Samakal:
2025-11-03@19:18:41 GMT

ফেলনা নয়, প্রয়োজনীয়...

Published: 31st, January 2025 GMT

ফেলনা নয়, প্রয়োজনীয়...

বেশির ভাগ ফল ও সবজির খোসা ফেলে দিয়েই আমরা বাকি ‌‌অংশটা ব‍্যবহার করি। অনেকেই জানি না, এসব ফল-সবজির খোসা ফেলে না দিয়ে সেগুলো দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহার করা যায়।  পুষ্টিগুণেও সমৃদ্ধ। একটি কমলার প্রায় ২০ শতাংশ অংশ এবং একটি কিউইর ৯ থেকে ১৩ শতাংশ ও একটি ডালিমের প্রায় অর্ধেক অংশই খোসা। বিশ্বজুড়ে প্রতি বছর প্রায় এক-তৃতীয়াংশ খাবার অপচয় হয়, যার পরিমাণ ১.

৩ বিলিয়ন টন। এই খাবারের অপচয় ও ক্ষতি বৈশ্বিক গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনের ৮ শতাংশের জন্য দায়ী, যা বিমান পরিবহন খাতে নির্গমনের তিন গুণেরও বেশি। ল্যান্ডফিল বা ভাগাড়ে স্তূপ করে রাখা বর্জ্য পচে বিপুল পরিমাণ মিথেন গ্যাস নির্গত করে, যা কার্বন ডাইঅক্সাইডের চেয়ে ৮০ গুণ বেশি শক্তিশালী। ল্যান্ডফিলে না ফেলে পচনশীল বর্জ্য কম্পোস্ট করার মাধ্যমে মিথেন নির্গমন কমানো সম্ভব। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির এক প্রতিবেদনে এ বিষয়টি তথ্য-উপাত্তসহ সবিস্তারে তুলে ধরা হয়।  লিখেছেন এইচবি রিতা

খোসা ব‍্যবহারের পাঁচটি পদ্ধতি এখানে দেওয়া হলো– 
কমলার খোসা দিয়ে দারুণ কিছু
কমলার খোসা দিয়ে জেলি (মার্মালেড) সকালের নাশতার জন্য হতে পারে একটি অসাধারণ উপাদান– ব্রেড টোস্টের সঙ্গে মাখন আর কমলার জেলি ভীষণ সুস্বাদু। জেলি বানানোর উপকরণ: সেভিল কমলা (তেতো এবং টকযুক্ত কমলা, যার খোসা ঘন) ১.৩ কেজি, দুটি লেবুর রস এবং ২.৩ কেজি চিনি। প্রথমে পরিষ্কার কমলাগুলো দুই ঘণ্টা সেদ্ধ করতে হবে। ঠান্ডা হয়ে গেলে কমলাগুলো থেকে খোসা ছড়িয়ে নিয়ে, কমলার কোয়া অংশ চেপে রস ছেঁকে নিতে হবে। এই রসে পেপটিন বের হবে, যা কমলার জেলি জমাতে সাহায্য করবে। শেষে চিনি, রসসহ মিশ্রণটি ২০ মিনিট আবারও সেদ্ধ করতে হবে। খোসা কেটে ১০ মিনিট ফুটিয়ে নিন। এই প্রক্রিয়া তিনবার করতে হবে এবং প্রতিবার ঠান্ডা পানিতে ধুয়ে নিতে হবে তেতো স্বাদ দূর করার জন্য। এরপর চিনি এবং পানির সঙ্গে রান্না করলে দারুণ মজার একটি খাবার তৈরি হবে।
আনারসের খোসার ব‍্যবহার
অবাক হলেও সত‍্য যে আনারসের খোসা খাওয়া যায়। মেক্সিকান ঐতিহ্যবাহী ফারমেন্টেড পানীয় ‘টেপাচে’, যা প্রোবায়োটিকের একটি ভালো উৎস। এর রেসিপিও খুব সহজ। ফারমেন্টেশনের ফলে এতে কিছুটা অ্যালকোহল থাকে সাধারণত ১ শতাংশের কম। এই রেসিপির উপকরণে দরকার একট এক গ্যালনের (৩.৮ লিটার) জার, একটি বড় ইলাস্টিক ব্যান্ড, একটি মসলিন কাপড় বা চিজক্লথ, যা জারের মুখ ঢাকবে। প্রথমে একটি আনারস ধুয়ে খোসা ছাড়িয়ে এবং কাণ্ড আলাদা করে নিন। এরপর একটি প্যানে পানি এবং ব্রাউন সুগার বা পিলোনসিলো (মেক্সিকোর ঐতিহ্যবাহী অপরিশোধিত চিনি) মিশিয়ে ধীরে ধীরে গরম করুন যতক্ষণ না চিনি গলে যায়। এবার মিশ্রণটি কিছুটা ঠান্ডা করে আনারসের খোসা ও কাণ্ড বয়ামে রেখে তার ওপর গরম চিনি-পানি ঢেলে দিন। এরপর বয়ামের মুখ মসলিন কাপড়, চিজক্লথ বা পরিষ্কার ডিশটাওয়েল দিয়ে ঢেকে একটি রাবার ব্যান্ড দিয়ে আটকে দিন। এতে বাতাস ঢুকতে পারবে;  মাছি বা ধুলা ঢুকবে না। মিশ্রণটি ফারমেন্ট হওয়ার জন্য রেখে দিন। এটি ২১-২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস (৭০-৭৮ ডিগ্রি ফারেনহাইট) তাপমাত্রায় রাখতে হবে এবং ২৪-৩৬ ঘণ্টার মধ্যে ওপরে সাদা ফেনা দেখা যাবে। এটিই ফারমেন্ট হওয়ার লক্ষণ। ফারমেন্টেশন যত বেশি সময় চলবে, স্বাদ তত বেশি হবে। যখন এটি প্রস্তুত হবে, তখন মিশ্রণটি ছেঁকে ফ্রিজে রেখে ঠান্ডা পানীয় হিসেবে উপভোগ করুন। স্বাদ বাড়াতে এর সঙ্গে আদা, লেবু বা অন্য কোনো ফল যোগ করতে পারেন। যদি এসিড (যেমন লেবুর রস) যোগ করতে চান তাহলে ফারমেন্টেশন শেষে যোগ করুন। কারণ এটি ফারমেন্টেশনের গতি কমিয়ে দেয়।
আদার খোসা
আদার খোসা আমরা অনেক সময় ফেলে দিই। খোসাটিই আদাকে অনেক উপকারী গুণ দেয়; যার মধ্যে বায়োঅ্যাকটিভ যৌগ, যার ফাইটোকেমিক্যাল গুণাবলি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল এবং অ্যান্টিক্যান্সার প্রভাব রয়েছে। এটি ভিটামিন সি, ক্যালসিয়াম, আয়রন ইত্যাদির ভালো উৎস। আপনি খোসাসহ আদা ব্যবহার করতে পারেন অথবা খোসা অন্য রেসিপিতে ব্যবহার করতে পারেন।
আদার খোসা স্যুপে দিয়ে স্বাদ বাড়াতে পারেন। ব্লেন্ড বা সার্ভ করার আগে সেটি সরিয়ে ফেলুন। খোসাগুলো পানির সঙ্গে সেদ্ধ করে আদার ব্রথ তৈরি করতে পারেন, যা ফ্রিজে রেখে স্মুদি, জুস, ককটেল, স্পার্কলিং ওয়াটার যোগ করার জন্য ব্যবহার করা যায়, অথবা রুট ভেজিটেবল স্টিম করার জন্যও ব্যবহার করা যেতে পারে। স্বাদ বাড়াতে খোসা ওভেনে রোস্ট করতে পারেন। তারপর গুঁড়া করে আদার চা তৈরি করতে পারেন– চা তৈরি হওয়ার পর অবশ্যই ছেঁকে নিতে হবে। এই গুঁড়া রান্না এবং বেকিংয়ে মসলা হিসেবেও ব্যবহার করা যায়।
বাটারনাট কুমড়ার ব‍্যবহার
মিষ্টি স্বাদের বাটারনাট কুমড়ার খোসা এবং বীজ অনেকেই ফেলে দেন। এগুলো সম্পূর্ণ খাওয়া যায় এবং পুষ্টিকর। কুমড়ার খোসা এবং বীজ ফাইবার, ভিটামিন এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যকর উপাদানসমৃদ্ধ।
বাটারনাট কুমড়ার খোসা এবং বীজের ব‍্যবহারে আপনি একটি মজাদার স্ন্যাকস তৈরি করতে পারেন। এই প্রক্রিয়ায় আপনি খোসা এবং বীজের পূর্ণ পুষ্টি ব্যবহার করতে পারবেন। এটি করতে বীজ এবং খোসা একটি বাটিতে মিশিয়ে তাতে লবণ, পাপরিকা, স্মোকড পাপরিকা, জিরা এবং মরিচের গুঁড়া ছিটিয়ে কিছু অলিভ অয়েল দিয়ে ভালোভাবে নেড়ে নিতে হবে। এ মিশ্রণটি ১৭০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় এয়ার ফ্রায়ারে রোস্ট করতে হবে; যাতে এটি পুড়ে না যায়। মাঝে মধ্যে পরীক্ষা করার পর প্রায় ২০ মিনিট পর এটি সুন্দর ও ক্রাঞ্চি হয়ে উঠবে। এ ছাড়া শুকনো খোসা ফ্রিজে রেখে সবজির স্টক তৈরি করতে ব্যবহার করতে পারেন। পরবর্তী সময়ে স্যুপ বা অন্য কোনো রান্নায় কাজে আসবে।
পেঁয়াজের খোসার ব‍্যবহার
পেঁয়াজের মধ্যে কিছু রাসায়নিক থাকে। যাকে ফ্ল্যাভোনয়েড বলা হয়। এটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং প্রদাহবিরোধী গুণাবলি সমৃদ্ধ। এই ফ্ল্যাভোনয়েড ফুটিয়ে এবং বের করে এনে একটি শক্তিশালী রঙের ডাই তৈরি করা যায়। এটি করতে প্রথমে কাপড়টি গরম পানিতে ধুয়ে তেল বা ময়লা সরিয়ে নিয়ে পরিষ্কার করতে হবে; যাতে ডাইয়ের কার্যকারিতা ভালোভাবে কাজ করতে পারে। একটি বড় ধাতব পাত্রে পেঁয়াজের খোসা ও দুই কাপ পানি যোগ করুন। মাঝারি আঁচে ১৫ মিনিট সেদ্ধ করুন, যতক্ষণ না পানির রং গাঢ় হয়ে যায়। এবার খোসা সরিয়ে ফেলুন এবং কাপড়টি গরম ডাইয়ের মধ্যে ৩০ মিনিট থেকে ১ ঘণ্টা ডুবিয়ে রাখুন। কাপড়টি পেঁচানো না রেখে শুকাতে দিন। যদি রং গাঢ় না হয়, আবার ডুবিয়ে রাখুন যতক্ষণ না কাঙ্ক্ষিত রং পেয়ে যান। এভাবে আপনি পেঁয়াজের খোসা ব্যবহার করে প্রাকৃতিক, স্থায়ী ডাই তৈরি করতে পারেন। 
লেখক: নিউইয়র্কভিত্তিক সাংবাদিক, শিক্ষক

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব যবহ র করত স দ ধ কর য গ কর র জন য কমল র র একট

এছাড়াও পড়ুন:

খালেদা জিয়াকে নিয়ে বিএনপির নির্বাচনী যাত্রা শুরু

সব জল্পনার অবসান হলো—বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া নির্বাচন করছেন। তিনি ফেনী-১, বগুড়া-৭ ও দিনাজপুর-৩ আসনে প্রার্থী হবেন। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও বগুড়া-৬ আসন থেকে নির্বাচন করবেন।

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য সোমবার বিএনপি ২৩৭ আসনে মনোনীত প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছে। তাতে দলের দুই শীর্ষ নেতার নির্বাচন করা এবং তাঁদের নির্বাচনী আসনগুলো নিশ্চিত করা হয়। এ ছাড়া দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ঠাকুরগাঁও-১ আসনে নির্বাচন করবেন।

তারেক রহমান বগুড়া-৬ আসন থেকে নির্বাচন করবেন, অনেক আগে থেকেই এমন আলোচনা আছে। তবে অসুস্থতার কারণে এবার খালেদা জিয়ার নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া নিয়ে নেতা-কর্মীদের মধ্যে সংশয় ছিল। আবার তাঁর নিজেরও নির্বাচন করার ব্যাপারে খুব একটা আগ্রহ ছিল না।

দলীয় সূত্র বলছে, নির্বাচন ঘিরে নানামুখী শঙ্কা, বিশেষ করে ৫ আগস্টের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে খালেদা জিয়াকে নির্বাচনে নেতৃত্ব দিতে রাজি করানো হয়। শেষ পর্যন্ত তাঁর প্রার্থী হওয়ার ঘোষণায় নেতা-কর্মীরা আনন্দিত।

স্থায়ী কমিটির জ্যেষ্ঠ সদস্য জমির উদ্দিন সরকার, সেলিমা রহমান ও নজরুল ইসলাম খান এবার নির্বাচন করছেন না। তবে বয়োজ্যেষ্ঠ নেতা জমির উদ্দিন সরকারের পঞ্চগড়-১ আসনে তাঁর ছেলে মোহাম্মদ নওশাদ জমিরকে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে।

বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা মনে করছেন, নানা কারণে আসন্ন নির্বাচন বিএনপির জন্য খুব স্বস্তিদায়ক না-ও হতে পারে। খালেদা জিয়াকে নির্বাচন করতে রাজি করানোর মধ্য দিয়ে সার্বিকভাবে নির্বাচনের গুরুত্বটা আরও বৃদ্ধি পাবে। পাশাপাশি নির্বাচন নিয়ে নতুন কোনো জটিলতার উদ্ভব হলে, সেটা মোকাবিলায়ও তাঁর ভোটে অংশগ্রহণ পরিস্থিতির ওপর একটা প্রভাব ফেলবে।

জাতীয় সংসদের ৩০০ আসনের মধ্যে সোমবার ২৩৭ আসনে মনোনীত প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করা হয়। বাকি ৬৩টি আসনে প্রার্থিতা পরে ঘোষণা করা হবে।

বিএনপির দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, স্থগিত রাখা কিছু আসনে প্রার্থিতা নিয়ে অভ্যন্তরীণ সমস্যা আছে। আর কিছু আসন জোট ও সমমনা দলগুলোর প্রার্থীদের জন্য রাখা হয়েছে, যাদের সঙ্গে নির্বাচনী সমঝোতা হতে পারে।

ঘোষিত তালিকা অনুযায়ী, বিএনপির চেয়ারপারসন, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান, মহাসচিবসহ স্থায়ী কমিটির ১২ জন সদস্য নির্বাচনে প্রার্থী হচ্ছেন। অন্যরা হলেন খন্দকার মোশাররফ হোসেন (কুমিল্লা-১), মির্জা আব্বাস উদ্দিন আহমেদ (ঢাকা-৮), গয়েশ্বর চন্দ্র রায় (ঢাকা-৩), আবদুল মঈন খান (নরসিংদী-২), আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী (চট্টগ্রাম-১০), ইকবাল হাসান মাহমুদ (সিরাজগঞ্জ-২), সালাহউদ্দিন আহমদ (কক্সবাজার-১), হাফিজ উদ্দিন আহমদ (ভোলা-৩) এবং এ জেড এম জাহিদ হোসেন (দিনাজপুর-১)।

স্থায়ী কমিটির জ্যেষ্ঠ সদস্য জমির উদ্দিন সরকার, সেলিমা রহমান ও নজরুল ইসলাম খান এবার নির্বাচন করছেন না। তবে বয়োজ্যেষ্ঠ নেতা জমির উদ্দিন সরকারের পঞ্চগড়-১ আসনে তাঁর ছেলে মোহাম্মদ নওশাদ জমিরকে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ২৩৭ আসনে প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন। তবে তিনি বলেছেন, এটি প্রাথমিক তালিকা। প্রয়োজন বোধ করলে স্থায়ী কমিটি প্রার্থিতা পরিবর্তন করতে পারবে।

এনসিপির নেতারা যেসব আসনে নির্বাচন করতে চান বলে আলোচনা আছে, সে আসনগুলোর একটি (ঢাকা-৯) ছাড়া বাকিগুলোতে বিএনপি প্রার্থী ঘোষণা করেছে। এর মধ্যে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম (ঢাকা-১১), সদস্যসচিব আখতার হোসেন (রংপুর-৪), জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব তাসনিম জারা (ঢাকা-৯), দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ (কুমিল্লা-৪), উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম (পঞ্চগড়-১) ও জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আবদুল হান্নান মাসউদের (নোয়াখালী-৬) স্ব স্ব আসনে তাঁদের কমবেশি তৎপরতা আছে।

সোমবার বিকেল পাঁচটার দিকে প্রার্থী ঘোষণার আগে দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত করতে তারেক রহমানের সভাপতিত্বে দলের স্থায়ী কমিটির জরুরি সভা হয়। দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে প্রায় পাঁচ ঘণ্টাব্যাপী সভা হয়। সেখানে জুলাই সনদ বা সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়ন নিয়ে চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে করণীয় নিয়েও আলোচনা হয়। পরে স্থায়ী কমিটির সদস্যদের নিয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম সম্ভাব্য প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন। এ সময় বিএনপির বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও সহসাংগঠনিক সম্পাদকেরাও উপস্থিত ছিলেন।

এবারের প্রার্থী তালিকায় রয়েছেন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও দলের ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু। তাঁকে ফেনী-৩ আসনে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে।

আবদুল আউয়াল মিন্টু প্রথম আলোকে বলেন, ‘জীবনে প্রথম সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হচ্ছি। দল আমার ওপর আস্থা রেখেছে, সে আস্থা রাখার জন্য ধন্যবাদ। আমি আগামীকাল (আজ মঙ্গলবার) ম্যাডামের (খালেদা জিয়া) সঙ্গে দেখা করব, সালাম জানাব।’

যে কারণে ঢাকার সাতটি আসন ফাঁকা

ঢাকার ২০টি আসনের মধ্যে ১৩টিতে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে। বাকি সাতটি আসন ফাঁকা রাখা হয়েছে। নেতা-কর্মীরা বলছেন, ঢাকায় প্রার্থিতা নিয়ে মারাত্মক পর্যায়ে অভ্যন্তরীণ কোন্দল নেই। তাঁদের ধারণা, নির্বাচনী সমঝোতার জন্য আসনগুলোতে প্রার্থিতা স্থগিত রাখা হয়েছে।

বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, সাতটি আসনের মধ্যে জাতীয় নাগরিক পাটির (এনসিপি) সঙ্গে সমঝোতা হলে তাদের জন্য অন্তত তিনটি আসন ছাড় দেওয়া হতে পারে। এ তালিকায় গণতন্ত্র মঞ্চ, বিজেপি, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের নামও আছে।

তবে এনসিপির নেতারা যেসব আসনে নির্বাচন করতে চান বলে আলোচনা আছে, সে আসনগুলোর একটি (ঢাকা-৯) ছাড়া বাকিগুলোতে বিএনপি প্রার্থী ঘোষণা করেছে। এর মধ্যে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম (ঢাকা-১১), সদস্যসচিব আখতার হোসেন (রংপুর-৪), জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব তাসনিম জারা (ঢাকা-৯), দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ (কুমিল্লা-৪), উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম (পঞ্চগড়-১) ও জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আবদুল হান্নান মাসউদের (নোয়াখালী-৬) স্ব স্ব আসনে তাঁদের কমবেশি তৎপরতা আছে।

ঢাকা-৯ আসন স্থগিত রাখা হলেও সেটা কার জন্য, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে সেখানে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হাবীব উন নবী খানকে (সোহেল) প্রার্থী করা হতে পারে বলে দলে আলোচনা আছে।

ঢাকা-১৪: মায়ের ডাক-এর সানজিদা

ঢাকা-১৪ আসনে এবার প্রার্থী তালিকা থেকে বাদ পড়লেন এস এ খালেকের ছেলে এস এ সিদ্দিক (সাজু)। সেখানে গুম হওয়া ব্যক্তিদের স্বজনদের ব্যক্তিদের সংগঠন ‘মায়ের ডাক’-এর সংগঠক সানজিদা ইসলামকে (তুলি) প্রার্থী মনোনীত করেছে বিএনপি। এই আসনে ইতিমধ্যে জামায়াত প্রার্থী ঘোষণা করেছে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে গুমের শিকার মীর আহমদ বিন কাসেমকে (আরমান)। তিনি আট বছর গুম ছিলেন। গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের পর গোপন বন্দিশালা ‘আয়নাঘর’ থেকে মুক্তি পান।

সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী, আগামী ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথমার্ধে জাতীয় সংসদ নির্বাচন হওয়ার কথা। ডিসেম্বরের শুরুর দিকে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে বলে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকেই বিএনপি জাতীয় নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আসছে। এ লক্ষ্যে দলটি অভ্যন্তরীণ জরিপসহ সাংগঠনিক উপায়ে প্রার্থী বাছাই সম্পন্ন করেছে। সোমবার আনুষ্ঠানিকভাবে তাঁদের নাম প্রকাশ করে নির্বাচনের পথে যাত্রা শুরু করল বিএনপি।

এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, বাংলাদেশের মানুষ বিগত ১৫-২০ বছর ভোট দিতে পারেনি। এখন জাতি উৎসাহিত হচ্ছে ভোটের কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে। তিনি বলেন, উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট দিতে মানুষের যে আকাঙ্ক্ষা, সেটি পূরণ করার লক্ষ্যে বিএনপি প্রার্থী মনোনয়ন ঘোষণা করে একটা বড় পদক্ষেপ নিল। ইতিমধ্যে অনেকে মাঠে চলে গেছেন, এ ঘোষণার পর বাকিরাও মাঠে যাবেন। এর মাধ্যমে ভোটের একটা উৎসবমুখর পরিবেশ তৈরি হবে।

১০ নারী প্রার্থী

ঘোষিত ২৩৭ আসনের প্রার্থী তালিকায় নারী রয়েছেন দশজন। এর মধ্যে অন্যতম বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। বাকিরা হলেন সিলেট-২ আসনে তাহসিনা রুশদীর, ফরিদপুর-২ আসনে শামা ওবায়েদ ইসলাম, ফরিদপুর-৩ আসনে নায়াব ইউসুফ আহমেদ, মানিকগঞ্জ-৩ আসনে আফরোজা খান রিতা, শেরপুর-১ আসনে সানসিলা জেবরিন, ঝালকাঠি-২ আসনে ইসরাত সুলতানা ইলেন ভুট্টো, যশোর–২ আসনে সাবিরা সুলতানা, ঢাকা-১৪ আসনে সানজিদা ইসলাম ও নাটোর-১ আসনে ফারজানা শারমিন।

মনোনয়ন না পেয়ে দুই মহাসড়ক অবরোধ

মাদারীপুর-১ আসনে বিএনপি প্রার্থী ঘোষণা করে কামাল জামান মোল্লাকে। এর প্রতিবাদে আরেক মনোনয়নপ্রত্যাশী সাজ্জাদ হোসেন লাভলু সিদ্দিকীর অনুসারীরা রাত আটটার দিকে ঢাকা-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ে অবরোধ করে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেন।

চট্টগ্রাম-৪ (সীতাকুণ্ড) আসনে বিএনপির সাবেক যুগ্ম মহাসচিব আসলাম চৌধুরীকে মনোনয়ন না দেওয়ায় তাঁর অনুসারীরা সন্ধ্যায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ