বাংলাদেশের ৪২টি ভাষার ডিজিটাইজেশনের কাজ সম্পন্ন
Published: 30th, January 2025 GMT
বাংলাদেশের ৪০টি জনগোষ্ঠীর ভাষিক প্রতিনিধিবৃন্দকে নিয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে ‘গবেষণা ও উন্নয়নের মাধ্যমে তথ্য প্রযুক্তিতে বাংলা ভাষা সমৃদ্ধকরণ’ প্রকল্পের আওতায় ‘মাল্টিলিংঙ্গুয়াল ক্লাউড: ডিজিটাল রিসোর্সেস ফর ল্যাঙ্গুয়েজেস অফ বাংলাদেশ’ বিষয়ক কর্মশালা।
বুধবার (২৯ জানুয়ারি) অনুষ্ঠিত এই কর্মশালায় প্রধান অতিথি ছিলেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সচিব শীষ হায়দার চৌধুরী, এনডিসি। সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের নির্বাহী পরিচালক ড.
কর্মশালায় স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন প্রকল্প পরিচালক মো. মাহবুব করিম।
বিশেষ অতিথি আইসিটি পলিসি অ্যাডভাইজার ফয়েজ আহমদ তৈয়ব ভিডিও বার্তায় বলেন, “বিশ্বের প্রায় ৭১০০ ভাষার মধ্যে ৪০ শতাংশ ভাষাই বিপন্ন হতে চলেছে। ভাষার টিকে থাকার জন্য প্রয়োজন নিয়মিত চর্চা ও ডিজিটাল সংরক্ষণ। এই প্রকল্পের মাধ্যমে বাংলাদেশের ৪২টি ভাষার ডিজিটাইজেশন ও ট্রাইলিঙ্গুয়াল ডিকশনারি তৈরির কাজ সম্পন্ন হয়েছে, যা ভাষার সংরক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।”
সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য ও ভাষাগত সংরক্ষণ নিয়ে প্রধান অতিথি শীষ হায়দার চৌধুরী বলেন, “বাংলাদেশের ভাষাগুলো শুধুমাত্র ভাষাগত পরিচয়ের অংশ নয় বরং এরা সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের ধারক। ডিজিটাইজেশনের মাধ্যমে এই ভাষাগুলোর সংরক্ষণ নিশ্চিত করা প্রয়োজন।”
তিনি এক্ষেত্রে পৃথিবীর বিভিন্ন ভাষার ভাষিক মিলের লক্ষ্যণীয় দিকগুলো তুলে ধরেন। এই আলোকে বিপন্ন ভাষাগুলোকে কীভাবে প্রাণবন্ত করা যায়, এদিকে গুরুত্ব আরোপ করে এই প্রকল্পের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন।
কর্মশালায় ভাষা বিশেষজ্ঞ, গবেষক, এবং বিভিন্ন গোষ্ঠীর প্রতিনিধিরাও অংশগ্রহণ করেন।
দ্বিতীয় পর্বে, ম্রো ভাষার ব্যাকরণ প্রণেতা ইয়াঙগান ম্রো তার অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বলেন, “ম্রো ভাষার কিবোর্ড ও ফন্ট তৈরির ফলে আমাদের ভাষা সংরক্ষণ ও প্রচারের একটি নতুন দ্বার উন্মোচিত হয়েছে। এই উদ্যোগ আমাদের ভাষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।”
কর্মশালার দ্বিতীয় পর্ব, কারিগরি অধিবেশনে কমিউনিটি-ভিত্তিক ভাষা উন্নয়ন এবং ডিজিটাইজেশন পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করা হয়। অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে মনিপুরি মৈতৈ ভাষার প্রতিনিধি একে শেরাম ইউবোর্ডে মনিপুরি মৈতৈ লিপি অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব দেন, যা ভবিষ্যৎ উন্নয়নের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে। এছাড়া তিনি অঞ্চলভিত্তিতে ভাষা বিষয়ক কর্মশালা ও বাংলাদেশের ভাষার কিবোর্ড, ইউবোর্ডকে তরুণ প্রজন্মের সাথে পরিচয় ও তাদের মাঝে এর ব্যবহার ছড়িয়ে দেওয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করতে আহবান জানান।
উক্ত কর্মশালায় উপস্থিত ছিলেন শাহাজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. জফির উদ্দিন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষাবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. সৈয়দ শাহরিয়ার রহমান এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সাজ্জাদুল ইসলাম সুমন।
অধ্যাপক ড. জফির বলেন, “একটি জাতির ভাষা মৃত্যুর সাথে সাথে সেই জাতির সংস্কৃতি ও জ্ঞানচর্চারও মৃত্যু হয়, তাই যে ভাষাগুলোর ডিজিটাইজেশন করা হলো তার যে শব্দ, বাক্য, রূপমূল রয়েছে। ভাষাবিজ্ঞানের দৃষ্টিতে, বয়স্ক ব্যক্তি যে কিনা ঐ ভাষা থেকে দূরে আছে, সেক্ষেত্রে তার ভাষা নেওয়ার জন্য তার কাছে যাওয়ার যে প্রচেষ্টা সেটা এই প্রকল্পে কতটা অনুসরণ করা হয়েছে, তা দেখার বিষয়।”
অধ্যাপক ড. শাহরিয়ার একটি লার্নিং প্ল্যাটফর্ম তৈরি প্রসঙ্গে বলেন, “যেখানে সব ভাষাভাষী এই প্ল্যাটফর্মের আলোকে ভাষাগুলো শিখতে আগ্রহী হবে।”
একই সাথে প্রত্যেকটি ভাষার আইপিএ সংশ্লিষ্ট চ্যালেঞ্জগুলো তুলে ধরে তিনি বলেন, “দ্বিতীয় ধাপে যদি এই প্রকল্পটির উদ্যোগ নেওয়া হয়, তাহলে বিভিন্ন ভাষার ধ্বনিগত দিক বিশ্লেষণ করে আরও বিস্তৃতভাবে কাজ করা যাবে।”
অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সাজ্জাদ ভাষা সংরক্ষণ করার পাশাপাশি ভাষার প্রয়োগও নিশ্চিত করনের বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেন। পাশাপাশি মাতৃভাষায় শিক্ষার সুযোগ বাড়ানোর জন্য এই ডিজিটাল রিপোজিটরির ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে বলে জানান।
অনুষ্ঠানটিতে ধারণাপত্র উপস্থাপন, প্রকল্প সংশ্লিষ্ট নানা মন্তব্য ও প্রশ্নগুলোর উত্তর প্রদান করেন প্রকল্পের পরামর্শক, সঞ্চালক মামুন অর রশীদ।
কর্মশালা শেষে অংশগ্রহণকারীরা ভাষার ডিজিটাইজেশনের এই প্রয়াসকে স্বাগত জানান এবং ভবিষ্যতে আরও বিস্তৃতভাবে কাজ করার আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
ঢাকা/হাসান/টিপু
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর প রকল প র র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
মার্কস অলরাউন্ডার: ময়মনসিংহ ও দিনাজপুরসহ ৯ জেলায় কবে কোথায় প্রতিযোগিতা
বাংলাদেশের প্রতিটি প্রান্তে এখন চলছে প্রতিভার উচ্ছ্বাস ‘মার্কস অলরাউন্ডার’। ‘দেখাও যত প্রতিভা তোমার’ স্লোগানে আয়োজিত দেশের অন্যতম বড় প্ল্যাটফর্মটি শিশু-কিশোরদের নিজেদের সম্ভাবনা প্রকাশের মঞ্চ হয়ে উঠেছে। বরাবরের মতো এবারের আয়োজনটিও পাচ্ছে দর্শক ও অংশগ্রহণকারীদের দারুণ সাড়া। প্রতিযোগিতাটি তিন ধাপে অনুষ্ঠিত হবে—আঞ্চলিক, বিভাগীয় ও জাতীয় পর্যায়ে। এরই মধ্যে অনেক স্থানে প্রতিযোগিতার আঞ্চলিক পর্ব অনুষ্ঠিত হয়েছে।
শুক্র ও শনিবার (৭ ও ৮ নভেম্বর) ময়মনসিংহ, দিনাজপুর, কুষ্টিয়া, মেহেরপুর, ঠাকুরগাঁও, ঝিনাইদহ, চুয়াডাঙ্গা, নীলফামারী ও পঞ্চগড় অঞ্চলের প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হবে। নিম্নলিখিত প্রতিটি ভেন্যুতে সকাল আটটা থেকে শুরু হবে প্রতিযোগিতা।
তারিখ: ৭ নভেম্বর, শুক্রবার
ভেন্যু: কলকাকলী মাধ্যমিক বিদ্যালয়, কুষ্টিয়া সদর, কুষ্টিয়া।
যে এলাকার শিক্ষার্থীরা অংশ নেবে: কুষ্টিয়া ও মেহেরপুর জেলা।
ভেন্যু: কলেজিয়েট গার্লস হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজ, হাসপাতাল রোড, দিনাজপুর সদর, দিনাজপুর।
যে এলাকার শিক্ষার্থীরা অংশ নেবে: দিনাজপুর ও ঠাকুরগাঁও জেলা।
ভেন্যু: ময়মনসিংহ সরকারি কলেজ, আকুয়া, ময়মনসিংহ।
যে এলাকার শিক্ষার্থীরা অংশ নেবে: ময়মনসিংহ সদরের একাংশ (আকুয়া, সানকিপাড়া, কলেজ রোড, কাচিঝুলি, পুলিশ লাইনস, নয়াপাড়া, মাসকান্দা, দিগারকান্দা ও সুতিয়াখালী), মুক্তাগাছা, ফুলবাড়িয়া, ত্রিশাল, ভালুকা ও গফরগাঁও থানা।
তারিখ: ৮ নভেম্বর, শনিবার
ভেন্যু: ঝিনাইদহ নিউ একাডেমি স্কুল, ঝিনাইদহ সদর, ঝিনাইদহ।
যে এলাকার শিক্ষার্থীরা অংশ নেবে: ঝিনাইদহ ও চুয়াডাঙ্গা জেলা।
ভেন্যু: ময়মনসিংহ জিলা স্কুল, ময়মনসিংহ।
যে এলাকার শিক্ষার্থীরা অংশ নেবে: ময়মনসিংহ সদরের একাংশ (টাউন হল, কাচারি, চরপাড়া, ব্রিজ মোড়, গাঙ্গিনাপাড়, পণ্ডিতপাড়া, মেছোয়া বাজার, ছোট বাজার ও বড় বাজার), গৌরীপুর, ঈশ্বরগঞ্জ, নান্দাইল, তারাকান্দা, ফুলপুর, হালুয়াঘাট ও ধোবাউড়া থানা।
ভেন্যু: নীলফামারী সরকারি উচ্চবিদ্যালয়, পিটিআই রোড, নীলফামারী সদর, নীলফামারী।
যে এলাকার শিক্ষার্থীরা অংশ নেবে: নীলফামারী ও পঞ্চগড় জেলা।
প্রতিযোগিতার গ্রুপ ও বিষয়—প্লে থেকে চতুর্থ শ্রেণি—জুনিয়র স্কুল (গান, নাচ, অভিনয়, চিত্রাঙ্কন, আবৃত্তি, গল্প বলা); পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণি—মিডল স্কুল (গান, নাচ, অভিনয়, চিত্রাঙ্কন, আবৃত্তি, উপস্থিত বক্তৃতা) এবং নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি—হাইস্কুল ও কলেজ (গান, নাচ, অভিনয়, চিত্রাঙ্কন, আবৃত্তি, উপস্থিত বক্তৃতা।)
ইতিমধ্যে চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, যশোর, মাগুরা, নোয়াখালী, ফেনী, সিলেট, নাটোর, পাবনা, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, ফরিদপুর, মাদারীপুর, গোপালগঞ্জ, শরীয়তপুর, রাজবাড়ী, সিরাজগঞ্জ, রংপুর, কুড়িগ্রাম, খুলনা, বাগেরহাট, রাজশাহী, ঠাকুরগাঁও, টাঙ্গাইল, লালমনিরহাট, সাতক্ষীরা, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, পঞ্চগড়, জামালপুর, শেরপুরসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় প্রতিযোগিতা সম্পন্ন হয়েছে। পর্যায়ক্রমে দেশের ১০০টি স্থানে আঞ্চলিক পর্ব অনুষ্ঠিত হবে। বাংলাদেশের সব স্কুল-কলেজ (প্লে গ্রুপ থেকে দ্বাদশ শ্রেণি) এবং সমমানের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রীরা এ প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে পারবে।
পুরস্কারমার্কস অলরাউন্ডারে তিনটি গ্রুপ থেকে সেরা তিন অলরাউন্ডারের প্রত্যেকে পাবে ১৫ লাখ টাকার শিক্ষাবৃত্তি। আর বিভিন্ন পর্যায়ের বিজয়ীরা পাবে মোট এক কোটি টাকার বেশি উপহার ও শিক্ষাবৃত্তি।
গ্র্যান্ড ফিনালেতে তিনটি গ্রুপের ফার্স্ট রানার্সআপ এবং সেকেন্ড রানার্সআপের প্রত্যেকে পাবে পাঁচ লাখ এবং তিন লাখ টাকার শিক্ষাবৃত্তি। তিনটি গ্রুপের ছয়টি বিষয়ের প্রতিটিতে সেরা ৩ জন করে মোট ৫৪ জন সেরা পারফরমারের প্রত্যেকে পাবে যথাক্রমে স্বর্ণ, রৌপ্য ও ব্রোঞ্জপদক। জাতীয় পর্যায়ে তিনটি গ্রুপের চ্যাম্পিয়নদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পাবে একটি করে কম্পিউটার।
আয়োজকদের মতে, মার্কস অলরাউন্ডার শুধু একটি প্রতিযোগিতা নয়। এটি বাংলাদেশের শিশু-কিশোরদের প্রতিভা, মেধা, সংস্কৃতি ও আত্মবিশ্বাস বিকাশের একটি অন্যতম বড় প্ল্যাটফর্ম। আঞ্চলিক থেকে জাতীয় পর্যায় পর্যন্ত এই আয়োজন অংশগ্রহণকারীদের জন্য হয়ে উঠেছে শেখার, নিজেকে নতুনভাবে আবিষ্কার করার এবং ভবিষ্যতের পথে আরও এক ধাপ এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ।
বিস্তারিত জানতে এবং রেজিস্ট্রেশন করতে ভিজিট করতে হবে। ফোন করা যাবে (সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা) ০৯৬১৪৫১৬১৭১ নম্বরে।