সেতু ভেঙে দুর্ভোগে ১০ গ্রামের মানুষ
Published: 1st, February 2025 GMT
নদীভাঙনের কবলে পড়ে সেতু ভেঙে খালে পড়েছে। ঘটনাটি এক মাস আগে ঘটলেও সেতু মেরামত বা পুনর্নির্মাণ করা হয়নি। এতে দুর্ভোগে পড়েছে ১০ গ্রামের মানুষ।
জানা যায়, গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় লেবুতলা-ডুমরিয়া বাজার সড়কের চিথলিয়া গ্রামের কাটা খালের ওপর নির্মিত সেতুটি ৩৪ দিন আগে ভেঙে পড়ে। এতে সেতুর পাশে স্থাপিত পানি সরবরাহ লাইন ঝুঁকিতে পড়েছে। ওই সড়ক দিয়ে যানবাহন, মানুষের চলাচল ও পণ্য পরিবহন বন্ধ হয়ে গেছে। ২১ দিন আগে স্থানীয়রা ভাঙা সেতুর ৫শ মিটার পূর্ব পাশে খালের স্লুইস গেটের ওপর কাঠ বিছিয়ে কোনো রকমে যাতায়াতের ব্যবস্থা করেছে। এতে মানুষ ও মোটরসাইকেলসহ ছোট যানবাহন চলাচল করলেও বড় যানবাহন বা উৎপাদিত কৃষিপণ্য পরিবহন করা যচ্ছে না। এতে দুর্ভোগে পড়েছেন কৃষিনির্ভর এলাকার কৃষক, ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ। গ্রামবাসী দ্রুত সেতুটি মেরামত করে এ সমস্যার স্থায়ী সমাধান দাবি করেছেন।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) টুঙ্গিপাড়া উপজেলা প্রকৌশলী ফয়সাল আহমেদ বলেন, গত বছর ৩০ ডিসেম্বর শৈলদহ নদীর ভাঙনের কবলে পড়ে সেতুটি ভেঙে খালের মধ্যে পড়ে গেছে। তারা খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। বিষয়টি তারা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে তাৎক্ষণিকভাবে জানিয়েছেন। বিকল্প পথে চলাচলের ব্যবস্থা করতে তারা গত ১৬ জানুয়ারি এলজিইডি’র গোপালগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলী বরাবর চিঠি দিয়েছেন। চিঠিতে কিছু কাজ করার জন্য অর্থ বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। অর্থ বরাদ্দ পেলে তারা ওই সেতুর বিকল্প ও স্থায়ী চলাচলের ব্যবস্থা করতে পারবেন।
চিথলিয়া গ্রামের গৃহবধূ সুবর্ণা মজুমদার বলেন, ডুমরিয়া ইউনিয়নের ১০ গ্রামের হাজার হাজার মানুষ এ সড়ক দিয়ে যাতায়াত করেন। এ এলাকায় একটি হাইস্কুল, দুটি প্রাইমারি স্কুল, একটি বাজার, পানির ট্রিটমেন্ট প্লান্ট, ধর্মীয় উপাসনালয়, কমিউনিটি ক্লিনিকসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান রয়েছে। গত বছরের ৩০ ডিসেম্বর সেতুটি ভেঙে যাওয়ার পর থেকে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। সেতুর পাশে স্থাপিত ইউনিয়ন পানি সরবরাহ পাইপলাইনও ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। গত ১০ জানুয়ারি স্থানীয়রা ওই খালের স্লুইস গেটের ওপর কাঠ বিছিয়ে কোনো রকম যোগাযোগ স্থাপন করেছেন। তাও খালের এপার ওপার দিয়ে অন্তত ১ কিলোমিটার পথ ঘুরে কাঁচা রাস্তার ওপর দিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে। ভারী যানবাহন চলাচল করতে পারছে না। এমনকি কৃষিপণ্য, মাছ, পশুখাদ্যসহ অনেক পণ্য পরিবহন করা যাচ্ছে না। তারা সেতু সংস্কার করে এ সমস্যার স্থায়ী সমাধান চান।
টুঙ্গিপাড়া উপজেলার পাটগাতী সরদারপাড়া গ্রামের গৃহবধূ সুখি বেগম জানান, তিনি নিয়মিত এ পথে যাতায়াত করেন। সেতু ভেঙে যাওয়ায় তাদের অনেকটা পথ ঘুরে যাতায়াত করতে হচ্ছে। এতে তাদের অনেক সময় নষ্ট হচ্ছে। তারা এ দুর্ভোগ থেকে মুক্তি চান।
ভ্যানচালক ইয়াকুব তালুকদার বলেন, সেতু ভাঙার পর ১০ দিনের মতো এখানে গাড়ি চালাতে পারেননি। পরে স্লুইস গেটে কাঠ বিছিয়ে দিয়ে স্থানীয়রা যাতায়াতের ব্যবস্থা করেছেন। তারা চান এ সমস্যার স্থায়ী সমাধান হোক।
এলজিইডির গোপালগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলী এহসানুল হক বলেন, ওই স্থানে একটি সেতু নির্মাণের প্রস্তাবনা ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। বরাদ্দ এলেই জনগণের চলাচল ও পণ্য পরিবহনের সুবিধার্থে জরুরি ভিত্তিতে কাজ করা হবে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: র ব যবস থ কর ছ ন র ওপর
এছাড়াও পড়ুন:
খাদি কাপড়ের জিআই স্বীকৃতিতে আনন্দে ভাসছেন কুমিল্লাবাসী
কুমিল্লার ঐতিহ্যের স্মারক খাদি কাপড় ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্যের স্বীকৃতি পাওয়ায় আনন্দিত জেলার মানুষ। দীর্ঘদিন ধরে তাঁরা দাবি জানিয়ে আসছিলেন, অবশেষে পেয়েছেন সেই সুখবর। গতকাল বুধবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে স্বীকৃতির এই সনদ দেওয়া হয়।
কুমিল্লা নগরের কান্দিরপাড় এলাকার রামঘাটলা থেকে শুরু করে রাজগঞ্জ পর্যন্ত অন্তত ৩০০ খাদি পোশাকের দোকান। কান্দিরপাড়ের খাদি বসুন্ধরা দোকানের স্বত্বাধিকারী জয়নাল আবেদীন ভূঁইয়া প্রথম আলোকে বলেন, শৈল্পিক ছোঁয়ায় কুমিল্লার খাদি এখন দেশ-বিদেশে বেশ সমাদৃত। ঐতিহ্যের খাদিতে এখন লেগেছে আধুনিকতা ও নান্দনিকতার ছোঁয়া। শত বছরের বেশি পুরোনো খাদির আরও অনেক আগেই জিআই পণ্যের স্বীকৃতি পাওয়া উচিত ছিল। অবশেষে স্বীকৃতি মিলেছে, এতেই আনন্দিত সবাই।
একই এলাকার খাদি জ্যোৎস্না স্টোরের মালিক তপন পাল বলেন, ‘কুমিল্লার প্রতিটি মানুষ খাদির এমন স্বীকৃতিতে আনন্দিত। শত বছর পার হলেও এখনো দেশ-বিদেশে খাদি কাপড়ের ব্যাপক চাহিদা।’
কুমিল্লার ইতিহাস গবেষক আহসানুল কবীর প্রথম আলোকে বলেন, ১৯২১ সালে মহাত্মা গান্ধীর ডাকে সমগ্র ভারতবর্ষে অসহযোগ আন্দোলনের সময় কুমিল্লায় খাদিশিল্প প্রতিষ্ঠা লাভ করে। ওই সময় বিদেশি পণ্য বর্জন করার জন্য আওয়াজ ওঠে। সর্বত্র এক আওয়াজ ‘মোটা কাপড়-মোটা ভাত’। সে সময় ভারতবর্ষের মানুষ দেশপ্রেমে উজ্জীবিত হয়ে খাদি পোশাক ব্যবহার শুরু করেছিলেন। খাদের (গর্তে) চরকায় বসে এ কাপড় তৈরি করা হয় বলে এর নামকরণ হয় ‘খাদি’। শুরুতে মহাত্মা গান্ধী নিজেও কুমিল্লায় এসে খাদের চরকায় বসে খাদি কাপড় তৈরিতে উৎসাহ দেন।
এই গবেষক আরও বলেন, ১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর ভারত পৃষ্ঠপোষকতা প্রত্যাহার করে নিলে কুমিল্লার খাদিশিল্প সংকটে পড়ে। এই শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে হাল ধরেন বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন একাডেমির (বার্ড) প্রতিষ্ঠাতা আখতার হামিদ খান।
কুমিল্লার জেলা প্রশাসক মো. আমিরুল কায়ছার বলেন, জেলা প্রশাসনের দীর্ঘ প্রচেষ্টায় গত বছর কুমিল্লার রসমালাই জিআই তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। কুমিল্লার খাদি ও বিজয়পুরের মৃৎশিল্পের জিআই স্বীকৃতির জন্য তখন থেকেই কাজ শুরু হয়। কুমিল্লার ‘ব্র্যান্ড’ হিসেবে পরিচিত তিনটি পণ্যের মধ্যে দুটি জিআই পণ্যের স্বীকৃতি পেয়েছে। যে একটি বাকি আছে, সেটিও দ্রুত সময়ের মধ্যে স্বীকৃতি পাবে বলে তিনি আশাবাদী।