ফক্স স্পোর্টসে যৌন হয়রানির অভিযোগ, সাবেক প্রতিবেদকের মামলা
Published: 1st, February 2025 GMT
ফক্স স্পোর্টসের সাবেক অ্যাংকর ও প্রতিবেদক জুলি স্টুয়ার্ট-বিংক্স তার এক সাবেক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ এনেছেন। শুক্রবার লস অ্যাঞ্জেলস কাউন্টি সুপিরিয়র কোর্টে দায়ের করা মামলায় তিনি অভিযোগ করেন, ২০১৬ সালে ফক্স স্পোর্টসের নির্বাহী প্রযোজক চার্লি ডিকসন তাকে একটি হোটেলের ব্যালকনিতে দেয়ালে ঠেসে ধরেন এবং জোরপূর্বক তার শরীরের ওপর চেপে বসেন।
মামলার নথিতে বলা হয়েছে, স্টুয়ার্ট-বিংক্সের সঙ্গে একটি নতুন অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করছিলেন ডিকসন। পরে তাকে হোটেলের কক্ষে নিয়ে গিয়ে অপ্রীতিকর আচরণ করেন। অভিযোগ অনুযায়ী, স্টুয়ার্ট-বিংক্স কোনোভাবে নিজেকে ছাড়িয়ে নিতে সক্ষম হলেও, কিছুদিন পরেই ফক্স তার চুক্তি নবায়ন না করার সিদ্ধান্ত নেয়।
২০১৭ সালের জুনে ফক্স ছাড়ার পর তিনি প্রতিষ্ঠানটির মানবসম্পদ বিভাগের তদন্তে সাক্ষ্য দেন। সে সময় তিনি ডিকসনের বিরুদ্ধে অভিযোগ উত্থাপন করলেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলে মামলায় দাবি করা হয়েছে।
ফক্স স্পোর্টস এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, "এই অভিযোগগুলো আট বছরের পুরোনো। তখনই আমরা তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে বিষয়টি তদন্ত করেছিলাম এবং সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিয়েছিলাম।" তবে তদন্তের ফলাফল প্রকাশ করেনি ফক্স।
স্টুয়ার্ট-বিংক্স তার মামলায় ফক্স স্পোর্টস, এর মূল কোম্পানি ফক্স কর্পোরেশন এবং অভিযুক্ত চার্লি ডিকসনের বিরুদ্ধে যৌন নির্যাতন ও যৌন হয়রানির অভিযোগ এনেছেন। তিনি ক্ষতিপূরণসহ ভবিষ্যতে কর্মক্ষেত্রে এমন হয়রানি বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা চেয়েছেন।
এদিকে, গত মাসে অন্য একটি মামলায় ফক্স স্পোর্টসের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ এনেছেন নুশিন ফারাজি নামে এক হেয়ার স্টাইলিস্ট। তিনি দীর্ঘ এক দশক ধরে প্রতিষ্ঠানটিতে কাজ করেছেন এবং অভিযোগ করেছেন, নারীদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ ও সহিংসতার পরিবেশ ফক্স স্পোর্টসে বিদ্যমান।
ফারাজির মামলার পরই স্টুয়ার্ট-বিংক্স তার সঙ্গে যোগাযোগ করেন এবং তার গল্প প্রকাশ্যে আনার প্রতিশ্রুতি দেন বলে মামলার নথিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: য ন হয়র ন
এছাড়াও পড়ুন:
নারীদের নিয়ে বারে ‘অগ্রহণযোগ্য’ আচরণ, আমিরাতের ক্ষোভে রাষ্ট্রদূতকে ফেরত নিচ্ছে ইসরায়েল
সংযুক্ত আরব আমিরাতের (ইউএই) এক পানশালায় ‘অমর্যাদাকর’ আচরণের জেরে ইসরায়েলের রাষ্ট্রদূতকে দেশে ফেরত পাঠানো হচ্ছে বলে হিব্রু সংবাদমাধ্যমের এক খবরে জানা গেছে।
ইসরায়েলের চ্যানেল ১২ টেলিভিশনের প্রতিবেদনে গতকাল মঙ্গলবার বলা হয়েছে, আবুধাবি কর্তৃপক্ষ স্পষ্ট করে জানিয়েছে যে তারা আর ওই রাষ্ট্রদূতকে গ্রহণ করতে প্রস্তুত নয়। এরপরই তেল আবিব সরকার উপসাগরীয় অঞ্চলের দেশটি থেকে রাষ্ট্রদূত ইয়োসি আব্রাহাম শেলিকে ফিরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
এর আগে হিব্রু সংবাদমাধ্যম এন১২ বলেছে, শেলি কয়েকজন ইসরায়েলিকে নিয়ে আমিরাতের একটি বারে হাজির হন এবং এমন আচরণ করেন, যা আরব আমিরাতের কর্মকর্তারা ‘অগ্রহণযোগ্য ও মর্যাদাহানিকর’ বলে ইসরায়েলকে জানান। রাষ্ট্রদূতের সঙ্গীদের মধ্যে নারীরাও ছিলেন।
২০২০ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় স্বাক্ষরিত আব্রাহাম চুক্তির আওতায় সংযুক্ত আরব আমিরাত ও ইসরায়েলের মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিক হয়। গাজা যুদ্ধ ঘিরে বিশ্বজুড়ে ইসরায়েলের তুমুল সমালোচনা চললেও আবুধাবি এখনো দেশটির ঘনিষ্ঠতম আরব মিত্র হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোর অভিযোগ, গাজায় গণহত্যা চালাচ্ছে ইসরায়েল।
গাজা যুদ্ধ শুরুর পর এখন পর্যন্ত ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী যে একমাত্র আরব দেশে সফর করতে পেরেছেন, তা হলো আরব আমিরাত। গত জানুয়ারিতে গাজায় এক সাময়িক যুদ্ধবিরতির আগে ইসরায়েলি পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিডিওন সার আমিরাত সফর করেন।
শেলির বিরুদ্ধে এমন পদক্ষেপ আমিরাতের নজিরবিহীন এক পদক্ষেপ হিসেবেই বিবেচিত হচ্ছে। মাত্র এক কোটি জনসংখ্যার এ দেশের ৯০ শতাংশ মানুষই আমিরাতি নন। দেশটিতে দক্ষিণ এশিয়ার শ্রমিক, ব্রিটিশ অভিবাসী, রুশ ধনকুবের ও অন্য প্রভাবশালীদের উপস্থিতি রয়েছে। আর দুবাই উপসাগরীয় অঞ্চলের নৈশকালীন বিনোদনকেন্দ্র হিসেবে পরিচিত।
গত সপ্তাহে হিব্রু গণমাধ্যমে প্রকাশিত এক খবরে বলা হয়, গত শুক্রবার রাতে আবুধাবিতে বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে বেড়াতে গিয়ে শেলি এমন ‘অমর্যাদাকর’ আচরণ করেন, যা ব্যক্তি পরিসরের সীমা অতিক্রম করে। এর আগে তিনি ব্রাজিলে ইসরায়েলের রাষ্ট্রদূত হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন এবং সেখানে দুটি বিতর্কিত ঘটনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন।
এক ঘটনায় শেলি ব্রাজিলের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জইর বলসোনারোর সঙ্গে নৈশভোজে অংশ নেন। ইনস্টাগ্রামে পোস্ট করা সেই ডিনারের ছবিতে দেখা যায়, টেবিলে একটি লবস্টার কালো মার্কার দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়েছে। উল্লেখ্য, ইহুদি খাদ্যবিধি অনুযায়ী ঝিনুক–জাতীয় খাবার নিষিদ্ধ।
২০২৩ সালে হারেৎজ পত্রিকার এক প্রতিবেদনে উঠে আসে, এক ব্রাজিলীয় নারীর ভিসা–সংক্রান্ত আবেদনের জবাবে শেলি নিজে ই-মেইল ও ভিডিও কলে যোগাযোগ করেন। তিনি জানান, ইসরায়েলের ভিসা পেতে হলে ওই নারীকে তাঁর সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে দেখা করতে হবে। পরে ওই নারী বলেন, এক ভিডিও কলে তিনি দেখেন, শেলি বিছানায় অর্ধনগ্ন অবস্থায় শুয়ে আছেন।
‘আমি যখন ক্যামেরা চালু করলাম, দেখি তিনি বিছানায় শুয়ে ঘামছেন। বললেন, তিনি হাঁটাহাঁটি করে ফিরেছেন। খুবই অনুচিত ছিল ব্যাপারটা। আমি বলি, পরে কথা বললে হয় না? উনি বলেন, ‘‘না, এখনই বলি।’’ এরপর ব্যক্তিগতভাবে দেখা করার কথা বলেন ও ব্রাসিলিয়ায় রাতের খাবারের আমন্ত্রণ জানান। আমি ভীষণ চাপে ও অস্বস্তিতে পড়ে যাই’, বলেন ওই নারী।
পরে শেলিকে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের মহাপরিচালক পদে নিযুক্ত করা হয়। ২০২৪ সালের নভেম্বরে তাঁকে আমিরাতে রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।
তখন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছিলেন, ‘ইয়োসি ব্রাজিলে অত্যন্ত দক্ষ রাষ্ট্রদূতের ভূমিকা পালন করেছেন। তিনি শুধু ব্রাজিলের প্রেসিডেন্টের সঙ্গেই নন, স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের সঙ্গেও ভালো সম্পর্ক গড়ে তুলেছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরেও তিনি গুরুত্বপূর্ণ ও কঠিন দায়িত্ব পালন করেছেন।’