান থেকে নিয়মিতই গাছ লুট করা হচ্ছে। এ ছাড়া  উপজেলার ২২টি চা বাগানের ছায়াবৃক্ষগুলোও নেওয়া হচ্ছে করাতকলে। একই পরিস্থিতি কামারছড়া, আদমপুর ও কুরমা বনবিটের। রাজকান্দি রেঞ্জের তিনটি বিট থেকে প্রতি রাতেই কোনো না কোনোভাবে গাছ ও বাঁশ পাচারের অভিযোগ রয়েছে। স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে এই অভিযোগের সত্যতাও জানা গেছে। নিজেদের নিরাপত্তার কথা ভেবে বক্তব্য দিতে রাজি নন তারা।

এর পাশাপাশি চা বাগানের টিলাভূমি থেকেও গাছ কেটে পাচার হচ্ছে। এসব গাছের বড় অংশ বিভিন্ন করাতকলের আঙিনায় স্তূপ করো রাখা আছে। উপজেলার এই ৩২টি করাতকলের অর্ধেকেরই বৈধতা নেই। অবৈধ করাতকলগুলো কৌশলে উচ্চ আদালতে রিট করে তাদের বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে।

এসব করাতকলের কয়েকটিতে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে সারি সারি স্তূপ করে রাখা আছে আকাশি, মেনজিয়াম, কড়ই, গর্জন, গামার, চিকরাশিসহ বিভিন্ন প্রজাতির পাহাড়ি গাছের গুঁড়ি। করাতকলগুলোতে নিয়ে আসা গাছের খণ্ডাংশের মালিকানাসংবলিত রেজিস্টার ব্যবহার করার কথা থাকলেও সেখানে এসবের কিছুই নেই, যা প্রমাণ করে, এসব গাছ বৈধভাবে করাতকলগুলোতে আসেনি।

সেখানে অবস্থানকালে দেখা যায়, ট্রলি, পিকআপ, ট্রাক ও ট্রাক্টরে করাতকলগুলোতে আনা হচ্ছে বিভিন্ন প্রজাতির গাছের খণ্ডাংশ। সংরক্ষিত বন, চা বাগান কিংবা বাড়ির গাছ যাচাই-বাছাইয়েও কোনো ব্যবস্থা নেই সেখানে। এভাবে প্রতিটি করাতকলেই আসছে গাছ।

করাতকল মালিকরা জানান, এখানে বাড়িঘরের গাছগাছালিই বেশি। সেগুলোই চেরা হচ্ছে। বন ও চা বাগানের গাছ মাঝে মাঝে আসে। পরিমাণে খুব কম। অথচ করাতকলগুলোর সামনের অংশেই দেখা যায়, পাহাড়ি বনাঞ্চল ও চা বাগানে ছায়াবৃক্ষ হিসেবে ব্যবহৃত বিশেষ প্রজাতির গাছের গুঁড়ির স্তূপ। 

স্থানীয় দুই গাছ ব্যবসায়ী জানান, করাতকলগুলোর  মালিকরা বন বিভাগের সঙ্গে লিয়াজোঁ করে মিলে গাছ আনেন। অবৈধ মিলগুলোও তাদের ম্যানেজ করেই চলছে।

পরিবেশকর্মী আহাদ মিয়া ও শিক্ষক জমসেদ আলী জানান,  করাতকলগুলোতে যে হারে বন ও চা বাগানের গাছ কাটা হচ্ছে, তাতে প্রাকৃতিক বন ও চায়ের টিলা বৃক্ষশূন্য হয়ে পড়বে দ্রুতই। এতে করে একদিকে বন্যপ্রাণীর আবাসস্থল বিলুপ্ত হচ্ছে। অন্যদিকে ছায়াবৃক্ষের অভাবে চা বাগানের প্রাকৃতিক ভারসাম্য বিনষ্ট হচ্ছে।

রাজকান্দি বন রেঞ্জ অফিসের দায়িত্বে থাকা সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) প্রীতম বড়ুয়া জানান, করাতকলগুলোতে নজরদারি আছে কর্তৃপক্ষের। সম্প্রতি সতিঝির গ্রামে একটি করাতকলে অভিযান চালিয়ে  সেখানে থাকা গাছগুলোর কোনো বৈধতা পাওয়া যায়নি।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: উপজ ল র এসব গ ছ বন ও চ

এছাড়াও পড়ুন:

মৌলভীবাজারে পিবিআইর হাজতখানা থেকে আসামির লাশ উদ্ধার

মৌলভীবাজারে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) হাজতখানার ভেতর থেকে মোকাদ্দুস (৩২) নামে আসামির লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। তিনি আত্মহত্যা করেছেন বলে দাবি করেছে পিবিআই।

সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) ভোরে মৌলভীবাজার জেলা শহরের টিভি হাসপাতাল সড়কে পিবিআইর হাজতখানা থেকে এ লাশ উদ্ধার করা হয়। 

মোকাদ্দুস কমলগঞ্জ উপজেলার পতনঊষার ইউনিয়নের কোনাগাঁও (বৃন্দাবনপুর) গ্রামের মৃত লাল মিয়ার ছেলে। তিনি আলোচিত লিটন হত্যা মামলার আসামি ছিলেন।

পুলিশ ও স্থানীয়রা জানিয়েছেন, গত ৯ আগস্ট কমলগঞ্জ উপজেলার ২ নম্বর পতনঊষার ইউনিয়নের কোনাগাঁও (বৃন্দাবনপুর) গ্রামের ধানক্ষেত থেকে লিটন নামের এক যুবকের গলাকাটা লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এরপর থেকে মোকাদ্দুস পলাতক ছিলেন। রবিবার রাত ৮টার দিকে কমলগঞ্জ থানায় আত্মসমর্পণ করেন মোকাদ্দুস। পরে তাকে লিটন হত্যার মামলার তদন্ত সংস্থা পিবিআইর কাছে হস্তান্তর করে থানা পুলিশ।

পিবিআই জানিয়েছে, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের পর খাওয়া-দাওয়া শেষে মোকাদ্দুসকে ৭-৮ জন আসামির সঙ্গে হাজতখানায় রাখা হয়। সোমবার ভোর ৬টার দিকে ডিউটি অফিসার গিয়ে দেখেন, মোকাদ্দুস নিজের লুঙ্গি দিয়ে গলায় ফাঁস দিয়েছেন। পরে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও মোকাদ্দুসের পরিবারের সদস্যদের উপস্থিতিতে লাশের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করা হয়।

১১ সেপ্টেম্বর লিটনের বাবা সাত্তার মিয়া অজ্ঞাতনামাদের বিরুদ্ধে কমলগঞ্জ থানায় মামলা করেন। এ মামলায় শামিম নামের আরেকজনকেও গ্রেপ্তার করেছে পিবিআই। 

এ বিষয়ে মৌলভীবাজার পিবিআইর পুলিশ সুপার মো. জাফর হুসাইন বলেছেন, লিটন হত্যা মামলার তদন্ত আমাদের হাতে। মোকাদ্দুস রবিবার রাতে কমলগঞ্জ থানায় আত্মসমর্পণ করেন। পরে তাকে আমাদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। সোমবার সকালে হাজতখানায় আত্মহত্যা করেন তিনি। বিষয়টি আমরা সঙ্গে সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাইকে জানিয়েছি।

ঢাকা/আজিজ/রফিক

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • মৌলভীবাজারে পিবিআইর হাজতখানা থেকে আসামির লাশ উদ্ধার