কুষ্টিয়ায় পদ্মা নদীর পানি বাড়ছে, বিভিন্ন এলাকায় ভাঙন
Published: 11th, July 2025 GMT
কুষ্টিয়ায় পদ্মা নদীর পানি বাড়ায় বিভিন্ন স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে। পদ্মার সঙ্গে গড়াই নদেরও পানি বেড়েছে। এতে কুষ্টিয়া শহর-সংলগ্ন এলাকাসহ জেলার কুমারখালী ও খোকসা উপজেলায় ভাঙন দেখা দিয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) কর্মকর্তারা বলছেন, তিন মাস আগের পর্যবেক্ষণে পদ্মা-গড়াইয়ের অন্তত আটটি স্থানে ভাঙন দেখা দিতে পারে বলে ধারণা করা হয়েছিল। ঠিক সেসব জায়গায় ভাঙন শুরু হয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে এসব জায়গায় বালুভর্তি জিও ব্যাগ না ফেললে ভাঙন আরও বাড়বে। এতে ফসলি জমির পাশাপাশি বাড়িঘর, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানও বিলীন হয়ে যেতে পারে।
পাউবো সূত্র জানায়, প্রায় এক মাস আগে থেকে ভারতে ব্যাপক বৃষ্টিপাত হয়েছে। সেই পানি পদ্মা নদীতে আসায় এবার আগাম পানি বৃদ্ধি শুরু হয়েছে। পদ্মা নদীতে পানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে তীব্র ভাঙনের কবলে পড়ে পদ্মা-গড়াইয়ের অন্তত ১৭টি স্থান। গত ২০ দিনে অন্তত ৯ কিলোমিটার দীর্ঘ এলাকা ভেঙেছে। পাড় ভেঙে প্রায় ৫ মিটার করে ভেতরে প্রবেশ করেছে।
ভাঙনকবলিত এলাকাগুলোর মধ্যে আছে দৌলতপুর উপজেলার মরিচা, হাটখোলা, ঠোটারপাড়া ও উদয়নগর; ভেড়ামারা উপজেলার ফয়জুল্লাহপুর, মসলেমপুর, টিকটিকিপাড়া ও মুন্সীপাড়া এলাকা। এসব এলাকার ফসলি জমির প্রায় ৩০ থেকে ৪০ হাত ভেতরে ভেঙে সবকিছু নদীতে বিলীন হয়ে যাচ্ছে।
গত ২০ দিনে পদ্মায় দুই মিটার পানির উচ্চতা বেড়েছে। আগামী অক্টোবর মাস পর্যন্ত এই পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকতে পারে। ধারণা করা হচ্ছে, পানি কমার সময় আরও ৫০ থেকে ৬০ মিটার এলাকার ভেতরে ভাঙন তৈরি হতে পারে। এতে ঝুঁকিতে আছে মহাসড়কসহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও বাড়িঘর।
শুক্রবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ভেড়ামারার কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা যায়, পদ্মা নদীর পানি বেশ উত্তাল। টিকটিকিপাড়া এলাকার ঠিক বিপরীত দিকে উত্তর-পশ্চিমে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। স্থানীয় লোকজন বলছেন, সেখানে দীর্ঘ বাঁধ থাকায় পানি বাধা পেয়ে ভেড়ামারার দিকে দিক পরিবর্তন হয়ে ধেয়ে আসছে। এতেই পাড় বেশি ভাঙছে। ইতিমধ্যে ফসলি জমি ভেঙে বিলীন হয়েছে।
টিকটিকিপাড়ার বাসিন্দা দাউদ সরদার বলেন, ‘গত ১০ দিনে দেখলাম ২০ থেকে ৩০ হাত এলাকা নিয়ে ফসলি জমি চোখের সামনে বিলীন হয়ে গেল। এবার বেশি ভাঙছে। সবচেয়ে বেশি ভাঙবে পানি বাড়ার পর যখন পানি কমতে থাকবে। জানি না তখন কী দেখতে হবে।’ স্থানীয় মোহাম্মদ আবদুল্লাহ বলেন, ১০ থেকে ১২ দিন আগে স্থানীয় বাসিন্দারা স্থায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিতে নদীপাড়ে মানববন্ধন করেছেন। কিন্তু এখনো কোনো দৃশ্যমান কাজ দেখা যাচ্ছে না। ভাঙন থেমে নেই।
টিকটিকিপাড়া এলাকায় দেখা গেল, নদীপাড়ে অসংখ্য বালু তোলা যন্ত্রবাহী ছোট ছোট নৌকা। আবার বড় নৌকা থেকে ইঞ্জিনের সাহায্যে তীরে বালু ফেলা হচ্ছে। সেই ভেজা বালুর ভেতর থেকে পানি বেয়ে নদীতে পড়ছে। এতে পাড় ভাঙছে।
এদিকে মুন্সীপাড়া থেকে তালবাড়িয়া এলাকা পর্যন্ত প্রায় ৯ কিলোমিটার অংশজুড়ে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের কাজ চলছে। ১ হাজার ৪৭২ কোটি টাকা ব্যয়ে কয়েকটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এই কাজ করছে। তবে মুন্সীপাড়া এলাকার যেখান থেকে কাজ শুরু হয়েছে, তার কিছুটা আগে ভাঙন দেখা দিয়েছে। এই ভাঙন আরও ভেতরের দিকে বাঁক নিয়ে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ এলাকাকে ঘিরে ফেলছে। আশঙ্কা করা যাচ্ছে, মুন্সীপাড়া এলাকায় জরুরি ভিত্তিতে জিও ব্যাগ না ফেললে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের কাজে ব্যাঘাত ঘটতে পারে।
এদিকে পদ্মার পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে গড়াই নদের পানিও বেড়েছে। এতে শহর-সংলগ্ন মঙ্গলবাড়িয়া, রেনউইক, কমলাপুর, কুমারখালী উপজেলার কাশিমপুর, ভাড়ারা, কবুরহাট ও শ্যামপুর এলাকায় ভাঙন শুরু হয়েছে।
পাউবোর কুষ্টিয়া কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী রাশিদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, এবার উজানে ভারী বর্ষণ হয়েছে। তাতে আগাম পানি বেড়েছে পদ্মায়। ইতিমধ্যে প্রায় ৯ কিলোমিটার অংশে ভাঙন দেখা দিয়েছে। স্থানগুলো চিহ্নিত করা হয়েছে। অস্থায়ী ব্যবস্থা নিতে দ্রুত বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলতে মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা হয়েছে। কিন্তু এখনো কোনো অনুমোদন পাওয়া যায়নি। তিনি বলেন, আগামী কয়েক দিন পর আরও পানি বাড়বে। এভাবে অক্টোবর মাসের পর যখন পানি কমতে থাকবে, তখন আরও বেশি ভাঙার আশঙ্কা আছে। তাতে চলতি মৌসুমে বন্যায় পদ্মায় ৫০ থেকে ৬০ মিটার ভেতরের দিকের অংশ বিলীন হয়ে যেতে পারে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব ল ন হয় নদ র প ন এল ক র এল ক য় উপজ ল সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
চাঁদপুরে মসজিদের খতিবকে কুপিয়ে হত্যার চেষ্টা
চাঁদপুরে ‘মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) ইসলামের বার্তা বাহক’ এমন বক্তব্য সঠিক নয় দাবি করে ধারালো চাপাতি দিয়ে মসজিদের খতিব নূরুর রহমান মাদানীকে (৬০) কুপিয়ে হত্যার চেষ্টা করেছে বিল্লাল হোসেন (৫০) নামের এক মুসল্লি। ঘটনার পর স্থানীয়রা তাকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করে।
শুক্রবার বাদ জুমা শহরের প্রফেসরপাড়া মোল্লাবাড়ি জামে মসজিদে এ ঘটনা ঘটে। গুরুতর আহত খতিব নূরুর রহমান মাদানী শহরের গুনরাজদী এলাকার বাসিন্দা। তিনি বিভিন্ন মসজিদে প্রায় শুক্রবার খুতবা দেন। অভিযুক্ত মুসল্লি বিল্লাল হোসেন সদর উপজেলার বিষ্ণুপুর ইউনিয়নের মনোহরখাদি গ্রামের মৃত আইয়ুব আলীর ছেলে। শহরের বকুলতলায় বসবাস করেন। পেশায় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী।
স্থানীয়রা জানান, কয়েক সপ্তাহ আগে এক জুমার খুতবায় তিনি (খতিব) নবী করিম (সা.) ‘ইসলামের বার্তাবাহক’ হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন। এই বক্তব্যে বিল্লাল হোসেন ক্ষুব্ধ হয়ে আজ জুমার পর পরিকল্পিতভাবে হামলা চালান। চাপাতির আঘাতে খতিব মাওলানা নূর রহমানের কানের গোড়ালি গুরুতর জখম হয়। বর্তমানে তিনি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
চাঁদপুর সদর মডেল থানার ওসি বাহার মিয়া বলেন, আসামিকে ঘটনাস্থল থেকেই আটক করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।