Samakal:
2025-05-01@00:37:05 GMT

করাতকলে সাবাড় বন

Published: 29th, January 2025 GMT

করাতকলে সাবাড় বন

কমলগঞ্জ উপজেলায় তিনটি বনবিটসহ রাজকান্দি বন রেঞ্জের বিস্তীর্ণ সংরক্ষিত বনাঞ্চল রয়েছে হুমকির মুখে। নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে  উপজেলার বন ও চা বাগান থেকে মূল্যবান গাছ নেওয়া হচ্ছে স্থানীয় করাতকলগুলোতে।

গাছ ও বাঁশমহালসমৃদ্ধ কমলগঞ্জের এই অংশে নজর অসাধু বনখেকো চক্রের। দায়িত্বশীলদের চোখ ফাঁকি দিয়ে চক্রটি এসব গাছ কেটে নিয়ে বিক্রি করছে করাতকলগুলোতে। সে ক্ষেত্রে বিলুপ্ত বা বিরল প্রজাতির পাশাপাশি মহামূল্যবান পুরোনো গাছগুলোই কাটা হচ্ছে বেশি। এতে করে এসব প্রজাতির বনজ বৃক্ষের অস্তিত্ব তীব্র সংকটের মুখে পড়েছে। সম্প্রতি বন বিভাগ অভিযান চালিয়ে সতিঝির গ্রামের করাতকল থেকে ৪২ টুকরো আকাশি গাছের গুঁড়ি জব্দ করে। একইভাবে উপজেলার বৈধ ও অবৈধ মিলিয়ে ৩২টি করাতকলে নিয়মিতই চলছে বিরল এসব গাছের নিধন। শুধু তাই নয়, গাছলুটেরা এবং অবৈধ করাতকলগুলোর মালিকরা বন বিভাগের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্তাব্যক্তির সঙ্গে আঁতাত করেই এই চক্র পরিচালনা করছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। প্রভাবশালী এই গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে মুখ খুলতে নারাজ স্থানীয়রা।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, রাজকান্দি বনরেঞ্জ ও লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান থেকে নিয়মিতই গাছ লুট করা হচ্ছে। এ ছাড়া  উপজেলার ২২টি চা বাগানের ছায়াবৃক্ষগুলোও নেওয়া হচ্ছে করাতকলে। একই পরিস্থিতি কামারছড়া, আদমপুর ও কুরমা বনবিটের। রাজকান্দি রেঞ্জের তিনটি বিট থেকে প্রতি রাতেই কোনো না কোনোভাবে গাছ ও বাঁশ পাচারের অভিযোগ রয়েছে। স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে এই অভিযোগের সত্যতাও জানা গেছে। নিজেদের নিরাপত্তার কথা ভেবে বক্তব্য দিতে রাজি নন তারা।

এর পাশাপাশি চা বাগানের টিলাভূমি থেকেও গাছ কেটে পাচার হচ্ছে। এসব গাছের বড় অংশ বিভিন্ন করাতকলের আঙিনায় স্তূপ করো রাখা আছে। উপজেলার এই ৩২টি করাতকলের অর্ধেকেরই বৈধতা নেই। অবৈধ করাতকলগুলো কৌশলে উচ্চ আদালতে রিট করে তাদের বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে।

এসব করাতকলের কয়েকটিতে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে সারি সারি স্তূপ করে রাখা আছে আকাশি, মেনজিয়াম, কড়ই, গর্জন, গামার, চিকরাশিসহ বিভিন্ন প্রজাতির পাহাড়ি গাছের গুঁড়ি। করাতকলগুলোতে নিয়ে আসা গাছের খণ্ডাংশের মালিকানাসংবলিত রেজিস্টার ব্যবহার করার কথা থাকলেও সেখানে এসবের কিছুই নেই, যা প্রমাণ করে, এসব গাছ বৈধভাবে করাতকলগুলোতে আসেনি।

সেখানে অবস্থানকালে দেখা যায়, ট্রলি, পিকআপ, ট্রাক ও ট্রাক্টরে করাতকলগুলোতে আনা হচ্ছে বিভিন্ন প্রজাতির গাছের খণ্ডাংশ। সংরক্ষিত বন, চা বাগান কিংবা বাড়ির গাছ যাচাই-বাছাইয়েও কোনো ব্যবস্থা নেই সেখানে। এভাবে প্রতিটি করাতকলেই আসছে গাছ।

করাতকল মালিকরা জানান, এখানে বাড়িঘরের গাছগাছালিই বেশি। সেগুলোই চেরা হচ্ছে। বন ও চা বাগানের গাছ মাঝে মাঝে আসে। পরিমাণে খুব কম। অথচ করাতকলগুলোর সামনের অংশেই দেখা যায়, পাহাড়ি বনাঞ্চল ও চা বাগানে ছায়াবৃক্ষ হিসেবে ব্যবহৃত বিশেষ প্রজাতির গাছের গুঁড়ির স্তূপ। 

স্থানীয় দুই গাছ ব্যবসায়ী জানান, করাতকলগুলোর  মালিকরা বন বিভাগের সঙ্গে লিয়াজোঁ করে মিলে গাছ আনেন। অবৈধ মিলগুলোও তাদের ম্যানেজ করেই চলছে।

পরিবেশকর্মী আহাদ মিয়া ও শিক্ষক জমসেদ আলী জানান,  করাতকলগুলোতে যে হারে বন ও চা বাগানের গাছ কাটা হচ্ছে, তাতে প্রাকৃতিক বন ও চায়ের টিলা বৃক্ষশূন্য হয়ে পড়বে দ্রুতই। এতে করে একদিকে বন্যপ্রাণীর আবাসস্থল বিলুপ্ত হচ্ছে। অন্যদিকে ছায়াবৃক্ষের অভাবে চা বাগানের প্রাকৃতিক ভারসাম্য বিনষ্ট হচ্ছে।

রাজকান্দি বন রেঞ্জ অফিসের দায়িত্বে থাকা সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) প্রীতম বড়ুয়া জানান, করাতকলগুলোতে নজরদারি আছে কর্তৃপক্ষের। সম্প্রতি সতিঝির গ্রামে একটি করাতকলে অভিযান চালিয়ে  সেখানে থাকা গাছগুলোর কোনো বৈধতা পাওয়া যায়নি।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: উপজ ল র এসব গ ছ বন ও চ

এছাড়াও পড়ুন:

আবার চালু হচ্ছে পরিত্যক্ত ৭ বিমানবন্দর

পর্যটন খাতের সম্ভাবনা ও যাত্রী বাড়ানোর পাশাপাশি সড়ক ও রেলপথে চাপ কমানো এবং অর্থনীতি চাঙা করতে কয়েকটি পরিত্যক্ত বিমানবন্দর আবার চালু করার উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)।

এর মধ্যে বগুড়া বিমানবন্দরের কাজ চলমান রয়েছে। পাশাপাশি লালমনিরহাট ও শমশেরনগর বিমানবন্দর চালুর বিষয়ে সরেজমিন পরিদর্শন করেছে কারিগরি বিশেষজ্ঞ দল। বিশাল পরিসর, প্রশস্ত রানওয়ে, উন্নত যাতায়াত ব্যবস্থা ও অবকাঠামোর সুবিধা থাকা সত্ত্বেও আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে দীর্ঘ ৫৪ বছরেও চালু হয়নি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম, পরিত্যক্ত, প্রবাসী অধ্যুষিত ও পর্যটন নগরী মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার শমশেরনগর বিমান বন্দর।

মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক মো. ইসরাইল হোসেন শমশেরনগর বিমানবন্দরটি চালুর লক্ষ্যে প্রধান উপদেষ্টার কাছে একাধিকবার আবেদন করেন। সম্প্রতি ঢাকা থেকে বিমানবাহিনীর একটি প্রতিনিধি দল সরেজমিনে পরিদর্শন করে গেছেন।

জানা গেছে, দেশের অন্তবর্তীকালীন সরকার অভ্যন্তরীণ পর্যটন খাতের বিকাশ ও যাত্রী পরিবহণ বাড়াতে বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) দেশের বিভিন্ন জেলায় পরিত্যক্ত, অব্যবহৃত ও দখলে থাকা ৭টি বিমানবন্দর যথাক্রমে ঈশ্বরদী, ঠাকুরগাঁও, লালমনিরহাট, বগুড়া, শমশেরনগর, কুমিল্লা ও তেজগাঁও বিমানবন্দর নতুন করে চালু করার উদ্যোগ নিয়েছে।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম ও দেশের বৃহত্তম শমশেরনগর বিমানবন্দরটি সামরিক কাজে ব্যবহারের জন্য তৈরি করা হয়। সম্প্রতি লালমনিরহাট বিমানবন্দর ও মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার শমশেরনগর বিমানবন্দর চালু করার জন্য বেবিচকের চার সদস্যের একটি টিম সরেজমিন পরিদর্শন করেছে।

তারা বিমানবন্দর দুটি চালু করার বিষয়ে বেবিচক চেয়ারম্যানের কাছে প্রতিবেদন জমা দেবেন। তারপর পরবর্তী পদক্ষেপ নেবে বেবিচক কর্তৃপক্ষ। এ ছাড়া অন্য বিমানবন্দরগুলো পরিদর্শন করে দেওয়া প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

জানা গেছে, ১৯৪২ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্রিটিশরা জাপান, মালয়েশিয়া, মিয়ানমার ও ইন্দোনেশিয়াকে দখল করার উদ্দেশে একসঙ্গে বড় যে দুটি বিমানবন্দর নির্মাণ করেছিল, তার একটি হচ্ছে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার শমশেরনগর বিমানবন্দর। সেসময় বিমানবন্দরটির নামকরণ করা হয় ‘দিলজান্দ বন্দর’।

স্বাধীনতা পরবর্তীকালে নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় ‘শমশেরনগর বিমানবন্দর’। অযত্ন-অবহেলায় পড়ে থাকা বিমানবন্দরে ১৯৭৫ সালে বিমান বাহিনীর একটি ইউনিট খোলা হয়। সেখানে বিমান বাহিনীর তত্ত্বাবধানে একটি প্রশিক্ষণ স্কুল চালু করা হয়। সেই থেকে বিমান বাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমান ও হেলিকপ্টার ওঠানামা করছে এখানে। ৬০০০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ৭৫ ফুট প্রস্থ বিশিষ্ট এ বিমানবন্দরের বড় একটি অংশ পতিত থাকায় বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন মেয়াদে স্থানীয়দের কাছে ইজারা দিয়ে যাচ্ছেন।

পার্শ্ববর্তী সিলেট এমএজি ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এখন যাত্রীর চাপও বেড়ে গেছে। ফলে বিমানবন্দরটি চালু হলে এ চাপ কমে আসবে। মৌলভীবাজার জেলাসহ আশপাশের কয়েকটি জেলার মানুষ উপকৃত হবেন। প্রবাসী ও পর্যটকদের যোগাযোগ সহজ হবে।

এ বিষয়ে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মঞ্জুর কবীর ভূঁইয়া গণমাধ্যমকে বলেন, পরিত্যক্ত বিমানবন্দরগুলো পর্যায়ক্রমে সচল করা হবে। তবে অবকাঠামো নির্মাণ, সংস্কার ও আনুষঙ্গিক প্রস্তুতি যেখানে আগে শেষ হবে, সেগুলো আগে সচল হবে। 

প্রবাসী অধ্যুষিত মৌলভীবাজার জেলার উল্লেখযোগ্য সংখ্যক লোক ইউরোপ, আমেরিকা, জাপান, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ও মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কর্মরত রয়েছেন। যাত্রীসেবার পাশাপাশি ভৌগোলিক কারণে এই বিমানবন্দরের সামরিক গুরুত্বও রয়েছে।

মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক মো. ইসরাইল হোসেন জানান, বিমানবন্দরটি চালুর লক্ষ্যে আমরা প্রধান উপদেষ্টার কাছে একাধিকবার আবেদন করেছি। সম্প্রতি ঢাকা থেকে বিমানবাহিনীর একটি প্রতিনিধি দল সরেজমিনে পরিদর্শন করে গেছেন। আমরা আশাবাদী, খুব দ্রুতই এখানে পুনরায় ফ্লাইট চালু হবে।

বিমানবন্দরটি চালু হলে এটিকে কেন্দ্র করে আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র গড়ে উঠবে এবং অত্র এলাকার যাত্রীদের যাতায়াত সুবিধা বাড়বে বলে অভিজ্ঞ মহলের অভিমত।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • কয়েকটি পরিত্যক্ত বিমানবন্দর আবার চালুর উদ্যোগ
  • আবার চালু হচ্ছে পরিত্যক্ত ৭ বিমানবন্দর