কানাডিয়ান পণ্যের ওপর আবারও ৩৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ১ আগস্ট থেকে নতুন শুল্ক আরোপের কথা জানিয়েছেন তিনি। এই ঘোষণা এমন এক সময়ে এলো, যখন দেশ দুটি একটি নতুন বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। শুক্রবার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।

বৃহস্পতিবার নিজ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে পোস্ট করা এক চিঠিতে ট্রাম্প কানাডার প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নিকে উদ্দেশ্য করে এই ঘোষণা দেন। এর আগেও যুক্তরাষ্ট্র কানাডার কিছু পণ্যে ২৫ শতাংশ শুল্ক বসিয়েছে এবং ট্রাম্প প্রশাসনের বিশ্বব্যাপী স্টিল, অ্যালুমিনিয়াম ও গাড়ি শিল্পে আরোপিত শুল্কের প্রভাব ইতোমধ্যে কানাডায় পড়তে শুরু করেছে।

বিবিসি বলছে, প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নিকে উদ্দেশ্য করে ট্রাম্পের এই চিঠিটি মূলত এমন ২০টিরও বেশি চিঠির একটি, যেগুলো ট্রাম্প এই সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বাণিজ্য অংশীদারদের- যেমন জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, শ্রীলঙ্কার উদ্দেশে প্রকাশ করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, এসব দেশের ওপরও ১ আগস্ট থেকে শুল্ক কার্যকর হবে।

অবশ্য কানাডার ক্ষেত্রে ২৫ শতাংশ শুল্ক ইতোমধ্যেই আরোপ করা হয়েছে। তবে বর্তমানে উত্তর আমেরিকান মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির আওতায় কিছু পণ্যে ছাড় রয়েছে। তবে নতুন যে ৩৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের হুমকি ট্রাম্প দিয়েছেন, তা এই চুক্তিভুক্ত পণ্যের ওপরেও কার্যকর হবে কিনা, তা স্পষ্ট নয়।

ট্রাম্প আরও জানিয়েছেন, এই ৩৫ শতাংশ শুল্ক হবে আগের খাতভিত্তিক শুল্ক থেকে আলাদা। উল্লেখ্য, এর বাইরে ট্রাম্প বিশ্বজুড়ে স্টিল ও অ্যালুমিনিয়াম আমদানিতে ৫০ শতাংশ এবং যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে তৈরি হওয়া গাড়ি ও ট্রাকের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক দিয়েছেন।

কানাডা যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানির মাধ্যমে তাদের প্রায় তিন-চতুর্থাংশ পণ্যের বাজার ধরে রেখেছে। উত্তর আমেরিকার এই দেশটি গাড়ি উৎপাদন এবং ধাতু সরবরাহের জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি কেন্দ্র, ফলে এসব খাতে এই শুল্ক ভয়াবহ প্রভাব ফেলতে পারে।

চিঠিতে ট্রাম্প লিখেছেন, ‌‘আপনারা যদি যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য উৎপাদন বা কারখানা নির্মাণ করেন, তাহলে কোনো শুল্ক দিতে হবে না।’

এছাড়া তিনি যুক্তরাষ্ট্রে ফেন্টানিল প্রবেশ ঠেকাতে কানাডার ব্যর্থতা, কানাডার দুধশিল্পে যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে আরোপিত শুল্ক এবং দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ঘাটতির কথা উল্লেখ করে এই নতুন শুল্কের যৌক্তিকতা ব্যাখ্যা করেন।

উল্লেখ্য, গত জুন মাসে জি-৭ সম্মেলনে ট্রাম্প ও কানাডার প্রধানমন্ত্রী কার্নি ঘোষণা দিয়েছিলেন, তারা ৩০ দিনের মধ্যে একটি নতুন বাণিজ্য ও নিরাপত্তা চুক্তিতে পৌঁছাতে চান। সেই অনুযায়ী ২১ জুলাই ছিল নির্ধারিত সময়সীমা।

এরপরই ট্রাম্পের চাপে কার্নি যুক্তরাষ্ট্রের প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর ওপর থেকে একটি কর তুলে নেন, যেটিকে ট্রাম্প ‘স্পষ্ট আক্রমণ’ বলে অভিহিত করেছিলেন। কার্নি বলেছিলেন, ‘বড় একটি আলোচনার অংশ হিসেবে আমরা এই কর তুলে নিয়েছি।’ অন্যদিকে কানাডার বিরোধী দলীয় নেতা পিয়েরে পয়লিয়েভ ট্রাম্পের এই ঘোষণার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন।

উল্লেখ্য, ট্রাম্পের শুল্কনীতি কার্যকর হলে কানাডার অর্থনীতিতে ব্যাপক প্রভাব পড়বে এবং সামগ্রিকভাবে বেকারত্ব ও বড় ধরনের অর্থনৈতিক মন্দার আশঙ্কা রয়েছে বলে মনে করছেন অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা।
 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: শ ল ক আর প য ক তর ষ ট র য ক তর ষ ট র র উল ল খ র ওপর

এছাড়াও পড়ুন:

আইনশৃঙ্খলার উন্নতিতে দৃঢ় পদক্ষেপ চাই

রাজনৈতিক সহিংসতা বেড়ে যাওয়া এবং ঢাকা ও চট্টগ্রামের পর খুলনায় প্রকাশ্য হত্যাকাণ্ড সামগ্রিকভাবে একটি বার্তাই দেয়—দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উদ্বেগজনক পর্যায়ে রয়েছে। ফেব্রুয়ারির জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে এ ধরনের সহিংসতা ও হত্যাকাণ্ড নিরাপত্তা নিয়ে জনমনে গভীর শঙ্কার জন্ম দিতে বাধ্য।    

মানবাধিকার সংস্থা এনএসএফের প্রতিবেদনের বরাতে প্রথম আলোর খবর জানাচ্ছে, নভেম্বর মাসে রাজনৈতিক সহিংসতার সংখ্যা অক্টোবরের ৪৯ থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭২-এ। আহত ব্যক্তির সংখ্যা একলাফে ৫৪৭ থেকে ৭২৪ এবং নিহত ব্যক্তির সংখ্যা ২ থেকে ৯—এই ঊর্ধ্বগতি শুধু পরিসংখ্যান নয়, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ব্যর্থতার প্রতিফলন। রাজনৈতিক সহিংসতা যখন মাসে মাসে বাড়ে, তখন তা নির্দেশ করে যে ক্ষমতার প্রতিযোগিতা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিষ্ক্রিয়তা মিলেমিশে সমাজে একধরনের সহিংসতার পরিবেশ তৈরি করেছে।

গণপিটুনির পুনরুত্থান ভয়াবহ সংকটের ইঙ্গিত দেয়। আইনকে পাশ কাটিয়ে সংঘবদ্ধ জনতা বিচার করছে—এমন প্রবণতা যেকোনো সভ্য সমাজের জন্য লজ্জাকর। নভেম্বর মাসে ৪৩টি ঘটনায় ১৯ জনের মৃত্যু; অক্টোবরে নিহত হয়েছেন ১২ জন—এ সংখ্যাগুলো শুধু হত্যার পরিসংখ্যান নয়; এ সংখ্যা আইনের শাসনের প্রতি মানুষের আস্থা হারানোর ইঙ্গিত। চুরি, ছিনতাই বা ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগেই হোক, আইনের শাসন ভেঙে পড়লে সাধারণ মানুষ নিজেরাই আইন হাতে তুলে নেয়। অথচ অপরাধীদের শনাক্ত করে বিচারের আওতায় আনা, গণপিটুনি ঠেকাতে তৎপরতা দেখানো—এসব দায়িত্ব সরকার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর।

নভেম্বরে কারা হেফাজতে ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে। এসব মৃত্যুর ক্ষেত্রে অসুস্থতার কথা বলা হলেও সেটা কতটা বিশ্বাসযোগ্য, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। কারাগারের অভ্যন্তরে প্রাতিষ্ঠানিক অবহেলা কি এই মৃত্যুর কারণ? বারবার তদন্তের দাবি উঠলেও দায় নির্ধারণ বা কাঠামোগত সংস্কারের কোনো অগ্রগতি নেই।

সীমান্ত পরিস্থিতিও সমানভাবে নাজুক। ভারতীয় কোস্টগার্ড কর্তৃক ১০৮ জেলে আটক, আরাকান আর্মির হাতে ৪৭ জেলে, বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশির মৃত্যু—এসব মিলিয়ে সীমান্তবাসী আজ অত্যন্ত ঝুঁকির মধ্যে। প্রতিবাদ বা কূটনৈতিক অনুরোধে তেমন ফল না হওয়া বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতির সীমাবদ্ধতাকেই সামনে নিয়ে এসেছে।

নভেম্বর মাসে ঢাকা ও চট্টগ্রামে সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে যেভাবে একের পর এক হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে, সেগুলো নিরাপত্তা নিয়ে মানুষের উদ্বেগ বহুগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। গত রোববার খুলনায় দিনদুপুরে আদালত চত্বরে হাজিরা শেষে বের হওয়ার সময় দুজনকে গুলি করে ও কুপিয়ে হত্যা করা হয়। আদালত প্রাঙ্গণ, যেখানে মানুষের নিরাপত্তা সবচেয়ে বেশি থাকার কথা, সেখানে সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা যেভাবে প্রবেশ করেছে ও হত্যা করে বেরিয়ে গেছে, তা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সক্ষমতা ও গোয়েন্দা নজরদারির ব্যর্থতা তুলে ধরেছে। খুলনায় ১৫ মাসে ৪৬টি হত্যাকাণ্ড এ শহরকে ধীরে ধীরে সহিংসতার কেন্দ্রে পরিণত করছে।

রাজনৈতিক সহিংসতা ও সংগঠিত অপরাধ নিয়ন্ত্রণে সরকার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নেওয়া পদক্ষেপ এখনো জোরালো ও দৃশ্যমান নয়। আমরা মনে করি, রাজনৈতিক সহিংসতায় জড়িত ব্যক্তিদের দ্রুত বিচার নিশ্চিত করা এবং ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে গড়ে ওঠা সন্ত্রাসী নেটওয়ার্কগুলোর বিরুদ্ধে সমন্বিত অভিযান—এখনই এসব পদক্ষেপ নিতে হবে।

আগামী ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় জাতীয় নির্বাচনের আগে যেকোনো মূল্যে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি করতে হবে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির এ রকম অবনতি চলতে থাকলে নির্বাচনী পরিবেশে তার নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। নির্বাচন সামনে রেখে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নতির বিষয়টিকে সরকারকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ