অধিনায়ক সাবিনা খাতুন, ঋতুপর্ণা চাকমাসহ বাংলাদেশ নারী ফুটবলের সব তারকা একসঙ্গে সংবাদমাধ্যমের সামনে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বাফুফে ভবনের সামনে মাসুরা পারভীন, মারিয়া মান্ডা, সানজিদা আক্তার, শিউলি আজিম, তহুরা খাতুন, সাগরিকাদের চোখে ছিল অশ্রু। কোচ পিটার বাটলারের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলে ধরতে গিয়ে সাবিনা যেন কিছুক্ষণের জন্য বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েন। একটু পর স্বাভাবিক হয়ে বলেন, ‘আমরা এই কোচের অধীনে অনুশীলন করব না। এই কোচ থাকলে আমরা একসঙ্গে চলে যাব। একটা বিষয় বলা দরকার, নিজেদের প্রমাণের কিছু নেই। ব্যাপারটি আত্মসম্মানের। দিনশেষে মেয়েরা দেশের জন্য খেলেন। দেশের মানুষ যেভাবে মেয়েদের কটূক্তি করছেন, যেটি মেয়েদের জন্য মেনে নেওয়াটা অসম্ভব’- কান্নাজড়িত কণ্ঠে সাবিনার এমন মন্তব্যের পর অন্য ফুটবলাররাও একে একে বাটলারের বিষয়ে কথা বলতে থাকেন। ২০ মিনিটের মতো সংবাদ সম্মেলনের আগে তিন পাতার আনুষ্ঠানিক বিবৃতি মিডিয়াকর্মীদের হাতে তুলে দেন মেয়েরা। যেখানে লেখা আছে বাটলারের বিরুদ্ধে গুরুতর অনেক অভিযোগ। মেয়েদের পোশাক নিয়ে কথা বলা, বডি শেমিং (শারীরিক গঠন নিয়ে লজ্জা দেওয়া), দলের অভ্যন্তরে সিনিয়র-জুনিয়র বিভাজন সৃষ্টি, গালাগাল, মানসিক নির্যাতন, মেয়েদের ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে কথা বলাসহ নানা বিষয় আছে তিন পৃষ্ঠার লেখাতে। এসব বিষয় বাফুফে নারী ফুটবল কমিটির চেয়ারম্যান মাহফুজা আক্তার কিরণকে জানালেও সমাধান না পাওয়ার অভিযোগ মেয়েদের। তাই সভাপতি তাবিথ আউয়ালের সঙ্গে সরাসরি সাক্ষাতের আগে অনুশীলন না করার সিদ্ধান্ত নারী সাফজয়ীদের। সেখানেও যদি বাটলার ইস্যুতে ইতিবাচক কিছু না আসে, তাহলে গণহারে অবসরের হুমকি দিয়েছেন সাবিনারা। তবে গতকাল জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের সচিব (যুগ্ম সচিব) আমিনুল ইসলাম বিষয়টি নিয়ে বাফুফেকে একটি চিঠি দিয়েছেন। প্রকৃত অবস্থা খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানানো হয়েছে বাফুফেকে।

দুই বছরের চুক্তিতে নারী জাতীয় দলের কোচ হিসেবে পিটার বাটলারকে নিয়োগ দেওয়ার পরই অস্থিরতার ইঙ্গিত মেলে। সেটা বাস্তবে রূপ নেয়, মঙ্গলবার যখন বাটলারের ডাকে সাড়া দেননি মেয়েরা। এমন অবস্থায় মেয়েদের হুমকি দিতে থাকেন ফেডারেশনের কর্তারা। সংবাদমাধ্যমে নানা রিপোর্টের পর গতকাল একজোট হয়ে নিজেদের যুক্তিগুলো তুলে ধরেন মেয়েরা। মোট ১৮ জন স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে গত অক্টোবরের সাফে পিটার বাংলাদেশকে ‘ডোবাতে চেয়েছিলেন’ এমন অভিযোগও করা হয় প্রথম প্যারায়। সেখানে লেখা আছে, ‘আমরা যদি সাফে ব্যর্থ হতাম, বাফুফে কর্তারা ও দেশের মানুষের কাছে ভিলেন হয়ে যেতাম। ওই ম্যাচেই আমাদের ক্যারিয়ার শেষ হয়ে যেত। এটা বুঝেও আমরা ঝুঁকি নিয়েছিলাম দেশের হয়ে লড়াই করার জন্য। দেশের জন্য আমাদের এই লড়াই ও আবেগ, ভালোবাসার মূল্য ফুটবল ফেডারেশন থেকে আশা করেছিলাম। সেটা হয়নি। বরং সাফ থেকে ফেরার পর যা হলো, তার জন্য আমরা মোটেই প্রস্তুত ছিলাম না। এই বিতর্কিত ব্যক্তির সঙ্গে আরও দুই বছরের চুক্তি নবায়ন করেছে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন। এই সিদ্ধান্তে মেয়েদের দাবি-দাওয়াকে সম্পূর্ণরূপে উপেক্ষা করা হয়েছে।’

কোচ বাটলারের বিরুদ্ধে মেয়েদের বিদ্রোহের খবর নতুন নয়। গত বছরের অক্টোবরে নেপাল সাফের সময় এ নিয়ে আলোড়ন উঠেছিল। তবে কোচ বাটলারের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার সমাধানে বাফুফে থেকেও কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ মেয়েদের। এটাই এখন চূড়ান্ত রূপ নিয়েছে। গতকাল সকালে বাটলার জিম সেশনের আয়োজন করেছিলেন। সেখানে ক্যাম্পে থাকা ২৯ খেলোয়াড়ের মধ্যে ১২ জন অংশ নেন। সন্ধ্যায় বাকি ১৭ জন সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন। সেখানে কৃষ্ণা রানী সরকার সাফে তাঁর সঙ্গে ঘটে যাওয়া ঘটনা এভাবে বর্ণনা করেছেন, ‘আমরা মাঠে খুবই মানসিক চাপে থাকি। তিনি ইচ্ছা করে আমাদের অঙ্গভঙ্গি.

..। খুব সকালে উঠতে হয় আমাদের, একটু ক্যাজুয়াল থাকতেই পারি। কিন্তু তিনি আমাদের নিয়ে কটূক্তি করেন। যেটার কারণে আমরা আপসেট হয়ে যাই। এখন আমরা সভাপতির সঙ্গে বসতে চাই। আমাদের সমস্যা সাফের আগে থেকেই চলছিল। এটা নিয়ে আমাদের কিরণ আপা ও সাবেক প্রেসিডেন্টকে বলা হয়েছে। সাফে যাওয়ার আগে বলেছিলেন, কোচ চেঞ্জ করা হবে। স্থানীয় কোচরা সবই জানেন, কিন্তু এখন মুখ খুলছেন না। এখন আমাদের যদি খেলা ধরে রাখতে হয়, তাহলে এই কাজ ছাড়া উপায় নেই।’

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ফ টবল র জন য ফ টবল

এছাড়াও পড়ুন:

৭ উপাচার্যের অংশগ্রহণে গোবিপ্রবিতে শিক্ষা সমাপনী

গোপালগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (গোবিপ্রবি) নবম ব্যাচের (নবনীতক ৯) শিক্ষার্থীদের নিয়ে শিক্ষা সমাপনী-২০২৪ অনুষ্ঠিত হয়েছে। ২০১৯-২০ সেশনের শিক্ষার্থীদের বিদায় বেলায় এক মঞ্চে আসীন হন দেশের বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের খ্যাতিমান সাত উপাচার্য।

বুধবার (৩০ জুলাই) দুপুর ১২টায় একাডেমিক ভবন প্রাঙ্গণে আনন্দঘন পরিবেশে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. হোসেন উদ্দিন শেখর ছাড়াও অনুষ্ঠানে অতিথি ছিলেন, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. হায়দার আলী, খুলনা কৃষি বিশ্বিবদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. নাজমুল আহসান, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এম সরওয়ারউদ্দিন চৌধুরী, পিরোজপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মো. শহীদুল ইসলাম, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এসএম আব্দুল আওয়াল, রাঙ্গামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আতিয়ার রহমান ও শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুসলেহ উদ্দিন তারেক।

আরো পড়ুন:

নতুনবাজারের সেই রনির বুলেটের যন্ত্রণা আজো থামেনি

শিশু ছাত্রীকে যৌন নির্যাতন, মাদ্রাসা শিক্ষকের বিরুদ্ধে মামলা 

এক মঞ্চে একইসঙ্গে এতজন উপাচার্যকে পেয়ে সমাপনী ব্যাচসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. হায়দার আলী বলেন, “এভাবে একসঙ্গে পুরো সেশনের শিক্ষা সমাপনী আয়োজনের আইডিয়াটি অত্যন্ত চমৎকার। এতে করে একটি ব্যাচের একইসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে প্রবেশ ঘটে। যেখানে সবার একসঙ্গে পরীক্ষা হয়, রেজাল্ট প্রকাশ হয় এবং কোনো সেশন জট থাকে না। আমি এই আইডিয়াটি আমার নিজ বিশ্ববিদ্যালয়েও বাস্তবায়নের চেষ্টা করব।”

খুলনা কৃষি বিশ্বিবদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. নাজমুল আহসান বলেন, “আমরা বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যগণ এখানে এসেছি সংহতি জানানোর জন্য। আমি নবম ব্যাচের শিক্ষার্থীদের জীবনে সফলতা কামনা করছি।”

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এম সরওয়ারউদ্দিন চৌধুরী বলেন, “শিক্ষার্থীদের বিসিএস দেওয়া, বিভিন্ন সেক্টরে কাজ করা বা ব্যবসা করার লক্ষ্য থাকে। তবে জীবনে কোনো না কোনো কিছু করতেই হবে। এক্ষেত্রে অবসর বলে কোনো শব্দ থাকা উচিত নয়।”

পিরোজপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মো. শহীদুল ইসলাম বলেন, “আমি যখন দেশের বাইরে পড়াশোনা করতাম, তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে আমি কখনোই দেখিনি। আর বাংলাদেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের মঞ্চে কখনো একসঙ্গে সাতজন উপাচার্যকেও বসতে দেখিনি, এটা অধ্যাপক ড. হোসেন উদ্দিন শেখর করে দেখিয়েছেন।”

পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এস এম আব্দুল আওয়াল বলেন, “আমরা যদি আন্তর্জাতিক পরিপ্রেক্ষিতে চিন্তা করি, আমাদের চাকরি খোঁজার পাশাপাশি এমন কিছু করার মানসিকতা রাখতে হবে, যা দেশ ও জাতির জন্য কল্যাণ বয়ে আনবে।”

রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. আতিয়ার রহমান বলেন, “শিক্ষা সমাপনী মানেই সব সম্পর্ক ছিন্ন করা নয়। বিশ্বে এমন অনেক নজির আছে, যেখানে অ্যালামনাই থেকে উপাচার্য নিয়োগ হয়েছে। তাই নিজেকে বিস্তৃত পরিসরে মেলে ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের মুখ উজ্জ্বল করার দায়িত্ব নিতে হবে।”

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুসলেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, “নিজেকে চেনাই সবচেয়ে বড় শিক্ষা। আর শিক্ষার্থীদের কর্মজীবনই বলে দেবে, তারা বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে কতটা জ্ঞান অর্জন করেছে।”

প্রধান অতিথিরি বক্তব্যে উপাচার্য অধ্যাপক ড. হোসেন উদ্দিন শেখর আগত উপাচার্যদের কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, “শিক্ষার্থীদের অনুপ্রেরণা দেওয়ার জন্যই আমাদের এই প্রয়াস। একইসঙ্গে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি তুলে ধরাও আমাদের লক্ষ্য। আমরা জানিয়ে দিতে চাই, গোপালগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে চায় এবং অচিরে দাঁড়াবেই।”

তিনি বলেন, “আমরা ইতোমধ্যে ইউজিসির দুইটি হিট প্রকল্প পেয়েছি এবং ভবিষ্যতে আরো পাব। আমরা আশা করছি, বি ক্যাটাগরি থেকে আগামী অর্থবছরের আগেই আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়টি এ ক্যাটাগরিতে উন্নীত হবে।”

গোবিপ্রবির উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. সোহেল হাসানের সভাপতিত্বে এতে কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ নাজমুল আহসানসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার, প্রক্টর, ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা দপ্তরের পরিচালক, সব অনুষদের ডিন, বিভাগীয় সভাপতি ও প্রাধ্যক্ষগণ, দপ্তর প্রধানগণ, বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে, জুলাই শহিদদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু করা হয়।

শিক্ষা সমাপনী উপলক্ষে বুধবার ছাত্রদের কালার ফেস্ট ও সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা এবং আগামীকাল বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) সন্ধ্যায় একটি কনসার্টের আয়োজন করা হয়েছে।

ঢাকা/রিশাদ/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ভারতের কাছে তেল বিক্রি করতে পারে পাকিস্তান, খোঁচা দিলেন ট্রাম্প
  • কেটি পেরি ও জাস্টিন ট্রুডোর ডিনার, গুঞ্জন
  • শিক্ষার্থী সাজিদ স্মরণে ইবিতে ব্যতিক্রমী আয়োজন
  • ৭ উপাচার্যের অংশগ্রহণে গোবিপ্রবিতে শিক্ষা সমাপনী