চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলার ভুজপুরে বিএনপি কর্মী মো. শহীদকে (৩২) পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় চন্দনা নামের এক নারী আহত হন। শনিবার রাতে দাঁতমারা ইউনিয়নের বড় বেতুয়া সেলিমের দোকান এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
নিহত শহীদের বাবার নাম সাইফুল ইসলাম।
জানা গেছে, সাইফুল ইসলামের বাড়ি কুমিল্লা জেলায়। ফটিকছড়ি উপজেলার সেমুতাং গ্যাস ফিল্ড সংলগ্ন কালাপানি এলাকায় তার শ্বশুরবাড়ি। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর শহীদ বড় বেতুয়া এলাকায় আমান নামের এক বন্ধুর বাড়িতে থাকতেন। তিনি চট্টগ্রাম উত্তরজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ও ফটিকছড়ি উপজেলা বিএনপির নেতা মো.
স্থানীয় বিএনপি নেতা-কর্মীদের দাবি, শহীদকে পরিকল্পিতভাবে উপজেলা বিএনপির এক নেতার গ্রুপের লোকজন পিটিয়ে হত্যা করেছে। আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করেই এ হত্যাকাণ্ড। ঘটনার পর বিএনপি একাংশের কর্মীরা গা ঢাকা দিয়েছেন।
স্থানীয় লোকজন জানান, উপজেলা বিএনপির নেতা মো. সরোয়ার আলমগীর ও আজিম উল্লাহ বাহার চৌধুরীর অনুসারীদের আধিপত্য বিস্তার নিয়ে বিরোধ দীর্ঘদিনের। বিষয়টিকে কেন্দ্র করে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর থেকে এলাকায় বালুর মহাল দখল, চুরি ও বিভিন্ন ইস্যুতে দুই গ্রুপের লোকজনের মধ্যে বিরোধ চরম পর্যায়ে পৌঁছায়। সেখানে শহীদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ হাত ছিল। ফলে দুই পক্ষই নিজেদের অবস্থান পাকাপোক্ত করতে মরিয়া হয়ে উঠে।
দাঁতমারা ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মো. বোরহান উদ্দিন বলেন, ‘শহীদ বেতুয়া এলাকায় অবস্থান নিলে ক্ষুব্ধ লোকজন লাঠিসোঁটা নিয়ে তাকে মারধর করে। আহত অবস্থায় হাসপাতালে মৃত্যু হয়। পরে হামলাকারীরা পালিয়ে যায়। শহীদ বিএনপির একজন সমর্থক মাত্র। ফলে বিষয়টি দলীয় নয়, ব্যক্তিগত।’
দাঁতমারা ইউনিয়ন বিএনপির নেতা মো. একরামুল হক বলেন, ‘নিহত শহীদ চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক সরোয়ার আলমগীরের অনুসারী ছিলেন। প্রতিপক্ষের স্থানীয় নেতা আহমদ সাফার নেতৃত্বে সায়েদ, রফিক, সোহেল, রুবেলসহ ২০-৩০ জন তাকে রড ও লাঠি দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করেছে।’
জানতে চাইলে বিএনপি নেতা সরোয়ার আলমগীর বলেন, ‘গত ১৫-১৬ বছর যাদেরকে বিএনপির কোনো মিছিল-মিটিং এ দেখা যায়নি তারা এখন দলের নাম ভাঙিয়ে নানা অপকর্ম করছে। তারাই এ হত্যার সঙ্গে জড়িত। হত্যাকারীদের দ্রুত আইনের আওতায় এনে বিচার করা হোক।’
ভুজপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মাহবুবুল হক বলেন, ‘খবর পেয়ে পুলিশ হাসপাতাল থেকে নিহতের মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠিয়েছে। এই ঘটনায় স্থানীয় বিএনপির এক গ্রুপ জড়িত থাকতে পারে। আমরা বিস্তারিত খবর নিচ্ছি। এই ঘটনায় শহীদের মা বাদী হয়ে ১৪ জনকে আসামি করে হত্যা মামলা করেছেন।’
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব এনপ ব এনপ র এল ক য় উপজ ল ল কজন
এছাড়াও পড়ুন:
রাউজানে যুবদল কর্মীকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় তাঁর সহযোগী গ্রেপ্তার
চট্টগ্রামের রাউজানে মোটরসাইকেলে বাড়ি ফেরার পথে যুবদল কর্মী আলমগীর আলমকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় এক যুবককে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। গ্রেপ্তার যুবক আলমগীর আলমের সহযোগী ছিলেন। গতকাল শনিবার রাতে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তার যুবকের নাম মুহাম্মদ রাজু (২৮)। তিনি পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের রহমতপাড়ার মৃত নুর নবীর ছেলে। পুলিশ জানিয়েছে, আলমগীর আলমকে গুলি করার সময় তাঁর পেছনে একটি মোটরসাইকেলে ছিলেন মুহাম্মদ রাজু।
গত ২৫ অক্টোবর বিকেলে রাউজান পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের চারাবটতল বাজারসংলগ্ন কায়কোবাদ জামে মসজিদের সামনে গুলি করে হত্যা করা হয় আলমকে। এ সময় তাঁর স্ত্রী ও সন্তান পেছনে একটি অটোরিকশায় ছিলেন। পাশের গ্রামের এক আত্মীয়ের বাড়ি থেকে দাওয়াত খেয়ে বাড়িতে ফিরছিলেন তাঁরা। আলমের বাড়ি পার্শ্ববর্তী ঢালারমুখ এলাকায়।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, কবরস্থানে লুকিয়ে থাকা আটজন অস্ত্রধারী আলমকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়েন। এ সময় মোটরসাইকেলে থাকা আলম ঘটনাস্থলেই নিহত হন। অস্ত্রধারীরা তাঁকে হত্যার পর রাঙামাটি সড়ক দিয়ে অটোরিকশা ও মোটরসাইকেলে পালিয়ে গেছেন। নিহত আলমের শরীরে পাঁচটি গুলির চিহ্ন পাওয়া যায়।
রাউজান থানা-পুলিশ জানায়, আলম নিহত হওয়ার দুই দিন পর তাঁর বাবা আবদুস সাত্তার বাদী হয়ে ২১ জনের নামোল্লেখ এবং অজ্ঞাতনামা আরও ৬ থেকে ৭ জনকে আসামি করে রাউজান থানায় মামলা করেন। মামলার এজাহারে রাজুর নাম নেই। তবে ঘটনার তদন্তে হত্যাকাণ্ডে তাঁর সম্পৃক্ততার তথ্য পাওয়া গেছে।
এর আগে এ মামলায় এজাহারভুক্ত দুই আসামি গ্রেপ্তার হয়েছেন। তাঁরা হলেন রাউজান কলেজ ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি মুহাম্মদ রাসেল খান (৩২) ও পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের রহমতপাড়ার বাসিন্দা ও যুবদল কর্মী মুহাম্মদ হৃদয় (৩০)।
রাউজান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুল ইসলাম ভূঁইয়া প্রথম আলোকে বলেন, যখন অস্ত্রধারীরা আলমগীর আলমকে গুলি করার জন্য কবরস্থানে লুকিয়ে ছিলেন, তখন আলমগীর আলমের পেছনে একটি মোটরসাইকেলে ছিলেন রাজু। তিনি আলমগীরের সহযোগী হিসেবে পরিচিত। তবে হত্যাকাণ্ডে তাঁর সম্পৃক্ততার তথ্য পাওয়া গেছে। রোববার তাঁকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে অস্ত্র-মাদকসহ বিভিন্ন মামলায় ১২ বছর কারাগারে ছিলেন আলম। তিনি গত বছরের ৫ আগস্টের পর জামিনে মুক্তি পান। চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি গোলাম আকবর খন্দকারের অনুসারী হিসেবে পরিচিত তিনি।