বৃত্তি জালিয়াতির ১০ বছর পর রাজশাহীর শিক্ষা কর্মকর্তা বরখাস্ত
Published: 10th, July 2025 GMT
এক দশক আগে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষার ফল জালিয়াতির অভিযোগে রাজশাহীর বোয়ালিয়া থানার তৎকালীন শিক্ষা কর্মকর্তা রাখী চক্রবর্তীকে সরকারি চাকরি থেকে চূড়ান্তভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এ কে এম আনোয়ার হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, ওই ঘটনায় রাখী চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা ছিল। এছাড়া দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা আলাদা একটি মামলাও বর্তমানে আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। গত ২ জুলাই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তদন্ত ও শৃঙ্খলা শাখা থেকে রাখী চক্রবর্তীর বরখাস্তের আদেশ জারি করা হয়। আদেশটি ৮ জুলাই তারা হাতে পেয়েছেন।
বরখাস্তের আদেশে উল্লেখ করা হয়, বিভাগীয় মামলায় রাখী চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে আনা অসদাচরণ ও দুর্নীতির অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮-এর ৪(৩)(গ) ধারা অনুযায়ী তাঁকে ‘চাকরি থেকে অপসারণ’ গুরুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে পূর্বের সাময়িক বরখাস্তের আদেশও প্রত্যাহার করা হয়েছে।
এর আগে ২০১৬ সালের ২৭ অক্টোবর একই বিধিমালার ৩(খ) ও ৩(ঘ) ধারায় তাঁর বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করা হয়। মামলার জবাব সন্তোষজনক না হওয়ায় এই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
বিভাগীয় তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৫ সালে বোয়ালিয়া থানা শিক্ষা কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকাকালীন সময়ের নম্বর ফর্দ, গোপনীয় নথিপত্র ও কম্পিউটার ছিল রাখী চক্রবর্তীর নিয়ন্ত্রণে। তাঁর অনুমতি বা অংশগ্রহণ ছাড়া নম্বর পরিবর্তন বা টেম্পারিং সম্ভব ছিল না। ওই সময় থানা এলাকার বিভিন্ন স্কুলের ৪০ জন শিক্ষার্থীর নম্বর জালিয়াতির মাধ্যমে বাড়িয়ে দেওয়া হয়। এর ফলে তারা বৃত্তি পায়।
অভিভাবকদের অভিযোগের ভিত্তিতে বিষয়টি গণমাধ্যমে আসে। পরে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের উপপরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) সাইফুল ইসলাম তদন্ত করে মহাপরিচালকের কাছে প্রতিবেদন দাখিল করেন। সেই প্রতিবেদনের ভিত্তিতে তিনজন কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা দায়ের হয়।
তিনজনের মধ্যে শুধুমাত্র শিক্ষা কর্মকর্তা রাখী চক্রবর্তীকে চাকরি থেকে চূড়ান্তভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। তৎকালীন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবুল কাশেমকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়।
তিনি রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চেয়ে পুনরায় চাকরিতে ফিরলেও পরে আরেকটি পরীক্ষাসংক্রান্ত অভিযোগে আবারও বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়। তাঁর বিরুদ্ধেও দুদকের মামলা চলমান। অপর কর্মচারী সোনিয়া রওশনকে বিভাগীয় মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয় এবং দুদকের মামলার অভিযোগপত্র থেকেও তাঁর নাম বাদ দেওয়া হয়।
ঘটনার পর ভুক্তভোগী অভিভাবকেরা সংশোধিত ফল প্রকাশের দাবিতে আন্দোলনে নেমেছিলেন। তাদের দাবির মুখে ২০১৭ সালের ১১ এপ্রিল সংশোধিত ফল প্রকাশ করা হয়। এতে দেখা যায়, জালিয়াতির মাধ্যমে বৃত্তি পাওয়া ৪০ জন শিক্ষার্থীর বৃত্তি বাতিল করা হয়। যার মধ্যে ৩০ জন ট্যালেন্টপুল এবং ১০ জন ছিল সাধারণ গ্রেডে।
সংশোধিত ফলাফলে রাজশাহী নগরীর শিমুল মেমোরিয়াল নর্থ সাউথ স্কুলের ১৫ শিক্ষার্থীর বৃত্তিও বাতিল করা হয়। অভিযোগ রয়েছে, এই বিদ্যালয়ে কয়েকজন প্রভাবশালী শিক্ষক নেতা ও বিশিষ্ট ব্যক্তির সন্তানরা পড়াশোনা করত। পরে বৃত্তির অর্থ ট্রেজারির মাধ্যমে সরকারকে ফেরত দিতে বলা হয়।
এ বিষয়ে কথা বলতে রাখী চক্রবর্তীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তিনি বলেন, ‘‘এই বিষয়ে আমি এখন কথা বলতে ইচ্ছুক নই।’’
ঢাকা/কেয়া/এস
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর কর মকর ত বরখ স ত
এছাড়াও পড়ুন:
ইয়াংওয়ান করপোরেশন পেল ডব্লিউসিডি ভিশনারি অ্যাওয়ার্ডস
বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় করপোরেট প্রতিষ্ঠানের নারী পরিচালকদের নিয়ে গঠিত যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংগঠন ওমেন করপোরেট ডিরেক্টরসের (ডব্লিউসিডি) ভিশনারি অ্যাওয়ার্ড সম্মাননা পেয়েছে কোরিয়ার বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান ইয়াংওয়ান করপোরেশন। এক বিজ্ঞপ্তিতে ইয়াংওয়ান এ তথ্য জানিয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, নারী নেতৃত্ব ও অন্তর্ভুক্তিমূলক কর্মসংস্থানে অবদানের জন্য ‘ইমার্জিং লিডারশিপ’ বিভাগে এ সম্মাননা পেয়েছে ইয়াংওয়ান করপোরেশন। প্রথম কোরিয়ান কোম্পানি হিসেবে ইয়াংওয়ান ডব্লিউসিডির এ সম্মাননা পেয়েছে। ৬ অক্টোবর যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরের একটি হোটেলে আয়োজিত অনুষ্ঠানে এ সম্মাননা গ্রহণ করেন ইয়াংওয়ান করপোরেশনের চেয়ারম্যান কিহাক সাং। বাংলাদেশেও ইয়াংওয়ানের কার্যক্রম রয়েছে। ১৯৮০-র দশকে বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশে উৎপাদন কার্যক্রম সম্প্রসারণ করে ইয়াংওয়ান।
বিশ্বের বৃহত্তম নারী করপোরেট পরিচালকদের সংগঠন বা নেটওয়ার্ক ডব্লিউসিডি এ বছর তাদের যাত্রা শুরুর ২৫ বছর পূর্তি উদ্যাপন করছে। সংগঠনটিতে বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন করপোরেট প্রতিষ্ঠানের ৩ হাজার ৭০০ জন নারী বোর্ড সদস্য বা পরিচালক, প্রধান নির্বাহী, নির্বাহী ও বিনিয়োগ বিশেষজ্ঞ যুক্ত রয়েছেন। এটির সদর দপ্তর যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে। সংগঠনটি বিশ্বজুড়ে করপোরেট প্রতিষ্ঠানের পর্ষদে নারীর প্রতিনিধিত্ব বৃদ্ধি, করপোরেট সুশাসনের উন্নয়ন ও টেকসই নেতৃত্ব প্রসারে কাজ করে।
প্রতিবছর ডব্লিউসিডি ভিশনারি অ্যাওয়ার্ডস প্রদান করে। এমন প্রতিষ্ঠানকে এই অ্যাওয়ার্ডসের জন্য নির্বাচিত করা হয়, যেসব প্রতিষ্ঠান করপোরেট সুশাসন, বৈচিত্র্য ও টেকসই নেতৃত্বে অনন্য ভূমিকা পালন করে।
প্রথম কোরিয়ান কোম্পানি হিসেবে এই সম্মাননা গ্রহণকালে ইয়াংওয়ান করপোরেশনের চেয়ারম্যান কিহাক সাং বলেন, ‘এই সম্মাননা আমাদের প্রতিষ্ঠানের সব নারী কর্মীর জন্য একটি স্বীকৃতি। নারীদের সমান সুযোগই আমাদের প্রতিষ্ঠানকে শক্তিশালী ও অন্যদের চেয়ে এগিয়ে যেতে সহায়তা করেছে। আমরা এমন একটা পৃথিবীর স্বপ্ন দেখি যেখানে নারী-পুরুষ উভয়ই সমানভাবে সম্মানিত ও ক্ষমতায়িত হবে।’
বিজ্ঞপ্তিতে ইয়াংওয়ান জানিয়েছে, প্রতিষ্ঠার পর থেকেই প্রতিষ্ঠানটি মানুষকেন্দ্রিক ব্যবস্থাপনা নীতি অনুসরণ করে আসছে। প্রতিষ্ঠানটির কোরিয়ান সদর দপ্তরে প্রায় ৭০ শতাংশ কর্মী নারী। ব্যবস্থাপনা পর্যায়ে (বিভাগীয় প্রধান বা তার ঊর্ধ্বে) নারী কর্মী প্রায় ৬০ শতাংশ। এ ছাড়া নারী কর্মীদের গড় চাকরির মেয়াদ পুরুষ কর্মীদের তুলনায় প্রায় দেড় বছর বেশি।